সুন্দরবনে সাত বৎসর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

সুন্দরবনে সাত বৎসর প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বারা সমাপ্ত একটি রোমাঞ্চকর উপন্যাস। বিভূতিভূষণের মৃত্যুর দুই বছর পর অর্থাৎ ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে এটি প্রথম বইয়ের আকারে প্রকাশিত হয়। উপন্যাসটির সূচনা-অংশের লেখক কে এই নিয়ে মতভেদ আছে। গল্পের কাহিনীটি মূলত অভিযান-কেন্দ্রিক। প্রবল প্রতাপ নদী ও তার উত্তাল তরঙ্গের সঙ্গে মানুষের বাঁচার লড়াইয়ের মর্মস্পর্শী বর্ণনা এতে আছে।

আদি রচয়িতা সংক্রান্ত বিভ্রান্তি[সম্পাদনা]

বিভূতিভূষণ উপন্যাসটির ভূমিকায় লিখেছেন, "শেষ দিকের কয়েকটি অধ্যায় লিখিয়া দিয়া এই পুস্তকের সুন্দর গল্পটি সমাপ্ত করিবার ভার আমার উপর ন্যস্ত হইয়াছিল।" প্রথম প্রকাশের পর মনে করা হয়েছিল, ভুবনমোহন রায় এর সূচনা-অংশের লেখক। কিন্তু, বইটির দ্বিতীয় মুদ্রণে (১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে) 'সখা ও সাথী' (১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দ) পত্রিকার উল্লেখ থাকায় ধারণা করা হয়েছে, স্বয়ং ঐ পত্রিকার সম্পাদকই উপন্যাসের সূচনা-অংশ লিখে থাকতে পারেন। দীর্ঘদিন পর এটির পুনরুদ্ধার হয় এবং বইটির প্রথম প্রকাশক এটি সম্পূর্ণ করার জন্য বিভূতিভূষণকে অনুরোধ করেন।

কাহিনী ও সমালোচনা[সম্পাদনা]

পুরানো দিনে গঙ্গাসাগর-তীর্থ কেমন ছিল, তার একটা মোটামুটি চিত্ৰ উপন্যাসের সূচনা-অংশ থেকে পাওয়া যায়। বাঘ-কুমীর-বুনো মহিষ-অজগর অধ্যুষিত অবিভক্ত বাংলার ভয়ঙ্কর সুন্দরবনের পরিচিতিও মেলে।

বিভূতিভূষণের অবদান[সম্পাদনা]

গল্পে সবকিছু ছাপিয়ে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে ঐ জায়গার একটি দ্বীপের (নাম কাছিমমারির চর) এক বৃদ্ধের চরিত্র। নায়ক-ছেলেটি বৃদ্ধকে জিজ্ঞাসা করছে, "আপনি কাছিমের খোল একত্র করেন,মুক্তা বিক্রি করেন না?" বৃদ্ধের উত্তর — "না কাউকে দেখাই না। অনেক টাকার মাল। টাকা হলে মনে অহংকার আসবে, বিলাসের ইচ্ছা আসবে। এমন সুন্দর জায়গা থেকে হবে চির-নির্বাসন।" এই এক আঁচড়ে ফুটে উঠেছে বৃদ্ধের চরিত্র। বিভূতিভূষণ সৃষ্ট এই চরিত্রটির জন্য অভিযান-কাহিনীটির এক মহত্তর ক্ষেত্রে উত্তরণ ঘটে। ফুটে উঠেছে তার সৃষ্টি অন্যান্য উপন্যাসের মতো প্রকৃতি প্রেম ।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  • উপন্যাস পরিচয়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় উপন্যাস সমগ্র (২য় খন্ড), পৃষ্ঠা ১১৯২