অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস
![]() | |
মালিক প্রতিষ্ঠান | অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় (University of Oxford) |
---|---|
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৫৮৬ |
দেশ | যুক্তরাজ্য |
সদরদপ্তর | অক্সফোর্ড, ইংল্যান্ড |
প্রধান ব্যক্তি | নাইজেল পোর্টউড (ডেলিগেটদের সচিব ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা)[১] |
প্রকাশনা |
|
অধীনস্থ বাণিজ্যিক নাম |
|
কর্মীসংখ্যা | ৬,০০০ |
ওয়েবসাইট | corp |
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস (OUP) হচ্ছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনা সংস্থা। এটি বিশ্বের বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস (university press)। অক্সফোর্ডে প্রথম বই মুদ্রিত হয় ১৪৭৮ সালে, এবং ১৫৮৬ সালে একটি ডিক্রির মাধ্যমে প্রেসটি আনুষ্ঠানিকভাবে বই মুদ্রণের আইনি অধিকার লাভ করে।[২] এটি কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস (Cambridge University Press)–এর পরে বিশ্বের দ্বিতীয় প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস, যা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৫৩৪ সালে।[৩][৪][৫]
এটি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগ। এর পরিচালনায় রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কর্তৃক নিযুক্ত ১৫ জন একাডেমিক সদস্যের একটি দল, যাদের বলা হয় “ডেলিগেটস অব দ্য প্রেস” (Delegates of the Press)। এদের নেতৃত্ব দেন “সচিব”, যিনি প্রেসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য দপ্তরে প্রেসের প্রধান প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। সপ্তদশ শতাব্দী থেকে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস একই ধরনের পরিচালন কাঠামো অনুসরণ করে আসছে।[৬] প্রেসটি অক্সফোর্ডের ওয়ালটন স্ট্রিট-এ অবস্থিত, সামারভিল কলেজের ঠিক বিপরীতে, জেরিকো নামক অভ্যন্তরীণ উপনগরে।
গত ৪০০ বছর ধরে OUP মূলত পাঠ্যপুস্তক প্রকাশনায় মনোনিবেশ করেছে। আজও তারা এই ঐতিহ্য অব্যাহত রেখেছে — একাডেমিক জার্নাল, অভিধান, ইংরেজি ভাষা বিষয়ক উপকরণ, গ্রন্থপঞ্জি, ভারতবিদ্যা, সঙ্গীত, শাস্ত্রীয় সাহিত্য, ইতিহাস, বাইবেল ও মানচিত্র বিষয়ক গ্রন্থ প্রকাশ করে।
OUP-এর সারা বিশ্বে অফিস রয়েছে, বিশেষত সেসব স্থানে যা একসময় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অংশ ছিল।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে মুদ্রণ কার্যক্রম শুরু হয় আনুমানিক ১৪৮০ সালের দিকে। পরে এটি বাইবেল, প্রার্থনাসংক্রান্ত গ্রন্থ ও একাডেমিক প্রকাশনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে।[৭] ১৬৩০-এর দশকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর আর্চবিশপ উইলিয়াম লড (William Laud) বিশ্ববিদ্যালয়ের মুদ্রণ কার্যক্রমের আইনগত ভিত্তি মজবুত করেন এবং চার্লস প্রথমের কাছে আবেদন জানান, যাতে অক্সফোর্ড মুদ্রণ ক্ষেত্রে স্টেশনার্স কোম্পানি ও রাজকীয় মুদ্রকের (King’s Printer) সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারে। তিনি রাজকীয় একাধিক অনুমোদন লাভ করেন এবং ১৬৩৬ সালে "গ্রেট চার্টার"-এর মাধ্যমে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সকল প্রকার গ্রন্থ মুদ্রণের অধিকার পায়।[৮] লড বিশেষভাবে কিং জেমস বাইবেল মুদ্রণের "বিশেষ অধিকার" অর্জন করেন, যা পরবর্তী আড়াই শতাব্দী ধরে বিশাল আয় নিশ্চিত করে।[৯][১০]
ইংরেজ গৃহযুদ্ধের পর ১৬৬৮ সালে উপাচার্য জন ফেল (John Fell), যিনি তখন ক্রাইস্ট চার্চের ডিন, অক্সফোর্ডের বিশপ এবং প্রেস ডেলিগেটদের সচিব ছিলেন, একটি কেন্দ্রীয় ছাপাখানা স্থাপনের উদ্যোগ নেন।[১১] ১৬৭৪ সালে OUP একটি বার্ষিক প্রাচীন ক্যালেন্ডার অক্সফোর্ড অ্যালমেনাক মুদ্রণ শুরু করে, যা ২০১৯ সাল পর্যন্ত অনবরত প্রকাশিত হয়েছে।[১২][১৩] ফেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনার জন্য একটি সুসংহত পরিকল্পনা তৈরি করেন, যাতে অন্তর্ভুক্ত ছিল গ্রিক ভাষায় বাইবেল, কপটিক গসপেল, গির্জা পিতৃদের রচনাবলি, আরবি ও সিরিয়াক ভাষার গ্রন্থ, শাস্ত্রীয় দর্শন, কবিতা, গণিত, মধ্যযুগীয় গবেষণা এবং এমনকি পোকামাকড় নিয়ে একটি বিস্তৃত ইতিহাস রচনার পরিকল্পনাও।

১৮ শতকের শুরুর দিকে প্রেসের সম্প্রসারণে কিছুটা স্থবিরতা দেখা দেয়। তখন জন ফেল-এর মতো প্রভাবশালী নেতৃত্বের অভাব ছিল। প্রেসের দুরবস্থা দেখে ডেলিগেট উইলিয়াম ব্ল্যাকস্টোন সংস্কারের উদ্যোগ নেন। তিনি প্রেসের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে, দায়িত্ব স্পষ্ট করতে এবং পরিচালনার কাঠামো মজবুত করতে একটি প্রস্তাব দেন। যদিও প্রথমে এটি উপেক্ষা করা হয়, পরে আইনি পদক্ষেপের হুমকির পর বিশ্ববিদ্যালয় ১৭৬০ সালে তার সকল সংস্কার গ্রহণ করে।[১৪][১৫]
১৮২৫ সালে ডেলিগেটরা ওয়ালটন স্ট্রিটে একটি জমি কিনে সেখানে ভবন নির্মাণ করেন এবং ১৮৩০ সালে সেখানে প্রেস স্থানান্তরিত হয়। এই স্থানটি এখনো OUP-এর প্রধান কার্যালয়।[১৬]
এই সময় OUP ছিল একটি ছোট পরিসরের একাডেমিক মুদ্রণ ব্যবসা। থমাস কম্ব প্রেসে যোগ দেন এবং ১৮৭২ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মুদ্রক (Printer) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি খুব উদ্ভাবনী না হলেও ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল প্রবল এবং ওলভারকোট-এ একটি দেউলিয়া কাগজকল কিনে তা সচল করেন।[১৭] তার আমলে প্রকাশিত বিখ্যাত বইগুলোর মধ্যে একটি ছিল লুইস ক্যারল (Charles Lutwidge Dodgson) রচিত Alice's Adventures in Wonderland-এর একটি ত্রুটিপূর্ণ প্রথম সংস্করণ, যা ১৮৬৫ সালে প্রেস মুদ্রণ করেছিল।[১৮]
১৮৫০ সালের রয়েল কমিশন এবং নতুন সচিব বারথলোমিউ প্রাইস প্রেসে পরিবর্তনের সূচনা করেন। প্রাইস প্রেসে একটি দক্ষ নির্বাহী কাঠামো গড়ে তোলার পক্ষে ছিলেন। তার তত্ত্বাবধানে ক্ল্যারেনডন প্রেস (Clarendon Press) নামে স্কুলপাঠ্যপুস্তক সিরিজ চালু হয় এবং ১৮৭৫ সালে ম্যাক্স মুলার সম্পাদিত Sacred Books of the East সিরিজের অনুমোদন দেওয়া হয়।[১৯]
১৮৮০ সালে হেনরি ফ্রাউডে OUP-এর প্রকাশক হিসেবে নিয়োগ পান এবং ব্যবসায়ে নতুন বই যুক্ত করেন। তিনি ১৮৮১ সালে নতুন নিয়মিত বাইবেল (Revised Version) মুদ্রণ কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করেন এবং ১৮৯৬ সালে নিউ ইয়র্কে প্রথম আন্তর্জাতিক শাখা স্থাপন করেন।[২০]
১৮৮৪ সালে প্রাইস অবসর নেন। সে বছর ডেলিগেটরা ব্যবসার শেষ শেয়ারগুলো কিনে নিয়ে প্রেসকে পুরোপুরি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করে। তার সময়ে OUP ম্যাক্সওয়েলের A Treatise on Electricity & Magnetism (১৮৭৩) প্রকাশ করে, যা আলবার্ট আইনস্টাইন-এর চিন্তাধারায় প্রভাব ফেলেছিল।[২১] ১৮৭৯ সালে তিনি বিশাল প্রকল্প Oxford English Dictionary (OED) গ্রহণ করেন, যা ছিল OUP-এর ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ।[২২]
এই অভিধানটি জেমস মারে ও ফিলোলজিকাল সোসাইটি কর্তৃক প্রস্তাবিত হয়। ১৮৮৪ সালে এর মুদ্রণ শুরু হয়, তবে প্রথম সম্পূর্ণ সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৯২৮ সালে এবং ব্যয় হয় প্রায় £৩৭৫,০০০।[২৩]
পরবর্তী দশকগুলোতে প্রেসের আন্তর্জাতিক সম্প্রসারণ ঘটে, হাম্পফ্রি সামনার মিলফোর্ড (Humphrey Milford) এই কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯২০-এর দশকে প্রেসের কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে, যার শাখাগুলোর তালিকায় ছিল লন্ডন, এডিনবরো, গ্লাসগো, লাইপজিগ, টরোন্টো, মেলবোর্ন, কেপটাউন, বোম্বে, কলকাতা, মাদ্রাজ ও সাংহাই।
১৯২৩ সালে OUP একটি সঙ্গীত বিভাগ স্থাপন করে।[২৪] এটি একটি বিশেষায়িত উদ্যোগ ছিল, কারণ তখন সঙ্গীত প্রকাশনা ছিল তুলনামূলকভাবে বিরল।[২৫]
১৯২৯ সালের মন্দার সময় আমেরিকায় আয় হ্রাস পায়, কিন্তু ভারত ছিল একটি "উজ্জ্বল ব্যতিক্রম"। ১৯২৭–৩৪ সালে নিউ ইয়র্কের শাখাটি পুনর্গঠনের মাধ্যমে লাভজনক অবস্থানে ফেরে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে OUP পূর্বের উপনিবেশ এবং কমনওয়েলথ পুনর্গঠনের প্রেক্ষাপটে নিজেকে স্থিতিশীল করে তোলে।
১৯৬০-এর দশকে OUP দক্ষিণ আফ্রিকায় স্থানীয় লেখকদের বই প্রকাশ শুরু করে। বর্তমানে এটি দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম প্রধান শিক্ষা প্রকাশনা সংস্থা। ২০০৮ সালে এটি স্থানীয় ছাত্রদের জন্য স্কলারশিপ প্রদান কর্মসূচি শুরু করে।
দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কার্যক্রম এখনো OUP-এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নিউ ইয়র্ক শাখাটি বর্তমানে মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অক্সফোর্ড বাইবেল বিতরণের জন্য ব্যবহৃত হয়। ২০২১ সাল পর্যন্ত OUP USA ১৮টি পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী বই প্রকাশ করেছে।[২৬]
২০২০ সালের মার্চে COVID-19 মহামারির সময় অক্সফোর্ডের হাই স্ট্রিটে অবস্থিত OUP-এর বইয়ের দোকান স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়।[২৭]
২০২১ সালের ২৭ আগস্ট OUP তাদের ছাপাখানা বিভাগ “Oxuniprint” বন্ধ করে দেয়, যার মাধ্যমে তাদের শতাব্দীপ্রাচীন মুদ্রণ ইতিহাসের একটি অধ্যায় শেষ হয়।[২৮]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Secretaries to the Delegates of the Press (1868–present)", অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। সংগৃহীত ৮ মার্চ ২০২২।
- ↑ "A Short History of Oxford University Press"। Oxford University Press। সংগ্রহের তারিখ ২৯ এপ্রিল ২০২২।
- ↑ Balter, Michael (১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪)। "400 Years Later, Oxford Press Thrives"। The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুন ২০১১।
- ↑ "About Oxford University Press"। OUP Academic। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৮।
- ↑ "A Brief History of the Press"। Cambridge University Press। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৮।
- ↑ Carter p. 137
- ↑ Carter, passim
- ↑ Sutcliffe p. xiv
- ↑ Carter ch. 3
- ↑ Barker p. 11
- ↑ Carter ch. 5
- ↑ Barker p. 22
- ↑ "Oxford University Press on Twitter"।
- ↑ I.G. Phillip, William Blackstone and the Reform of the Oxford University Press (Oxford, 1957) pp. 45–72
- ↑ Carter, ch. 21
- ↑ Barker p. 41. Sutcliffe pp. 4–5
- ↑ Sutcliffe pp. 6, 39–40, 110–111
- ↑ Sutcliffe p. 36
- ↑ Sutcliffe pp. 19–26, 45–46
- ↑ Sutcliffe pp. 48–53, 89–91
- ↑ Barker p. 48
- ↑ Sutcliffe pp. 53–58
- ↑ Simon Winchester, The Meaning of Everything: The Story of the Oxford English Dictionary (Oxford, 2003)
- ↑ Sutcliffe p. 211
- ↑ Sutcliffe p. 210
- ↑ "OUP Major Book Awards"। OUP Academic। Oxford University Press। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২।
- ↑ "Oxford University Press bookshop in High Street has shut forever"। Oxford Mail। ২০২২-০২-১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০৩-১২।
- ↑ Flood, Alison (৯ জুন ২০২১)। "Oxford University Press to end centuries of tradition by closing its printing arm"। The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুন ২০২১।