স্বল্প নির্মাণব্যয়ের চলচ্চিত্র

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
স্বল্প নির্মাণব্যয়ের চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হচ্ছে

স্বল্প নির্মাণব্যয়ের চলচ্চিত্র হল সেইসব চলচ্চিত্র যেগুলো মূলধারার চলচ্চিত্র স্টুডিও বা বিনিয়োগকারী কর্তৃক প্রদত্ত অর্থায়নের তুলনার কম ব্যয়ে নির্মিত হয়ে থাকে। অনেক স্বাধীন চলচ্চিত্র স্বল্প নির্মাণব্যয়ে নির্মিত হয়ে থকে, আবার কিছু ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাহীন ও অপরিচিত চলচ্চিত্র নির্মাতাদের দ্বারা নির্মিত মূলধারার চলচ্চিত্রের নির্মাণব্যয়ও স্বল্প হয়ে থাকে। অনেক তরুণ ও প্রথমবারে কাজ করা চলচ্চিত্র নির্মাতা বড় প্রযোজনা সংস্থার বিশাল নির্মাণব্যয়ের চলচ্চিত্র নির্মাণের পূর্বে নিজের প্রতিভার প্রমাণের জন্য স্বল্প নির্মাণব্যয়ের চলচ্চিত্র নির্মাণ করে থাকেন। অধিকাংশ স্বল্প নির্মাণব্যয়ের চলচ্চিত্র যেগুলো কোন প্রকার সাড়া পায় না বা প্রশংসিত হয় না, তা কখনোই প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেওয়া হয় না। বরং বাজার স্বল্পতা, কাহিনি ও বিষয়ের কম গুরুত্বের কারণে এগুলো সরাসরি খুচরা বিক্রয়ের জন্য পাঠানো হয়। স্বল্প নির্মাণব্যয়ের নির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা নেই বা ব্যয়ের পরিমাণ কত হলে তা এই শ্রেণিতে পড়বে তার কোন সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা নেই, এবং এটি চলচ্চিত্রের ধরন ও নির্মাণের দেশের উপরও নির্ভরশীল। এক দেশে যেটা স্বল্প নির্মাণব্যয়ের চলচ্চিত্র অন্য দেশে সেটা বিশাল নির্মাণব্যয়ের চলচ্চিত্র হতে পারে। বর্তমান সময়ে তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতারা প্রাক-প্রচারণার জন্য চলচ্চিত্র উৎসবগুলোর উপর নির্ভর করে। এই উৎসবগুলোর মাধ্যমে তারা তাদের চলচ্চিত্রের জন্য প্রশংসিত হয় এবং সাড়া পান, যার ফলে তারা সীমিত পরিসরে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দিতে পারে। যেসব চলচ্চিত্র অধিক প্রশংসিত হয় সেগুলোকে বৃহৎ পরিসরে মুক্তি দেওয়া হয়। স্বল্প নির্মাণব্যয়ের চলচ্চিত্রগুলো পেশাদার নির্মাণ বা অপেশাদারও হতে পারে। এতে পেশাদার বা ভাড়া করা যন্ত্রপাতি ও সাজসজ্জা ব্যবহার করে চিত্রধারণ করা হয়।

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র[সম্পাদনা]

১৯৯৯ সালের নির্মিত দ্য ব্লেয়ার উইচ প্রজেক্ট হল অন্যতম সফল স্বল্প নির্মাণব্যয়ের চলচ্চিত্র। ১৬০,০০০ মার্কিন ডলার নির্মিত চলচ্চিত্রটি বিশ্বব্যাপী ২৪৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে। আরেকটি সফল স্বল্প নির্মাণব্যয়ের চলচ্চিত্র হল ২০০৭ সালের প্যারানরমাল অ্যাক্টিভিটি। মাত্র ১৫,০০০ মার্কিন ডলার ব্যয়ের চলচ্চিত্রটি ১৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে। সম্ভবত আরও সফল স্বল্প নির্মাণব্যয়ের চলচ্চিত্র ছিল ১৯৭২ সালের ডিপ থ্রোট। এটি মাত্র ২২,৫০০ মার্কিন ডলার ব্যয়ে নির্মিত হয় এবং ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অধিক আয় করে, যদিও এই পরিমাণ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।[১]

স্বল্প নির্মাণব্যয়ের চলচ্চিত্রের একটি প্রারম্ভিক উদাহরণ হল ১৯৭৫ সালে বলিউডে নির্মিত ডাকাত ঘরনার শোলে। ২০ মিলিয়ন রুপিতে নির্মিত চলচ্চিত্রটি ৩ বিলিয়ন রুপি আয় করে এবং এটি সর্বকালের সর্বোচ্চ আয়কারী ভারতীয় চলচ্চিত্র হয়ে ওঠে।[২] আরেকটি সফল উদাহরণ হল ব্রুস লি অভিনীত চীনা চলচ্চিত্র এন্টার দ্য ড্রাগন (১৯৭৩)। $৮৫০,০০০ ব্যয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রটি বিশ্বব্যাপী $৯০ মিলিয়ন আয় করে।[৩]

রকি চলচ্চিত্রের নির্মাণব্যয় ছিল $১ মিলিয়ন এবং এটি বিশ্বব্যাপী $২২৫ মিলিয়ন আয় করে, এবং সিলভেস্টার স্ট্যালোনকে তারকা খ্যাতি এনে দেয়।[৪][৫] হ্যালোউইন চলচ্চিত্রের নির্মাণব্যয় ছিল $৩২৫,০০০ এবং এটি বিশ্বব্যাপী $৭০ মিলিয়ন আয় করে।[৬][৭] নেপোলিয়ন ডিনামাইট চলচ্চিত্রের নির্মাণব্যয় $৪০০,০০০ এরও কম ছিল, কিন্তু এটি বিশ্বব্যাপী $৪৬ মিলিয়ন আয় করে।[৮] বড় চলচ্চিত্র স্টুডিও কয়েকটি বিভাগ এই ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণ করে থাকে, যেমন ফক্স সার্চলাইট পিকচার্স, মিরাম্যাক্স, নিউ লাইন সিনেমা, এবং প্রতিদ্বন্দ্বী স্বল্প নির্মাণব্যয়ের চলচ্চিত্রের মত পরিবেশনা করে থাকে।[৯]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. হিলৎজিক, মাইকেল (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৫)। "Deep Throat Numbers Just Don't Add Up"লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০২০ 
  2. "Sholay adjusted gross"দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া। ১২ জানুয়ারি ২০০৯। ২০১২-১১-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০২০ 
  3. "Bruce Lee's Enter the Dragon To Be Remade"রটেন টম্যাটোস। ১০ আগস্ট ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০২০ 
  4. কিং, সুজান (২৬ এপ্রিল ২০০১)। "Sly's Once-Rocky Life"লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০২০ 
  5. "Rocky (1976)"দ্য নাম্বারস। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০২০ 
  6. ইয়ামাতো, জেন (৩১ অক্টোবর ২০১৪)। "John Carpenter Q&A: Why 'Halloween' Didn't Need Sequels & What Scares The Master Of Horror"ডেডলাইন হলিউড। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০২০ 
  7. "Halloween (1978)"দ্য নাম্বারস। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০২০ 
  8. লু, আলেকজান্ডার (জুলাই ২, ২০১৩)। "Napoleon Dynamite"We Got This Covered। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০২০ 
  9. কিং, জিওফ; মলয়, ক্লেয়ার; জিওমাকিস, ইয়ানিস (২০১৩)। American Independent Cinema: Indie, Indiewood and Beyond। রুটলেজ। পৃষ্ঠা ২০৬। আইএসবিএন 9780415684286