ফুটকড়াই

ফুটকড়াই

দোলের দিন কলকাতার দোকানে বিক্রি হওয়া ফুটকড়াই
প্রকার	দোল পূর্ণিমার দিন দেবতার ভোগ হিসাবে ব্যবহার করা হয়
উৎপত্তিস্থল	বঙ্গ
অঞ্চল বা রাজ্য	ভারতীয় উপমহাদেশ
পরিবেশন	সাধারণ তাপমাত্রায় শুকনো হিসাবে
রন্ধনপ্রণালী: ফুটকড়াই

ফুটকড়াই ছোলা ও চিনি সহযোগে তৈরি একটি মিষ্টি জাতীয় খাবার। মুখরোচক এই খাদ্যটি দোল পূর্ণিমার আগের দিন ন্যাড়া পুড়ানোর পর ও দোল উৎসবের প্রসাদ হিসাবে খাওয়া হয়। বাংলার এই প্রাচীন ঐতিহ্য বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় কিছুটা জনপ্রিয়তা হারিয়েছে।

ঐতিহ্য ও ইতিহাস

শ্রীকৃষ্ণের দোলযাত্রা ও চৈতন্যদেবের আবির্ভাব উপলক্ষ্যে বিভিন্ন মঠ মন্দিরে বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীরা এই দিনটি উৎযাপন করেন। এই উৎসবের প্রসাদ হিসাবে নানা ধরনের মিষ্টি জাতীয় খাবার প্রস্তুত করা হয় এবং তা জনগণের মধ্যে বিতরণ করা হয়। বিভিন্ন মিষ্টির মধ্যে মঠ, ফুট কড়াই, মুড়কি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ফুটকড়াই প্রসাদ হিসাবে ছাড়াও ন্যাড়া পুড়ার সময় নিভে যাওয়া আগুনে দেওয়ার রীতি আছে।

কলকাতার বউবাজারে নীলমণি দের ঠাকুরবাড়িতে পূর্ণিমার দিন মহাসমারোহে চাঁচড় পোড়ানো হয় এবং পরেরদিন দোল উদ্‌যাপন করা হয়। উভয় উৎসবেই পূজার পাশাপাশি ভোগের আয়োজন করা হয়। ভোগ হিসাবে লুচি-তরকারি, ঘিপোয়া, ফুটকড়াই, মঠ, কদমা তিলেখাজা ইত্যাদির আয়োজন করা হয়।

এছাড়া মহেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা থেকে পাওয়া যায়,

“ সেকালে দোলে তত্ত্ব তৈরি করে আদান প্রদানের প্রথা প্রচলিত ছিল। সেই তত্ত্ব পাড়া প্রতিবেশীদের বাড়ি বাড়ি বিলোনো হত।দোল উপলক্ষে চিনির মুড়কি,মঠ,ফুটকড়াই খাওয়ার রেওয়াজ ছিল। ”

বর্তমানে কিছু কিছু পরিবারে পুজোতে ও মন্দিরে পুজোতে ভোগের সামগ্রী হিসাবে ঐতিহ্যবাহী নানা মিষ্টান্ন দেওয়া হয়। মঠ গোলাপি, হলুদ, সাদা মূলত এই ৩ রঙের হয়। এগুলি দেখতে চিনির তৈরি অনেকটা টাওয়ারের মত দেখতে শক্ত মিষ্টি। আগে চুটিয়ে রঙ খেলার ফাঁকে ফাঁকে চলত মঠ খাওয়ার চল ছিল। একই সাথে ফুটকড়াই খাওয়া হতো। কালচে ভাজা মটরের ওপর চিনির আস্তরণ। মুখে দিয়ে চিবালে কড়মড় করে আওয়াজ হত। বর্তমানে রং খেলার সাথে সাথে খাওয়ার চল না থাকলেও দেবতার প্রসাদ হিসাবে কোনওক্রমে বেঁচে আছে। যদিও তাও অনেক পরিবার থেকেই এই ঐতিহ্যবাহী খাবারটি হারিয়ে গেছে।

প্রস্তুতি

খুবই সহজ ও সাধারণ ভাবে ফুটকড়াই তৈরি করা হয়। ছোলা ভেজে তারউপর চিনির আস্তরণ দিয়ে ফুটকড়াই তৈরি হয়। খানিক মচমচে ধরনের হয়। খাবার সময় মচমচে আওয়াজ হয়।