নারায়ণগঞ্জ–লাকসাম কর্ড রেলপথ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নারায়ণগঞ্জ–লাকসাম কর্ড
সংক্ষিপ্ত বিবরণ
স্থিতিপ্রস্তাবিত
মালিকরেলপথ মন্ত্রণালয়
অঞ্চলবাংলাদেশ
বিরতিস্থল
স্টেশন১১
পরিষেবা
ধরনরেলপথ
ব্যবস্থাবাংলাদেশ রেলওয়ে
কারিগরি তথ্য
রেলপথের দৈর্ঘ্য৯০ কিলোমিটার
ট্র্যাক গেজডুয়েল গেজ ১,৬৭৬ মিলিমিটার (৫ ফুট ৬ ইঞ্চি)
চালন গতি৭০ কিমি/ঘ
যাত্রাপথের মানচিত্র
নারায়ণগঞ্জ–
লাকসাম কর্ড রেলপথ
নারায়ণগঞ্জ ferry/water interchange  মেট্রো 
মদনগঞ্জ
গজারিয়া
ষাটনল
কচুয়া
মুরাদনগর
চান্দিনা
আরিফপুর
বরুড়া
বিজড়া
লাকসাম জংশন
সূত্র[১]

নারায়ণগঞ্জ–লাকসাম কর্ড রেলপথ হলো ৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রস্তাবিত ডুয়েল গেজ রেলপথ। এটি বাংলাদেশ সরকারের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নির্মিত হবে। এই রেলপথ নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জকুমিল্লা জেলার মধ্য দিয়ে ঢাকাচট্টগ্রামকে সরাসরি সংযুক্ত করবে।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

পটভূমি[সম্পাদনা]

ঢাকা স্টেট রেলওয়ে ১৮৮৪-১৮৮৫ সালে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা হয়ে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ১৪৪-কিলোমিটার (৮৯ মা) দীর্ঘ মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণ করে। এই রেলপথটি মূলত পাট সংগ্রহের জন্য করে কলকাতায় প্রেরণের জন্য চালু করা হয়েছিলো।[২][৩][৪][৫] চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে রেল সংযোগের জন্য আসামের চা চাষীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে ১৮৯১ সালে বঙ্গের পূর্ব দিকে একটি রেলপথ নির্মাণ শুরু করে। চট্টগ্রামকুমিল্লার মধ্যে একটি ১৫০-কিলোমিটার long (৯৩ মা) বিশিষ্ট রেলপথ ১৮৯৫ সালে রেল চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। মেঘনার পূর্ব তীরে চলমান এই রেলপথের সাথে মেঘনার পশ্চিম তীরের রেল ব্যবস্থার সাথে সংযুক্ত করার প্রয়াসে টঙ্গী–আখাউড়া রেলপথ ১৯১০ থেকে ১৯১৪ সালের মধ্যে তৈরি হয়।[৩][৬][৭]

ঢাকা থেকে রেলগাড়িতে করে চট্টগ্রাম যেতে হলে নারায়ণগঞ্জ–বাহাদুরাবাদ ঘাট, টঙ্গী–ভৈরব–আখাউড়াআখাউড়া–লাকসাম–চট্টগ্রাম রেলপথ দিয়ে যেতে হয়, তাই রেলপথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব ৩২৪ কিমি হয়ে দাঁড়ায়। বিদ্যমান যাত্রাপথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা সময় লাগে।[৮] তাই এই পথের দূরত্ব কমাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার দুই বছর আগে একটি কর্ড রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছিলো। পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী ঢাকা থেকে লাকসাম পর্যন্ত পরিকল্পিত কর্ড রেলপথ নির্মাণ করা হলে রেলপথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব ২১৪ কিলোমিটার কমে যাবে বলে জানা যায়। প্রস্তাবিত কর্ড রেলপথ নির্মাণের জন্য পাকিস্তান সরকারের বাজেট ছিলো ₨২৬ কোটি। কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়াসহ অন্যান্য সমস্যার কারণে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।[৯]

উন্নয়ন[সম্পাদনা]

দেশ শত্রুমুক্ত হওয়ার প্রায় পাঁচ বছর পরে কর্ড রেলপথের একটি ট্রাফিক জরিপ প্রস্তুত করা হয়েছিলো। সেই জরিপে কর্ড রেলপথ নির্মাণের জন্য দুটি যাত্রাপথ প্রস্তাব করা হয়। প্রথম প্রস্তাবিত যাত্রাপথের দৈর্ঘ্য ছিল ১১০ কিলোমিটার ও দ্বিতীয় রুটের দৈর্ঘ্য ৯০ কিলোমিটার। বাংলাদেশ সরকার এর নির্মাণের জন্য বাজেট করে ৳২৭.৬৩৮ কোটি[৯] সরকার ১৯৮০-এর দশকে কর্ড রেলপথের জন্য একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করে, কিন্তু নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের পর প্রকল্পটি স্থগিত হয়ে যায়।[১০] তারপরে শেখ হাসিনার প্রথম মন্ত্রিসভার সময় গঠিত রেলওয়ে পুনর্গঠন সংস্কার প্রণয়ন কমিটি ১৯৯৮-১৯৯৯ আর্থিক বছরে কর্ড রেলপথের জন্য ৳৯০০ কোটি বরাদ্দের সুপারিশ করেছিলো।[৯] ২০০৬ সালে খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় মন্ত্রিসভার সময় সরকার এসএম এএমইসি ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেডকে কর্ড রেলপথের জন্য আরেকটি জরিপ করার জন্য নিযুক্ত করে। সেই সমীক্ষায় এর বাজেট ছিল ৳২৫,৮০০ কোটি[৮]

২০১৫ সালে দেশের তৎকালীন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিব পূর্বে নির্ধারিত কর্ড রেলপথের যাত্রাপথের পরিবর্তে নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন থেকে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি হয়ে কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত একটি নতুন রেলপথ নির্মাণের ঘোষণা দেন, যা পরের বছর শুরু করার জন্য নির্ধারিত হলেও শুরু হয়নি।[১১] ২০১৮ সালে শেখ হাসিনার তৃতীয় মন্ত্রিসভা কর্ড রেলপথের প্রস্তাবিত যাত্রাপথে ঢাকা–চট্টগ্রাম উচ্চগতির রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করে, যা পরিবহন বিশেষজ্ঞদের দ্বারা সমালোচিত হয়েছিলো। কিন্তু অত্যধিক ব্যয় বিবেচনা করে প্রকল্পটি স্থগিত করা হয় ও কর্ড রেলপথের উপর গুরুত্ব দিয়ে একটি নতুন সম্ভাব্যতা অধ্যয়ন শুরু করা হয়।[১২][৮] ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন কর্ড রেলপথ নির্মাণের জন্য একটি নতুন পরিকল্পনার প্রতিশ্রুতি দেন যা ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের রেলপথের দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার কমিয়ে দেবে।[১৩] ১১ জানুয়ারি ২০২৩-এ সরকারি ক্রয়াদেশ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি কর্ড রেলপথের নির্মাণ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা অধ্যয়ন ও বিশদ নকশা করার জন্য রেল মন্ত্রণালয়কে অনুমতি দেয়।[১৪]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. বাংলাদেশ ট্রাফিক সমীক্ষা, ১৯৭৫–৭৬
  2. R.P.Saxena। "Indian Railway History timeline"। ১৪ জুলাই ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১২-১৬ 
  3. কাজী আবুল ফিদা (২০১২)। "রেলওয়ে"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  4. "Mymensingh District (1917)"। IRFCA। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১২-১৬ 
  5. "Goalundo Ghat – From the Hooghly to the Himalayas (1913)"। IRFCA। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১২-১৬ 
  6. "Report on the administration of North East India (1921–22)"p. 46। ১৯৮৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১২-১৬ 
  7. Singh, S.N.; Narain, Amarendra (২০০৬)। Socio Economic and Political Problems of Tea Garden Workers: A Study of Assam। Mittal Publications। পৃষ্ঠা 105। আইএসবিএন 81-8324-098-4 
  8. "ঢাকা-লাকসাম কর্ডলাইন ৫৩ বছরেও হলো না"যুগান্তর। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০২৩ 
  9. "ঢাকা-লাকসাম কর্ড লাইন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি ৪৩ বছরেও"বাংলাদেশ প্রতিদিন। ৩০ আগস্ট ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০২৩ 
  10. কামাল, মোস্তফা (২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২)। "রেলের ঢাকা-কুমিল্লা ঘুরপথ: সোজা হবে কবে"সময় টিভি। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০২৩ 
  11. ইসলাম, মইনুল (৯ সেপ্টেম্বর ২০২০)। "রেলওয়ের ঢাকা-কুমিল্লা কর্ডলাইন প্রকল্পটি ঝুলে আছে কেন?"বণিক বার্তা। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০২৩ 
  12. সুলতানা, মুনিমা (১৮ মার্চ ২০২০)। "Railway now opts for chord line"দ্য ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০২৩ 
  13. "'নারায়ণগঞ্জ-কুমিল্লা রেলপথ হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম দূরত্ব কমবে ৭০ কিলোমিটার'"কালের কণ্ঠ। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০২৩ 
  14. অধিকারী, তুহিন শুভ্র (১২ জানুয়ারি ২০২৩)। "নারায়ণগঞ্জ হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম নতুন রেললাইন, দূরত্ব কমবে ৯০ কিমি"দ্য ডেইলি স্টার। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০২৩