শঙ্খচূড়
শঙ্খচূড় | |
---|---|
![]() | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | কর্ডাটা |
উপপর্ব: | ভার্টিব্রাটা |
শ্রেণী: | Reptilia |
বর্গ: | Squamata |
উপবর্গ: | Serpentes |
পরিবার: | Elapidae |
গণ: | Ophiophagus |
প্রজাতি: | O. hannah |
দ্বিপদী নাম | |
Ophiophagus hannah ক্যান্টর, ১৮৩৬ | |
![]() | |
শঙ্খচূড়ের বিস্তৃতির মানচিত্র
|
শঙ্খচূড়, রাজ গোখরা (বৈজ্ঞানিক নাম: Ophiophagus hannah) হচ্ছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বিষধর সাপ। যার দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ৫.৬ মিটার (১৮.৫ ফুট) পর্যন্ত হতে পারে।[১] এটি মূলত সম্পূর্ণ দক্ষিণ এশিয়ার বনাঞ্চল জুড়ে দেখা যায়। ইংরেজি নামে কোবরা শব্দটি থাকলেও এটি কোবরা বা গোখরা নয়। এটি সম্পূর্ণ আলাদা গণের একটি সাপ। এই সাপের আকার পর্যবেক্ষণ এবং ফণার পেছনের অংশ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে গোখরার সাথে এটির পার্থক্য খুব সহজেই নির্ণয় করা সম্ভব। গোখরার তুলনায় শঙ্খচূড় আকৃতিতে যথেষ্ট পরিমাণ বড়। এর ফণার পেছনে প্রচলিত গোখরা বা খড়মপায়া গোখরার মতো চশমা বা গোক্ষুর আকৃতি চিহ্ন থাকে না। শঙ্খচূড়ের গণের নাম হচ্ছে Ophiophagus, যার আক্ষরিক অর্থ "সাপ খাদক", এবং প্রাথমিকভাবে এটি অন্যান্য সাপ ভক্ষণ করেই তার খাদ্য চাহিদা মেটায়। যেসকল সাপ এটি ভক্ষণ করে তার মধ্যে আছে র্যাট সাপ, এবং ছোট আকৃতির অজগর। এছাড়াও অন্যান্য বিষধর সাপও এটি ভক্ষণ করে, যেমন: ক্রেইট, গোখরা, এবং নিজ প্রজাতিভুক্ত অন্যান্য ছোট সাপ। এই সাপের বিষ মূলত নিউরোটক্সিক, অর্থাৎ এটির বিষ আক্রান্ত প্রাণীর স্নায়ুতন্ত্রে আক্রমণ করে। শঙ্খচূড়ের একটি সাধারণ দংশন-ই যেকোনো মানুষকে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট।[২] এর কামড়ের ফলে সৃষ্ট মৃত্যু হার প্রায় ৭৫%।[২][৩][৪] ভারতের উত্তর-পূর্ব ও পূর্বাংশে এবং বাংলাদেশের সুন্দরবনের গভীরে এই সাপ দেখতে পাওয়া যায়।[৫]
বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[৬]
প্রজনন[সম্পাদনা]
ডিম পাড়ার আগে স্ত্রী শঙ্খচূড় তার শরীর পাকিয়ে কুণ্ডুলী তৈরি করে, এবং শুষ্ক পাতা ব্যবহার করে উঁচু ঢিপির মতো তৈরি করে। পরবর্তীকালে সেখানে ২০ থেকে ৪০টির মতো ডিম পাড়ে। কুন্ডুলী পাকানো দেহটি ইউকিউবেটররের মতো কাজ করে। বাচ্চা ফোটার আগ পর্যন্ত শঙ্খচূড় তার ঢিপিটিকে বিরামহীনভাবে পাহারা দিতে থাকে, এবং কোনো প্রাণী যেনো কাছে আসতে না পারে, সেদিকে লক্ষ্য রাখে।[৭]
ঢিপির মধ্যে প্রায় ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ডিমগুলোকে তা দেওয়া হয়। বাচ্চা ফোটার পর তা নিজে নিজেই ডিমের খোলস ভেঙে বেরিয়ে যায় এবং নিজেই নিজের শিকার খুঁজতে থাকে, এজন্য মাকে তার নিজের বাচ্চাকে খাওয়াতে হয় না।[৮] শিশু শঙ্খচূড়ের দৈর্ঘ্য হয় প্রায় ৫৫ সেন্টিমিটার এবং এদের বিষ প্রাপ্তবয়স্কদের মতোই মারাত্মক।
সম্পর্কিত প্রজাতি[সম্পাদনা]
শঙ্খচূড় এলাপিডি পরিবারভুক্ত একটি সাপ। ইউরোপ ও এন্টার্কটিকা ব্যতীত এই পরিবারে সারা পৃথিবীতে প্রায় ২০০-এর বেশি প্রজাতি দেখা যায়। এদের সবগুলোই বিষধর, এবং এদের সবারই ছোট, স্থায়ী বিষদাঁত রয়েছে। কিন্তু অঞ্চলভেদে এদের মধ্যে বাসস্থান, আচরণ, এবং বর্ণ ও গঠনগত অনেক পার্থক্য দেখা যায়। এলাপিডি পরিবারভুক্ত চারটি খুবই প্রচলিত সাপ হচ্ছে কোরাল সাপ, ডেথ অ্যাডার, ব্ল্যাক মাম্বা, এবং শঙ্খচূড়।
বাসস্থান ও বিচরণ[সম্পাদনা]
শঙ্খচূড় ভারত উপমহাদেশের দক্ষিণপূর্ব এশিয়া ও পূর্ব এশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভুটান, মায়ানমার(বার্মা), কম্বোডিয়া, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে বেশি পরিমাণে দেখা যায় । এটি ঘন জঙ্গল ও উঁচুভূমিতে বিশেষ করে হ্রদ ও স্রোতস্বিনী পরিবেশে থাকতে বেশি পছন্দ করে[১][৯]।এই সব এলাকায় বন নিধন ও আন্তর্জাতিক প্রাণী চোরাচালানের জন্য শঙ্খচূড়ের প্রজাতি দিন দিন বিলুপ্তির পথে।
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ ক খ Mehrtens, John (১৯৮৭)। Living Snakes of the World। New York: Sterling। আইএসবিএন 0806964618।
- ↑ ক খ Capula, Massimo (১৯৮৯)। Simon & Schuster's Guide to Reptiles and Amphibians of the World। নিউ ইয়র্ক: Simon & Schuster। আইএসবিএন 0671690981।
- ↑ "Ophitoxaemia (venomous snake bite)"। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৯-০৫।
- ↑ Sean Thomas। "One most Dangerous Snakes in the World"। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৯-০৫।
mortality varies sharply with amount of venom involved, most bites involve nonfatal amounts
- ↑ সুন্দরবনের প্রাণী বৈচিত্র[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] — প্রথম আলো
- ↑ বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৫০৮
- ↑ Piper, Ross (2007). Extraordinary Animals: An Encyclopedia of Curious and Unusual Animals. Westport, Conn.: Greenwood Press. আইএসবিএন ৯৭৮-০-৩১৩-৩৩৯২২-৬.
- ↑ National Geographic Program 17 May 2009
- ↑ Miller, Harry (সেপ্টেম্বর ১৯৭০)। "The Cobra, India's 'Good Snake'"। National Geographic। 20: 393–409।
বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]
- শঙ্খচূড়ের হিস হিস শব্দের অডিও ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৬ মার্চ ২০০৯ তারিখে
![]() |
উইকিপ্রজাতিতে-এ বিষয় সম্পর্কিত তথ্য রয়েছে: Ophiophagus hannah |
![]() |
উইকিমিডিয়া কমন্সে শঙ্খচূড় সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। |