অশোকের সিংহচতুর্মুখ স্তম্ভশীর্ষ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সারনাথ সংগ্রহালয়ে সংরক্ষিত অশোকের সিংহচতুর্মুখ স্তম্ভশীর্ষ।

অশোকের সিংহচতুর্মুখ স্তম্ভশীর্ষ একটি ভাস্কর্য্য যেখানে চারটি এশীয় সিংহ পরস্পরের দিকে পিঠ করে চারদিকে মুখ করে বসে রয়েছে। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে এই ভাস্কর্য্যের রৈখিক প্রতিরূপ ভারতের জাতীয় প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।[১] আনুমানিক ২৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মৌর্য্য সম্রাট অশোকের শাসনকালে সারনাথ নামক স্থানে একটি অশোক স্তম্ভের শীর্ষে এই ভাস্কর্য্যটি স্থাপন করা হয়।[২] অশোক স্তম্ভটি স্বস্থানে রাখা হলেও স্তম্ভশীর্ষটিকে বর্তমানে সারনাথ সংগ্রহালয়ে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। ২.১৫ উচ্চ এই স্তম্ভশীর্ষটি অন্যান্য স্থানে প্রাপ্ত অশোক স্তম্ভগুলির স্তম্ভশীর্ষ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন, যার অধিকাংশে চারটির বদলে একটি সিংহের মূর্তি রয়েছে।[৩]:২৪

বৈশিষ্ট্য[সম্পাদনা]

সারনাথ থেকে প্রাপ্ত অশোকের সিংহচতুর্মুখ স্তম্ভশীর্ষ

এই স্তম্ভশীর্ষ পালিশকরা একটি একক বেলেপাথর খোদাই করে নির্মাণ করা হয়েছে। অশোক স্তম্ভটিস্তম্ভশীর্ষটি দুইটি ভিন্ন পাথরের টুকরো দ্বারা নির্মিত। এই স্তম্ভশীর্ষে চারটি এশীয় সিংহ পরস্পরের দিকে পিঠ করে চারদিকে মুখ করে বসে রয়েছে। এই চারটি সিংহ যে ভিত্তিভূমির ওপর দন্ডায়মান সেখানে একটি হাতি, একটি ঘোড়া, একটি ষাঁড় ও একটি সিংহের মূর্তি খোদিত রয়েছে, যাদের মধ্যে একটি করে ধর্মচক্র খোদিত রয়েছে। এই সম্পূর্ণ ব্যবস্থাটি একটি ঘণ্টাকৃতি পদ্মের ওপর স্থাপিত। সম্ভবত এই স্তম্ভশীর্ষের ওপর একটি ধর্মচক্র ছিল, যার কিছু টুকরো ঐ স্থানে পাওয়া গেছে।[৪] সারনাথের অশোক স্তম্ভ ও এই স্তম্ভশীর্ষের একটি ত্রয়োদশ শতাব্দীতে নির্মিত প্রতিরূপ থাইল্যান্ডের ওয়াট উমোং মন্দিরে রাখা আছে, যেখানে ধর্মচক্র বা অশোক চক্র স্তম্ভশীর্ষের ওপর রয়েছে।[৫]

আবিষ্কারের ইতিহাস[সম্পাদনা]

ভারতের জাতীয় প্রতীক

১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের শীতকালে ইংরেজ প্রকৌশলী ফ্রেডরিখ অস্কার ইমানুয়েল ওয়ের্টেল সারনাথ অঞ্চল খননের দায়িত্ব পান। তিনি প্রথমে মূল স্তূপের পশ্চিমে অশোকের আমলের এক স্থাপত্যের ওপর নির্মিত একটি গুপ্ত যুগের মন্দিরের অবশেষ খুঁজে পান। এর পশ্চিম দিকে তিনি অশোক স্তম্ভের নিচের ভাঙ্গা অংশটি আবিষ্কার করেন। অশোক স্তম্ভটির বাকি অংশ তিনটি ভাগে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এরপর অশোক স্তম্ভটির শীর্ষ ভাস্কর্য্য খোঁজার চেষ্টা করা হয় এবং অদূরেই সেটিকে পাওয়া যায়। সাঁচী থেকে প্রাপ্ত অনুরূপ সিংহচতুর্মুখ স্তম্ভশীর্ষের চেয়ে সারনাথে আবিষ্কৃত ভাস্কর্য্যটি তুলনামূলক ভাবে যথেষ্ট ভালো অবস্থায় ছিল। শীঘ্রই উৎখননের স্থানে সারনাথ সংগ্রহালয় স্থাপন করে আবিষ্কৃত প্রত্নসামগ্রীর সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।[৪]

ভারতের জাতীয় প্রতীক[সম্পাদনা]

১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতের জাতীয় প্রতীক হিসেবে অশোকের সিংহচতুর্মুখ স্তম্ভশীর্ষের মুদ্রণরূপ গৃহীত হয়। [৬] জাতীয় প্রতীকে গৃহীত রূপটিতে চতুর্থ সিংহটি দেখা যায় না, কারণ স্তম্বশীর্ষে এটি পিছনে অবস্থিত ও সামনে থেকে দৃষ্টিগোচরে আসে না। সিংহের পায়ের তলায় যে ভিত্তিভূমির কেন্দ্রে ধর্মচক্র, ডানদিকে ষাঁড় ও বাঁদিকে লম্ফমান ঘোড়া দেখা যায়। বাঁয়ে ও ডানে একদম ধারে ধর্মচক্রের দুটি ধার দেখা যায়।[৭] জাতীয় প্রতীকের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হল দেবনাগরী হরফে খোদিত সত্যমেব জয়তে (সংস্কৃত: सत्यमेव जयते) নীতিবাক্যটি,[৭] যা মূল স্তম্ভশীর্ষে দেখা যায় না।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. State Emblem, Know India india.gov.in
  2. "Sarnath site"। ৭ জুন ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ অক্টোবর ২০১৪ 
  3. Harle, J.C (১৯৯৪)। The Art and Architecture of the Indian Subcontinent (2nd সংস্করণ)। University Press Pelican History of Art। আইএসবিএন 0300062176 
  4. Allen, Charles (২০১২)। Ashoka: The Search for India's Lost Emperor। Hachette UK। পৃষ্ঠা 480। আইএসবিএন 9781408703885 
  5. "Wat Umong Chiang Mai"Thailand's World। ৩ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৩ 
  6. "National Emblem of India"। ২৯ এপ্রিল ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০১৫ 
  7. "State Emeblem of India (Prohibition of Improper Use) Act, 2005, Sch." (পিডিএফ)। ১৯ মার্চ ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০১৫