আল শামস
আলশামস বাহিনী | |
---|---|
![]() | |
নেতা | ফজলুল কাদের চৌধুরী, সাকা চৌধুরী |
অপারেশনের তারিখ | ১৯৭১ |
সক্রিয়তার অঞ্চল | বাংলাদেশ |
মতাদর্শ | পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদ, পাকিস্তানের অখন্ডতা, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা |
মিত্র | ![]() |
বিপক্ষ | মুক্তিবাহিনী |
খণ্ডযুদ্ধ ও যুদ্ধ | বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ |
আল শামস ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকালে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী গঠিত নিন্দিত আধা সামরিক মিলিশিয়া বাহিনী।[১]
নামকরণ ও প্রেরণা
[সম্পাদনা]আরবি শব্দ আল শামসের অর্থ দাঁড়ায় ‘সূর্য’। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আল শামস ও আল বদর বাহিনী গঠন করা হয় মুক্তিযোদ্ধাদের বাহিনী মুক্তি বাহিনীকে প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে।
প্রতিষ্ঠা
[সম্পাদনা]১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইটের পর, তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাসিত নেতৃত্ব পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে। মুক্তিবাহিনী এই সংগ্রামের প্রধান চালিকাশক্তি ছিল এবং ভারত তাদের দৃঢ় সমর্থন দেয়। স্থানীয় জনগণের বড় অংশই মুক্তিবাহিনীর পক্ষে ছিল, এবং যারা বিরোধিতা করেছিল তাদের অনেককেই মুক্তিবাহিনী হত্যা করে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী, যার প্রধান অংশ ছিল পাঞ্জাব থেকে আসা সদস্যরা,[২] স্থানীয় জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য, পাকিস্তান সেনাবাহিনী রাজনৈতিক দলগুলোর সহায়তা গ্রহণ করে এবং ভারতীয়দের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে, যাতে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলা যায়। পাকিস্তান পিপলস পার্টি এই প্রচেষ্টায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।[৩] এছাড়া, তারা পূর্ব পাকিস্তানের উর্দুভাষী বিহারিদের মধ্য থেকে লোক সংগ্রহ করে।[৪] পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষে স্থানীয় জনগণকে স্বাধীনতাকামীদের (ভারতীয় ও মুক্তিবাহিনী) বিরুদ্ধে লড়তে উদ্বুদ্ধ করতে দুটি সহযোগী সংগঠন গঠন করা হয়— আল বদর (যার অর্থ চাঁদ, তবে এটি ঐতিহাসিক বদরের যুদ্ধের প্রতিও ইঙ্গিত করে) এবং আল শামস।[৫]
প্রেক্ষাপট
[সম্পাদনা]১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ঢাকায় বেসামরিক লোকজনের উপর পরিচালিত অপারেশন সার্চলাইট এর পর বন্দি নেতৃত্ব তৎক্ষণাৎ পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করলে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়।
গণহত্যা
[সম্পাদনা]আল শামস ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি সহায়ক সংগঠন, যা অবকাঠামো রক্ষার পাশাপাশি সেনাবাহিনীকে লজিস্টিক এবং গোয়েন্দা সহায়তা প্রদান করত। তারা সন্দেহভাজনদের আটক করে এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কেন্দ্রে নিয়ে যেত, যেখানে নির্যাতন করা হতো।[৬]
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে সাক্ষী দেওয়া ব্যক্তিদের মতে, আল-শামসের নেতৃত্ব ছিল ফজলুল কাদের চৌধুরীর হাতে এবং চট্টগ্রামে তার ছেলে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী মাঠে নেতৃত্ব দিতেন।[৭] অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম এবং সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছোট ভাই সাইফুদ্দিন কাদের চৌধুরী।[৭] তারা সাতকানিয়া, রাউজান, বোয়ালখালী, পাটিয়া এবং রাঙ্গুনিয়া এলাকায় একটি জিপে টহল দিতেন এবং হিন্দুদের বাড়ি জ্বালিয়ে দিতেন এবং মুক্তিবাহিনীর পক্ষে সমর্থনকারী বলে সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার করতেন।[৭] সন্দেহভাজনদের সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাসভবন গুডস হিলে নিয়ে যাওয়া হতো, যেটি একটি নির্যাতন কেন্দ্র হিসেবে পরিণত করা হয়েছিল, এবং সেখানে তাদের নির্যাতন করা হতো এবং হত্যার পর তাদের দেহ কর্ণফুলি নদীতে ফেলে দেয়া হতো।[৭]
১২ ডিসেম্বর, আল-শামস এবং আল-বদর নেতৃত্ব একযোগে বুদ্ধিজীবী হত্যার জন্য একটি পরিকল্পনা প্রস্তুত করেন। আল-শামস এবং আল-বদর নেতৃত্ব মেজর জেনারেল রাও ফারমান আলীর সাথে সাক্ষাৎ করে এই পরিকল্পনাটি চূড়ান্ত করেন।[৮]
বিলুপ্তি
[সম্পাদনা]১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী আত্মসমর্পণ করলে বাহিনীগুলো বিলুপ্ত হয়। এমনকি ১৯৭২ সালের পুরো জানুয়ারি মাসও ঢাকার কোথাও কোথাও তাদের দখল বজায় থাকে এবং বুদ্ধিজীবীরা নিহত হন।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ আল শামস, বাংলাপিডিয়া
- ↑ Jaffrelot, Christophe (২০০২)। Pakistan : nationalism without a nation? (1st সংস্করণ)। New Delhi: Manohar Publ.। পৃষ্ঠা 54। আইএসবিএন 1842771175।
- ↑ Chengappa, Bidanda M. (২০০৪)। Pakistan, Islamisation, army and foreign policy। New Delhi: A.P.H. Publ.। পৃষ্ঠা 39। আইএসবিএন 8176485489।
- ↑ Hiro, Dilip (২০১৫)। The Longest August: The Unflinching Rivalry Between India and Pakistan। Nation Books। পৃষ্ঠা 202। আইএসবিএন 978-1-56858-515-4।
- ↑ Roy, Kaushik; Gates, Scott (২০১৪)। Unconventional Warfare in South Asia: Shadow Warriors and Counterinsurgency। Ashgate Publishing। পৃষ্ঠা 117। আইএসবিএন 978-1-4724-0579-1।
- ↑ Hiro, Dilip (২০১৫)। The Longest August: The Unflinching Rivalry Between India and Pakistan। Nation Books। পৃষ্ঠা 202–203। আইএসবিএন 978-1-56858-515-4।
- ↑ ক খ গ ঘ ফকার নেতৃত্বে সাকার তত্ত্বাবধানে ছিলো আল-শামস'। Banglanews24.com। Dhaka। ২১ মে ২০১২। ৭ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৩।
- ↑ ১২ই ডিসেম্বর আল বদর এবং আল শামস তৈরী করে বুদ্ধিজীবি হত্যার নীল নকশা। Ekushey TV। Dhaka। ১১ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৩।