বিষয়বস্তুতে চলুন

মাকাওতে ইসলাম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

মাকাওতে ইসলাম একটি সংখ্যালঘু ধর্ম। ইসলামিক ইউনিয়ন অব হংকং- এর মতে, সব বিদেশী মুসলিম শ্রমিকসহ (যেমন বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া এবং পাকিস্তান থেকে) একসাথে মাকাওতে প্রায় ১০,০০০ মুসলিম বসবাস করে। মাত্র ৪০০ জনের কাছাকাছি স্থানীয় ম্যাকানিজ মানুষ, এবং তারা সম্মিলিতভাবে ম্যাকাও ইসলামিক সোসাইটি নামে পরিচিত।[][]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

ইউয়ান রাজবংশ

[সম্পাদনা]

ইউয়ান রাজবংশের সময় থেকে মাকাওতে ইসলামের উপস্থিতি রয়েছে। সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য মত হলো, ছিং রাজবংশের যুগ পর্যন্ত সময়কালে মধ্যপ্রাচ্যপারস্যের ব্যবসায়ীরা ম্যাকাওতে ইসলামের বাণী নিয়ে আসেন।[] এর কিছু প্রমাণ মাকাও মসজিদের নিকটবর্তী মুসলিম কবরস্থানে পাওয়া যাবে যেখানে কিছু সমাধি শত শত বছর আগের।[][]

পর্তুগিজ ম্যাকাও

[সম্পাদনা]

মাকাওয়ের পর্তুগিজ শাসনামলে পর্তুগিজ সেনাবাহিনীর সাথে দক্ষিণ এশিয়া থেকে অনেক মুসলমান এসেছিল। ১৮৮০-এর দশকে, তারা তাদের প্রার্থনার স্থানের জন্য একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করে।[][]

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, হুয়েই জাতির অনেকই যুদ্ধের ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচতে চীন প্রজাতন্ত্র থেকে তৎকালীন পর্তুগিজ ম্যাকাওতে পালিয়ে যায়। তাদের অনেকেই কুয়াংতুং প্রদেশের ঝাওছিং থেকে আগত। তবে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর তাদের অনেকেই হংকংয়ে চলে যায়।[] ১৯৪৯ সালে চীনা গৃহযুদ্ধের অবসানের পর উত্তর-পশ্চিম চীন থেকে কিছু মুসলমানও মাকাওতে আসে।[]

১৯৯৯ সালে পর্তুগালের কাছ থেকে চীনের কাছে মাকাও হস্তান্তরের আগে, ইসলামিক ইউনিয়ন অফ হংকং মাকাওতে মুসলিম সম্প্রদায়কে সাহায্য করার জন্য প্রায় ১৫,০০০ হংকং ডলার প্রদান করত।

মাকাও এসএআর

[সম্পাদনা]

গত দশ বছরে মাকাওতে বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে মুসলিম শ্রমিকদের আগমনের মাধ্যমে মাকাওতে মুসলিম সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা বেড়ে ১০,০০০-এর বেশি হয়েছে।[]

মসজিদ

[সম্পাদনা]
মাকাও মসজিদ

মাকাওতে বর্তমানে ম্যাকাও মসজিদ নামে একটিমাত্র মসজিদ রয়েছে। এটি আওয়ার লেডি অফ ফাতিমা পারিশে ৪ রামাল ডস মোরোসে অবস্থিত। মসজিদটি ১৯৮০ সালে পর্তুগিজ শাসিত মাকাওয়ের সময় অভিবাসীদের দ্বিতীয় পর্যায়ে আগত মুসলিম জনগোষ্ঠী কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল। এই মসজিদটিতে বিশেষত রবিবারের সময় ভিড় দেখা যায় যখন বেশিরভাগ কর্মচারীদের কাজের ছুটির দিন থাকে।[১০]

মুসলমানদের উৎসব

[সম্পাদনা]

প্রতি বছর ঈদুল আযহার সময়, মাকাওয়ের মুসলমানরা প্রার্থনা এবং গরীব ও দরিদ্রদের জন্য পশু জবাই করার মাধ্যমে মুসলিম উত্সব উদ্‌যাপন করতে মাকাও মসজিদে জড়ো হয়।[১১][১২] মসজিদে অনুষ্ঠিত বার্ষিক ঈদুল ফিতর উদযাপনের সময়ও একই ঘটনা ঘটে।[১৩]

মুসলিম কবরস্থান

[সম্পাদনা]
মাকাও মুসলিম কবরস্থান

মাকাওতে১৮৫৪ সালে নির্মিত একটি মুসলিম কবরস্থান রয়েছে। এটি ম্যাকাও মসজিদের এলাকাতেই অবস্থিত। সমাধির কিছু পাথরের শৈলী পারস্য থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। এগুলোতে ফার্সি, আরবি, চীনা, ইংরেজি এবং পর্তুগিজ ভাষার লেখা রয়েছে। কিছু সমাধি কয়েকশ বছর আগের।[১৪] কবরস্থানটিতে প্রায় ১২০টি কবর রয়েছে।[]

মুসলিমদের খাবার

[সম্পাদনা]
মাকাওয়ের প্রথম হালাল রেস্টুরেন্ট

২০১৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে, ম্যাকাও উপদ্বীপ এবং তাইপা উভয় স্থানেই পাঁচটি হালাল রেস্তোরাঁ এবং হালাল খাবার বিক্রির দোকান রয়েছে।[][১৫][১৬][১৭][১৮] ম্যাকাও-এর প্রথম হালাল রেস্তোরাঁটি ২০১২ সালে চালু হয়। মাকাও ফিশারম্যানস ওয়ার্ফে অবস্থিত টেস্ট অফ ইন্ডিয়া নামে পরিচিত এই রেস্তোরাঁটি ভারতীয় এবং পর্তুগিজ হালাল খাবার পরিবেশন করে। হালাল সনদ পেতে তাদের সময় লেগেছে তিন বছর।[১৯]

মুসলিম নাম

[সম্পাদনা]

মাকাও মুসলিমদের সাধারণত ফাতিমা, সুরাইয়া, উমর ইত্যাদি সাধারণ নাম থাকে।

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বা ইসলাম-সম্পর্কিত সংগঠন

[সম্পাদনা]
ইসলামিক এসোসিয়েশন অফ মাকাও এর সদর দপ্তর

ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশন অফ মাকাও

[সম্পাদনা]

ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশন অফ মাকাও (আইএএম ; চীনা: 澳門伊斯蘭會; পর্তুগিজ : Associação Islâmica de Macau) ১৯৩৫ সালে প্রতিষ্ঠিত মাকাওয়ের একটি ইসলামী সংস্থা।[২০] সংগঠনটির প্রধান কার্যালয় মাকাও মসজিদে অবস্থিত।[২১] হংকংয়ের ইসলামিক ইউনিয়ন অফ হংকং আইএএম-কে বার্ষিক বাজেট এবং ভর্তুকি প্রদান করে যাতে সংস্থাটি মাকাওতে মুসলমানদের সাহায্য করতে পারে এবং এই অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করতে পারে।[] আইএএম-এর বর্তমান সভাপতি আহমেদ দিন খান এবং সহ সভাপতি ফজল দাদ।

পেদুলি ইন্দোনেশিয়ান মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স কনসার্ন গ্রুপ

[সম্পাদনা]

পেদুলি ইন্দোনেশিয়ান মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স কনসার্ন গ্রুপ ২০০৯ সালে মাকাওতে প্রতিষ্ঠিত হয়। গ্রুপটি মাকাওতে ইন্দোনেশীয় কর্মীদের সহায়তা করে; যেমন ম্যাকাও অভিবাসন আইন সম্পর্কে ব্যাখ্যা করা, কর্মসংস্থান নথির অনুবাদ ইত্যাদি। এই গ্রুপের বর্তমানে প্রায় ৩৫০ জন সদস্য রয়েছে। এটি ইংরেজি ক্লাস, কম্পিউটার কোর্স করার সুযোগ দেয় এবং অনেক কার্যক্রম পরিচালনা করে, যেমন বৃদ্ধাশ্রম পরিদর্শন, এইডস প্রচারণা, হিপ-হপ প্রতিযোগিতা ইত্যাদি।[]

মুসলিম পর্যটন

[সম্পাদনা]

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে আরও বেশি মুসলিম পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য, মাকাও সরকারের পর্যটন অফিস মাকাও যে শুধু একটি গেমিং অঞ্চল নয় তার নতুন ধারণা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রচেষ্টায় নিযুক্ত রয়েছে। গত দুই বছর ধরে, সরকার ভ্রমণের সময় মুসলিম অনুশীলনের উপর সেমিনার করে আসছে, হংকং থেকে হালাল শংসাপত্র পেতে আরও রেস্তোরাঁকে উত্সাহিত করছে এবং হোটেলগুলোকে তাদের লবি পুনর্গঠনের জন্য অনুরোধ করছে যাতে দর্শকদের রেস্তোরাঁয় বা তাদের কক্ষে যাওয়ার সময় ক্যাসিনোতে যেতে না হয়।[২২]

সমসাময়িক সমস্যা

[সম্পাদনা]

মাকাওতে মুসলমানরা প্রায়শই প্রার্থনা করার জন্য সময় পায় না; কারণ তাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের কাজের সময়কালে শুধুমাত্র একটি বিরতি থাকে, যা দৈনিক দুটি নামাজের জন্য যথেষ্ট নয়। কিছু মুসলিম মহিলা কর্মীও কখনও কখনও কাজের সময় তাদের হিজাব পরতে অসুবিধার সম্মুখীন হন, যদিও মাকাওতে এটি কখনও বড় সমস্যা ছিল না।[]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Being a Muslim in Macau: Indonesian community holds triple celebration"। Macau Daily Times। ১৬ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০১৪ 
  2. Fazle Elahi Ahmad। "Muslim Population"। Islamicpopulation.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৫-৩০ 
  3. "Macau Mosques - Mosques in China"। muslim2china.com। ২০১৪-০৭-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০১৪ 
  4. "Macau Mosque - Mosques in China"। muslim2china.com। ২০১৭-১১-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৫-৩০ 
  5. "Islam di Kota Judi Macau"। Fiqhislam.Com। ৯ এপ্রিল ২০১৩। ১৭ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০১৪ 
  6. "Macau News - Muslim community in Macao grows rapidly"। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ অক্টোবর ২০১৫ 
  7. Salama (৬ জুন ২০১৫)। "Muslim community in Macao grows rapidly"Halal Focus। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০২১ 
  8. "Masjids & Islamic Centers In Hong Kong"। Iuhk.org। ২০১৪-১০-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০১৪ 
  9. "文化共享 - 澳门伊斯兰教"। ২৬ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ডিসেম্বর ২০১৩ 
  10. Jumaat (৩০ মার্চ ২০১৮)। "Tak kenal maka tak cinta... Segalanya ada di Macau, paling penting mesra Muslim"mStar (মালয় ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০২১ 
  11. Lau, João Pedro (৬ অক্টোবর ২০১৪)। "Local Muslim community celebrates Eid al-Adha"Macau Daily Times। সংগ্রহের তারিখ ৩০ আগস্ট ২০২১ 
  12. Pinto, Catarina (২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫)। "Muslims gather to celebrate Eid al-Adha in Macau"Macau Daily Times। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০২১ 
  13. "Local Muslims gather to mark end of Ramadan"Macau Daily Times। ২০ জুলাই ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০২১ 
  14. "Islamic Mosque and Cemetery"Macao Government Tourism Office। ১৮ আগস্ট ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০২১ 
  15. "Muslim Family in Macau on a 'Jihad' against Radical Islam"। Macau Daily Times। ২৭ জানুয়ারি ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০১৮ 
  16. "Macau Halal Restaurants - Macau Muslim Restaurants - Muslin2China.com"। Muslim2china.com। ৩১ মার্চ ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০১৪ 
  17. "Halal Restaurants in Macau"। Islaminmacau.com। ১৫ মার্চ ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০১৪ 
  18. "Shops Selling Halal Food Items i"। Islaminmacau.com। ২৭ মার্চ ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০১৪ 
  19. "Macau has first restaurant with Muslim food certificate"। Macau Daily Times। ১০ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৫-৩০ 
  20. "澳門年鑑" (পিডিএফ)। ২৯ নভেম্বর ২০২১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  21. "ISLAMIC ASSOCIATION OF MACAU, Macau,, Macau - Islamic Centers, Masjids Mosques, Muslim Owned Businesses, Islamic Schools and Colleges" 
  22. Kusuma, Sagara (১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬)। "Macau committed to becoming world class destination"The Jakarta Post। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০২১