অ্যাডমিরাল আহসান মিশন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

অ্যাডমিরাল আহসান মিশন (বা আহসান ফর্মুলা নামেও পরিচিত) হলো ১৯৭১ সালের প্রথমদিকে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পাকিস্তান সরকার কর্তৃক প্রস্তাবিত একটি শান্তি পরিকল্পনা।[১]:১০২–১০৩ পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক সংকট নিরসন ও পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি বজায় রাখতে পূর্ব পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর কমান্ডার ও পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর ভাইস অ্যাডমিরাল সৈয়দ মোহাম্মদ আহসানের নেতৃত্বে এই মিশন গঠিত হয়।[১]:১০৯–১১০

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ের পর আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় প্রশাসনের বিপরীতে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি করতে থাকে। এর প্রেক্ষিতে দলটির নানামুখী আন্দোলন ও পূর্ব পাকিস্তানে পশ্চিম অংশের বিরুদ্ধে গণ-অসন্তোষ পাকিস্তানের দুই অংশের সম্পর্কে চিড় সৃষ্টি করতে থাকে।[২] সেনাবাহিনীর সহায়তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ব পাকিস্তান পুলিশের আক্রমণের পর ভারত মধ্যস্থতার কথা জানায়। পাকিস্তান সরকার তারযোগে ভারতীয় মধ্যস্থতার তদন্ত করে পূর্ব পাকিস্তান সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য অ্যাডমিরাল আহসানকে নির্দেশ দেয়।[১]:১০২[৩]

অ্যাডমিরাল আহসান মূলত আওয়ামী লীগ কর্তৃক ১৯৬৬ সালে প্রদত্ত ছয় দফা কর্মসূচির আলোকে প্রস্তাবনা প্রদান করে:

  • কেন্দ্র দেশের প্রতিরক্ষা, সেনাবাহিনী, বৈদেশিক নীতি, জাতীয় নিরাপত্তা ও মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ করবে।[১]:১০২
  • প্রদেশগুলো স্ব-স্ব রাজস্ব নির্ধারণের ক্ষমতা লাভ করবে এবং কেন্দ্রীয় খাতে একটি নির্দিষ্ট অর্থ জমা দেবে।[১]:১০২
  • পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানি নাগরিক ও কূটনীতিক এবং পশ্চিম থেকে পূর্বে বাঙালি নাগরিকদের প্রত্যাবাসন।
  • জনসংখ্যার ভিত্তিতে পূর্ব ও পশ্চিমে জাতীয় সম্পদের সুষম বণ্টন।

এছাড়াও মিশন পাকিস্তান কো-ফেডারেশন গঠনের প্রস্তাব দেয়, যেখানে ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি হবেন এবং মুজিব ও ভুট্টো হবেন যথাক্রমে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।[১]:১০২ পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানি সরকারি কর্মচারীদের পশ্চিমে প্রত্যাবসন এবং পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে সম্পদের সুষম বণ্টনের প্রস্তাবও করা হয়।[১]:১০২ প্রস্তাবনাগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কর্তৃক প্রশংসিত হয় এবং ভারত অনিচ্ছা সত্ত্বেও সম্মতি জানায়।[১]:১০২ জুলফিকার আলী ভুট্টো ছাড়া অন্যান্য পশ্চিম পাকিস্তানি নেতৃবৃন্দ প্রস্তাবকে স্বাগত জানান।:১০২[১] তবে, ইয়াহিয়া খানের সামরিক প্রশাসন মিশনকে সমর্থন প্রদান না করে এর কার্যকারিতা নিয়ে তীব্র বিরোধিতা শুরু করে।[৪]

প্রস্তাবনাগুলো উপেক্ষিত হওয়ায় ১৯৭১ সালের মার্চে অ্যাডমিরাল আহসান পদত্যাগ করেন এবং পাকিস্তানে ফিরে যান। লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াকুব আলি খানের পদত্যাগের পর তিনি পাকিস্তানে আবার পদাসীন হন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Ehtisham, S. Akhtar (১৯৯৮)। A Medical Doctor Examines Life on Three Continents: A Pakistani View। Algora Publishing। আইএসবিএন 9780875866345। সংগ্রহের তারিখ ৯ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  2. Rao, K. V. Krishna (১৯৯১)। Prepare Or Perish: A Study of National Security। Lancer Publishers। পৃষ্ঠা 156। আইএসবিএন 9788172120016 
  3. Rizvi, Hasan Askari। Internal Strife and External Intervention: India's Role in the Civil War in East Pakistan (Bangladesh)। Progressive Publishers। 
  4. Ahmed, Moudud (১৯৭৯)। Bangladesh: constitutional quest for autonomy, 1950-1971। University Press। পৃষ্ঠা 206–207। আইএসবিএন 3515029087 

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]