মার্টিন হক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
লর্ড হক
১৮৯৩ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে লর্ড হক
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামমার্টিন ব্লাডেন হক
জন্ম(১৮৬০-০৮-১৬)১৬ আগস্ট ১৮৬০
গেইন্সবোরা, লিঙ্কনশায়ার, ইংল্যান্ড
মৃত্যু১০ অক্টোবর ১৯৩৮(1938-10-10) (বয়স ৭৮)
এডিনবরা, স্কটল্যান্ড
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
ভূমিকাব্যাটসম্যান ও অধিনায়ক
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৯৬)
১৩ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা
শেষ টেস্ট৪ এপ্রিল ১৮৯৯ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৮৮১-১৯১১ইয়র্কশায়ার
১৮৮২-১৮৮৫কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়
১৮৮৪-১৯১২এমসিসি
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৬৩৩
রানের সংখ্যা ৫৫ ১৬,৭৪৯
ব্যাটিং গড় ৭.৮৫ ২০.১৫
১০০/৫০ ০/০ ১৩/৬৯
সর্বোচ্চ রান ৩০ ১৬৬
বল করেছে ২০
উইকেট
বোলিং গড়
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৩/– ২০৯/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ৪ জুলাই ২০১৭
ড্রাইভ করছে লর্ড হক

মার্টিন ব্লাডেন হক, ৭ম ব্যারন হক (ইংরেজি: Martin Hawke; জন্ম: ১৬ আগস্ট, ১৮৬০ - মৃত্যু: ১০ অক্টোবর, ১৯৩৮) লিঙ্কনশায়ারের গেইন্সবোরা এলাকার উইলিংহাম বাই স্টয়ে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ইংরেজ শৌখিন ক্রিকেট তারকা ও অধিনায়ক ছিলেন। ১৮৮১ থেকে ১৯১১ সময়কালে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। এছাড়াও ঘরোয়া ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ইয়র্কশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন ‘লর্ড হক’ ডাকনামে পরিচিত মার্টিন হক। উভয় দলেই অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে পাঁচটি টেস্ট খেলায় অংশগ্রহণসহ ৬৩৩টি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন তিনি। ১৬৭৪৯ রানসহ ২০৯টি ক্যাচ নিয়েছেন। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৬৬ রান তোলার পাশাপাশি ১৩ শতক ও ৬৯ অর্ধ-শতক করেছেন।[১]

শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

সম্মানীয় মার্টিন হক নামে পূর্বে পরিচিত ছিলেন তিনি। ৫ ডিসেম্বর, ১৮৮৭ তারিখে নিজ পিতা রেভারেন্ড এডওয়ার্ড হেনরি জুলিয়াস হক মৃত্যুবরণ করলে টোটনের ৭ম ব্যারন হক পদবী ধারণ করেন। এটনে পড়াশোনা করেন তিনি। ১৮৭৮ ও ১৮৭৯ সালে বিদ্যালয় ক্রিকেট একাদশের সদস্য ছিলেন। বৃত্তিধারী বিধায় তার পিতা তাকে বাড়ীতে দুই বছর পড়ান। অক্টোবর, ১৮৮১ সালে কেমব্রিজের মাগদালেন কলেজে ভর্তি হন। ১৮৮২ থেকে ১৮৮৫ সাল পর্যন্ত কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট ক্লাবে খেলেন। ১৮৮২, ১৮৮৩ ও ১৮৮৫ তিন বছর কেমব্রিজ ব্লু লাভ করেন। ১৮৮৫ সালে কেমব্রিজের দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। জুলাই, ১৮৭৯ সালে এটন ত্যাগ করেন ও দুই বছরের জন্য ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধানের পড়াশোনা করতে থাকেন। এ সময় রেভারেন্ড এডমন্ড কার্টারের আমন্ত্রণে ইয়র্কের ইয়র্কশায়ার জেন্টলম্যান ক্রিকেট ক্লাব মাঠে ইয়র্কশায়ার জেন্টলম্যানদের ক্রিকেট ক্লাবে খেলেন।

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

এডোয়ার্ড হেনরি জুলিয়াস হক ও ব্যারনেস হক দম্পতির ছয় সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ তিনি।[২] তার বাবা ১৮৫৪ থেকে ১৮৭৫ সালে পর্যন্ত উইলিংহামের রেক্টর ছিলেন। নিউয়ার্কে হকের প্রথম বিদ্যালয় ছিল। এরপর তিনি স্লাউয়ে সেন্ট মাইকেল অল্ডিন হাউজে ভর্তি হন। এটন কলেজের প্রস্তুতিসূচক বিদ্যালয়টিতে ১৮৭৪ থেকে ১৮৭৯ সাল পর্যন্ত ছিলেন।[৩] এটনের পর তার বাবার সিদ্ধান্তক্রমে তাকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে দুই বছরের জন্য শিক্ষাগ্রহণ করান। মাঝারিসারীর ছাত্র থাকা স্বত্ত্বেও অক্টোবর, ১৮৮১ সালের পূর্ব-পর্যন্ত এভাবে পড়াশোনা করেন। এরপর ১৮৮৫ সাল পর্যন্ত কেমব্রিজের মাগদালেন কলেজে পড়েন।[৪][৫] কেমব্রিজের অবস্থানকালে তিনি ইউনিভার্সিটি পিট ক্লাবের সদস্য ছিলেন।[৬]

তার বাবার আগ্রহে ক্রিকেটের প্রতি তার দূর্নিবার আকর্ষণ ঘটে। বাবা উইলিংহাম ভিলেজ ক্লাবের সাথে জড়িত ছিলেন ও ক্রীড়াটির প্রতি নিবেদিত প্রাণ ছিলেন।[৭] শুরুর দিকের বিদ্যালয়গুলোতে তিনি খেলতেন। ১৮৭৬ থেকে ১৮৭৯ সময়কালে ১৯ খেলায় অংশ নেন।[৮] এটনে মাইক মিচেলের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেন। মিচেলের আগ্রহেই ১৮৭০-এর দশকে বিদ্যালয় ক্রিকেট দল গঠিত হয় ও আলফ্রেড লিটলটন, চার্লস স্টাডইভো ব্লাইয়ের ন্যায় প্রথিতযশা খেলোয়াড়ের আত্মপ্রকাশ ঘটে।[৯] জুলাই, ১৮৭৮ সালে লর্ডসে এটন বনাম হ্যারোর মধ্যকার মর্যাদার লড়াইয়ে তিনি তার প্রথম খেলায় অংশ নেন।[১০]

১৮৭০ সাল থেকে তার বাবা ব্যারনি স্থলাভিষিক্ত হলে, হক সম্মানীয় পদবী লাভ করেন। ১৮৭৫ সালে পরিবারটি উইলিংহাম থেকে টেডকাস্টারের কাছে উইহিল পার্কে স্থানান্তরিত হয়। পরিবারের এক বন্ধুর মাধ্যমে সম্পত্তি লিজ নেয়া হয় ও উইহিল ব্যারনীয় আসন হিসেবে চুক্তির মেয়াদ পূর্তির পরবর্তী পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত বহাল ছিল।[১১] উইহিল পার্কে হকের আবাসকালীন নীতির কারণে ১৮৭৩ সালে প্রণীত কাউন্টি ক্রিকেটের শর্তাবলীর যোগ্যতা লাভের অধিকারী হন ও ইয়র্কশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবে খেলেন।[১২]

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট[সম্পাদনা]

হক মাঝারিসারীর ব্যাটসম্যান ছিলেন। জেন্টলম্যানের পক্ষে খেলাকালীন চলনসইরূপে আখ্যায়িত হতেন। সম্ভবতঃ ব্যাটসম্যানের মর্যাদা পাননি তবে, অধিনায়কত্বের চাপে তা ধর্তব্যের মধ্যে ছিল না।[১৩] অন-সাইডে দর্শনীয় ড্রাইভ মারতেন। এটিই তার প্রিয় স্ট্রোক ছিল।[১৪]

ফিল্ডার হিসেবে সাধারণতঃ মিডফিল্ড বা ডিপ অঞ্চলে অবস্থান করতেন।[১৫] উইজডেন সম্পাদক হুবার্ট প্রেস্টন হককে ক্ষীপ্রগতিসম্পন্ন ও নিশ্চিত ক্যাচ নেয়ায় দক্ষতা প্রদর্শনকারীরূপে আখ্যায়িত করেছেন।[১৬] প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে তিনি ২০৯টি ক্যাচ নেন।[১] তিনি কখনো বোলার হিসেবে আবির্ভূত হননি। পুরো প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে চার-বলের ওভারে পাঁচ ওভার বোলিং করে প্রায় বলপ্রতি রান দিয়ে বোলিং পরিসংখ্যান গড়েছেন ০/১৬।[১]

১৮৭৫ সাল পর্যন্ত উইহিল পার্কে বসবাস করতে থাকেন। এরফলে আবাসকালীন যোগ্যতারভিত্তিতে কাউন্টি ক্লাবের পক্ষে খেলার সুযোগ লাভ করেন। সেপ্টেম্বর, ১৮৮১ সালে কার্টার তাকে স্কারবোরা উৎসবে যোগ দিতে আমন্ত্রণ বার্তা প্রেরণ করেন। সেখানেই ইয়র্কশায়ারের পক্ষে তার প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। প্রতিপক্ষীয় দল ছিল মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি)। একমাস পর কেমব্রিজে চলে যান। ইয়র্কশায়ারে ফেরার পূর্বে মে থেকে জুলাই, ১৮৮২ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় দলের পক্ষে খেলেন। ঐ সময়ে হক সাধারণতঃ কেবলমাত্র ইয়র্কশায়ারের দলে শৌখিন খেলোয়াড় হিসেবে খেলতেন। শুরুতে অধিনায়কত্বের বিষয়ে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে, পেশাদার অধিনায়ক ও টেস্ট বোলার টম এমেটের অধীনে খেলা শিখতে চেয়েছিলেন।

১৮৮৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লাবের অধিনায়কের দায়িত্ব ভার অর্পণ করা হয়। কেমব্রিজে থাকলেও এ দায়িত্বে ১৮৯০ মৌসুম পর্যন্ত ছিলেন। অদ্যাবধি তিনি সর্বাপেক্ষা সফলতম কাউন্টি ক্লাবটির অধিনায়কের মর্যাদা পাচ্ছেন। তার সময়কালে ইয়র্কশায়ার রেকর্ডসংখ্যক আটবার কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা লাভ করেছিল। এরফলে সর্বকালের সেরা সফলতম ইয়র্কশায়ার অধিনায়কের তালিকায় তিনি অন্তর্ভুক্ত হন। তার পরই কেবলমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে স্টুয়ার্ট সারিজব্রায়ান সেলার্স অবস্থান করছেন।[১৭]

অধিনায়ক হিসেবে হক কঠোর মনোভাবের অধিকারী ছিলেন। কেউবা তাকে পিতৃসুলভ, পেশাদার খেলোয়াড়দের সাথে কল্যাণকামী দৃষ্টিভঙ্গীর পরিচয় দিতেন। কিছু ক্ষেত্রে তার এই নীতি বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ালেও সকলের কাছে সম্মানীয় ছিলেন। দলের শৃঙ্খলা রক্ষার্থেও বেশ কড়া নজর রাখতেন। মাতাল অবস্থায় খেলার অভিযোগে ইংরেজ বোলার ববি পিলকে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে বহিষ্কার করেছিলেন।

১৮৯৬ সালে ইয়র্কশায়ারের সদস্যরূপে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৬৬ রান তুলেন। এজবাস্টনে ওয়ারউইকশায়ারের বিপক্ষে দল রেকর্ডসংখ্যক ৮৮৭ রান তুলে। অষ্টম উইকেট জুটিতে ববি পিলের সাথে ২৯২ রান সংগ্রহ করেন যা রেকর্ড হিসেবে বিবেচিত।[১৮] ১৮৯৮ সালে কেন্টের বিপক্ষে ডেভিড হান্টারের সাথে দশম উইকেটে ১৪৮ সংগ্রহ করে আরও একটি রেকর্ড গড়েন।[১৯] সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ৬৩৩ প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলায় অংশ নিয়ে ৯৩৬ ইনিংস খেলেন। তন্মধ্যে ১০৫ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। ২০.১৫ গড়ে ১৬৭৪৯ রান তুলেন। ১৩ সেঞ্চুরি ও ৬৯টি হাফ-সেঞ্চুরি করেছিলেন।[১]

১৯০৮ সালে হক তার খেলোয়াড়ী জীবনের সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ মৌসুমে খেলোয়াড় হিসেবে অংশ নেন। ১৯০৯ সালে মাত্র কয়েকটি খেলায় অংশ নেন ও ১৯১০ সালে অধিনায়ক হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর নেন।[২০] এভেরার্ড র‌্যাডক্লিফ তার স্থলাভিষিক্ত হন ও ১৯১১ মৌসুম পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন।[২১]

১৮৮৭-৮৮ মৌসুমে দুইটি ইংরেজ দল শীতকালে অস্ট্রেলিয়া সফরে যায়।[২২] হক দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া, ভিক্টোরিয়ানিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে তিনটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেন।[২৩] মাঝারিসারীর ক্রীড়ানৈপুণ্য প্রদর্শন করেন তিনি। পাঁচ ইনিংসে সর্বমোট ১৫.২০ গড়ে ৭৬ রান করেন। সর্বোচ্চ ৪৮ রান ও এক ক্যাচ নেন। ৬ ডিসেম্বর নিউ সাউথ ওয়েলসের রিচমন্ডে অবস্থানকালীন পিতার মৃত্যু সংবাদ পান ও টোটনের সপ্তম ব্যারন মনোনীত হওয়ায় অধিনায়কের দায়িত্বভার ওয়াল্টার রিডের কাছে অর্পণ করেন ও বাড়ীর পথে যাত্রা দেন।[২৪]

টেস্ট ক্রিকেট[সম্পাদনা]

ইংল্যান্ডের পক্ষে পাঁচটি টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। সবগুলো টেস্টই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ছিল। ১৮৯৬ সালে তিনটি ও ১৮৯৯ সালে দুইটি। ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৬ সালে পোর্ট এলিজাবেথের সেন্ট জর্জেস ওভালে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তার টেস্টে অভিষেক ঘটে। টিম ও’ব্রায়ানের নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে আসলেও হক দলকে ঐ টেস্টে নেতৃত্বে দেন। সবগুলো টেস্টেই তার দল বিজয়ী হয়েছিল।[২৫][২৬][২৭][২৮][২৯] টেস্টে অধিনায়কত্ব করে সফলকাম হলেও ইংরেজ ব্যাটসম্যান হিসেবে তেমন সফলতা পাননি। আট ইনিংসে সর্বসাকুল্যে ৭.৮৫ গড়ে মাত্র ৫৫ রান ও ৩টি ক্যাচ নিয়েছিলেন। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ছিল ৩০ রান।[১]

১৮৯৫-৯৬ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ইংল্যান্ড দলের নেতৃত্ব দেন।[৩০] তিন টেস্টের সিরিজে সফরকারী দলে সি.বি. ফ্রাই, জর্জ লোহম্যান, স্যামি উডসটম হেওয়ার্ডের ন্যায় তারকাসমৃদ্ধ ছিল। সফরকালীন তিন টেস্টসহ চারটি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটের সবকটিতেই তার অংশগ্রহণ ছিল। ছয় ইনিংসে তিনি মাত্র ৪৬ রান তুলেন। সর্বোচ্চ ৩০ রানসহ তিনটি ক্যাচ নেন।

১৮৯৮-৯৯ মৌসুমে পুনরায় দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। এবার দলটি দুই টেস্টসহ পাঁচটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেয়। সবগুলো টেস্টেই ইংল্যান্ড জয় পায়। জনি টিল্ডসলে, শোফিল্ড হেই, আলবার্ট ট্রটপেলহাম ওয়ার্নার এ দলটিতে ছিলেন। যদিও হক বিজয়ী দলের অধিনায়ক হিসেবে সফলতা পান, কিন্তু আট ইনিংসে তিনি মাত্র ৬৯ রান তুলেছিলেন। তন্মধ্যে সর্বোচ্চ রান ছিল অপরাজিত ৩১* রান।

প্রশাসনে অংশগ্রহণ[সম্পাদনা]

১৮৯৮ সালে প্রশাসনিকভাবে দায়িত্ব নেন। খেলোয়াড়ী জীবনে হক ক্রিকেট প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিতে পরিণত হন। মাইকেল এলিসনের মৃত্যুর পর দলের অধিনায়ক থাকাকালেই ১৮৯৮ সালে ইয়র্কশায়ার ক্লাবের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তী চল্লিশ বছর মৃত্যু-পূর্ব পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তন্মধ্যে, প্রথম বারোবছর দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন।[৩১] ক্লাবের সচিব ফ্রেডেরিক টুনের সাথে সমন্বয় সাধন করে জুন, ১৯৩০ সাল পর্যন্ত সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেন। ক্লাবের সদস্য সংখ্যা দশ বছরের ব্যবধানে ১৯০৩ সালের ৩০০০ থেকে সাত সহস্রাধিক নিয়ে যান।[৩২] তারা একযোগে পেশাদারী পর্যায়ে খেলোয়াড়দের সাথে চুক্তির বিষয়ে শর্তাবলীর উন্নয়নে কাজ করে যান। ১৯১৪ সালে নিজ মাঠের খেলায় £৫ পাউন্ড এবং বাইরের খেলায় £৬-সহ প্রতি জয়ে £১ বোনাসের ব্যবস্থা করেন। কাউন্টি ক্যাপের অধিকারী খেলোয়াড়দেরকে ক্রিকেটার্স ফ্রেন্ডলি সোসাইটির সদস্যপদের জন্য অর্থ মওকুফ এবং শীতকালীন পারিশ্রমিকবাবদ প্রতি সপ্তাহে £২ প্রদানের ব্যবস্থা করেন।[৩৩]

খেলোয়াড় অবস্থাতেই ১৮৮৭-৮৮ মৌসুম থেকে ১৯১১-১২ মৌসুম পর্যন্ত নয়বার বিদেশ সফরে যান। অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আর্জেন্টিনায় একবার ও ভারত, উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দলকে দুইবার নেতৃত্ব দেন। পাঁচ টেস্টে অংশ নেয়া হকের সবগুলো টেস্টই দক্ষিণ আফ্রিকায় স্বাগতিক দলের বিপক্ষে খেলেছিলেন। তন্মধ্যে, ইংল্যান্ড দলকে চার টেস্টে নেতৃত্ব দেন, যার সবগুলোই বিজয়ী দলের পক্ষে ছিল। খেলোয়াড়ী জীবন থেকে অবসর নেয়ার পর হক এমসিসি-সহ ইয়র্কশায়ারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। ১৯১৪ সালে এমসিসি’র সভাপতি হন ও বার্ষিকাকারে মনোনীত এ পদে তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ও ছিলেন। ১৯৩২ থেকে ১৯৩৭ সময়কালে এমসিসি’র সম্মানীয় কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন। প্রশাসক থাকাকালে যুৎসই প্রভাব বিস্তার করেছেন। তবে সমালোচিতও হয়েছেন তিনি। তাঁকে বডিলাইন বিতর্কে নিষ্ক্রীয়তার অভিযোগ আনা হয়।

মূল্যায়ন[সম্পাদনা]

হকের অধিনায়কত্বের নীতির বিষয়ে স্ট্যানলি জ্যাকসন লিখেছিলেন,[১৬]

প্রত্যেক খেলোয়াড় ও নিজের কল্যাণের দিকের কথা চিন্তা করে তাঁর ব্যক্তিগত আগ্রহ ছিল। তিনি তা শুরু করেন ও শেষ পর্যন্ত টিকেছিল। তাঁর প্রভূত্বসূলভ আচরণ দলের প্রত্যেক সদস্যদের কাছ থেকে সম্মানসূচক ও বিশ্বস্ততার মাধ্যমে অর্জিত হয়। আমি মনে করি যে, এরফলে দলটি অবশ্যই সুসংগঠিত হয়েছিল।

১৯০৯ সালে দল নির্বাচকমণ্ডলীর সভাপতির দায়িত্ব থেকে অবসর নেন। একই বছর তাঁকে উইজডেন বর্ষসেরা ক্রিকেটাররূপে মনোনীত করা হয় ও পুরস্কারটির শিরোনাম দেয়া হয় ‘লর্ড হক ও বর্ষসেরা চার ক্রিকেটার’।[৩৪]

দেহাবসান[সম্পাদনা]

পিতার মৃত্যুর পর সপ্তম ব্যারনরূপে হক ৫ ডিসেম্বর, ১৮৮৭ তারিখে স্থলাভিষিক্ত হন ও এর পর থেকেই বৈশ্বিকভাবে লর্ড হক নামে পরিচিতি পান।[১] মায়ের মৃত্যুর এক বছরেরও কম সময়ের ব্যবধানে ১ জুন, ১৯১৬ তারিখে ডব্লিউ. পিকক এডওয়ার্ডের কন্যা মার্জোরি নেলসন রিচি’র (বিবাহ-পূর্ব মড) সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। মার্জোরি বিধবা ছিলেন ও হকের সমবয়সী ছিলেন। এ দম্পতির কোন সন্তানাদি ছিল না। ১৯২৪ সালে উইহিল পার্কের লিজের সময়সীমা অতিবাহিত হলে এ দম্পতি নর্থ বারউইকে চলে যান। ১৯৩৬ সালে স্ত্রীর দেহাবসান ঘটে। এরপর ১০ অক্টোবর, ১৯৩৮ তারিখে এডিনবরার ওয়েস্ট এন্ডের নার্সিংহোমে তার দেহাবসান ঘটে। নর্থ বারউইকে ভূপতিত হলে তাকে দ্রুত জরুরী চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়।[৩৫] এডিনবরা ক্রিমেটোরিয়ামে তাকে সমাহিত করা হলেও, তার ভষ্ম লন্ডন লাম্বেথ বোরার ওয়েস্ট নরউড সমাধিক্ষেত্রে নেয়া হয়। ২৫ জুন, ১৯৩৬ তারিখে প্রয়াত পত্নীর পাশে তার ভষ্ম রাখা হয়।[২]

হকের মৃত্যুর পর এ পদবী ছোট ভাইয়ের কাছে চলে যায়।[২] ১৯২৪ সালে ভূমি চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে উইহিল থেকে চলে আসেন ও মার্জোরির নর্থ বারউইকের বাড়ীতে অবস্থান করেন। এখানেই জীবনের শেষদিন পর্যন্ত একত্রে ছিলেন।[৩৬]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Lord Hawke profile"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০১৪(সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য)) 
  2. "Person Page – 25534"। thePeerage.com। সংগ্রহের তারিখ ১৮ আগস্ট ২০১০ 
  3. Coldham, pp.22–23.
  4. Coldham, p.34.
  5. "Hawke, the Hon. Martin Bladen (HWK881MB)"A Cambridge Alumni Databaseকেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় 
  6. Fletcher, Walter Morley (২০১১) [1935]। The University Pitt Club: 1835-1935 (First Paperback সংস্করণ)। Cambridge: Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 88। আইএসবিএন 978-1-107-60006-5 
  7. Coldham, p.16.
  8. "Other matches played by Lord Hawke"। CricketArchive। ১৫ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০১০(সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য)) 
  9. Altham, p.143.
  10. "Eton College v Harrow School in 1878"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০১১(সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য)) 
  11. Coldham, p.22.
  12. Coldham, p.39.
  13. Swanton, p.189.
  14. Ranjitsinhji, p.440.
  15. Hodgson, p.48.
  16. "Tributes to Lord Hawke by Sir Stanley Jackson, Sir Francis Lacey & Hubert Preston"Wisden Cricketers' Almanack। ১৯৩৯। সংগ্রহের তারিখ ২১ আগস্ট ২০১০ 
  17. Frith, David"Brian Sellers"Wisden Cricket Monthly। Espncricinfo.com। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুলাই ২০১১ 
  18. Hodgson, pp.66, 289.
  19. Kilburn, p.31.
  20. Kilburn, p.56.
  21. Kilburn, p.57.
  22. "Tours in 1887–88"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৩ সেপ্টেম্বর ২০১০(সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য)) 
  23. "First-class matches played by Lord Hawke"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০১০(সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য)) 
  24. Coldham, p.67.
  25. "Lord Hawke's XI in South Africa 1895/96 – 1st Test"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মে ২০১১(সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য)) 
  26. "Lord Hawke's XI in South Africa 1895/96 – 2nd Test"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মে ২০১১(সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য)) 
  27. "Lord Hawke's XI in South Africa 1895/96 – 3rd Test"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মে ২০১১(সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য)) 
  28. "Lord Hawke's XI in South Africa 1898/99 – 1st Test"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মে ২০১১(সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য)) 
  29. "Lord Hawke's XI in South Africa 1898/99 – 2nd Test"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মে ২০১১(সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য)) 
  30. "Lord Hawke's XI in South Africa in 1895–96"। CricketArchive। ১৫ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০১১(সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য)) 
  31. Kilburn, p.25.
  32. Hawke, Fifty years of Yorkshire county
  33. Hodgson, pp.87–88.
  34. Pope & Dyson, pp.50–51.
  35. "Obituaries in 1938"Wisden Cricketers' Almanack। ১৯৩৯। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুলাই ২০১০ 
  36. Coldham, p.186.

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

গ্রন্থপঞ্জী[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

ক্রীড়া অবস্থান
পূর্বসূরী
অ্যান্ড্রু স্টডার্ট
ইংরেজ জাতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক
১৮৯৫-৯৬
উত্তরসূরী
ডব্লিউ. জি. গ্রেস
পূর্বসূরী
অ্যান্ড্রু স্টডার্ট
ইংরেজ জাতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক
১৮৯৮-৯৯
উত্তরসূরী
আর্চি ম্যাকলারেন
গ্রেট ব্রিটেনের অভিজাত সম্প্রদায়
পূর্বসূরী
এডওয়ার্ড হক
ব্যারন হক উত্তরসূরী
এডওয়ার্ড হক