ফাস্ট বোলিং

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
শেন বন্ড নিউজিল্যান্ডের অন্যতম ফাস্ট বোলার ছিলেন।
ফাস্ট বোলিংয়ের জন্যে গ্রীপের ব্যবহার
স্লো বোলিংয়ের জন্যে গ্রীপের ব্যবহার
লেগ কাটারের জন্যে গ্রীপের ব্যবহার
অফ কাটারের জন্যে গ্রীপের ব্যবহার

ফাস্ট বোলিং (ইংরেজি: Fast bowling) ক্রিকেটীয় পরিভাষাবিশেষপেস বোলিং নামেও এর ব্যবহার হয়ে থাকে। রাজকীয় খেলা হিসেবে ক্রিকেটে দুই ধরনের বোলিংয়ের অন্যতম এটি। অপরটি হচ্ছে স্পিন বোলিং। যিনি ফাস্ট বোলিংয়ে দক্ষ বা সিদ্ধহস্তের অধিকারী, তিনি সচরাচর ফাস্ট বোলার, ফাস্টম্যান, পেস বোলার অথবা ডি নামে পরিচিত। স্বতন্ত্রভাবে ফাস্ট বোলিংয়ের কলাকৌশল প্রয়োগের ফলে বোলারকে সুইং বোলার কিংবা সীম বোলার নামেও অভিহিত করা হয়।

ডেনিস লিলি, ব্রেট লি, শেন বন্ড, ইমরান খান, কপিল দেব, কার্টলি এমব্রোস, ম্যালকম মার্শাল, রিচার্ড হ্যাডলি, অ্যালান ডোনাল্ড, গ্লেন ম্যাকগ্রা, শন পোলক, শোয়েব আখতার প্রমূখ খ্যাতনামা বোলারগণ পেস বোলিং জগতে অমর হয়ে রয়েছেন। এছাড়া বর্তমান সময়ের মুস্তাফিজুর রহমান, মাশরাফি বিন মর্তুজা, ওয়াহাব রিয়াজ, মিচেল স্টার্ক দারুণ ফাস্ট বোলার।

উদ্দেশ্যাবলী[সম্পাদনা]

ফাস্ট বোলিংয়ের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে বলকে দ্রুতগতিতে নিক্ষেপ করা এবং ক্রিকেট পীচে বল ফেলে বাউন্সের সাহায্যে শূন্যে উঠানো। এরফলে ব্যাটসম্যানের পক্ষে বলের মোকাবেলা করা বেশ দুরূহ হয়ে পড়ে এবং ব্যাট দিয়ে বলকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভবপর হয়ে উঠে না। সচরাচর দ্রুত গতিতে বলের গড় গতিবেগ ১৩৬ থেকে ১৫০ কি.মি/ঘ (৮৫ থেকে ৯৫ মাইল/ঘণ্টা) পর্যন্ত হয়ে থাকে।

আনুষ্ঠানিকভাবে দ্রুতগতিতে বল নিক্ষেপের ঘটনার রেকর্ড করা হয়েছে ঘণ্টায় ১৬১.৩ কি.মি/ঘ (১০০.২ মাইল/ঘণ্টা)। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে পাকিস্তানের শোয়েব আখতার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এ বিরল কীর্তিটি গড়েন। লেগ সাইডে করা অত্যন্ত দ্রুতগতির এ বলের মোকাবেলা করেছিলেন নিক নাইট[১] এছাড়াও জেফ থমসন , ব্রেট লি এবং শন টেইট ১০০ মাইলে বল করার গৌরব অর্জন করেন |

অধিকাংশ ক্রিকেট খেলুড়ে দেশে ফাস্ট বোলারকে দলীয় বোলিং আক্রমণের প্রধান মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তারা ধীরগতির বোলার বা স্পিনারদেরকে সহায়তা করে থাকেন। স্পিনারদেরকে সহকারী বোলারের মানদণ্ডে তুলে ধরা হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা দলে বর্তমানে ফাস্ট বোলারের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফাস্ট বোলাররা বলকে নমনীয় করে স্পিনারদের ব্যবহারের উপযোগী করে তুলছেন। এ দেশগুলোর পীচগুলো স্পিনারদের উপযোগী করে তৈরী করা হয় যা ফাস্ট বোলারদের চেয়ে অধিক কার্যকরী। কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্পিনারদের অবিশ্বাস্য কীর্তিগাঁথাগুলো এ ধারণাকে ম্লান করে দিয়েছে। মুত্তিয়া মুরালিধরন, শেন ওয়ার্ন, শহীদ আফ্রিদি, অনিল কুম্বলে, সাঈদ আজমল সনাথ জয়াসুরিয়া, সাকলাইন মুশতাক, ড্যানিয়েল ভেট্টোরি, হরভজন সিং, সাকিব আল হাসান,মোহাম্মদ রফিক প্রমূখ স্পিনারদের সফল পদচারণা এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

শ্রেণিবিভাগ[সম্পাদনা]

ফাস্ট বোলিংয়ের জন্যে কিশোর-তরুণ বোলারদেরকে পরিপূর্ণভাবে গতির দিকে মনোযোগী হতে হয়। যখন ফাস্ট বোলাররা পরিপক্ব হয়ে উঠেন, তখন তাদের দক্ষতায় সুইং কিংবা সীম বোলিং কলা-কৌশল প্রয়োগে সফলকাম হন। অধিকাংশ ফাস্ট বোলাররাই এ দু'টির একটিকে বেছে নেন। তখন তারা সুইং কিংবা সীম বোলাররূপে পরিচিত হন। কিন্তু এ শ্রেণিবিভাগ সর্বদা সর্বক্ষেত্রে প্রচলিত নয়। সাধারণতঃ দক্ষ ও অভিজ্ঞ পেস বোলাররা ফাস্ট, সুইং, সীমসহ অফ কাটার প্রয়োগে বল ডেলিভারী দেন।

বল নিক্ষেপণের গতিবেগের উপর নির্ভর করে বোলারদেরকে বিভিন্ন উপ-বিভাগে বিভক্ত করে নিম্নে দেখানো হয়েছে:-

ফাস্ট বোলারদের শ্রেণিবিভাগ
প্রকারভেদ মাইল/ঘণ্টা কিলোমিটার/ঘণ্টা
ফাস্ট বোলার ৯০+ ১৪০+
ফাস্ট-মিডিয়াম বোলার ৮১-৮৯ ১৩০-১৩৯
মিডিয়াম-ফাস্ট বোলার ৭৫-৮০ ১২০-১২৯
স্লো-মিডিয়াম বোলার ৫৭-৭৪ ৯০-১১৯
স্লো বোলার বা স্পিনার <৬০ <৯৫

কিন্তু ক্রিকইনফো ফাস্ট-মিডিয়াম বোলার এবং মিডিয়াম-ফাস্ট বোলার উভয় পরিভাষাই অদল-বদল করে প্রয়োগ ঘটায়।[২]

কৌশল প্রয়োগ[সম্পাদনা]

ফাস্ট বোলিংয়ে বোলারের প্রধান কৌশল হচ্ছে সঠিকভাবে বলকে ধরা বা গ্রিপিং করা। স্পিনারের তুলনায় পেসারদেরকে বেশি দূরত্বের জায়গা প্রয়োজন। বলকে গতিশীল এবং বল নিক্ষেপণে প্রয়োজনীয় ছন্দের জন্যেই এ দূরত্বের প্রয়োজনীয়তা। দৌঁড়ের শেষ পর্যায়ে যথাসম্ভব সম্মুখের পা সোজা রেখে পিচে বল ফেলতে হবে। বলকে অবমুক্ত করে পুনরায় শারীরিক ভারসাম্য ফিরিয়ে নিয়ে আনতে হবে। একজন কার্যকরী ফাস্ট বোলারের অন্যতম অস্ত্র হচ্ছে নিখুঁত ও সঠিকভাবে ব্যাটসম্যানের দিকে বলকে ফেলা।

লাইন এবং লেংথ[সম্পাদনা]

লাইন[সম্পাদনা]

লেংথ[সম্পাদনা]

ফাস্ট বোলিংয়ের বিভিন্ন লেংথ

আঘাতের ঝুঁকি[সম্পাদনা]

প্রকৃতপক্ষে মানবদেহ ফাস্ট বোলিংয়ের উপযোগী হিসেবে সৃষ্টি হয়নি। এটি সমগ্র দেহে ব্যাপক চাপ প্রয়োগ করে; বিশেষ করে পা, পিঠ এবং কাঁধে এর ব্যাপক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের আশঙ্কা থেকে যায়। বল নিক্ষেপের প্রাক্কালে ভূমিতে চাপ পড়ায় পায়ের গোড়ালি ফেঁটে যাবারও সমূহ সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও, আকস্মিক ঝাঁকুনিতে কাঁধে চাপ পড়ে।

শীর্ষস্থানীয় বোলার[সম্পাদনা]

১ জুন, ২০১৫ তারিখ পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটের শীর্ষস্থানীয় ফাস্ট বোলারদের তালিকা নিম্নরূপ:[৩]

শীর্ষ-১০ ফাস্ট বোলার (টেস্ট)
নাম সময়কাল টেস্ট ইনিংস বল রান উইকেট গড় সেরা ৫ উইকেট ১০ উইকেট
গ্লেন ম্যাকগ্রা ১৯৯৩-২০০৭ ১২৪ ২৪৩ ২৯২৪৮ ১২১৮৬ ৫৬৩ ২১.৬৪ ৮/২৪ ২৯
কোর্টনি ওয়ালশ ১৯৮৪-২০০১ ১৩২ ২৪২ ৩০০১৯ ১২৬৮৮ ৫১৯ ২৪.৪৪ ৭/৩৭ ২২
কপিল দেব ১৯৭৮-১৯৯৪ ১৩১ ২২৭ ২৭৭৪০ ১২৮৬৭ ৪৩৪ ২৯.৬৪ ৯/৮৩ ২৩
স্যার রিচার্ড হ্যাডলি ১৯৭৩-১৯৯০ ৮৬ ১৫০ ২১৯১৮ ৯৬১১ ৪৩১ ২২.২৯ ৯/৫২ ৩৬
শন পোলক ১৯৯৫-২০০৮ ১০৮ ২০২ ২৪৩৫৩ ৯৭৩৩ ৪২১ ২৩.১১ ৭/৮৭ ১৬
ওয়াসিম আকরাম ১৯৮৫-২০০২ ১০৪ ১৮১ ২২৬২৭ ৯৭৭৯ ৪১৪ ২৩.৬২ ৭/১১৯ ২৫
কার্টলি এমব্রোস ১৯৮৮-২০০০ ৯৮ ১৭৯ ২২১০৩ ৮৫০১ ৪০৫ ২০.৯৯ ৮/৪৫ ২২
জেমস অ্যান্ডারসন ২০০৩-বর্তমান ১০৪ ১৯৫ ২৩৩০৪ ১১৮৫৯ ৪০৩ ২৯.৪২ ৭/৪৩ ১৭
ডেল স্টেইন ২০০৪-বর্তমান ৭৮ ১৪৭ ১৬৪৮৬ ৮৯৩২ ৩৯৬ ২২.৫৫ ৭/৫১ ২৫
মাখায়া এনটিনি ১৯৯৮-২০০৯ ১০১ ১৯০ ২০৮৩৪ ১১২৪২ ৩৯০ ২৮.৮২ ৭/৩৭ ১৮

১ জুন, ২০১৫ তারিখ পর্যন্ত একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শীর্ষস্থানীয় ফাস্ট বোলারদের তালিকা নিম্নরূপ:[৪]

শীর্ষ-১০ ফাস্ট বোলার (ওডিআই)
নাম সময়কাল খেলা ইনিংস বল রান উইকেট গড় সেরা ৫ উইকেট
ওয়াসিম আকরাম ১৯৮৪-২০০৩ ৩৫৬ ৩৫১ ১৮১৮৬ ১১৮১২ ৫০২ ২৩.৫২ ৫/১৫
ওয়াকার ইউনুস ১৯৮৯-২০০৩ ২৬২ ২৫৮ ১২৬৯৮ ৯৯১৯ ৪১৬ ২৩.৮৪ ৭/৩৬ ১৩
চামিন্দা ভাস ১৯৯৪-২০০৮ ৩২২ ৩২০ ১৫৭৭৫ ১১০১৪ ৪০০ ২৭.৫৩ ৮/১৯
শন পোলক ১৯৯৬-২০০৮ ৩০৩ ২৯৭ ১৫৭১২ ৯৬৩১ ৩৯৩ ২৪.৫০ ৬/৩৫
গ্লেন ম্যাকগ্রা ১৯৯৩-২০০৭ ২৫০ ২৪৮ ১২৯৭০ ৮৩৯১ ৩৮১ ২২.০২ ৭/১৫
ব্রেট লি ২০০০-২০১২ ২২১ ২১৭ ১১১৮৫ ৮৮৭৭ ৩৮০ ২৩.৩৬ ৫/২২
জাভাগাল শ্রীনাথ ১৯৯১-২০০৩ ২২৯ ২২৭ ১১৯৩৫ ৮৮৪৭ ৩১৫ ২৮.০৮ ৫/২৩
অজিত আগারকার ১৯৯৮-২০০৭ ১৯১ ১৮৮ ৯৮৮৪ ৮০২১ ২৮৮ ২৭.৮৫ ৬/৪২
লাসিথ মালিঙ্গা ২০০৪-বর্তমান ১৮৪ ১৭৮ ৮৮৬১ ৭৭৩০ ২৮৩ ২৭.৩১ ৬/৩৮
জহির খান ২০০০-২০১২ ২০০ ১৯৭ ১০০৯৭ ৮৩০১ ২৮২ ২৯.৪৩ ৫/৪২
জ্যাক ক্যালিস ১৯৯৬-২০১৪ ৩২৮ ২৮৩ ১০৭৫০ ৮৬৮০ ২৭৩ ৩১.৭৯ ৫/৩০

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]