ভারতের জাতীয় চিহ্নসমূহ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ভারতের জাতীয় পতাকা

ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের বিভিন্ন সরকারি জাতীয় চিহ্ন রয়েছে, যার মধ্যে ঐতিহাসিক নথি, পতাকা, প্রতীক, সঙ্গীত, স্মারকস্তম্ভ, এমনকি বিভিন্ন জাতীয় নায়কও রয়েছে। স্বাধীনতার আগে ২২ জুলাই ১৯৪৭-এ গণপরিষদ জাতীয় পতাকার নকশাকে সরকারিভাবে গ্রহণ করেছিল।[১] বিভিন্ন উপলক্ষে চিহ্নিত জাতীয় প্রতীকের মধ্যে জাতীয় প্রাণী, পাখি, ফুল, ফল ও গাছ রয়েছে।[২]

তালিকা[সম্পাদনা]

চিহ্ন নাম চিত্র টীকা
সরকারি নাম ভারতীয় প্রজাতন্ত্র
ইংরেজি: Republic of India, প্রতিবর্ণীকৃত: রিপাব্লি‌ক্ অভ়্ ইন্ডিঅ্য
হিন্দি: भारत गणराज्य, প্রতিবর্ণীকৃত: ভারত গণরাজ্য
বাংলা ও হিন্দি "ভারত" নামটি "ভরত" শব্দ হতে উদ্ভূত, যা মূলত অগ্নি দেবতার অপর নাম। এই "ভরত" শব্দটি আবার √ভৃ ধাতু থেকে নিষ্পাদিত, যার অর্থ "পালন/বহন করা"। ইংরেজি India (ইন্ডিঅ্য) নামটি সিন্ধু নদের গ্রিক নাম হতে উদ্ভূত।
জাতীয় পতাকা ভারতের জাতীয় পতাকা এটি একটি অনুভূমিক আয়তাকার তেরঙা পতাকা, যার উপরের রং গাঢ় গেরুয়া, মাঝের রং সাদা এবং নিচের রং সবুজ। গেরুয়া হচ্ছে আত্মবলিদান ও শৌর্যের প্রতীক, সাদা হচ্ছে শান্তি, সততা ও শুদ্ধতার প্রতীক এবং সবুজ হচ্ছে সমৃদ্ধি, স্পন্দনশীলতা ও জীবনের প্রতীক। দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের মধ্যে ৩:২ অনুপাত অনুযায়ী জাতীয় পতাকা তৈরি করা হয়।[৩] পতাকার মাঝে ২৪টি শিকবিশিষ্ট নেভি ব্লু রঙের একটি চক্র রয়েছে, যা অশোক চক্র নামে পরিচিত। পিঙ্গলী ভেঙ্কায়ার দ্বারা তৈরি করা স্বরাজ পতাকার উপর ভিত্তি করে এই পতাকাটি তৈরি করা হয়েছে।[১]
জাতীয় প্রতীক

নীতিবাক্য
ভারতের জাতীয় প্রতীক
(অশোকের সিংহচতুর্মুখ স্তম্ভশীর্ষ)
সত্যমেব জয়তে
(সংস্কৃত; অর্থ "কেবল সত্যের জয় হয়")
২৬ জানুয়ারি ১৯৫০-এ সারনাথের অশোকের সিংহচতুর্মুখ স্তম্ভশীর্ষকে ভারতের জাতীয় প্রতীক হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছিল এবং তখন ভারত এক প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়েছিল। ঐ প্রতীকের নিচে দেবনাগরী লিপিতে দেশের জাতীয় নীতিবাক্য "সত্যমেব জয়তে" (सत्यमेव जयते) লেখা রয়েছে, যার অর্থ "কেবল সত্যের জয় হয়"। নীতিবাক্যটি মুণ্ডক উপনিষদ থেকে গৃহীত।[৪]
জাতীয় সঙ্গীত
(ইংরেজি: national anthem)
জনগণমনঅধিনায়ক জয় হে
জনগণমন অধিনায়ক জয় হে
২৪ জানুয়ারি ১৯৫০-এ ভারতের গণপরিষদ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত "ভারত ভাগ্য বিধাতা" গানের প্রথম স্তবককে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গ্রহণ করেছিল।
জাতীয় গীত
(ইংরেজি: national song)
বন্দে মাতরম্‌ ("মাতার প্রতি বন্দনা") বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সংস্কৃত ভাষায় "বন্দে মাতরম্‌" রচনা করেছিলেন, যা তিনি ১৮৮২ সালে "আনন্দমঠ" উপন্যাসে অন্তর্গত করেছিলেন। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ১৮৯৬ সালের অধিবেশনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই গানটি গেয়েছিলেন। ২৪ জানুয়ারি ১৯৫০-এ ভারতের গণপরিষদ "বন্দে মাতরম্‌" গানের প্রথম দুই পদ্যকে ভারতের জাতীয় গীত হিসাবে গ্রহণ করেছিল।
সরকারি ভাষা হিন্দি (हिन्दी)
ইংরেজি (English)

ভারতের স্বাধীনতা ও বিভাজনের পর দেবনাগরী লিপিতে লিখিত হিন্দি ভাষাকে ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের সরকারি ভাষা হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল, যার উল্লেখ সংবিধানের ৩৪৩ নং অনুচ্ছেদে পাওয়া যায়।[৫] কিন্তু হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে অহিন্দিভাষীরা, বিশেষত দক্ষিণ ভারতীয়রা, বিক্ষোভ শুরু করেছিল, যার ফলে সরকারি ভাষা আইন, ১৯৬৩ লাগু হয়েছিল এবং সমস্ত সরকারি কাজকর্মে অনির্দিষ্টকাল ধরে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার হতে লাগল।[৬]
জাতির জনক মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী
(১৮৭৯–১৯৪৮)
জাতীয় দিবস সাধারণতন্ত্র দিবস (২৬ জানুয়ারি)
স্বাধীনতা দিবস (১৫ আগস্ট)
গান্ধী জয়ন্তী (২ অক্টোবর)
২৬ জানুয়ারি ১৯৫০-এ ভারতের সংবিধান কার্যকর হয়েছিল এবং ভারত এক প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়েছিল।
১৫ আগস্ট ১৯৪৭-এ ভারত ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করেছিল।
২ অক্টোবর ১৮৭৯-এ "জাতির জনক" হিসাবে পরিচিত মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
জাতীয় অঙ্গীকার জাতীয় অঙ্গীকার ১৯৬২ সালে পিদিমারি ভেঙ্কট সুবা রাও তেলুগু ভাষায় এটি রচনা করেছিলেন। কেন্দ্রীয় শিক্ষা উপদেষ্টা পর্ষদ বিদ্যালয়ে এই অঙ্গীকার গাওয়ানোর নির্দেশ দিয়েছিল এবং ২৬ জানুয়ারি ১৯৬৫-এ এই প্রথা শুরু হয়েছিল।[৭] কোনো পাবলিক অনুষ্ঠানে, বিশেষ করে বিদ্যালয় এবং সাধারণতন্ত্র দিবসস্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপনের সময় ভারতীয়রা একসঙ্গে এই গান গায়।
জাতীয় মুদ্রা ভারতীয় টাকা (₹)
ইংরেজি: rupee, প্রতিবর্ণীকৃত: রুপী
হিন্দি: रुपया, প্রতিবর্ণীকৃত: রুপয়া
ভারতীয় টাকা (আইএসও কোড: INR) ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের সরকারি মুদ্রা। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এই মুদ্রার ইস্যুকরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। ভারতীয় টাকার প্রতীকটি দেবনাগরী ব্যঞ্জনবর্ণ "" ও ইংরেজি ব্যঞ্জনবর্ণ "R" হতে উদ্ভূত এবং ২০১০ সালে এটি গৃহীত হয়েছিল। এই প্রতীকের নকশাকার উদয় কুমার ধর্মলিঙ্গমের মতে ভারতীয় তেরঙার উপর ভিত্তি করে এই প্রতীক তৈরি করা হয়েছে।
জাতীয় পঞ্জিকা ভারতীয় জাতীয় বর্ষপঞ্জি ভারতের রাজপত্র, আকাশবাণীর সংবাদ সম্প্রচার এবং ভারত সরকার দ্বারা প্রকাশিত পঞ্জিকায় গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির সাথে ভারতীয় জাতীয় বর্ষপঞ্জি বা শকাব্দ ব্যবহার করা হয়।
জাতীয় ককেড ভারতীয় ককেড ককেড হচ্ছে রিবনের গাঁট কিংবা বিশিষ্ট রংযুক্ত কোনো বৃত্তাকার বা উপবৃত্তাকার প্রতীক, যা সাধারণত কোনো টুপির উপর পড়া হয়।
জাতীয় প্রাণী বেঙ্গল টাইগার (Panthera tigris tigris) বেঙ্গল টাইগার হচ্ছে বাঘের (Panthera tigris) এক উপজাতি, যা এপ্রিল ১৯৭৩ থেকে ভারতের জাতীয় প্রাণী।[৮] বাঘ হচ্ছে বিড়ালশ্রেণির মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রজাতির মধ্যে অন্যতম। নাগপুর "ভারতের ব্যাঘ্র রাজধানী" হিসাবে পরিচিত। অরণ্যের এলাকা হ্রাস এবং আইইউসিএন লাল তালিকায় বাঘের অন্তর্ভুক্তির ফলে ১৯৭৩ সালে ভারত সরকার ব্যাঘ্র প্রকল্প শুরু করেছিল।[৮]
জাতীয় ঐতিহ্যবাহী প্রাণী ভারতীয় হাতি (Elephas maximus indicus) ভারতীয় হাতি ২২ অক্টোবর ২০১০ থেকে ভারতের জাতীয় ঐতিহ্যবাহী প্রাণী হয়ে এসেছে। দেশের প্রায় ২৯,০০০টি হাতিকে সংরক্ষিত করার জন্য ভারতের পরিবেশ মন্ত্রক ভারতীয় হাতিকে "জাতীয় ঐতিহ্যবাহী হাতি" হিসাবে ঘোষণা করেছিল।
জাতীয় জলজ প্রাণী গঙ্গা নদী শুশুক (Platanista gangetica) গঙ্গা নদী শুশুক (Platanista gangetica) হচ্ছে মূলত গঙ্গা নদীব্রহ্মপুত্র নদ এবং তাদের উপনদীতে পাওয়া একধরনের শুশুকের প্রজাতি।
জাতীয় সরীসৃপ শঙ্খচূড় (Ophiophagus hanna) শঙ্খচূড় বা রাজসর্প (Ophiophagus hanna) হচ্ছে ভারতের জাতীয় সরীসৃপ। ভারত ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অরণ্যে শঙ্খচূড় পাওয়া যায়। শঙ্খচূড় ২৫ বছর পর্যন্ত বাঞ্চতে পারে এবং এটি ১৯ ফুট (৫.৮ মিটার) পর্যন্ত বাড়তে পারে।[৯]
জাতীয় ফুল পদ্ম (Nelumbo nucifera) পদ্ম (Nelumbo nucifera) হচ্ছে একটি পবিত্র ফুল এবং এটি সুদীর্ঘকাল ধরে ভারতীয় সংস্কৃতির এক শুভ প্রতীক।
জাতীয় উদ্ভিদ বট (Ficus benghalensis) বটগাছ (Ficus benghalensis) দীর্ঘায়ুর জন্য একে চিরঞ্জীবী বলে মনে করা হয় এবং এটি ভারতের পুরাণ কাহিনীর এক মূল অংশ।[১০]
জাতীয় পাখি ভারতীয় ময়ূর (Pavo cristatus) ভারতীয় ময়ূর (Pavo cristatus)[১১]
জাতীয় ফল আম (Mangifera indica) আম (Mangifera indica) ভারত হতে উদ্ভূত এবং এই দেশে ১০০টিরও বেশি জাতের আম রয়েছে। আম "ফলের রাজা" হিসাবে পরিচিত।[১২]
জাতীয় নদী গঙ্গা নদী গঙ্গা নদী হচ্ছে ভারতের পবিত্র ও দীর্ঘতম নদী। ঐতিহাসিকভাবে এই নদী গুরুত্বপূর্ণ এবং ভারতের বিভিন্ন প্রধান শহর গঙ্গা নদীর ধারে অবস্থিত, যেমন: হরিদ্বার, কনৌজ, কানপুর, প্রয়াগরাজ, বারাণসী, পাটনা, মুঙ্গের, মুর্শিদাবাদ, নবদ্বীপকলকাতা

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "National Flag"ভারত সরকার। ১৫ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৪ 
  2. "National Identity Elements of India"knowindia.gov.in। ১৪ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  3. "Indian Flag"। ১৩ মার্চ ২০২২। 
  4. "State Emblem"ভারত সরকার। ৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ এপ্রিল ২০১২ 
  5. ভারতের সংবিধান (২০২২)
  6. "THE OFFICIAL LANGUAGES ACT, 1963 (AS AMENDED, 1967) (Act No. 19 of 1963)"Department of Official Language। ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুন ২০১৬ 
  7. বিশ্বাস, অরবিন্দ; আগরওয়াল, এস. পি. (১ জানুয়ারি ১৯৮৬)। Development of education in India: a historical survey of educational documents before and after independence। Concept Publishing Company। পৃষ্ঠা 140। আইএসবিএন 978-81-7022-066-4। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১২ 
  8. "National animal of India | National Symbols"। ২২ মার্চ ২০২২। 
  9. "National symbols of India | Indian National Symbols"। ১৮ মার্চ ২০২২। 
  10. "National Tree"ভারত সরকার। ২২ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ এপ্রিল ২০১২ 
  11. "National Bird"ভারত সরকার। ১৫ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ এপ্রিল ২০১২ 
  12. "National Fruit"ভারত সরকার। ২২ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ এপ্রিল ২০১২ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]