কালীপদ দাস
কালীপদ দাস | |
---|---|
জন্ম | ১ মার্চ ১৯৩২ |
উল্লেখযোগ্য রচনা | ছোটদের সোহরাওয়াদী, ছোটদের বেগম রোকেয়া, আমাদের শেখ মুজিব |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২০ |
কালীপদ দাস একজন বাংলাদেশী লেখক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য ২০২০ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করে।[১][২][৩] তিনি ওস্তাদ কালীপদ দাস নামেই পরিচিত।
প্রাথমিক জীবন
[সম্পাদনা]খুলনার খালিশপুরের বড় বয়রা এলাকায় ১৯৩২ সালের ১ মার্চ তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ৬ বছর বয়সে তিনি পিতা হারান। কীর্ত্তনের দলে তার দাদা করতাল এবং বাবা শ্রীখোল বাজাতেন। সেইসূত্রে সঙ্গীতের প্রতি তার আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। তবে অর্থ সমস্যার কারণে কিশোর বয়সে তার পক্ষে সে সময় সঙ্গীত শেখা সম্ভব হয়নি। তিনি যাত্রাদলে সখীনৃত্যে অংশ নেন। পরে ভাষাণ যাত্রা থিয়েটার ও যাত্রাদল পরিচালনা এবং নারী চরিত্রে অভিনয় করেন। এ সময় অনেক বিশিষ্ট অভিনেতার সঙ্গে তার অভিনয় করার সুযোগ ঘটে।
১৯৫০ সালে বর্তমান বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে পড়ার সময় সঙ্গীতে তার হাতেখড়ি হয়। ১৯৫৩ সালে খুলনা জেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় প্রয়াত সাধন সরকারের সুরে আধুনিক গান গেয়ে তিনি প্রথম স্থান লাভ করেন।
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগের পর সাংস্কৃতিক মজলিস, নয়া সংস্কৃতি সংসদ, অগ্রণী শিল্পী সংসদ, (প্রয়াত চিত্রাভিনেতা ও আবৃত্তিকার গোলাম মোস্তফা এর সদস্য ছিলেন), পাকিস্তান আর্ট কাউন্সিল, তরুণ সংঘ, সন্দীপন, পরাবাত ইত্যাদি সংগঠনের সক্রিয় সদস্য এবং নিজের প্রতিষ্ঠিত (১৯৬৫) সংগঠন সুর বিতানের সাধারণ সম্পাদক ও অবৈতনিক অধ্যক্ষ ছিলেন।
১৯৭০ সালে খুলনা বেতারে যোগ দেন। তিনি নজরুল সঙ্গীত ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের শিল্পী হিসেবে, ১৯৭৩ সাল থেকে উক্ত বেতার কেন্দ্রের সঙ্গীত পরিচালক ও প্রযোজক, কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ও কথক এবং চিঠিপত্রের উত্তরদাতাসহ নানা ভাবে জড়িত থাকেন। শব্দ সৈনিক হিসেবে তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রাম শিল্পী সংস্থার সহকারী সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশের মুক্তাঞ্চলের শরণার্থী শিবিরে, পশ্চিম বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে, কলকাতা ও দিল্লীতে রূপান্তরের গানসহ বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠান পরিবেশন করে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে জনমত গঠনে সহায়তা করেন। ওস্তাদ কালীপদ দাস স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গানের শিল্পী।
স্বাধীনতার পর স্কুল অব মিউজিক, উদীচী, ক্রান্তি, ভৈরবী প্রভৃতী সংগঠনের সঙ্গীত প্রশিক্ষক এবং ১৯৭২ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত খুলনা জেলা সঙ্গীত শিল্পী সংস্থার সাধরন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তিনি ছিলেন খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি, স্কুল অব মিউজিক, গণ শিল্পী সংস্থা, জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, খুলনা নাগরিক সমাজ ইত্যাদি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সক্রিয় সদস্য এবং সঙ্গীত প্রশিক্ষক হিসেবে যুক্ত। বাংলাদেশ বেতার খুলনা কেন্দ্রের সঙ্গীত শিক্ষার আসরের পরিচালক।
খুলনা নগরীর বাইতিপাড়া মোড়ে তার নিজস্ব বাসভবনে স্থাপন করেছেন সংগঠন "মহানগর রবিচক্র"। সংগঠনটির মাধ্যমে তিনি গত প্রায় ৩০ বছর ধরে শিক্ষার্থীদের শাস্ত্রীয়,নজরুল, রবীন্দ্রসংগীত সহ সব ধরনের সংগীতের তালিম দিয়ে যাচ্ছেন।
১৯৮৮ সালে খুলনা মেট্রোপলিটন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।তিনি কণ্ঠ সঙ্গীতে খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা ২০১৩ লাভ করেন।
গ্রন্থ
[সম্পাদনা]কালীপদ দাস বিভিন্ন বিষয়ে গ্রন্থ রচনা করেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:
- ছোটদের সোহরাওয়ার্দী
- ছোটদের বেগম রোকেয়া
- আমাদের শেখ মুজিব
- ছোটদের মাওলানা ভাসানী
পুরস্কার
[সম্পাদনা]১৯৯৮ সালে তিনি অংকুর সাংস্কৃতিক একাডেমি, ঢাকা কর্তৃক সম্মাননা লাভ করেন। ১৯৯৪ সালে একতারা শিল্পী গোষ্ঠী কর্তৃক সম্মাননা ও ১৯৭৭ সালে মিজানুর রহিম স্মৃতি পুরস্কার পান। ২০১৩ সালে তিনি কণ্ঠ সঙ্গীতে খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা লাভ করেন। সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য ২০২০ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করে।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "১০ বিশিষ্ট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান পাচ্ছেন স্বাধীনতা পুরস্কার"। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-২১।
- ↑ "স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২০ ঘোষণা | কালের কণ্ঠ"। Kalerkantho। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-২১।
- ↑ "৯ ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠান পাচ্ছেন 'স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২০'"। চ্যানেল আই অনলাইন। ২০২০-০২-২০। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-২১।