বিষয়বস্তুতে চলুন

পথের পাঁচালী (চলচ্চিত্র)

এটি একটি ভালো নিবন্ধ। আরও তথ্যের জন্য এখানে ক্লিক করুন।
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

পথের পাঁচালী
ডিভিডি প্রচ্ছদ
পরিচালকসত্যজিৎ রায়
প্রযোজকপশ্চিমবঙ্গ সরকার
রচয়িতাবিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
চিত্রনাট্যকারসত্যজিৎ রায়
উৎসবিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় কর্তৃক 
পথের পাঁচালী
শ্রেষ্ঠাংশে
সুরকাররবিশঙ্কর
চিত্রগ্রাহকসুব্রত মিত্র
সম্পাদকদুলাল দত্ত
প্রযোজনা
কোম্পানি
পরিবেশকঅরোরা ফিল্ম করপোরেশন (১৯৫৫)
এডওয়ার্ড হ্যারিসন (১৯৫৮)
মার্চেন্ট আইভরি প্রডাকশন্স
সনি পিকচার্স ক্লাসিকস (১৯৯৫)[]
মুক্তি
  • ২৬ আগস্ট ১৯৫৫ (1955-08-26) (ভারত)
স্থিতিকাল১১২-১২৬ মিনিট[]
দেশভারত
ভাষাবাংলা
নির্মাণব্যয়৭০,০০০-১,৫০,০০০[] (US$১৪,৬০০–৩১,৩০০)[]
আয় ১১ কোটি

পথের পাঁচালী ১৯৫৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রযোজিত ও সত্যজিৎ রায় পরিচালিত একটি বাংলা চলচ্চিত্র। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি সত্যজিৎ রায় পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র। অপু ত্রয়ী চলচ্চিত্র ধারাবাহিকের প্রথম চলচ্চিত্র পথের পাঁচালীতে এর মুখ্য চরিত্র অপুর শৈশবকে কেন্দ্র করে বিংশ শতাব্দীর বিশের দশকের বাংলার একটি প্রত্যন্ত গ্রামের জীবনধারা চিত্রায়িত করা হয়েছে।

এই চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সমস্যা থাকায় নির্মাণকার্য ব্যাহত হয় এবং দীর্ঘ তিন বছর পরে তা সম্পূর্ণ হয়। স্বল্প নির্মাণব্যয়ে অপেশাদার অভিনেতা ও অনভিজ্ঞ শিল্পীদের নিয়ে এই চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। সেতার বাদক রবিশঙ্কর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের রাগ ব্যবহার করে চলচ্চিত্রের সঙ্গীতাবহ সৃষ্টি করেন। এই ছবিতে সুব্রত মিত্র চিত্রগ্রহণ ও দুলাল দত্ত সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৫৫ সালের ৩রা মে নিউ ইয়র্ক শহরের মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্টের একটি প্রদর্শনীতে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ও পরে সেই বছরই কলকাতা শহরে মুক্তি লাভ করলে দর্শকদের প্রশংসা লাভ করে। সমালোচকরা চলচ্চিত্রটিতে প্রদর্শিত বাস্তবতাবাদ, মানবতা ও গুণমানকে প্রশংসা করলেও অনেকে এর মন্থর লয়কে চলচ্চিত্রটির খামতি বলে মনে করেন।

অপুর জীবন সত্যজিৎ রায়ের অপরাজিত (১৯৫৬) এবং অপুর সংসার (১৯৫৯) নামক অপু ত্রয়ী চলচ্চিত্র ধারাবাহিকের পরবর্তী দুইটি চলচ্চিত্রে দেখানো হয়। পথের পাঁচালী ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে সামাজিক বাস্তবতার উপর ভিত্তি করে সমান্তরাল চলচ্চিত্রের ধারা তৈরি করে। স্বাধীন ভারতে নির্মিত পথের পাঁচালী ছিল প্রথম চলচ্চিত্র যা আন্তর্জাতিক মনোযোগ টানতে সক্ষম হয়। এটি ১৯৫৫ সালে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ১৯৫৬ কান চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ মানবিক দলিল পুরস্কারসহ বহু পুরস্কার লাভ করে, যার ফলে সত্যজিৎ রায়কে ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে একজন বলে গণ্য করা হয়। এছাড়াও এই চলচ্চিত্রটিকে প্রায়ই সর্বকালের সেরা চলচ্চিত্রের তালিকায় দেখা যায়।

কাহিনি সংক্ষেপ

[সম্পাদনা]
পথের পাঁচালী চলচ্চিত্র

বিংশ শতাব্দীর বিশের দশকে নিশ্চিন্তপুর নামক বাংলার এক প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে অপু (সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়) ও তার পরিবারের জীবনযাত্রার কথাই পথের পাঁচালী ছবির মুখ্য বিষয়। অপুর বাবা পুরোহিত হরিহর রায় (কানু বন্দ্যোপাধ্যায়) নিশ্চিন্তিপুরের পৈতৃক ভিটেয় তার নাতিবৃহৎ পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। তিনি পেশায় পুরোহিত। আয় সামান্য। লেখাপড়া জানেন। তাই কিছু ভাল যাত্রাপালা লিখে অধিক উপার্জনের স্বপ্ন দেখেন। বাস্তবে তিনি অত্যন্ত ভালমানুষ এবং লাজুক প্রকৃতির লোক। সকলে সহজেই তাকে ঠকিয়ে নেয়। পরিবারের তীব্র অর্থসংকটের সময়েও তিনি তার প্রাপ্য বেতন আদায় করার জন্য নিয়োগকর্তাকে তাগাদা দিতে পারেন না। হরিহরের স্ত্রী সর্বজয়া (করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়) তার দুই সন্তান দুর্গা (উমা দাশগুপ্ত) ও অপু এবং হরিহরের দূর সম্পর্কের বিধবা পিসি ইন্দির ঠাকরুণের (চুনীবালা দেবী) দেখাশোনা করেন। দরিদ্রের সংসার বলে নিজের সংসারে বৃদ্ধা ন্যুব্জদেহ ইন্দির ঠাকরুনের ভাগ বসানোটা ভাল চোখে দেখেন না সর্বজয়া। সর্বজয়ার অত্যাচার অসহ্য বোধ হলে ইন্দির মাঝে মাঝে অন্য এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। দুর্গা তার ধনী প্রতিবেশীর বাগান থেকে ফলমূল চুরি করে আনে ও ইন্দির ঠাকরুনের সঙ্গে ভাগাভাগি করে খায়। একদিন, সেই প্রুতিবেশীর স্ত্রী এসে দুর্গাকে একটি পুঁতির মালা চুরির দায়ে অভিযুক্ত করেন ও এই চুরির প্রবণতাকে উৎসাহ দেওয়ার অপরাধে সর্বজয়াকে দোষী সাব্যস্ত করেন।

ভাইবোন অপু ও দুর্গার মধ্যে খুব ভাব। দুর্গা দিদি। সেও মায়ের মতোই অপুকে ভালবাসে। তবে মাঝেমধ্যে তাকে খেপিয়ে তুলতেও ছাড়ে না। তারা কখনও কখনও চুপচাপ গাছতলায় বসে থাকে, কখনও মিঠাইওয়ালার পিছু পিছু ছোটে, কখনও ভ্রাম্যমাণ বায়োস্কোপ-ওয়ালার বায়োস্কোপ দেখে বা যাত্রাপালা দেখে। সন্ধ্যাবেলা দু'জনে দূরাগত ট্রেনের বাঁশি শুনতে পেয়ে আনন্দ পায়। একদিন তারা বাড়িতে না বলে অনেক দূরে চলে আসে ট্রেন দেখবে বলে। কাশের বনে ট্রেন দেখার জন্য অপু-দুর্গার ছোটাছুটির দৃশ্যটি এই ছবি'র এক স্মরণীয় ক্ষণ। বাড়ি ফিরে এসে তারা ইন্দির ঠাকরুনকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায়।

গ্রামে ভাল উপার্জন করতে সক্ষম না হয়ে হরিহর একটা ভাল কাজের আশায় শহরে যান। সর্বজয়াকে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান যে, ভাল উপার্জন হলে ফিরে এসে ভাঙা বসতবাড়িটা সারিয়ে তুলবেন। হরিহরের অনুপস্থিতিতে তাদের অর্থসংকট তীব্রতর হয়। সর্বজয়া অত্যন্ত একা বোধ করতে থাকেন ও খিটখিটে হয়ে যেতে থাকেন। বর্ষাকালে একদিন দুর্গা অনেকক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর বাধায়। ওষুধের অভাবে তার জ্বর বেড়েই চলে ও শেষে সেই ঝড়ের রাতেই দুর্গা মারা যায়। এরপর একদিন হরিহর ফিরে আসেন। শহর থেকে যা কিছু এনেছেন, তা সর্বজয়াকে বের করে দেখাতে থাকেন। সর্বজয়া, প্রথমে চুপ করে থাকেন, পরে স্বামীর পায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। হরিহর বুঝতে পারেন যে, তিনি তার একমাত্র কন্যাকে হারিয়েছে। তারা গ্রাম ও পৈতৃক ভিটে ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। যাত্রার তোড়জোড় শুরু হলে, অপু দুর্গার চুরি করা পুঁতির মালাটা আবিষ্কার করে। সে মালাটা ডোবার জলে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। ছবির শেষ দৃশ্যে দেখা যায়, অপু বাবা-মায়ের সঙ্গে গোরুর গাড়িতে চড়ে নতুন এক গন্তব্যের উদ্দেশ্যে চলেছে।

কুশীলব

[সম্পাদনা]

নির্মাণ

[সম্পাদনা]

উপন্যাস

[সম্পাদনা]

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী বাংলা সাহিত্যের একটি ধ্রুপদী জীবনীমূলক উপন্যাস[][] ১৯২৮ সালের একটি সাময়িকপত্রে ধারাবাহিকভাবে উপন্যাসটি প্রকাশিত হতে শুরু করে[১০] এবং ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়।[১১] উপন্যাসটিতে একটি দরিদ্র পরিবারের নিজের গ্রামের ভিটেতে টিকে থাকার লড়াই এবং সেই পরিবারের ছেলে অপুর বেড়ে ওঠা বর্ণিত হয়েছে। উপন্যাসের পরবর্তী অংশে বাবা-মায়ের সঙ্গে অপুর গ্রাম ছেড়ে যাত্রা ও কাশীবাসের কাহিনী রয়েছে, যা সত্যজিৎ রায়ের অপরাজিত নামক পরবর্তী চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছে।[১২]

১৯৪৪ সালে সিগনেট প্রেসের চিত্রলেখ নকশাকার হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন, সত্যজিৎ রায় পথের পাঁচালী উপন্যাসটির একটি নতুন অখণ্ড সংস্করণের অলঙ্করণ করার সময় বইটি পড়েন।[১৩][১৪] প্রেসের মালিক ডি. কে. গুপ্ত তাকে বলেন যে এই বইটি থেকে একটি অসাধারণ চলচ্চিত্র নির্মাণ করা সম্ভব।[১৫] ১৯৪৬-৪৭ সালে সত্যজিৎ যখন চলচ্চিত্র বানানোর কথা চিন্তাভাবনা শুরু করেন,[১৬] তখন তিনি এই উপন্যাসের মানবতা ও গীতিধর্মিতার প্রভাবে এটিকে চলচ্চিত্র রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেন।[১৭] লেখকের বিধবা স্ত্রী সত্যজিৎ রায়কে এই উপন্যাস থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণের অনুমতি দেন; চুক্তিটি নামেমাত্র ছিল, কোন আর্থিক প্রদান করা হয়নি।[১৮]

চিত্রনাট্য

[সম্পাদনা]

ছবি নির্মাণের জন্য পথের পাঁচালী চলচ্চিত্রের কোন চিত্রনাট্য লেখা হয়নি। সত্যজিৎ রায়ের আঁকা ছবি ও টীকাগুলি থেকে এই চলচ্চিত্র নির্মিত হয়।[১৯] তিনি ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে লন্ডনের উদ্দেশ্যে সমুদ্রযাত্রার সময় এই সকল নোটগুলি লেখেন।[২০]

অপুর পাঁচালী বইতে সত্যজিৎ লিখেছেন যে তিনি চলচ্চিত্রের প্রয়োজনে তিনি উপন্যাসের বেশ কিছু চরিত্রকে সরিয়ে দিয়েছিলেন ও গল্পটিকেও কিছুতা রদবদল করেছিলেন।[২১] উপন্যাসের শুরুর দিকেই গ্রামের মন্দিরে সকলের সামনেই ইন্দির ঠাকরুণের মৃত্যু ঘটে, কিন্তু চলচ্চিত্রে অপু ও দুর্গা তার মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে। চলচ্চিত্রের অপু ও দুর্গার ট্রেন দেখার জন্য দৌড়নোর দৃশ্যটিও উপন্যাসে নেই। বর্ষায় ভিজে প্রচণ্ড জ্বর বাঁধিয়ে দুর্গার মৃত্যু ঘটে বলে চলচ্চিত্রে দেখানো হলেও উপন্যাসে মৃত্যুর কারণ অজানাই রাখা হয়েছে। হরিহর রায়ের পরিবারের গ্রাম ত্যাগ দিয়ে চলচ্চিত্র শেষ হলেও উপন্যাস সেই ভাবে শেষ হয়নি।[১২]

অভিনয়শিল্পী নির্বাচন

[সম্পাদনা]

পথের পাঁচালী চলচ্চিত্র নির্মাণ হওয়ার আগেই কানু বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা চলচ্চিত্র জগতের একজন প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা ছিলেন। সত্যজিতের বন্ধু-পত্নী করুণা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতীয় গণনাট্য সংঘের একজন অপেশাদার অভিনেত্রী ছিলেন। দুর্গার ভূমিকায় অভিনয় করার পূর্বে উমা দাশগুপ্ত কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেছিলেন।[২২]

অপুর চরিত্রে অভিনয় করার জন্য সত্যজিৎ পাঁচ থেকে সাত বছরের শিশুর সন্ধানে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেন, কিন্তু কোন বিজ্ঞাপনের মারফত আসা কোন ছেলেকেই তার পছন্দ হয়নি, কিন্তু সত্যজিতের স্ত্রী বিজয়া রায় তাদের বাড়ির নিকটে সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় নামে একটি ছেলেকে লক্ষ্য করেন এবং অবশেষে অপুর চরিত্রে তাকেই পছন্দ করা হয়। ইন্দির ঠাকরুণের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সত্যজিৎ কলকাতার নিষিদ্ধ পল্লী থেকে চুনীবালা দেবী নামক একজন পুরাতন নাট্যাভিনেত্রীকে খুঁজে বের করেন। অন্যান্য বিভিন্ন অনুল্লেখ্য চরিত্রে বড়াল গ্রামের বাসিন্দারা অভিনয় করেন।[২২]

দৃশ্যধারণ

[সম্পাদনা]

চলচ্চিত্রটির চিত্রগ্রহণ শুরু হয় ১৯৫২ সালের ২৭শে অক্টোবর।[২৩] প্রধান চিত্রধারণের জন্য কলকাতার নিকটবর্তী বড়াল গ্রামটিকে নির্বাচন করা হয়েছিল, এবং রাতের দৃশ্যগুলি স্টুডিওতে ধারণ করা হয়েছিল।[২৩] কলাকুশলীদের মধ্যে কয়েকজন প্রথমবারের মত কাজ করছিলেন, তন্মধ্যে সত্যজিৎ রায় নিজে, এবং চিত্রগ্রাহক সুব্রত মিত্র, যিনি এর পূর্বে কখনো চলচ্চিত্রের ক্যামেরা চালাননি। শিল্প নির্দেশক বংশী চন্দ্রগুপ্তের পেশাদারী অভিজ্ঞতা ছিল, যিনি ল্য ফ্লোভ চলচ্চিত্রে জঁ রনোয়ারের সঙ্গে কাজ করেছিলেন। এই চলচ্চিত্রের পর মিত্র ও চন্দ্রগুপ্ত দুজনেই তাদের স্ব স্ব পেশায় প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিলেন।[২৪][২৫]

মিত্র ল্য ফ্লোভ চলচ্চিত্রের সেটে সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন, সেখানে মিত্র চলচ্চিত্র নির্মাণের বিভিন্ন বিষয়াদি পর্যবেক্ষণ, ছবি তোলা ও নিজের কাজের জন্য আলোক সম্পাতের উপর নোট করার অনুমতি পেয়েছিলেন। রায়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়ার পর মিত্র তাকে চলচ্চিত্রটির নির্মাণ সম্পর্কে জানাতেন এবং তার ছবিগুলি দেখাতেন। রায় এই কাজে মুগ্ধ হয়ে তাকে পথের পাঁচালী চলচ্চিত্রে সহকারী হিসেবে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন, এবং যখন তিনি এই চলচ্চিত্রের কাজ শুরু করেন, তখন তাকে এই চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানান। ২১ বছর বয়সী মিত্রের চলচ্চিত্র নির্মাণের কোন অভিজ্ঞতা ছিল না, ফলে যারা চলচ্চিত্র নির্মাণ সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলের তারা এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সংশয় পোষণ করেছিল। মিত্র নিজে ধারণা করেছিলেন সত্যজিৎ রায় প্রতিষ্ঠিত কলাকুশলীদের নিয়ে কাজ করতে বিচলিত ছিলেন।[২৬]

শুরু থেকেই অর্থায়ন একটি বড় সমস্যা ছিল। কোন প্রযোজক এই চলচ্চিত্রে লগ্নি করতে আগ্রহী ছিলেন না, কারণ এতে বড় কোন তারকা নেই, কোন গান ও মারপিটের দৃশ্য নেই।[১৮][২৭] সত্যজিৎ রায়ের পরিকল্পনা শুনে কল্পনা মুভিজের প্রযোজক ভট্টাচার্য বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধবা স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে চলচ্চিত্রের স্বত্ব তাকে দেওয়ার অনুমতি চান এবং চলচ্চিত্রটি সে সময়ের প্রতিষ্ঠিত পরিচালক দেবকী বসুকে দিয়ে পরিচালনা করাতে চান। কিন্তু বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন কারণ তিনি ইতোমধ্যে সত্যজিৎ রায়কে চলচ্চিত্র নির্মাণের অনুমতি প্রদান করেছিলেন।[২৮] চলচ্চিত্রটির আনুমানিক নির্মাণব্যয় ছিল ₹৭০,০০০।[২৭] রানা দত্ত নামে একজন প্রযোজক দৃশ্যধারণ চালু রাখার জন্য অর্থায়ন করেন, কিন্তু তার কয়েকটি চলচ্চিত্র ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ হওয়ায় তিনি অর্থায়ন বন্ধ করে দেন।[২৯]

সত্যজিৎ রায়কে তাই আরও কিছু দৃশ্য ধারণ করতে ধার করতে হয়, যাতে তিনি সেই দৃশ্যগুলি দেখিয়ে কোন সম্ভাব্য প্রযোজককে সম্পূর্ণ চলচ্চিত্র অর্থায়নে রাজি করাতে পারেন।[১৮] তহবিল সংগ্রহের জন্য তিনি গ্রাফিক্স নকশাবিদ হিসেবে তার কাজ চালিয়ে যান, তার জীবন বীমা পলিসি বন্ধক রাখেন এবং তার গ্রামোফোনের রেকর্ডের সংগ্রহ বিক্রি করে দেন। চলচ্চিত্রটির নির্মাণ ব্যবস্থাপক অনিল চৌধুরী সত্যজিৎ রায়ের স্ত্রী বিজয়াকে তার গহনাগুলি বন্ধক রাখতে বলেন।[২৯] তথাপি দৃশ্যধারণের জন্য তার যথেষ্ট পরিমান অর্থ ছিল না, ফলে প্রায় এক বছর দৃশ্যধারণ বন্ধ ছিল। এরপর অল্প অল্প করে থেকে থেকে চিত্রগ্রহণ চলে।[৩০] সত্যজিৎ রায় পরবর্তী কালে স্বীকার করেন যে এই দেরী হওয়া তাকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল এবং তিনটি অভূতপূর্ব বিষয় চলচ্চিত্রটিকে রক্ষা করেছিল, "এক, অপুর কণ্ঠ ভাঙ্গে নি। দুই, দুর্গা বড় হয়ে যায়নি। তিন, ইন্দির ঠাকরুন মারা যায়নি।"[৩১]

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়কে সত্যজিৎ রায়ের মায়ের একজন প্রভাবশালী বন্ধু এই চলচ্চিত্র নির্মাণে সহায়তার জন্য অনুরোধ করেন।[৩০] মুখ্যমন্ত্রী এতে এগিয়ে আসেন এবং সরকারি কর্মকর্তারা চলচ্চিত্রটির ধারণকৃত দৃশ্যগুলি দেখেন।[৩২] পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রচারণা বিভাগ চলচ্চিত্রটি নির্মাণের ব্যয়ের পরিমাণ মূল্যায়ন করেন এবং ঋণ অনুমোদন করেন, যাতে কিস্তিতে প্রদত্ত এই ঋণ দিয়ে সত্যজিৎ রায় নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেন।[৩১][] সরকার চলচ্চিত্রের প্রকৃতি বুঝতে পারেনি, তারা ভেবেছিল এটি গ্রামীণ উন্নয়ন সম্পর্কিত কোন প্রামাণ্যচিত্র, এবং ঋণটি এই চলচ্চিত্রের নামে "রাস্তা উন্নয়ন" খাতে নথিভুক্ত করেছিল।[৩৩]

নিউ ইয়র্কের মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্টের (এমওএম) প্রদর্শনী ও প্রকাশনা বিভাগের প্রধান মনরো হুইলার[৩৪] ১৯৫৪ সালে কলকাতায় ছিলেন। তিনি এই চলচ্চিত্রের ব্যাপারে শোনেন এবং সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি অসম্পূর্ণ দৃশ্যগুলিকে খুবই উচ্চমান সম্পন্ন বলে বিবেচনা করেন এবং সত্যজিৎ রায়কে চলচ্চিত্রটি সমাপ্ত করতে অনুপ্রাণিত করেন, যাতে এটি পরের বছর এমওএমএ'র প্রদর্শনীতে দেখাতে পারেন।[৩০] ছয়মাস পর মার্কিন পরিচালক জন হিউস্টন তার দ্য ম্যান হু উড বি কিং (যা ১৯৭৫ সালে নির্মিত হয়েছিল) চলচ্চিত্রের কিছু স্থান নির্বাচনের জন্য ভারত এসেছিলেন।[৩৫] হুইলার হিউস্টনকে সত্যজিৎ রায়ের কাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করতে বলেন।[৩৬] হিউস্টন অসম্পূর্ণ চলচ্চিত্রের অংশবিশেষ দেখেন এবং একে "একজন বড়মাপের চলচ্চিত্র নির্মাতার কাজ" বলে অভিহিত করেন।[৩৫] হিউস্টনের ইতিবাচক মত প্রদানের কারণে এমওএমএ সত্যজিৎ রায়কে অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করে সাহায্য করে।[৩৭]

নির্মাণে দেরী ও ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়া সহ পথের পাঁচালী চলচ্চিত্রটি দৃশ্যধারণ সমাপ্ত হতে তিন বছর লেগে যায়।[৩৮]

প্রভাব

[সম্পাদনা]

পথের পাঁচালীর বাস্তবতাবাদধর্মী বর্ণনার ধরন ইতালিয় নব্যবাস্তববাদ ও ফরাসি পরিচালক জঁ রনোয়ারের কাজের দ্বারা প্রভাবিত।[৩৯][৪০] ১৯৪৯ সালে রনোয়ার তার ল্য ফ্লোভ চলচ্চিত্রের চিত্রধারণের জন্য কলকাতায় আসেন।[৪১] ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত কলকাতা ফিল্ম সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সত্যজিৎ রায় তাকে গ্রামের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যেতে সহায়তা করেন।[৪১] যখন সত্যজিৎ রনোয়ারকে পথের পাঁচালী চলচ্চিত্র নির্মাণের দীর্ঘদিনের ইচ্ছার কথা জানান, রনোয়ার তাকে কাজ শুরু করার জন্য উৎসাহ প্রদান করেন।[৪২] ১৯৫০ সালে সত্যজিৎ যে বিজ্ঞাপন নির্মাণ এজেন্সিতে কাজ করতেন সেই ডি.জে. কেইমার থেকে তাকে লন্ডনে তাদের সদর দপ্তর পাঠায়। লন্ডনে ছয়মাস অবস্থান কালে তিনি প্রায় ১০০টি চলচ্চিত্র দেখেন।[৪৩] তন্মধ্যে ভিত্তোরিও দে সিকা'র নব্যবাস্তবতাবাদী চলচ্চিত্র লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে (১৯৪৮) তাকে ব্যাপক প্রভাবিত করে। ১৯৮২ সালে এক বক্তৃতায় সত্যজিৎ বলেন যে তিনি মঞ্চ থেকে চলচ্চিত্র নির্মাতা হওয়ার জন্য এসেছিলেন।[৪৩] এই চলচ্চিত্রটি তাকে বিশ্বাস জুগিয়েছিল যে বাস্তবতাবাদী চলচ্চিত্র নির্মাণ সম্ভব এবং অপেশাদার অভিনয়শিল্পী দিয়ে বিভিন্ন বাস্তবিক স্থানে এই চলচ্চিত্রের চিত্রধারণ করা হয়েছিল।[৪৪]

আকিরা কুরোসাওয়া'র রাশোমোন (১৯৫০) ও বিমল রায়ের দো বিঘা জমিন (১৯৫৩) চলচ্চিত্র দুটির আন্তর্জাতিক সফলতা সত্যজিৎ রায়কে বিশ্বাস জুগিয়েছিল যে পথের পাঁচালীও আন্তর্জাতিক দর্শকদের সাড়া পাবে।[২৯] সত্যজিতের স্বদেশী প্রভাবও ছিল, যেমন বাংলা সাহিত্য ও স্থানীয় ভারতীয় লোকনাট্যের রীতি, বিশেষ করে সংস্কৃত নাটকের কাব্যরসের ধারা। দারিউস কুপার কাব্যরসের জটিল রীতিকে এইভাবে বর্ণনা করেছেন যে "শুধু চরিত্রাবলির অনুভূতিকেই কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে না, বরং তা একটি নির্দিষ্ট শৈল্পিক প্রক্রিয়ায় দর্শকদের সামনে উপস্থাপিত হয়।"[৪৫]

সঙ্গীত

[সম্পাদনা]
পথের পাঁচালীর সংগীত ধারণের সময় রবিশঙ্কর ও সত্যজিৎ রায় (১৯৫৫)

চলচ্চিত্রটিতে সুরদান করেন সেতার বাদক রবিশঙ্কর। তিনি সে সময়ে তার কর্মজীবনের প্রারম্ভিক পর্যায়ে ছিলেন, তার অভিষেক হয়েছিল ১৯৩৯ সালে।[৪৬] ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের রাগ ব্যবহার করে এই চলচ্চিত্রের সঙ্গীতাবহ তৈরি করা হয়েছিল, যার অধিকাংশই সেতার ব্যবহার করে করা হয়েছিল। দ্য ভিলেজ ভয়েস-এর একটি সংখ্যায় এই চলচ্চিত্রের সঙ্গীত সম্পর্কে বলা হয়েছিল, "একই সঙ্গে শোকপূর্ণ ও উল্লসিত",[৪৭] এবং এটি দ্য গার্ডিয়ান-এর ২০০৭ সালের ৫০টি সেরা চলচ্চিত্রের সঙ্গীত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।[৪৮] এছাড়া বলা হয় এটি দ্য বিটলস, বিশেষ করে জর্জ হ্যারিসনকে প্রভাবিত করেছিল।[৪৯]

রবিশঙ্কর আবহ সঙ্গীতের সুর করার পূর্বে প্রায় অর্ধেকের বেশি সম্পাদিত সংস্করণ দেখেছিলেন, কিন্তু তার পূর্বেই তিনি এই গল্পটির সঙ্গে পরিচিত ছিলেন।[৩৫][৫০] রবিনসনের মতে, যখন রায় শঙ্করের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, শঙ্কর একটি লোক-ভিত্তিক কিন্তু কিছুটা অত্যাধুনিক সুরের গুঞ্জন শুনিয়েছিলেন। একটি বাঁশের বাঁশিতে তোলা সুরটি এই চলচ্চিত্রের প্রধান সুর হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অধিকাংশ সুর এক রাতের মধ্যেই সম্পন্ন হয়েছিল, যার সময়কাল ছিল প্রায় ১১ ঘণ্টা।[৩৫] শঙ্কর দুটি একক সেতারের সুর করেছিলেন, একটি দেশ রাগ ভিত্তিক সুর এবং অপরটি তোড়ি রাগ ভিত্তিক বিষণ্ন সুর।[৫১] এছাড়া তিনি তার সানাইয়ে একটি পটদীপ রাগ সৃষ্টি করেন, যা হরিহর যখন দুর্গার মৃত্যুর খবর জানতে পারেন সেই দৃশ্যে ব্যবহৃত হয়েছিল।[৫২] সঙ্গীতের এই অংশে চলচ্চিত্রটির চিত্রগ্রাহক সুব্রত মিত্র সেতার বাজিয়েছিলেন।[৫৩]

মুক্তি ও প্রতিক্রিয়া

[সম্পাদনা]

সত্যজিৎ রায় ও তার দল দীর্ঘ সময় ধরে নির্মাণ-পরবর্তী ধাপে কাজ করেন, যাতে মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্টের ১৯৫৫ সালের মে মাসের ভারতের টেক্সটাইলস অ্যান্ড অর্নামেন্টাল আর্টস প্রদর্শনীতে চলচ্চিত্রটিকে ঠিক সময়ে জমা দিতে পারেন।[৫৪] দ্য স্টোরি অব অপু অ্যান্ড দুর্গা নামে জমা দেওয়া চলচ্চিত্রটিতে কোন আন্তঃভাষ্য ছিল না। এমওএমএ'র ছয় সপ্তাহের ধারাবাহিক প্রদর্শনীতে এটি অন্যতম পরিবেশনা ছিল, এছাড়া এই প্রদর্শনীতে সরোদ বাদক আলী আকবর খান ও শাস্ত্রীয় নৃত্যশিল্পী শান্তা রাওয়ের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিষেক ঘটে। এমওএমএ-এ ৩রা মে প্রদর্শিত পথের পাঁচালী চলচ্চিত্রটি সমাদৃত হন।[৫২] এরপর, চলচ্চিত্রটি কলকাতার অ্যাডভার্টাইজিং ক্লাবের বার্ষিক সভায় স্থানীয় উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়; কিন্তু এখানে নেতিবাচক সাড়ার ফলে সত্যজিৎ রায় "খুবই মর্মাহত" হন।[৫৫] কলকাতায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পূর্বে সত্যজিৎ রায় বৃহদাকৃতির পোস্টারের নকশা করেন, তন্মধ্যে ছিল অপু ও দুর্গার দৌড়ানার নিয়ন দৃশ্য, যা শহরের ব্যস্ততম স্থানগুলিতে স্থাপন করা হয়েছিল। পথের পাঁচালী কলকাতার চলচ্চিত্র প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ২৬শে আগস্ট ১৯৫৫ সালে এবং শুরুতে খুবই অল্প সাড়া পড়ে। কিন্তু লোকমুখে শোনার পর এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যেই প্রেক্ষাগৃহ লোকে পরিপূর্ণ হতে শুরু করে। এটি আবার আরেকটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেওয়া হয় এবং সেখানে এটি সাত সপ্তাহব্যাপী চলে।[৫৫] আন্তঃভাষ্য তৈরিতে দেরী হওয়ায় যুক্তরাজ্যে মুক্তি ১৯৫৭ সালের ডিসেম্বর নাগাদ পিছিয়ে যায়। ১৯৫৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এটি ব্যাপক সফলতা অর্জন করে এবং নিউ ইয়র্কের ফিফথ অ্যাভিনিউ প্লেহাউজে আটমাস ধরে চলে।[৫৬] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলচ্চিত্রটির প্রারম্ভিক মুক্তি থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার $৫০,০০০ আয় করে,[৫৭][৫৮] এবং কয়েক দশক পরে ২০১৫ সালে সীমিত পরিসরে মুক্তি হতে চলচ্চিত্রটির আয় হয় $৪০২,৭২৩।[৫৯] সর্বোপরি, চলচ্চিত্রটি বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসে মোট প্রায় ₹১০০ মিলিয়ন আয় করে।[৬০]

ভারতে চলচ্চিত্রটি ভূয়সী প্রশংসা লাভ করে। দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া লেখে, "অন্য কোন ভারতীয় চলচ্চিত্রের সঙ্গে এর তুলনা বাতুলতামাত্র... পথের পাঁচালী একটি বিশুদ্ধ চলচ্চিত্র।"[৬১] পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় কলকাতায় প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর জন্য একটি বিশেষ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেন, তিনি প্রেক্ষাগৃহ থেকে মুগ্ধ হয়ে বের হন।[৬২] চলচ্চিত্রে দরিদ্রতার চিত্রায়নের জন্য পশ্চিমবঙ্গ ও ভারত সরকারের অভ্যন্তরের কয়েকজনের বিরোধিতা সত্ত্বেও নেহরুর অনুমতিতে পথের পাঁচালী ১৯৫৬ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রেরণ করা হয়।[৬৩] চলচ্চিত্রটি এই উৎসবের একেবারে শেষে প্রদর্শিত হয়, এবং কাকতালীয়ভাবে জাপানি প্রতিনিধিদের একটি পার্টির সঙ্গে একই সময়ে প্রদর্শনের কারণে অল্প সংখ্যক সমালোচক চলচ্চিত্রটি দেখেন। যদিও কয়েকজন শুরুতে আরেকটি সম্ভাব্য ভারতীয় অতিনাটকীয় চলচ্চিত্র দেখতে উৎসাহী ছিলেন না, কিন্তু চলচ্চিত্র সমালোচক আর্তুরো লানোসিতা চলচ্চিত্রটি সম্পর্কে মন্তব্য করেন, "পদ্যের জাদুকরী ঘোড়া... যা পর্দায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।"[৬৪] পরবর্তীতে পথের পাঁচালী এই উৎসবের শ্রেষ্ঠ মানবিক দলিল পুরস্কার লাভ করে।[৬৪]

কানের প্রদর্শনীর পর লিন্‌জি অ্যান্ডারসন মন্তব্য করেন যে, পথের পাঁচালী চলচ্চিত্রের "চূড়ান্ত বিস্মরণীয় অভিজ্ঞতার গুণ রয়েছে।"[৬৫] পরবর্তী বছরগুলিতে সমালোচকগণ চলচ্চিত্রটির ইতিবাচক পর্যালোচনা করেন। ১৯৫৮ সালে টাইম পত্রিকা পথের পাঁচালীকে "রবার্ট ফ্ল্যাহার্টির ন্যানুক অব দ্য নর্থ-এর পর সম্ভবত লোককথার উপর চিত্রায়িত সুন্দরতম চলচ্চিত্র" বলে অভিহিত করে।[৬৬] ১৯৮২ সালে পলিন কায়েল তার ৫০০১ নাইটস অ্যাট দ্য মুভিজ বইতে লেখেন, "সুন্দর, মাঝে মাঝে আনন্দদায়ক ও ভালোবাসায় পরিপূর্ণ, এটি পর্দায় ভারতের নতুন দৃষ্টিকোণ নিয়ে এসেছে।"[৬৭] ব্যাসিল রাইট এই চলচ্চিত্রটিকে "শিল্পকলার নতুন ও অপ্রত্যাখেয় কর্ম" বলে অভিহিত করেন।[৬৮][] জেমস বেরার্ডিনেল্লি ১৯৯৬ সালে লেখেন, "চলচ্চিত্রটি সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত বাঁধা পেরিয়ে দর্শকদের আত্মা ও মন ছুয়ে যায়।"[৬৯] ২০০৬ সালে দি অবজারভার-এর ফিলিপ ফ্রেঞ্চ একে "সর্বকালের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র" বলে অভিহিত করেন।[৭০] পথের পাঁচালী মুক্তির ২০ বছর পর আকিরা কুরোসাওয়া বলেন, এই চলচ্চিত্রের প্রভাব সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে এবং এই চলচ্চিত্রের "গভীর অনুভূতিকে নাড়া" দেওয়ার ক্ষমতার তিনি বিশেষ প্রশংসা করেন।[৭১]

তবে এই চলচ্চিত্রের প্রতিক্রিয়া সমভাবে ইতিবাচক ছিল না। চলচ্চিত্রটি দেখার পর ফ্রঁসোয়া ত্রুফো বলেন, "আমি এমন কোন চলচ্চিত্র দেখতে চাই না যেখানে একজন কৃষক হাত দিয়ে খাচ্ছে।"[৩৩] দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর প্রভাবশালী সমালোচক বসলি ক্রাউদার[৭২] ১৯৫৮ সালে চলচ্চিত্রটির ধীরে ধীরে বিকশিত মর্মভেদী ও কাব্যিক গুণের প্রশংসা করলেও লেখেন, "কাঠামোহীন বা তালিকাহীন গতিসমৃদ্ধ এই চলচ্চিত্রটি হলিউডের চলচ্চিত্র সম্পাদকদের "এলোমেলো কর্তন"-এর অংশ হিসেবেও পাস করতে পারতো না।"[৭৩] দ্য হার্ভার্ড ক্রিমজন ১৯৫৯ সালে যুক্তি দেখান যে খণ্ড খণ্ড অংশে হওয়া "এই চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা: একে অকেজো করে ফেলে, দীর্ঘসময় মনোযোগ ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়। পথের পাঁচালীর জন্য, এটি যেমনই অসাধারণ হোক না কেন, বসার মতো একটি কাজ।[৭৪] ১৯৮০-এর দশকের প্রারম্ভে সংসদ সদস্য ও সাবেক অভিনেত্রী নার্গিস দত্ত "দারিদ্র্য রপ্তানি"র জন্য সত্যজিৎ রায়ের সমালোচনা করেন।[৭৫] দারিয়ুস কুপার লেখেন, যদিও অনেক সমালোচক অপু ত্রয়ীতে প্রদর্শিত তৃতীয় বিশ্বের সংস্কৃতির উচ্চপ্রশংসা করেছেন, বাকিরা একটি সংস্কৃতির এমন প্রণয়মূলক রূপায়নের সমালোচনা করেন।[৭৬]

২০২১ সালের মে মাসের রটেন টম্যাটোসে ৬৯টি পর্যালোচনার ভিত্তিতে চলচ্চিত্রটির রেটিং ছিল ৯.৮/১০। ওয়েবসাইটটির সমালোচকদের ঐকমত্যে বলা হয় "এমন একটি চলচ্চিত্র জার জন্য বিশেষ ধৈর্যের দরকার; পথের পাঁচালীর পরিচালক সত্যজিৎ রায়কে তার অভিষেকেই ধ্রুপদী কর্ম উপহার দিতে সাহায্য করেছে।"[৭৭] ২০১৮ সালে চলচ্চিত্রটি বিবিসির সর্বকালের ১০০ সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র তালিকায় ১৫তম স্থান অধিকার করে।[৭৮] এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান এটিকে "এখন পর্যন্ত নির্মিত সেরা চলচ্চিত্রগুলির মধ্যে একটি" বলে অভিহিত করেছেন।[৭৯]

১৯৯০-এর দশকে সংরক্ষণ

[সম্পাদনা]

১৯৯০-এর দশকে একাডেমি ফিল্ম আর্কাইভের সহযোগিতায় মার্চেন্ট আইভরি প্রডাকশন্স[৮০]সনি পিকচার্স ক্লাসিকস এই চলচ্চিত্রের মুদ্রণ সংরক্ষণের প্রকল্পে হাতে নেয়। সংরক্ষিত মুদ্রণ ও সত্যজিৎ রায়ের আরও কয়েকটি চলচ্চিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির জন্য নির্বাচিত হয়।[৬৯] পথের পাঁচালী চলচ্চিত্রটি রিজিয়ন ২ (ডিভিডি রিজিয়ন কোড) পিএএল ও রিজিয়ন ১ এনটিএসসি ডিভিডি সংস্করণে পাওয়া যায়। আর্টিফিশিয়াল আই এন্টারটেইনমেন্ট রিজিয়ন ২ এবং কলাম্বিয়া ট্রাই-স্টার রিজিয়ন ১ ডিভিডি সংস্করণের পরিবেশক।[][]

২০১৫ সালে পুনরুদ্ধার

[সম্পাদনা]

২০১৩ সালে ভিডিও পরিবেশক কোম্পানি দ্য ক্রাইটেরিয়ন কালেকশন একাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেসের চলচ্চিত্র আর্কাইভের সঙ্গে মিলে পথের পাঁচালী-সহ অপু ত্রয়ী'র মূল নেগেটিভগুলি সংরক্ষণের কাজ শুরু করে। ১৯৯৩ সালে লন্ডনে এক অগ্নিকাণ্ডে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সত্যজিৎ রায়ের সবকয়টি চলচ্চিত্রের ধারণকৃত ছবি ও খণ্ডাংশগুলি সংরক্ষণের জন্য মোশন পিকচার একাডেমিতে পাঠানো হয়েছিল, যা প্রায় দুই দশক অগোচরে পড়ে রয়েছিল।[৮১] পুনঃপরীক্ষণের সময় এটি আবিষ্কার করা হয়, যদিও চলচ্চিত্রগুলির অনেকগুলি অংশ সত্যিই অগ্নিকাণ্ডে এবং সময়ের প্রভাবে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, বাকি অংশগুলি উদ্ধারযোগ্য ছিল। এই বস্তুগুলি ইতালির বোলোনিয়ায় লিমাজিন রিত্রোভাতা পুনরুদ্ধার গবেষণাগারে পাঠানো হয়। নেগেটিভগুলি পুনরুদ্ধার ও স্ক্যান করতে প্রায় এক হাজার ঘণ্টা শ্রম ব্যয়ের পর পথের পাঁচালীর ৪০% নেগেটিভ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়।[৮১] নেগেটিভের যেসব অংশ পাওয়া যাচ্ছিল না বা ব্যবহার অনুপযোগী ছিল, সেসব অংশে নকল নেগেটিভ এবং বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও আর্কাইভকৃত উৎস থেকে প্রাপ্ত সর্বোৎকৃষ্ট অংশগুলি ব্যবহৃত হয়েছিল।[৮১] তিনটি চলচ্চিত্রের ডিজিটাল সংস্করণ তৈরিতে দ্য ক্রাইটেরিয়ন কালেকশনের নিজস্ব গবেষণাগারে ছয়মাস ব্যয় হয়, এবং চলচ্চিত্রগুলি ভিন্নভাবে সংরক্ষিত হয় ও কিছু ত্রুটিও থেকে যায়।[৮১]

২০১৫ সালের ৪ঠা মে পুনরুদ্ধারকৃত পথের পাঁচলী মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্টে প্রদর্শিত হয়। ৬০ বছরের কিছু সময় পূর্বে একই স্থানে এই চলচ্চিত্রের বৈশ্বিক উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়েছিল।[৮২] কয়েকদিন পর তিনটি চলচ্চিত্রই নিউ ইয়র্কের ফিল্ম ফোরামে প্রদর্শিত হয়, যেখানে এই চলচ্চিত্র তিনটি তিন সপ্তাহ প্রদর্শনের জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছিল। জনগণের অধিক চাহিদার ফলে এবং একজন লেখক মন্তব্য "যথেষ্ট দর্শক দেখতে পারছে না"-এর ফলে[৮৩] চলচ্চিত্রগুলি ৩০শে জুন পর্যন্ত এই প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হয়। এই ত্রয়ী চলচ্চিত্র পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার অনেকগুলি শহরে প্রদর্শনীর জন্য পাঠানো হয়েছিল।[৮৪] এই পুনরুদ্ধারকৃত কাজটি বেশ সমাদৃত হয়, এবং অনেকেই মন্তব্য করেন যে পুনরুদ্ধারকৃত চলচ্চিত্রগুলি দেখতে "জমকালো",[৮২] "অকৃত্রিম",[৮৫] ও "বিস্ময়কর"।[৮৬]

বিষয়বস্তু

[সম্পাদনা]

১৯৫৮ সালে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর পর্যালোচনায় বসলি ক্রাউদার লেখেন যে, পথের পাঁচালী ইচ্ছাকৃতভাবেই দেখিয়েছে যে "দারিদ্র্য সবসময় ভালোবাসাকে ঠুনকো করে দেয় না" এবং কীভাবে অত্যন্ত দরিদ্র ব্যক্তিও তাদের জগতে ক্ষুদ্র সুখ উপভোগ করে।[৭৩] ম্যারি সেটন চলচ্চিত্রটি কীভাবে দারিদ্র্যের চিত্রায়নকে এবং কৈশোরের আনন্দ ও উল্লাসকে পরিকীর্ণ করেছে তা বর্ণনা করেছেন। তিনি দুর্গা ও ইন্দির ঠাকরুনের সম্পর্ক ও তাদের ভাগ্যকে দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করতে গিয়ে লেখেন, "নবীন ও প্রবীণ দুজনেই মারা যায়।" সেটন চলচ্চিত্রের গীতধর্মী গুণ সম্পর্কে লিখতে গিয়ে মৌসুমী বায়ু প্রবাহের পূর্বের সময়ের উল্লেখ করেন।[৮৭] রবিনসন চলচ্চিত্রটির গীতধর্মী আনন্দের অদ্ভুত গুণ সম্পর্কে লেখেন যে, পথের পাঁচালী হল "অত্যাধুনিকতার সঙ্গে সাহজিক ব্যক্তির উপর চিত্রায়ন এবং এতে কোন অবনমিত ও স্ফীত ভাবানুভূতির সন্ধান পাওয়া যায়নি।"[৮৮]

দারিয়ুস কুপার চলচ্চিত্রে বিভিন্ন কাব্যরস ব্যবহারের উপর আলোকপাত করেন,[৮৯] তিনি অপুর বারবার "বিস্ময়ের আগমন" হওয়ার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেন,[৯০][] বালকটি কেবল তার আশেপাশে কি দেখে তাই নয়, বরং সে যখন আরেকটি জগৎ তৈরি করতে তার কল্পনাশক্তি ব্যবহার করে।[৯১] কুপারের কাছে চলচ্চিত্রে আবগাহনের এই অভিজ্ঞতাই এই "বিস্ময়ের আগমন"-এর সঙ্গে জড়িত। স্টিফেন টেও অপু ও দুর্গার রেললাইন আবিষ্কারকে এই বিস্ময়ের আগমনের ক্রমাগত বিকাশ ও এর ফলে আবগাহনের অভিজ্ঞতার উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।[৯২]

শর্মিষ্ঠা গুপ্তু বলেন যে, পথের পাঁচালীতে চিত্রিত গ্রামীণ জীবন খাঁটি বাঙালির গ্রাম্যজীবনের প্রতিনিধিত্ব করে, যা ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের অভ্যুত্থানের সময়ে হারিয়ে যায়। তিনি বলেন যে, চলচ্চিত্রটিতে আদর্শ ও প্রাক-বিভাজিত অতীতের সঙ্গে বিভাজিত বাংলার প্রকৃত বর্তমান অবস্থাকে যুক্ত করার প্রচেষ্টা রয়েছে,[৯৩] এবং এতে আদর্শ গ্রামের চিত্র তৈরি করতে গ্রামীণ বাংলার আদিরূপ ব্যবহার করা হয়েছে।[৯৪] সত্যজিৎ গবেষক, আনোয়ার হোসেনও এই চলচ্চিত্রে প্রদর্শিত গ্রামবাংলার প্রকৃতির উল্লেখ করে বলেন, "এই ছবিটি আমাদের হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ জনপদের এক নিখুঁত দলিল।"[৯৫] মিতালি পতি ও সুরঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায় উল্লেখ করেন যে, ভাববাদের পাশাপাশি সত্যজিৎ রায় কীভাবে বাস্তবতাবাদকে তুলে ধরতে চক্ষু-স্তরের শট, প্রাকৃতিক আলো, দীর্ঘ দৃশ্য ও অন্যান্য কৌশল ব্যবহার করেছিলেন।[৯৬] মৈনাক বিশ্বাস লেখেন যে, পথের পাঁচালী ইতালীয় নব্যবাস্তববাদ ধারণার খুব নিকটে এসেছিল। কারণ এতে কিছু অংশ ছিল যার কোন নাটকীয় বিকাশ ছিল না; এমনকি জীবনের সহজাত বাস্তবতাতেও নয়, যেমন মৌসুম পরিবর্তন বা একটি দিন চলে যাওয়া। এই সবগুলো বিষয় সুনির্দিষ্টভাবে চিত্রায়িত হয়েছিল।[৯৭]

সম্মাননা

[সম্পাদনা]

পথের পাঁচালী দেশি-বিদেশি অনেক পুরস্কার অর্জন করেছে।

বছর পুরস্কার চলচ্চিত্র উৎসব দেশ
১৯৫৫ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (স্বর্ণকমল পুরস্কার)
শ্রেষ্ঠ বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (রজতকমল পুরস্কার)
৩য় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার  ভারত
১৯৫৬ পাল্ম দর[৯৮]
শ্রেষ্ঠ মানবিক দলিল
ওসিআইসি পুরস্কার - বিশেষ উল্লেখ
৯ম কান চলচ্চিত্র উৎসব  ফ্রান্স
১৯৫৬ ভ্যাটিকান পুরস্কার, রোম --  ইতালি
১৯৫৬ গোল্ডেন কারবাও, ম্যানিলা --  ফিলিপাইন
১৯৫৬ মেধার ডিপ্লোমা এডিনবরা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব  স্কটল্যান্ড
১৯৫৭ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জন্য ‘সাজনিক গোল্ডেন লরেল’ বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব  জার্মানি
১৯৫৭ শ্রেষ্ঠ পরিচালক জন্য গোল্ডেন গেট
শ্রেষ্ঠ ছবি জন্য গোল্ডেন গেট
সান ফ্রান্সিসকো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব  যুক্তরাষ্ট্র
১৯৫৮ শ্রেষ্ঠ ছায়াছবি ভ্যানকুভার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব  কানাডা
১৯৫৮ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জন্য ক্রিটিকস অ্যাওয়ার্ড[৯৯] স্ট্র্যাটফোর্ড ফিল্ম ফেস্টিভাল  কানাডা
১৯৫৮ সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র, জাতীয় বোর্ড পর্যালোচনা পুরস্কার ১৯৫৮[১০০] --  যুক্তরাষ্ট্র
১৯৫৯ সেরা বিদেশী চলচ্চিত্র নিউইয়র্ক চলচ্চিত্র উৎসব  যুক্তরাষ্ট্র
১৯৬৬ কিনেমা জাম্পু পুরস্কার সেরা বিদেশী চলচ্চিত্র জন্য --  জাপান
১৯৬৯ শ্রেষ্ঠ অইউরোপীয় ছায়াছবির জন্য বদিল পুরস্কার[১০১] --  ডেনমার্ক

উত্তরাধিকার

[সম্পাদনা]

পথের পাঁচালী চলচ্চিত্রটির পর সত্যজিৎ রায় অপুর পরবর্তী জীবনের গল্প নিয়ে আরও দুটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। অপর দুটি ছবি হল অপরাজিত (১৯৫৬) ও অপুর সংসার (১৯৫৯) । তিনটি ছবি একত্রে অপু ত্রয়ী নামে পরিচিত। অপরাজিত চলচ্চিত্রে অপুর কৈশোর, গ্রাম্য বিদ্যালয়ে ও কলকাতার কলেজে তার শিক্ষা জীবনের গল্প চিত্রিত হয়েছে। এই চলচ্চিত্রের মূল বিষয়বস্তু হল এক দুর্বলচিত্ত মা ও তার উচ্চাকাঙ্ক্ষী যুবক পুত্রের মর্মস্পর্শী সম্পর্ক। অপুর সংসার চলচ্চিত্রে অপুর প্রাপ্ত বয়স, তার স্ত্রীর অকাল মৃত্যুতে তার প্রতিক্রিয়া, ও তার শিশু পুত্রের সঙ্গে তার সম্পর্কের গল্প চিত্রিত হয়েছে। এই দুটি অনুবর্তী পর্বও অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছিল। সত্যজিৎ রায়ের শুরুতে এই ত্রয়ী নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল না; ১৯৫৭ সালে ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে[১০২] অপরাজিত গোল্ডেন লায়ন পুরস্কার পেলে এবং ত্রয়ী নির্মাণের সম্ভাবনা রয়েছে কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি ত্রয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।[১০৩] ২০১৪ সালে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় অপুর পাঁচালী নামে একটি বাংলা চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, যাতে পথের পাঁচালী চলচ্চিত্রে অপু চরিত্রে অভিনয় করা সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাস্তব জীবনের গল্প চিত্রিত হয়েছে।[১০৪][১০৫]

পথের পাঁচালী স্বাধীন ভারতে নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমাদৃত হয় এবং ভারতকে বিশ্ব চলচ্চিত্রের দরবারে পরিচিত করিয়ে দেয়।[৬৮][১০৬] এটি ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাণের নতুন ধারা, সমান্তরাল চলচ্চিত্রের প্রথম উদাহরণ, যার প্রধান বিষয়বস্তু ছিল অকৃত্রিমতা ও সামাজিক বাস্তবতাবাদ,[১০৭] যা ভারতীয় চলচ্চিত্রে প্রতিষ্ঠিত নিয়মকে ভেঙ্গে দেয়।[১০৮][১০৯] যদিও পথের পাঁচালীকে ভারতীয় চলচ্চিত্রের বাঁক বদল হিসেবে বর্ণনা করা হয়,[১১০] কয়েকজন ভাষ্যকার একে ইতোমধ্যে বিদ্যমান "বাস্তবতাবাদের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত রীতি"র পরিমার্জিত রূপ বলে উল্লেখ করতে পছন্দ করেন।[৩৯] ১৯৬৩ সালে টাইম পত্রিকা পথের পাঁচালীকে ধন্যবাদ দিয়ে উল্লেখ করে, সত্যজিৎ রায় একটি নতুন চলচ্চিত্র আন্দোলনের "উদ্দীপ্ত অগ্রদূতদের ক্ষুদ্র দলের একজন", যে আন্দোলনটি বিশ্বব্যাপী অসংখ্য অনুকারক পেয়েছে।[১১১] এই চলচ্চিত্রটি তখন থেকে "বৈশ্বিক মাইলফলক" এবং "অপরিহার্য চলচ্চিত্র অভিজ্ঞতার একটি" হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে।[১১২] ২০১৩ সালের ২রা মে সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিনে গুগল অনুসন্ধান ইঞ্জিনের ভারতীয় সংস্করণে ডুডলে রেলগাড়ির দৃশ্যটি প্রদর্শিত হয়েছিল।[১১৩][১১৪]

পাদটীকা

[সম্পাদনা]
  1. অরোরা ফিল্ম করপোরেশনকে এই চলচ্চিত্রের পরিবেশক হিসেবে পর্দায় দেখানো হয়। এমওএমএ ও পরিবেশক এডওয়ার্ড হ্যারিসন চলচ্চিত্রটির এমওএমএ প্রদর্শনী ও পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি দিতে ভূমিকা পালন করে।[](বি, হেলৎসার এবং ম্যাকফ্যাডেন ২০১৩, পৃ. ২০৪) ডিভিডিবিভার.কম-এ একটি পর্যালোচনায় আর্টিফিশিয়াল আই এন্টারটেইনমেন্টকে রিজিয়ন ২ ও কলাম্বিয়া ট্রাই-স্টারকে রিজিয়ন ১ ডিভিডি সংস্করণের পরিবেশক হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।[]
  2. বিভিন্ন উৎসে এই চলচ্চিত্রের বিভিন্ন রকম দৈর্ঘ্য উল্লেখ করেছে। মিউজিয়াম অব মডার্ণ আর্টের মতে চলচ্চিত্রের দৈর্ঘ্য ১১২ মিনিট,(বি, হেলৎসার এবং ম্যাকফ্যাডেন ২০১৩, পৃ. ২০৪) এলএ উয়িকলির একটি বিজ্ঞপ্তিতে ১১৫ মিনিট,[] দ্য গার্ডিয়ানের স্টুয়ার্ট জেফ্রিসের ২০১০ সালের একটি রিপোর্টে ১২৫ মিনিট,[] দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের রোভি হ্যাল এরিকসন তার একটি সমালোচনায় ১২৬ মিনিট[] ও ডগ প্র্যাট ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে ১২৫ মিনিট বলে বর্ণনা করেছেন।(প্র্যাট ২০০৫, পৃ. ৯০৮) ব্রিটিশ বোর্ড অব ফিল্ম ক্লাসিফিকেশন চলচ্চিত্র সংস্করণের জন্য ১০০ মিনিট ৫৫ সেকেন্ড এবং ভিডিও সংস্করনের জন্য ১১৯ মিনিট ৩১ সেকেন্ড বলে দ্যটি ভিন্ন দৈর্ঘ্য বলে উল্লেখ করেছে।[]
  3. সত্যজিৎ রায় ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে মাই ইয়ার্স উইথ অপু:এ মেমোয়্যার গ্রন্থে লেখেন যে এই চলচ্চিত্র নির্মাণে ৭০,০০০ খরচ হয়(রায় ১৯৯৬, পৃ. ৩৬), এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নিকট ৭০,০০০ ঋণ ছিল।(রায় ১৯৯৬, পৃ. ৬০) ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের একটি সাক্ষাতকারে সত্যজিৎ রায় বলেন যে, এই চলচ্চিত্র নির্মাণে ১৫০,০০০ খরচ হয়।(আইজাকসন ২০০৭, পৃ. ৪০)
  4. ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে বিনিময় হার ছিল ১ মার্কিন ডলারে ৪.৭৬।[]
  5. রায় লিখেন ঋণের পরিমাণ ছিল ৭০,০০০ রুপী।(রায় ২০১০, পৃ. ৭৭)
  6. ব্যাসিল রাইটের মন্তব্য জেমস চ্যাপম্যানের ২০০৩ সালের সিনেমাস অব দ্য ওয়ার্ল্ড: ফিল্ম অ্যান্ড সোসাইটি ফ্রম ১৮৯৫ টু দ্য প্রেজেন্ট বইতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। মন্তব্য করার বছর উল্লেখ করা হয়নি।(চ্যাপম্যান ২০০৩, পৃ. ৩২৩)
  7. দারিয়ুস কুপার "বিস্ময়ের আগমন" শব্দটিকে চমৎকার রস সম্পর্কে বর্ণনা করতে ব্যবহার করেন। তিনি চমৎকার রসকে ব্যাখ্যা করতে অভিনবগুপের অভিনবভারতী থেকে উল্লেখ করেন, "চমৎকার হল আবেশের আচ্ছন্নতা, যাতে পূর্ণ তৃপ্তির উপস্থিতি থাকে। চমৎকারকে কাম বা উপভোগ্য কোন বিষয়, যেমন কোন ব্যক্তির অদ্ভুত আনন্দের তৃপ্তিতে আবগাহন হিসেবে বুঝানো হতে পারে।" (কুপার ২০০০, পৃ. ২৪–২৫) কুপার বলে অপুর মধ্য দিয়ে "জগৎ উন্মোচিত হয়েছে। অপুকে চমৎকারের সম্পূর্ণ গুণাবলি প্রদান করা হয়েছে, এবং তার বিস্ময়ের অনুভূতি দিয়ে অপু কেবল তার পারিপার্শ্বিক জগৎ আবিষ্কার ও উপভোগই করে না, বরং তার প্রতিভা বা কল্পনাশক্তি দিয়ে অন্য জগৎ তৈরি করে।" (কুপার ২০০০, পৃ. ২৫)

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. সেনগুপ্ত, চন্দক (১৬ নভেম্বর ২০০৯)। "Apu-In-The-Word"আউটলুক। পৃষ্ঠা 2/5। ২৪ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ এপ্রিল ২০১৪ 
  2. টুজ, গ্যারি। "Pather Panchali" (ইংরেজি ভাষায়)। ডিভিডি বিভার। ১১ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০২০ 
  3. "Pather Panchali"এলএ উয়িকলি। ৩ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৩ 
  4. Jeffries, Stuart (১৯ অক্টোবর ২০১০)। "Pather Panchali: No 12 best arthouse film of all time"দ্য গার্ডিয়ান। ১৭ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৩ 
  5. হ্যাল এরিকসন, রবি। "Pather Panchali (1955)"দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস। ৮ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৩ 
  6. "Pather Panchali (1957)"ব্রিটিশ বোর্ড অব ফিল্ম ক্লাসিফিকেশন। ২৭ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০১৪ 
  7. আন্টভাইলার, ভের্নার (২০১৯)। "Foreign Currency Units per 1 U.S. Dollar, 1950–2018" (পিডিএফ)। ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০২০ 
  8. গকুলসিং ও দিশ্যনায়েক ২০১৩, পৃ. ২৭৭।
  9. গুগেলবের্জার ১৯৯৬, পৃ. ১৭৩।
  10. রবিনসন ১৯৮৯, পৃ. ৭৪।
  11. শেখর, সৌমিত্র (২০১২)। "Pather Panchali"বাংলাপিডিয়াবাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। ৩ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩ 
  12. রবিনসন ১৯৮৯, পৃ. ৭৫।
  13. রায় ২০১০, পৃ. ২২।
  14. রবিনসন ১৯৮৯, পৃ. ৫৮।
  15. রায় ২০১০, পৃ. ২২-২৩।
  16. আইজাকসন ২০০৭, পৃ. ৩৯।
  17. রায় ২০০৫, পৃ. ৩৩।
  18. রবিনসন ১৯৮৯, পৃ. ৭৭।
  19. রায় ২০১০, পৃ. ৪৪।
  20. রায় ২০১০, পৃ. ৪২।
  21. রায় ২০১০, পৃ. ৪৫।
  22. রবিনসন ১৯৮৯, পৃ. ৭৮-৮০।
  23. রবিনসন ১৯৮৯, পৃ. ৭৮।
  24. এট্টেডগুই ১৯৯৯, পৃ. ৪৮–৫৯।
  25. গুলজার, নিহলানি এবং চ্যাটার্জী ২০০৩, পৃ. ৫৩৯।
  26. এট্টেডগুই ১৯৯৯, পৃ. ৫০।
  27. রায় ২০১০, পৃ. ৫১।
  28. রায় ২০১০, পৃ. ৩৩-৩৪।
  29. রবিনসন ১৯৮৯, পৃ. ৮২।
  30. রবিনসন ১৯৮৯, পৃ. ৮৩।
  31. রবিনসন ১৯৮৯, পৃ. ৮৪।
  32. রায় ২০১০, পৃ. ৭৭।
  33. "Filmi Funda Pather Panchali (1955)"দ্য টেলিগ্রাফ। ২০ এপ্রিল ২০০৫। ৩ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০২০ 
  34. ম্যাকগিল, ডগলাস সি. (১৬ আগস্ট ১৯৮৮)। "Monroe Wheeler, Board Member of Modern Museum, Is Dead at 89"দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস। ৮ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০২০ 
  35. রবিনসন ১৯৮৯, পৃ. ৮৭।
  36. রবিনসন ১৯৮৯, পৃ. ৮৬।
  37. অমিতাভ ঘোষের "সত্যজিৎ রায়" প্রবন্ধ।খায়ের ২০০৫, পৃ. ৩–৪
  38. মেহতা ১৯৯৮, পৃ. ২২২।
  39. রুবের্তো ও উইলসন ২০০৭, পৃ. ১৬।
  40. করিগ্যান ও হোয়াইট ২০১২, পৃ. ২৫২।
  41. রবিনসন ১৯৮৯, পৃ. ৬৭।
  42. রায় ১৯৯৬, পৃ. ১৭।
  43. রবিনসন ১৯৮৯, পৃ. ৭১।
  44. রায় ১৯৯৬, পৃ. ২৫।
  45. কুপার ২০০০, পৃ. ১–৪।
  46. লাভেজ্জোলি ২০০৬, পৃ. ৫৩।
  47. হোবারম্যান, জে (১১ এপ্রিল ১৯৯৫)। "The Hunger Artist"দ্য ভিলেজ ভয়েস (ইংরেজি ভাষায়)। পৃষ্ঠা ৫১। ৮ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০২০ 
  48. "The 50 greatest film soundtracks"দি অবজারভার (ইংরেজি ভাষায়)। ১৮ মার্চ ২০০৭। ৮ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০২০ 
  49. লেং ২০০৬, পৃ. ৪৮–৪৯।
  50. রায় ২০১০, পৃ. ৯২।
  51. রবিনসন ১৯৮৯, পৃ. ৮৭-৮৮।
  52. রবিনসন ১৯৮৯, পৃ. ৮৮।
  53. এট্টেডগুই ১৯৯৯, পৃ. ৪৯।
  54. সিলভার, চার্লস (১৩ নভেম্বর ২০১২)। "Satyajit Ray's Pather Panchali"ইনসাইড আউট (ইংরেজি ভাষায়)। মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্ট। ২১ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০২০ 
  55. রবিনসন ১৯৮৯, পৃ. ৮৯।
  56. রবিনসন ১৯৮৯, পৃ. ১০৫।
  57. গুপ্তু, শর্মিষ্ঠা (২০১০)। Bengali Cinema: 'An Other Nation'রুটলেজ। পৃষ্ঠা ২৭৪। আইএসবিএন 9781136912160 
  58. "Assembly Proceedings; Official Report"Assembly Proceedings; Official Report। পশ্চিমবঙ্গ আইন পরিষদ। ১৯৬১। 
  59. "Pather Panchali (1958) - Financial Information"দ্য নাম্বারস (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০২০ 
  60. রায়, বিবেকানন্দ (২০১৭)। Conscience of The Raceতথ্য ও প্রকাশনা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশনা বিভাগ। পৃষ্ঠা ৪২৪। আইএসবিএন 9788123026619 
  61. সেটন ২০০৩, পৃ. 87।
  62. বসু, দীলিপ। "Films of Satyajit Ray: Getting Started"সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড স্টাডি কালেকশন (ইংরেজি ভাষায়)। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় - সান্তা ক্রুজ। ৩ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০২০ 
  63. রবিনসন ১৯৮৯, পৃ. ১০৩।
  64. সেটন ২০০৩, পৃ. ৯।
  65. সেটন ২০০৩, পৃ. ৮৮।
  66. হ্যারিসন, এডওয়ার্ড (২০ অক্টোবর ১৯৫৮)। "Cinema: New Picture"টাইম (ইংরেজি ভাষায়)। ৭ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০২০ (সদস্যতা প্রয়োজনীয়)
  67. কায়েল ২০১১, পৃ. ৫৬৯।
  68. চ্যাপম্যান ২০০৩, পৃ. ৩২৩।
  69. বেরের্ডিনেল্লি, জেমস (১৯৯৬)। "Review: Pather Panchali" (ইংরেজি ভাষায়)। রিলভিউস। ১২ মে ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০২০ 
  70. ফ্রেঞ্চ, ফিলিপ (৫ মে ২০০২)। "Pather Panchali"দি অবজারভার (ইংরেজি ভাষায়)। ১৪ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০২০ 
  71. রবিনসন ১৯৮৯, পৃ. ৯১।
  72. ম্যাকফ্যাডেন, রবার্ট ডি. (৮ মার্চ ১৯৮১)। "Bosley Crowther, 27 Years a Critic of Films for Times, is Dead at 75"দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস (ইংরেজি ভাষায়)। ২ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০২০ 
  73. ক্রাউদার, বসলি (২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৫৮)। "Screen: Exotic Import; Pather Panchali' From India Opens Here"দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস (ইংরেজি ভাষায়)। ৮ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০২০ 
  74. কুইন্ট, পিটার ই. (২ নভেম্বর ১৯৫৯)। "Pather Panchali"দ্য হার্ভার্ড ক্রিমজন (ইংরেজি ভাষায়)। ৮ মে ২০০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০২০ 
  75. রবিনসন ১৯৮৯, পৃ. ৩২৭।
  76. কুপার ২০০০, পৃ. ২।
  77. "Pather Panchali (1955)"রটেন টম্যাটোস (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০২০ 
  78. "The 100 greatest foreign-language films"বিবিসি নিউজ (ইংরেজি ভাষায়)। ৩০ অক্টোবর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০২০ 
  79. "Christopher Nolan has named the film he thinks is 'one of the best ever made'"The Independent (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০৪-০৪। ৯ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-২৫ 
  80. "Preserved Projects"একাডেমি ফিল্ম আর্কাইভ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০২০ 
  81. "The Restoration" (ইংরেজি ভাষায়)। ইয়ানুস ফিল্মস। ১১ জুলাই ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০২০ 
  82. হফম্যান, জর্ডান (৫ মে ২০১৫)। "Back on the little road: Satyajit Ray's Pather Panchali returns in all its glory"দ্য গার্ডিয়ান (ইংরেজি ভাষায়)। ৯ আগস্ট ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০২০ 
  83. হুবার্ট, ক্রেইগ (২২ জুন ২০১৫)। "5 Films to See This Week: "54", "The Apu Trilogy", and More" (ইংরেজি ভাষায়)। লুইস ব্লুইন মিডিয়া। ১২ আগস্ট ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০২০ 
  84. "Play Dates" (ইংরেজি ভাষায়)। ইয়ানুস ফিল্মস। ১৭ জুলাই ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০২০ 
  85. স্টিভেন্স, ডানা (২১ মে ২০১৫)। "The Big River"স্লেট (ইংরেজি ভাষায়)। ২৬ জুলাই ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০২০ 
  86. বুন, স্টিভেন; টালেরিকো, ব্রায়ান (১১ মে ২০১৫)। "Cinematic Poetry: The Restoration of "The Apu Trilogy" (ইংরেজি ভাষায়)। রজারইবার্ট.কম। ১২ জুলাই ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০২০ 
  87. সেটন ২০০৩, পৃ. ৮১–৮৪।
  88. রবিনসন ১৯৮৯, পৃ. ৯৫–৯৬।
  89. কুপার ২০০০, পৃ. ২৪–৪০।
  90. কুপার ২০০০, পৃ. ২৪–২৬।
  91. কুপার ২০০০, পৃ. ২৫।
  92. টেও ২০১৩, পৃ. ৪৯।
  93. গুপ্তু ২০১০, পৃ. ১৪৮।
  94. গুপ্তু ২০১০, পৃ. ১৪৯।
  95. "অপুর সঙ্গে একদিন"দৈনিক প্রথম আলো। ২০ আগস্ট ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০২০ 
  96. পতি ও গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৯৬, পৃ. ৪১৭।
  97. বিশ্বাস ২০০৭, পৃ. ৮৭-৮৮।
  98. "Festival de Cannes: Pather Panchali"festival-cannes.com (ইংরেজি ভাষায়)। ১৬ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ মে ২০১১ 
  99. "Indian Film Honored; Pather Panchali Wins Prize at Stratford, Ont., Fete"New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। ১৯৫৮-০৭-১৪। পৃষ্ঠা 16। 
  100. "Awards 1958, National Board of Review Awards" (ইংরেজি ভাষায়)। ২৯ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ মার্চ ২০১৩ 
  101. "Awards 1969, Bodil Awards" (ইংরেজি ভাষায়)। ২ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ মার্চ ২০১৩ 
  102. উড ১৯৭২, পৃ. ৬১।
  103. বার্জেন ২০০৬, পৃ. ৪৯৭।
  104. গাঙ্গুলী, রুমান (২৯ মার্চ ২০১৩)। "Parambrata starts shooting for Apur Panchali"দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া (ইংরেজি ভাষায়)। ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০২০ 
  105. বিনতে আফতাব, ইশরাত (২৯ নভেম্বর ২০১৪)। "অপুর পথের পাঁচালী!"দৈনিক ইত্তেফাক। ১৮ এপ্রিল ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০২০ 
  106. গুলজার, নিহলানি এবং চ্যাটার্জী ২০০৩, পৃ. ৬১২।
  107. লিখি, অভিলক্ষ (১৫ আগস্ট ১৯৯৯)। "Sense & Cinema"দ্য ট্রিবিউন (ইংরেজি ভাষায়)। ১২ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০২০ 
  108. কুজিন্স ২০০৪, পৃ. 237–238।
  109. দাসগুপ্ত ১৯৮০, পৃ. 32–42।
  110. ভাস্করন, গৌতমন (৫ সেপ্টেম্বর ২০০৪)। "Ray's eternal song"দ্য হিন্দু (ইংরেজি ভাষায়)। ২৮ জুলাই ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০২০ 
  111. "A Religion of Film"টাইম (ইংরেজি ভাষায়)। ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৬৩। ১৪ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০২০ (সদস্যতা প্রয়োজনীয়)
  112. ক্লার্ক, মাইক (৩০ অক্টোবর ২০০৩)। "New on DVD"ইউএসএ টুডে (ইংরেজি ভাষায়)। ২০ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০২০ 
  113. সাক্সেনা, অনুপরম (২ মে ২০১৩)। "Google doodles Satyajit Ray's Pather Panchali on filmmaker's birth anniversary" (ইংরেজি ভাষায়)। এনডিটিভি। ১৪ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০২০ 
  114. "Satyajit Ray's 92nd Birthday" (ইংরেজি ভাষায়)। গুগল। ১৪ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০২০ 

গ্রন্থপঞ্জি

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]