পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের দলিল: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
Habibshohag123 (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১০ নং লাইন: ১০ নং লাইন:


== পরিপ্রেক্ষিত ==
== পরিপ্রেক্ষিত ==
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ শাসিত ভারত বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামের দুটি স্বাধীন দেশের জন্ম হয়। পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় অংশের নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা শুরু করে। অতঃপর জনযুদ্ধের আদলে মুক্তিযুদ্ধ তথা [[বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ|স্বাধীনতা সংগ্রামের]] সূচনা ঘটে।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ শাসিত ভারত বিভক্ত হয়ে [[ভারত]][[পাকিস্তান]] নামের দুটি স্বাধীন দেশের জন্ম হয়। পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় অংশের নাম ছিল [[পূর্ব পাকিস্তান]]। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা শুরু করে। অতঃপর জনযুদ্ধের আদলে মুক্তিযুদ্ধ তথা [[বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ|স্বাধীনতা সংগ্রামের]] সূচনা ঘটে।


মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণে ক্রমান্বয়ে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর অবস্থা এতটাই শোচনীয় হয়ে পড়ে যে উপায়ন্তর না দেখে ঘটনা ভিন্ন খাতে পরিচালিত করতে তারা ডিসেম্বরের ৩ তারিখ ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এতে ভারতের প্রধান মন্ত্রী বলেন যে “বাংলাদেশে যে যুদ্ধ চলে আসছিল তা ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরিণত হয়েছে।” ভারতের সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর সাথে যুক্ত হয়ে যৌথবাহিনী তৈরি করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। ৪ঠা ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে ভারতীয় স্থলবাহিনীর সম্মুখ অভিযান শুরু হয় চারটি অঞ্চল থেকে: (১) পূর্বে ত্রিপুরা রাজ্য থেকে তিন ডিভিশনের সমবায়ে গঠিত ৪র্থ কোর সিলেট-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-কুমিল্লা-নোয়াখালী অভিমুখে; (২) উত্তরাঞ্চল থেকে দু’ডিভিশনের সমবায়ে গঠিত ৩৩তম কোর রংপুর-দিনাজপুর-বগুড়া অভিমুখে; (৩) পশ্চিমাঞ্চল থেকে দু’ডিভিশনের সমবায়ে গঠিত ২য় কোর যশোর-খুলনা-কুষ্টিয়া-ফরিদপুর অভিমুখে; এবং (৪) মেঘালয় রাজ্যের তুরা থেকে ডিভিশন অপেক্ষা কম আর একটি বাহিনী জামালপুর-ময়মনসিংহ অভিমুখে।[৩০] যৌথবাহিনীর প্রবল আক্রমণের মুখে সারা দেশের সীমান্তবর্তী যুদ্ধক্ষেত্রগুলো থেকে পাকিস্তানীরা পিছু হটতে শুরু করে। একের পর এক পাকিস্তানী ঘাঁটির পতন হতে থাকে। পাকিস্তানীরা অল্প কিছু জায়গায় তাদের সামরিক শক্তি জড় করেছিল; যৌথবাহিনী তাদের এড়িয়ে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ঢাকার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। বাংলাদেশের আপামর জনতাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় এগিয়ে আসে। আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণার মাত্র ১৩ দিনের মাথায় [[মিত্র বাহিনী|যৌথবাহিনী]] ঢাকার দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়। [[মুক্তিবাহিনী]] ও ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণের মুখে ইতোমধ্যে পর্যদুস্ত ও হতোদ্যম পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান ৯৩,০০০ হাজার সৈন্যসহ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। স্বাক্ষরিত হয় আত্মসমর্পণের দলিল। এরই মাধ্যমে নয় মাস ব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের অবসান হয়; প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙ্গালী জাতির প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্র [[বাংলাদেশ]]।
মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণে ক্রমান্বয়ে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর অবস্থা এতটাই শোচনীয় হয়ে পড়ে যে উপায়ন্তর না দেখে ঘটনা ভিন্ন খাতে পরিচালিত করতে তারা ডিসেম্বরের ৩ তারিখ ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এতে ভারতের প্রধান মন্ত্রী বলেন যে “বাংলাদেশে যে যুদ্ধ চলে আসছিল তা ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরিণত হয়েছে।” ভারতের সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর সাথে যুক্ত হয়ে যৌথবাহিনী তৈরি করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। ৪ঠা ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে ভারতীয় স্থলবাহিনীর সম্মুখ অভিযান শুরু হয় চারটি অঞ্চল থেকে: (১) পূর্বে [[ত্রিপুরা|ত্রিপুরা রাজ্য]] থেকে তিন ডিভিশনের সমবায়ে গঠিত ৪র্থ কোর [[সিলেট]]-[[ব্রাহ্মণবাড়িয়া]]-[[কুমিল্লা]]-[[নোয়াখালী]] অভিমুখে; (২) উত্তরাঞ্চল থেকে দু’ডিভিশনের সমবায়ে গঠিত ৩৩তম কোর [[রংপুর]]-[[দিনাজপুর]]-[[বগুড়া]] অভিমুখে; (৩) পশ্চিমাঞ্চল থেকে দু’ডিভিশনের সমবায়ে গঠিত ২য় কোর [[যশোর]]-[[খুলনা]]-[[কুষ্টিয়া]]-[[ফরিদপুর]] অভিমুখে; এবং (৪) [[মেঘালয়]] রাজ্যের তুরা থেকে ডিভিশন অপেক্ষা কম আর একটি বাহিনী [[জামালপুর]]-[[ময়মনসিংহ]] অভিমুখে।[৩০] যৌথবাহিনীর প্রবল আক্রমণের মুখে সারা দেশের সীমান্তবর্তী যুদ্ধক্ষেত্রগুলো থেকে পাকিস্তানীরা পিছু হটতে শুরু করে। একের পর এক পাকিস্তানী ঘাঁটির পতন হতে থাকে। পাকিস্তানীরা অল্প কিছু জায়গায় তাদের সামরিক শক্তি জড় করেছিল; যৌথবাহিনী তাদের এড়িয়ে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে [[ঢাকা|ঢাকার]] দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। বাংলাদেশের আপামর জনতাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় এগিয়ে আসে। আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণার মাত্র ১৩ দিনের মাথায় [[মিত্র বাহিনী|যৌথবাহিনী]] ঢাকার দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়। [[মুক্তিবাহিনী]] ও ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণের মুখে ইতোমধ্যে পর্যদুস্ত ও হতোদ্যম পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান ৯৩,০০০ হাজার সৈন্যসহ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। স্বাক্ষরিত হয় আত্মসমর্পণের দলিল। এরই মাধ্যমে নয় মাস ব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের অবসান হয়; প্রতিষ্ঠিত হয় [[বাঙ্গালী]] জাতির প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্র [[বাংলাদেশ]]।


== আত্মসমর্পণ দলিলের ভাষ্য ==
== আত্মসমর্পণ দলিলের ভাষ্য ==
আত্মসমর্পণ দলিলের লেখা এখন বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং ভারত সরকারের পাবলিক সম্পত্তি এবং এটি দিল্লি জাতীয় যাদুঘর প্রদর্শনের জন্য রাখা আছে (জানুয়ারি ২০১২ হিসাবে)। দলিলের লেখা ইংরেজিতে ছিল এবং তা হল:<ref name="Story of Pakistan">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|শেষাংশ=SoP|শিরোনাম=The Separation of East Pakistan|ইউআরএল=http://storyofpakistan.com/the-separation-of-east-pakistan/|প্রকাশক=স্টোরি অব পাকিস্তান|সংগ্রহের-তারিখ=20 July 2012|ভাষা=ইংরেজি|অনূদিত-শিরোনাম=পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছেদ}}</ref>
আত্মসমর্পণ দলিলের লেখা এখন [[বাংলাদেশ]], [[পাকিস্তান]] এবং [[ভারত]] সরকারের পাবলিক সম্পত্তি এবং এটি দিল্লি জাতীয় যাদুঘর প্রদর্শনের জন্য রাখা আছে (জানুয়ারি ২০১২ হিসাবে)। দলিলের লেখা ইংরেজিতে ছিল এবং তা হল:<ref name="Story of Pakistan">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|শেষাংশ=SoP|শিরোনাম=The Separation of East Pakistan|ইউআরএল=http://storyofpakistan.com/the-separation-of-east-pakistan/|প্রকাশক=স্টোরি অব পাকিস্তান|সংগ্রহের-তারিখ=20 July 2012|ভাষা=ইংরেজি|অনূদিত-শিরোনাম=পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছেদ}}</ref>
{| class="wikitable" style="font-size: 88%;"
{| class="wikitable" style="font-size: 88%;"
| colspan="2" | The PAKISTAN Eastern Command agree to surrender all PAKISTAN Armed Forces in BANGLA DESH to Lieutenant-General JAGJIT SINGH AURORA, General Officer Commanding in Chief of Indian and BANGLA DESH forces in the Eastern Theater. This surrender includes all PAKISTAN land, air and naval forces as also all para-military forces and civil armed forces. These forces will lay down their arms and surrender at the places where they are currently located to the nearest regular troops under the command of Lieutenant-General JAGJIT SINGH AURORA.
| colspan="2" | The PAKISTAN Eastern Command agree to surrender all PAKISTAN Armed Forces in BANGLA DESH to Lieutenant-General JAGJIT SINGH AURORA, General Officer Commanding in Chief of Indian and BANGLA DESH forces in the Eastern Theater. This surrender includes all PAKISTAN land, air and naval forces as also all para-military forces and civil armed forces. These forces will lay down their arms and surrender at the places where they are currently located to the nearest regular troops under the command of Lieutenant-General JAGJIT SINGH AURORA.
৪০ নং লাইন: ৪০ নং লাইন:
;অনুবাদ<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|শিরোনাম=আত্মসমর্পণের দলিল|ইউআরএল=http://archive.prothom-alo.com/detail/date/2011-04-14/news/141567|ওয়েবসাইট=প্রথম আলো|তারিখ=২৫ মার্চ ২০১১|আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20171215213620/http://archive.prothom-alo.com/detail/date/2011-04-14/news/141567|আর্কাইভের-তারিখ=১৬ ডিসেম্বর ২০১৭}}</ref>
;অনুবাদ<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|শিরোনাম=আত্মসমর্পণের দলিল|ইউআরএল=http://archive.prothom-alo.com/detail/date/2011-04-14/news/141567|ওয়েবসাইট=প্রথম আলো|তারিখ=২৫ মার্চ ২০১১|আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20171215213620/http://archive.prothom-alo.com/detail/date/2011-04-14/news/141567|আর্কাইভের-তারিখ=১৬ ডিসেম্বর ২০১৭}}</ref>
{| class="wikitable" style="font-size: 88%;"
{| class="wikitable" style="font-size: 88%;"
| colspan="2" | পূর্ব রণাঙ্গনে ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনীর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ইন চিফ, লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে পাকিস্তান পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানের সকল সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে আত্মসমর্পণে সম্মত হলো। পাকিস্তানের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীসহ সব আধা-সামরিক ও বেসামরিক সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষেত্রে এই আত্মসমর্পণ প্রযোজ্য হবে। এই বাহিনীগুলো যে যেখানে আছে, সেখান থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কর্তৃত্বাধীন নিয়মিত সবচেয়ে নিকটস্থ সেনাদের কাছে অস্ত্রসমর্পণ ও আত্মসমর্পণ করবে।
| colspan="2" | পূর্ব রণাঙ্গনে ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনীর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ইন চিফ, লেফটেন্যান্ট-জেনারেল [[জগজিত সিং অরোরা|জগজিৎ সিং অরোরার]] কাছে পাকিস্তান পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানের সকল সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে আত্মসমর্পণে সম্মত হলো। পাকিস্তানের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীসহ সব আধা-সামরিক ও বেসামরিক সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষেত্রে এই আত্মসমর্পণ প্রযোজ্য হবে। এই বাহিনীগুলো যে যেখানে আছে, সেখান থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কর্তৃত্বাধীন নিয়মিত সবচেয়ে নিকটস্থ সেনাদের কাছে অস্ত্রসমর্পণ ও আত্মসমর্পণ করবে।


এই দলিল স্বাক্ষরের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড লেফটেন্যান্ট-জেনারেল অরোরার নির্দেশের অধীন হবে। নির্দেশ না মানলে তা আত্মসমর্পণের শর্তের লঙ্ঘন বলে গণ্য হবে এবং তার প্রেক্ষিতে যুদ্ধের স্বীকৃত আইন ও রীতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আত্মসমর্পণের শর্তাবলীর অর্থ অথবা ব্যাখ্যা নিয়ে কোনো সংশয় দেখা দিলে, লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত।
এই দলিল স্বাক্ষরের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড লেফটেন্যান্ট-জেনারেল অরোরার নির্দেশের অধীন হবে। নির্দেশ না মানলে তা আত্মসমর্পণের শর্তের লঙ্ঘন বলে গণ্য হবে এবং তার প্রেক্ষিতে যুদ্ধের স্বীকৃত আইন ও রীতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আত্মসমর্পণের শর্তাবলীর অর্থ অথবা ব্যাখ্যা নিয়ে কোনো সংশয় দেখা দিলে, লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত।

১৫:৫৬, ১০ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

চিত্র:১৯৭১ আত্মসমর্পণ.jpg
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী, আত্মসমর্পনের দলিলে জেনারেল জগজিত সিং অরোরার সামনে সই করছেন।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পনের দলিলে ডিসেম্বর ১৬ ,১৯৭১ বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪.৩১ মিনিটে ঢাকার রমনা রেস কোর্স ময়দানে জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী সই করেন।

পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের দলিল তিন প্রস্থে প্রস্তুত করা হয়েছিল। একটি প্রস্থ ভারত সরকার এবং দ্বিতীয় প্রস্থ পাকিস্তান সরকারের নিকট সংরক্ষিত আছে। বাংলাদেশ সরকারের প্রাপ্য দলিলটি বাংলাদেশে নেই।

যে টেবিলে পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের দলিল স্বাক্ষরিত হয়েছিল তা ঢাকা ক্লাব থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। এই টেবিলটি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ৩৭ সংখ্যক প্রদর্শনী কক্ষে সংরক্ষিত আছে।

আত্মসমর্পণের দলিলের নাম ছিল "INSTRUMENT OF SURRENDER".

পরিপ্রেক্ষিত

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ শাসিত ভারত বিভক্ত হয়ে ভারতপাকিস্তান নামের দুটি স্বাধীন দেশের জন্ম হয়। পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় অংশের নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা শুরু করে। অতঃপর জনযুদ্ধের আদলে মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা ঘটে।

মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণে ক্রমান্বয়ে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর অবস্থা এতটাই শোচনীয় হয়ে পড়ে যে উপায়ন্তর না দেখে ঘটনা ভিন্ন খাতে পরিচালিত করতে তারা ডিসেম্বরের ৩ তারিখ ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এতে ভারতের প্রধান মন্ত্রী বলেন যে “বাংলাদেশে যে যুদ্ধ চলে আসছিল তা ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরিণত হয়েছে।” ভারতের সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর সাথে যুক্ত হয়ে যৌথবাহিনী তৈরি করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। ৪ঠা ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে ভারতীয় স্থলবাহিনীর সম্মুখ অভিযান শুরু হয় চারটি অঞ্চল থেকে: (১) পূর্বে ত্রিপুরা রাজ্য থেকে তিন ডিভিশনের সমবায়ে গঠিত ৪র্থ কোর সিলেট-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-কুমিল্লা-নোয়াখালী অভিমুখে; (২) উত্তরাঞ্চল থেকে দু’ডিভিশনের সমবায়ে গঠিত ৩৩তম কোর রংপুর-দিনাজপুর-বগুড়া অভিমুখে; (৩) পশ্চিমাঞ্চল থেকে দু’ডিভিশনের সমবায়ে গঠিত ২য় কোর যশোর-খুলনা-কুষ্টিয়া-ফরিদপুর অভিমুখে; এবং (৪) মেঘালয় রাজ্যের তুরা থেকে ডিভিশন অপেক্ষা কম আর একটি বাহিনী জামালপুর-ময়মনসিংহ অভিমুখে।[৩০] যৌথবাহিনীর প্রবল আক্রমণের মুখে সারা দেশের সীমান্তবর্তী যুদ্ধক্ষেত্রগুলো থেকে পাকিস্তানীরা পিছু হটতে শুরু করে। একের পর এক পাকিস্তানী ঘাঁটির পতন হতে থাকে। পাকিস্তানীরা অল্প কিছু জায়গায় তাদের সামরিক শক্তি জড় করেছিল; যৌথবাহিনী তাদের এড়িয়ে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ঢাকার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। বাংলাদেশের আপামর জনতাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় এগিয়ে আসে। আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণার মাত্র ১৩ দিনের মাথায় যৌথবাহিনী ঢাকার দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণের মুখে ইতোমধ্যে পর্যদুস্ত ও হতোদ্যম পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান ৯৩,০০০ হাজার সৈন্যসহ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। স্বাক্ষরিত হয় আত্মসমর্পণের দলিল। এরই মাধ্যমে নয় মাস ব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের অবসান হয়; প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙ্গালী জাতির প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ

আত্মসমর্পণ দলিলের ভাষ্য

আত্মসমর্পণ দলিলের লেখা এখন বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং ভারত সরকারের পাবলিক সম্পত্তি এবং এটি দিল্লি জাতীয় যাদুঘর প্রদর্শনের জন্য রাখা আছে (জানুয়ারি ২০১২ হিসাবে)। দলিলের লেখা ইংরেজিতে ছিল এবং তা হল:[১]

The PAKISTAN Eastern Command agree to surrender all PAKISTAN Armed Forces in BANGLA DESH to Lieutenant-General JAGJIT SINGH AURORA, General Officer Commanding in Chief of Indian and BANGLA DESH forces in the Eastern Theater. This surrender includes all PAKISTAN land, air and naval forces as also all para-military forces and civil armed forces. These forces will lay down their arms and surrender at the places where they are currently located to the nearest regular troops under the command of Lieutenant-General JAGJIT SINGH AURORA.

The PAKISTAN Eastern Command shall come under the orders of Lieutenant-General JAGJIT SINGH AURORA as soon as the instrument has been signed. Disobedience of orders will be regarded as a breach of the surrender terms and will be dealt with in accordance with the accepted laws and usages of war. The decision of Lieutenant-General JAGJIT SINGH AURORA will be final, should any doubt arise as to the meaning of interpretation of the surrender terms.

Lieutenant-General JAGJIT SINGH AURORA gives a solemn assurance that personnel who surrender shall be treated with dignity and respect that soldiers are entitled to in accordance with provisions of the GENEVA Convention and guarantees the safety and well-being of all PAKISTAN military and para-military forces who surrender. Protection will be provided to foreign nationals, ethnic minorities and personnel of WEST PAKISTANI origin by the forces under the command of Lieutenant-General JAGJIT SINGH AURORA.

<signed> <signed>

(JAGJIT SINGH AURORA)
Lieutenant-General
General Officer Commanding in Chief
India and BANGLA DESH Forces in the
Eastern Theatre
16 December 1971

(AMIR ABDULLAH KHAN NIAZI)
Lieutenant-General
Martial Law Administrator Zone B and
Commander Eastern Command
(Pakistan)
16 December 1971

অনুবাদ[২]
পূর্ব রণাঙ্গনে ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনীর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ইন চিফ, লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে পাকিস্তান পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানের সকল সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে আত্মসমর্পণে সম্মত হলো। পাকিস্তানের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীসহ সব আধা-সামরিক ও বেসামরিক সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষেত্রে এই আত্মসমর্পণ প্রযোজ্য হবে। এই বাহিনীগুলো যে যেখানে আছে, সেখান থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কর্তৃত্বাধীন নিয়মিত সবচেয়ে নিকটস্থ সেনাদের কাছে অস্ত্রসমর্পণ ও আত্মসমর্পণ করবে।

এই দলিল স্বাক্ষরের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড লেফটেন্যান্ট-জেনারেল অরোরার নির্দেশের অধীন হবে। নির্দেশ না মানলে তা আত্মসমর্পণের শর্তের লঙ্ঘন বলে গণ্য হবে এবং তার প্রেক্ষিতে যুদ্ধের স্বীকৃত আইন ও রীতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আত্মসমর্পণের শর্তাবলীর অর্থ অথবা ব্যাখ্যা নিয়ে কোনো সংশয় দেখা দিলে, লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত।

লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা আত্মসমর্পণকারী সেনাদের জেনেভা কনভেনশনের বিধি অনুযায়ী প্রাপ্য মর্যাদা ও সম্মান দেওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করছেন এবং আত্মসমর্পণকারী পাকিস্তানি সামরিক ও আধা-সামরিক ব্যক্তিদের নিরাপত্তা ও সুবিধার অঙ্গীকার করছেন। লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার অধীন বাহিনীগুলোর মাধ্যমে বিদেশি নাগরিক, সংখ্যালঘু জাতিসত্তা ও জন্মসূত্রে পশ্চিম পাকিস্তানি ব্যক্তিদের সুরক্ষাও দেওয়া হবে।

<স্বাক্ষর করেন> <স্বাক্ষর করেন>

(জগজিৎ সিং অরোরা )
লেফটেন্যান্ট-জেনারেল
জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ইন চিফ
পূর্ব রণাঙ্গনে ভারত ও বাংলা দেশ যৌথ বাহিনী
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১

(আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি)
লেফটেন্যান্ট-জেনারেল
সামরিক আইন প্রশাসক অঞ্চল বি
অধিনায়ক পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড (পাকিস্তান)
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১

চিত্র:আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক দলিল ১৯৭১.jpg
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিল

তথ্যসূত্র

  1. SoP। "The Separation of East Pakistan" [পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছেদ] (ইংরেজি ভাষায়)। স্টোরি অব পাকিস্তান। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০১২ 
  2. "আত্মসমর্পণের দলিল"প্রথম আলো। ২৫ মার্চ ২০১১। ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।