প্যারা সন্দেশ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
প্যারা সন্দেশ
অন্যান্য নামনওগাঁর প্যারা সন্দেশ
প্রকারমিষ্টি
উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশ
অঞ্চল বা রাজ্যনওগাঁ
প্রস্তুতকারীমহেন্দ্রী দাস
প্রধান উপকরণপানি, দুধ, চিনি

প্যারা সন্দেশ, নওগাঁর প্যারা সন্দেশ বাংলাদেশের নওগাঁ জেলায় উৎপন্ন দুধ দিয়ে তৈরি এক প্রকার মিষ্টান্ন। দুধের ক্ষীর দিয়ে প্যারা সন্দেশ বানানো হয়। বর্তমানে দেশের অন্যান্য জেলায় প্যারা সন্দেশ তৈরি করা হলেও সর্প্রবথমে নওগাঁ জেলায় তৈরি করা শুরু হয়।[১][২][৩] বর্তমানে জামালপুরের সরিষাবাড়িতে এই নামে মিষ্টি তৈরী হয়। তবে সেটার সাথে স্বাদে, আকৃতিতে, প্রস্তুত প্রণালীতে নওগাঁর প্যারা সন্দেশের কিছু অমিল আছে।

প্রথম দিকে শুধু পূজা মণ্ডপের দেব-দেবীর উপাসনার জন্যই এই সন্দেশ তৈরি করা হতো। পরবর্তীতে এই সন্দেশ শুধু দেব-দেবীর আরাধনার মধ্যে সীমাবন্ধ থাকেনি। সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুনের কারণে সন্দেশটি এখন বিখ্যাত মিষ্টান্ন হিশেবে পরিচিত। বর্তমানে দেশের গণ্ডি পেড়িয়ে প্যারা সন্দেশের সুখ্যাতি বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে।[৪][৫][৬][৭]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

প্যারা সন্দেশের ইতিহাস শত বছরের পুরানো। প্রথমে শুধু দেব-দেবীর আরাধনায় মিষ্টান্নর প্রয়োজন এই উদ্দেশ্যেই সন্দেশ তৈরি করা হতো। পরবর্তীতে সর্বসাধারণের জনপ্রিয় মিষ্টান্নে পরিণত হয়েছে।

জনশ্রুতি আছে, নওগাঁ শহরের কালিতলা এলাকার মহেন্দ্রী দাস নামের এক ব্যক্তি সর্বপ্রথম প্যারা সন্দেশ বানানো শুরু করেন। মহেন্দ্রী দাস ভারতের বিহারের কোনো এক নবাবের অধীনে মিষ্টি তৈরির কাজ করতেন। সেই নবাব কোন এক যুদ্ধে পরাজিত এবং নিহত হওয়ায় মহেন্দ্রী দাস প্রাণ নিয়ে পালিয়ে নওগাঁ শহরের কালীতলা এলাকায় বসবাস শুরু করেন। মহেন্দ্রী দাস জীবিকার তাগিদে ‘প্যারা’ সন্দেশ বানানো শুরু করেন। সন্দেশগুলো বিভিন্ন মন্দিরে মন্দিরে ঘুরে বিক্রি করা শুরু করেন। পরে শহরের কালিতলা মন্দিরের পাশে ‘মা নওগাঁর প্যারা সন্দেশ’ নামের একটি মিষ্টির দোকান খুলে বসেন। কালীতলা এলাকায় শত বছর আগে সেইসময়ে তেমন জনবসতি ছিল না।[৫][৮][৯]

মহেন্দ্রী দাসের পরে তার ছেলে ধীরেন্দ্রনাথ দাস সেই দোকানের দায়িত্ব নেন। তিনি বিমল মহন্ত নামের মিষ্টির এক কারিগরকে নিয়োগ দেন। বিমল মহন্ত হাতযশে ‘প্যারা’ সন্দেশের সুখ্যাতি দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় ৩০ বছর ধীরেন্দ্রনাথ দাস সেই মিষ্টির ব্যবসা পরিচালনা করেন। পরে তিনি সুরেশ চন্দ্র মহন্তের কাছে দোকানটি বিক্রি করে বসবাসের জন্য অন্য এলাকায় চলে যান। এরপরে সুরেস চন্দ্র মহন্ত দোকানের জন্য নতুন মিষ্টি তৈরির কারিগর নারায়ণ চন্দ্র প্রামানিককে নিয়োগ দেন। এরপর আবারও দোকানটির মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে বৈদ্য রতন দাস সেই দোকানের মালিক। তবে মিষ্টি তৈরি কারিগর আগের সেই নারায়ণ চন্দ্র দাসই রয়েছেন।[১][২][৪][১০]

বর্তমানে নওগাঁ শহরে ‘মা নওগাঁর প্যারা সন্দেশ’ দোকান ছাড়াও বেশ কয়েকটি দোকান অন্যান্য মিষ্টির পাশাপাশি প্যারা সন্দেশ তৈরী করেন এবং বিক্রি করেন।[৭]

প্রস্তুত প্রণালী[সম্পাদনা]

এটি তৈরি উপকরণসমূহ হচ্ছে: তরল দুধ, চিনি, পানি। এক কিলোগ্রাম সন্দেশ বানাতে প্রায় ৭ লিটার তরল দুধ দরকার হয়।

প্যারা সন্দেশ প্রধানত দুই ধাপে তৈরি হয়:

প্রথম ধাপে, দুধ ও পানি একত্রে মিশিয়ে একটি কড়াইতে জ্বাল দিতে হয়। মিশ্রণ ফুটার আগ পর্যন্ত জোরে জ্বাল দিতে হয়। মিশ্রণ ফুটতে থাকলে আস্তে আস্তে নাড়তে হয়। এভাবে একসময় ক্ষীর তৈরি হয়।

দ্বিতীয় ধাপে, সেই ক্ষীর কড়াইয়ের হাতায় জড়িয়ে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। জড়িয়ে আসলে সেই গরম ক্ষীর দুই হাতের তালু দিয়ে রোল করে সামান্য চাপ দিতে হয়। হালকা চাপেই প্যারা সন্দেশ তৈরি হয়ে যায়।[৩][৭]

বিবরণ[সম্পাদনা]

প্যারা সন্দেশ হালকা খয়েরি রংয়ের হয়। প্রতিটি সন্দেশ প্রায় আধা ইঞ্চি চওড়া এবং দুই ইঞ্চি লম্বা আকারের হয়। প্রতি কেজিতে প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ টি প্যারা সন্দেশ হয়। কোন প্রকার ব্যবস্থা ছাড়াই ১০ থেকে ১৫ দিন সংরক্ষণ করা যায়। কৃত্রিম উপায়ে সংরক্ষণ করলে অনেকদিন ভালো রাখা যায়।[২][৬][৭]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী প্যারা সন্দেশ যাচ্ছে বিদেশে"বাংলা ট্রিবিউন। ২০২০-০৬-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৭ 
  2. "স্বাদ ও মানে অতুলনীয় নওগাঁর প্যারা সন্দেশ"বাংলাদেশ প্রতিদিন। ২৮ জুন ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৭ 
  3. "স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে উৎসবে মিষ্টি খাওয়া কমাতে হবে"DW.COM। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৭ 
  4. "নওগাঁর শত বছরের প্যারা সন্দেশ যাচ্ছে বিদেশে"দৈনিক ইনকিলাব। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. আরিফুল হক সোহাগ (১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯)। "স্বাদ ও মানে অতুলনীয় নওগাঁর প্যারা সন্দেশ, যাচ্ছে বিদেশে (ভিডিও)"RTV news Online। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৭ 
  6. "নওগাঁ জেলার প্যারা সন্দেশ"নওগাঁ দর্পন। ২০ জানুয়ারি ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৭ 
  7. তন্ময় ভৌমিক, আসিফুর রহমান সাগর (৭ জানুয়ারী ২০১৭)। "শতবর্ষে নওগাঁর প্যাড়া সন্দেশ | শেষ পাতা | The Daily Ittefaq"দৈনিক ইত্তেফাক। ২০২০-০৬-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৭ 
  8. আব্দুর রশীদ তারেক (১৭ জানুয়ারি ২০১৭)। "নওগাঁর শত বছরের 'প্যারা' সন্দেশ"Bahumatrik.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৭ 
  9. "প্যারা সন্দেশ তৈরির রেসিপি"Aarong Dairy। ২০১৭-০৪-১৭। ২০২০-০৬-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৭ 
  10. "নওগাঁর শত বছরের প্যারা সন্দেশের স্বাদ যাচ্ছে বিদেশে"Dhaka News 24.com। ২০১৭-১২-০২। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-১৭