জনি ডগলাস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জনি ডগলাস
১৯৩০ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে জনি ডগলাস
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামজন উইলিয়াম হেনরি টাইলার ডগলাস
জন্ম(১৮৮২-০৯-০৩)৩ সেপ্টেম্বর ১৮৮২
স্টোক নিউইংটন, লন্ডন, ইংল্যান্ড
মৃত্যু১৯ ডিসেম্বর ১৯৩০(1930-12-19) (বয়স ৪৮)
সাগরে, লেইসো ট্রিন্ডেল লাইটশীপের সাত মাইল দক্ষিণে, ডেনমার্ক
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম
ভূমিকাঅল-রাউন্ডার, অধিনায়ক
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ১৭০)
১৫ ডিসেম্বর ১৯১১ বনাম অস্ট্রেলিয়া
শেষ টেস্ট৮ জানুয়ারি ১৯২৫ বনাম অস্ট্রেলিয়া
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯০১ – ১৯২৮এসেক্স
১৯০৩–১৯০৪লন্ডন কাউন্টি
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ২৩ ৬৫১
রানের সংখ্যা ৯৬২ ২৪,৫৩১
ব্যাটিং গড় ২৯.১৫ ২৭.৯০
১০০/৫০ ১/৬ ২৬/১০৭
সর্বোচ্চ রান ১১৯ ২১০*
বল করেছে ২,৮১২ ৮৩,৫২৮
উইকেট ৪৫ ১,৮৯৩
বোলিং গড় ৩৩.০২ ২৩.৩২
ইনিংসে ৫ উইকেট ১১৩
ম্যাচে ১০ উইকেট ২৩
সেরা বোলিং ৫/৪৬ ৯/৪৭
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৯/– ৩৬৫/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১২ ডিসেম্বর ২০১৭

১৯০৮ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে মুষ্টিযোদ্ধারূপে জনি ডগলাস
পদক রেকর্ড
পুরুষদের মুষ্টিযুদ্ধ
 গ্রেট ব্রিটেন-এর প্রতিনিধিত্বকারী
অলিম্পিক গেমস
স্বর্ণ পদক - প্রথম স্থান ১৯০৮ লন্ডন মিডলওয়েট

জন উইলিয়াম হেনরি টাইলার জনি ডগলাস (ইংরেজি: Johnny Douglas; জন্ম: ৩ সেপ্টেম্বর, ১৮৮২ - মৃত্যু: ১৯ ডিসেম্বর, ১৯৩০) লন্ডনের স্টোক নিউইংটনে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার, ফুটবলার ও মুষ্টিযোদ্ধা ছিলেন। বিংশ শতকের শুরুর দশকগুলোয় তার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি।

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে এসেক্স ও লন্ডন কাউন্টির প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ অল-রাউন্ডার ছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন জনি ডগলাস। এছাড়াও ইংল্যান্ড দলকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে ও পরে অধিনায়কত্ব করে বিভিন্নভাবে সফলতার মুখ দেখান।

ক্রিকেটের পাশাপাশি শৌখিন মুষ্টিযোদ্ধা হিসেবেও সুনাম ছিল তার। লন্ডনে অনুষ্ঠিত ১৯০৮ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে মুষ্টিযুদ্ধের মিডলওয়েট বিভাগে অংশ নেন ও স্বর্ণপদক জয় করেছেন।

১৫ ডিসেম্বর, ১৯১১ তারিখে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তার টেস্ট অভিষেক হয়। ১৯০১ থেকে ১৯২৮ সাল পর্যন্ত কাউন্টি ক্রিকেটে এসেক্সের পক্ষে খেলেছেন তিনি। এছাড়াও, ১৯১১ সাল থেকে ১৯২৮ সালে অবসর নেয়ার পূর্ব-পর্যন্ত ক্লাবের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন জনি ডগলাস।

১৯ ডিসেম্বর, ১৯৩০ তারিখে ৪৮ বছর বয়সে ডেনমার্কের লেসো ট্রিনডেল লাইটশীপের সাত মাইল দক্ষিণের সাগরে তার সলিলসমাধি ঘটে।

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

জন এইচ. ডগলাসের সন্তানরূপে লন্ডনের স্টোক নিউইংটনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন যা বর্তমানের বেলফাস্ট রোডে অবস্থিত। মোল্টন গ্রামার স্কুল ও ফেলস্টেড স্কুলে অধ্যয়ন করেন। এরপর পৈত্রিক কাঠ আমদানীকারী প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। এরফলে, শৌখিন ক্রিকেট ও মুষ্টিযুদ্ধে অংশগ্রহণের পথ সুগম হয় তার। এছাড়াও একবার ইংল্যান্ডের শৌখিন দলের সদস্যরূপে ফুটবলে অংশগ্রহণ করেছিলেন।[১]

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বেডফোর্ডশায়ার রেজিম্যান্টে যোগ দেন। ভারপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট-কর্নেল হিসেবে মেজর পদবীধারী ছিলেন জনি ডগলাস।

কাউন্টি ক্রিকেটে অংশগ্রহণ[সম্পাদনা]

ফেলস্টেডের বিদ্যালয় দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। ওয়ানস্টেড সি.সি. দলেরও সদস্য তিনি। ১৯০২ সালে এসেক্স দলে খেলেন ও ১৯০৩ সালে লন্ডনের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯০৪ সালে এসেক্সে ফিরে আসার পর খেলোয়াড়ী জীবনের বাদ-বাকী সময় অবস্থান করেন। ১৯১১ থেকে ১৯২৮ সময়কালে ক্লাবের অধিনায়কত্ব করেন।

১৯১৫ সালে উইজডেন কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার মনোনীত হন। তবে, যুদ্ধের বছরগুলোয় কোন খেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। যুদ্ধ শেষ হবার পর ১৯২৩ সালে উদীয়মান জর্জ লুডেনের আবির্ভাবের পূর্ব-পর্যন্ত এসেক্সের বোলিং আক্রমণ নিজ স্কন্ধে তুলে নেন। সাত মৌসুমে শতাধিক উইকেট পান। তন্মধ্যে, ১৯২০ সালে নিজস্ব সেরা ১৪৭ উইকেট পান। পরের মৌসুমে ডার্বিশায়ারের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় অল-রাউন্ড ক্রীড়ানৈপুণ্য প্রদর্শন করে স্বীয় প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। ৪৭ রানে নয় উইকেট দখল করার পর বিল বেস্টউইককে সাথে নিয়ে ব্যক্তিগত অপরাজিত ২১০ রান তুলেন। এরফলে তিনি এতোটাই ক্লান্ত হয়ে পড়েন যে, ডার্বিশায়ারের দ্বিতীয় ইনিংসের শেষদিকে তাকে বোলিংয়ে নামতে হয়েছিল। এরপর তিনি আরও দুই উইকেট তুলে নেন। খেলায় তিনি ৪৭ রানে রেকর্ডসংখ্যক এগারো উইকেট পেয়েছিলেন।

১৯২৩ সালে জে.ডব্লিউ.এইচ.টি. ডগলাস ও জে. ও’কনরের গ্লুচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে ষষ্ঠ উইকেটে ২০৬ রানের জুটি গড়ে রেকর্ড গড়েন। পরবর্তীতে ১৯৬২ সালে এসেক্সের ব্রেন্টউডে মিডলসেক্সের বিপক্ষে ব্যারি নাইট ও আর.এ.জি. লাকিন এসেক্সের সদস্যরূপে ষষ্ঠ উইকেটে এ সংগ্রহের সাথে যুক্ত হন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট[সম্পাদনা]

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরুর পূর্বে ও শেষ হবার পরে ইংল্যান্ড দলের পক্ষে খেলেন। অস্ট্রেলীয়দের কাছে 'জেডব্লিউএইচটি' সংক্ষিপ্ত নামে পরিচিতি পান।

এগারোবার ইংল্যান্ড দলের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। রেকর্ডসংখ্যক আট জয়, আট পরাজয় ও দুই টেস্টে ড্র করেছিল তার দল। ১৯১১ সালে বিকল্প অধিনায়ক হিসেবে অস্ট্রেলিয়া সফরে বেশ সফলতা পেয়েছিলেন। ঐ সিরিজে ইংল্যান্ড ৪-১ ব্যবধানে অ্যাশেজ সিরিজ জয় করে। ১৯২০-২১ মৌসুমে যুদ্ধ পরবর্তী বিধ্বস্ত দলকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। তবে এবার ০-৫ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয় স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার কাছে। ২০০৬-০৭ মৌসুমে ইংল্যান্ড দল একই ব্যবধানে জয় পেয়ে এর পুণরাবৃত্তি ঘটায়।

এমসিসি ১৯২১ সালে তাকে অধিনায়ক হিসেবে মনোনয়ন দেয়। ওয়ারউইক আর্মস্ট্রংয়ের নেতৃত্বাধীন অস্ট্রেলিয়া দলের বিপক্ষে প্রথম দুই টেস্টে হেরে বসে ইংল্যান্ড দল। ফলশ্রুতিতে তাকে অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে সরে আসতে হয়। তবে, প্রথম একাদশে ঠিকই ছিলেন তিনি। এরপর জুলাই, ১৯২৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আরও একটি টেস্টে অধিনায়কত্ব করেন জনি ডগলাস। ১৯২৪-২৫ মৌসুমে সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশগ্রহণ করেন।[২]

মুষ্টিযুদ্ধে অংশগ্রহণ[সম্পাদনা]

মিডলওয়েট বিভাগে খ্যাতিমান মুষ্টিযোদ্ধা হিসেবে ডগলাস পরিচিতি লাভ করেন। লন্ডনে অনুষ্ঠিত ১৯০৮ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমসে মুষ্টিযুদ্ধ বিষয়ে মিডলওয়েট বিভাগে অংশ নেন তিনি।[৩]

চূড়ান্ত বাউটসহ তিনটি বাউটে একই দিনে অংশ নেন। দ্য টাইমসের ভাষ্য মোতাবেক, অন্যতম দক্ষ বক্সিং প্রদর্শনীর প্রয়োগ ঘটিয়ে উপর্যুপরি প্রতিপক্ষকে নাস্তানুবাদ করেছেন যা পূর্বে কখনো দেখা যায়নি।[৪] স্নোয়ি বাকের রৌপ্যপদক লাভ করেন। প্রথম পর্বের প্রথম রাউন্ডে ফ্রান্সের রেনে ডুডেলকে নক-আউটে হারান। দ্বিতীয় পর্বে বাই লাভ করেন। তৃতীয় পর্বে গ্রেট ব্রিটেনের রুবেন ওয়ার্নসকে দ্বিতীয় রাউন্ডে নক-আউটে পরাজিত করেন। চূড়ান্ত খেলায় অস্ট্রেলিয়ার স্নোয়ি বাকেরকে সিদ্ধান্তমূলক খেলায় পরাজিত করে স্বর্ণপদক পান।[৫]

৪৪ বছর পর স্নোয়ি মিথ্যা দাবী তুলেন যে, ডগলাসের বাবা একমাত্র বিচারক ও রেফারি হিসেবে খেলাটি পরিচালনা করেছিলেন। ১৯০৫ সালে এবিএ মিডলওয়েট বিভাগের শিরোপাও লাভ করেন তিনি।[৬][৭]

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। যুদ্ধকালীন বন্ধুর দুই বিধবা বোনের একজন এভলিন রুবি কেসকে ২৫ ডিসেম্বর, ১৯১৬ তারিখে ডগলাস বিয়ে করেন। এ দম্পতির কোন সন্তানাদি ছিল না। তবে জেরাল্ড কেস নামীয় এক সৎপুত্র ছিল।

অবেরন নামের এক নৌকায় তার সলিল সমাধি ঘটে। তিনি ও তার বাবা নৌকায় চড়ে ডেনমার্কের লেসো ট্রিনডেল লাইটশীপের দক্ষিণ সাত মাইল দূরে ভ্রমণরত অবস্থায় নিপতিত হন। ধারণা করা হয় যে, কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় আরেকটি নৌকার চালক ভ্রাতৃদ্বয় বড়দিনের উপহার বিনিময়কালীন এ দূর্ঘটনার শিকারে পরিণত হন। মর্গে জনৈক ব্যক্তির ভাষ্য মতে, ডগলাস হয়তোবা তার বাবাকে বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়েছিলেন। তারা ফিনল্যান্ডে কাঠ ক্রয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন। এ সময় তার বয়স হয়েছিল ৪৮।[৮]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Player Profiles – Corinthian-Casuals Football Club"। Corinthian-casuals.com। ২০১৪-০৪-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৫-০৮ 
  2. "Player Profile: Johnny Douglas at Cricket Archive"। Cricketarchive.com। ১৯৩০-১২-১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৫-০৮ 
  3. "Boxing at the Olympic Games – Amateur Boxing Association of England Limited"। Abae.co.uk। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৫-০৮ 
  4. "Boxing Monthly"। Boxing Monthly। ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৪। ১৩ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ মে ২০১৪ 
  5. "John Douglas Bio, Stats, and Results | Olympics at"। Sports-reference.com। ২০১২-০৪-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৫-০৮ 
  6. "1905 – Amateur Boxing Association of England Limited"। Abae.co.uk। ২৩ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ মে ২০১৪ 
  7. "John Douglas – Boxrec Boxing Encyclopaedia"। Boxrec.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৫-০৮ 
  8. "Chapman in charge"ESPN Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

ক্রীড়া অবস্থান
পূর্বসূরী
"শ্রিম্প" লেভেসন গাওয়ার
ইংল্যান্ড ক্রিকেট অধিনায়ক
১৯১১-১২
উত্তরসূরী
সি. বি. ফ্রাই
পূর্বসূরী
সি. বি. ফ্রাই
ইংল্যান্ড ক্রিকেট অধিনায়ক
১৯১৩/১৪-১৯২০/২১
উত্তরসূরী
সম্মানীয় লিওনেল টেনিসন