গাবি অ্যালেন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
স্যার জর্জ অ্যালেন
আনুমানিক ১৯৩২ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে গাবি অ্যালেন
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামজর্জ অসওয়াল্ড ব্রাউনিং অ্যালেন
জন্ম(১৯০২-০৭-৩১)৩১ জুলাই ১৯০২
বেলেভ্যু হিল, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া
মৃত্যু২৯ নভেম্বর ১৯৮৯(1989-11-29) (বয়স ৮৭)
সেন্ট জোন্স উড, লন্ডন, ইংল্যান্ড
ডাকনামগাবি
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট
ভূমিকাঅল-রাউন্ডার, অধিনায়ক, প্রশাসক
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ২৫৫)
২৭ জুন ১৯৩০ বনাম অস্ট্রেলিয়া
শেষ টেস্ট১ এপ্রিল ১৯৪৮ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯২১ - ১৯৫০মিডলসেক্স
১৯২২ - ১৯২৩কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়
১৯২৩ - ১৯৫৩এমসিসি
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ২৫ ২৬৫
রানের সংখ্যা ৭৫০ ৯২৩৩
ব্যাটিং গড় ২৪.১৯ ২৮.৬৭
১০০/৫০ ১/৩ ১১/৪৭
সর্বোচ্চ রান ১২২ ১৮০
বল করেছে ৪৩৮৬ ৩৬১৮৯
উইকেট ৮১ ৭৮৮
বোলিং গড় ২৯.৩৭ ২২.২৩
ইনিংসে ৫ উইকেট ৪৮
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৭/৮০ ১০/৪০
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ২০/– ১৩১/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

স্যার জর্জ অসওয়াল্ড ব্রাউনিং গাবি অ্যালেন, সিবিই (ইংরেজি: Gubby Allen; জন্ম: ৩১ জুলাই, ১৯০২ - মৃত্যু: ২৯ নভেম্বর, ১৯৮৯) নিউ সাউথ ওয়েলসের বেলেভ্যু হিল এলাকায় জন্মগ্রহণকারী অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভূত ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন।[গ ১] ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে এগারো টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন

প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে মিডলসেক্সকেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে খেলেন। দলে তিনি মূলতঃ ফাস্ট বোলার হিসেবে খেলতেন। নিচেরসারিতে হার্ড হিটিং ব্যাটিং করতেন। অবসর পরবর্তীকালে ক্রিকেট প্রশাসনে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। এছাড়াও, ইংল্যান্ড দল নির্বাচকমণ্ডলীর সভাপতি ছিলেন গাবি অ্যালেনমেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন যা কার্যত এক সময় ইংরেজ ক্রিকেট পরিচালনা করতো।

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

৩১ জুলাই, ১৯০২ তারিখে অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বেলেভ্যুল হিল এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন।[গ ২][৫] আইনজীবী বাবা ওয়াল্টার অ্যালেন ও তদ্বীয় সহধর্মীনি কুইন্সল্যান্ডের ভূমিমন্ত্রীর কন্যা মার্গারিট (পার্ল) (বিবাহ-পূর্ব ল্যাম্ব) দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে তার অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। পরবর্তীকালে গুজব ছড়ায় যে, মিডলসেক্সের ক্রিকেটার পেলহাম ওয়ার্নার তার প্রকৃত বাবা ছিলেন।[গ ৩][৩][৩][৬] অ্যালেনের পিতা-মাতা উভয়েরই পূর্ব-পুরুষ ইংল্যান্ডসহ অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করতেন। অস্ট্রেলিয়ায় জন্মগ্রহণ করলেও ১৯০৯ সালে সন্তানদের ইংরেজ শিক্ষায় শিক্ষিত করার উদ্দেশ্যে লন্ডনে চলে যান।[৫] সেলক্ষ্যে শুরুতে দেশের বিভিন্ন গ্রামে ঘোরাঘুরির পর একটি ফ্লাটে বসবাস করতে থাকেন।[৭] তারা ইংল্যান্ডে বসবাসের তিক্ত স্বাদ গ্রহণ করে পুনরায় অস্ট্রেলিয়া ফিরে আসার পরিকল্পনা করছিলেন।[৮] এ সময় তার বয়স ছিল ছয় বছর ও তখন থেকেই ইংল্যান্ডে বড় হতে থাকেন তিনি। এটন কলেজে অধ্যয়নকালীন ক্রিকেটে জড়িয়ে পড়েন। এরপর কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেকে আদর্শ ফাস্ট বোলার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। কিন্তু প্রায়শঃই আঘাতে আক্রান্ত হতেন।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট[সম্পাদনা]

১৯৩৯ সাল পর্যন্ত মিডলসেক্সের পক্ষে খেলা চালিয়ে যান। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করার পর অ্যালেন মিডলসেক্সের প্রতিনিধিত্ব করতে থাকেন। অ্যালেন ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করতেন যে, মিডলসেক্সের তরুণ খেলোয়াড়দেরকে সর্বদাই সমর্থন যোগাতেন পেলহাম ওয়ার্নার। ঐ সময়ে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে দলের অবস্থান তেমন ভালো ছিল না ও তার ন্যায় অনভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের অন্তর্ভূক্তিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন।[৯] ২১ আগস্ট, ১৯২১ তারিখে সমারসেটের বিপক্ষে তার প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। ঐ মৌসুমে আরও একটি খেলায় অংশ নিলেও উভয় খেলাতেই তেমন ক্রীড়ানৈপুণ্য প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন।[১০] পরবর্তী মৌসুমগুলোয় ব্যাটসম্যান হিসেবেও নিজেকে গড়ে তুলতে থাকেন। কিন্তু, কাজের দায়বদ্ধতার কারণে তিনি খেলায় অনিয়মিত হয়ে পড়েন। তবে কর্মজীবন পরিবর্তনের ফলে তিনি নিজেকে আরও ক্রিকেটের দিকে মনোনিবেশ ঘটাতে সক্ষম হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সামরিক গোয়েন্দা সংস্থায় কাজ করেন। ১৯৫০-এর দশকে দলে অনিয়মিতভাবে খেলেন।

১৯২৩ থেকে ১৯৫৩ সময়কালে মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।[১১][১২] এ সময়ে তিনি দলের সদস্যরূপে ১৯২৬-২৭ মৌসুমে দক্ষিণ আমেরিকা; ১৯৩২-৩৩ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড এবং ১৯৪৭-৪৮ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গমন করেন।

খেলোয়াড়ী জীবন[সম্পাদনা]

১৯২০-এর দশকের শেষদিকে ইংল্যান্ডের টেস্ট দলে অন্যতম অনুষঙ্গ ছিলেন তিনি।[১৩] ১৯৩০ সালে নটিংহামের ট্রেন্ট ব্রিজে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তার টেস্ট অভিষেক ঘটে। লারউডের কল্যাণে ঐ টেস্টে ইংল্যান্ড জয় পেয়েছিল। দ্বিতীয় টেস্ট শুরুর পূর্বে তিনি নর্দাম্পটনশায়ারের বিপক্ষে ৬/৭৭ পান।[১৪] এরপূর্বেই দ্বিতীয় টেস্টের জন্য দল ঘোষণা করা হয়। খেলায় তিনি ১৩ উইকেট পেলেও গণমাধ্যমে তা বিশেষভাবে ফুঁটে উঠেনি।[১৫] এরপর থেকে যখনই তিনি সুযোগ পেতেন বাদ-বাকী দশকে দলে খেলতেন।

১৯৩২-৩৩ মৌসুমে এমসিসি অস্ট্রেলিয়া সফরে যায়। শরীর লক্ষ্য করে বোলিং করার কৌশল ইংল্যান্ড দল অবলম্বন করায় তা ব্যাপক বিতর্কের পরিবেশ সৃষ্টি করে।[১৬] বডিলাইন বোলিং মূলতঃ ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে করা হতো।[১৭] এ জাতীয় বোলিংয়ের নকশা ও প্রবর্তনের দায়িত্বে ছিলেন এমসিসির অধিনায়ক ডগলাস জারদিন[১৮] ব্র্যাডম্যানের স্বতঃস্ফূর্তভাবে রান সংগ্রহকে বিরত রাখতে চেষ্টা চালানো হয়েছিল।[১৯]

সফরে চারজন ফাস্ট বোলারের অন্যতম ছিলেন অ্যালেন।[২০] ১৯৩২-৩৩ মৌসুমের বিতর্কিত বডিলাইন সফরকালীন ইংল্যান্ডের পক্ষে তিনি খুবই সফলকাম ছিলেন। কিন্তু তার দলীয় সঙ্গীদের কাছ থেকে হুমকিস্বরূপ এ নিন্দনীয় কৌশল প্রয়োগে একমত ছিলেন না। জারদিনের পরামর্শক্রমে তিনি অগ্রসর হননি যা প্রতিপক্ষের কাছে ঘৃণ্যতা পায়। তাস্বত্ত্বেও এ দু’জন কাছাকাছি থাকতেন[২১] ও পরবর্তীতে অ্যালেন দাবী করেন যে, ঐ সফরে তিনি জারদিনের সেরা বন্ধু ছিলেন।[২২] তবে, দেশে ফিরে অ্যালেন লিখেন যে, আমি এই বাজে লোকটিকে চিনি। তাকে তিনি ভয় পেতেন ও একসময় তাকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন।[২৩]

অধিনায়কত্ব[সম্পাদনা]

১৯৩৩ সালে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে কাজ করেন। এরফলে ক্রিকেটে সময় দেয়া তার পক্ষে কমতে থাকে।[২৪] তাস্বত্ত্বেও ১৯৩৬ সালে ইংল্যান্ড দলের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পান। ১৯২৬ সালের পর থেকে সর্বাধিক ১৬টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেন। ৩৫.১৭ গড়ে ৫৯৮ রান তোলার পাশাপাশি ৮১ উইকেট নেন যা এক মৌসুমে প্রত্যাবর্তন করে সেরা ছিল।[২৫][২৬]

টেস্ট অনুশীলনী খেলায় দল নির্বাচকমণ্ডলী তাকে নেতৃত্ব দিলে তিনি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেন। ফলশ্রুতিতে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে তাকে অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়।[২৭] ১৯৩৬ সালের পূর্ব থেকেই অ্যালেন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হিসেবে বব ওয়াটের স্থলাভিষিক্ত হবার প্রধান দাবীদার ছিলেন। ওয়াটের নেতৃত্বে দলটি ধারাবাহিকভাবে তিন টেস্ট সিরিজে পরাজিত হয়েছিল।[২৮] প্রথম টেস্টে ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ড ৮ উইকেটে জয় পায়। প্রথম ইনিংসে অধিনায়ক হিসেবে ৫/৩৫ ও দ্বিতীয় ইনিংসে আরও পাঁচ উইকেট তুলে নেন অ্যালেন যা তার টেস্টে একমাত্র দশ উইকেটপ্রাপ্তির ঘটনা ছিল।[১০][২৯] এ সময়ে দল নির্বাচকমণ্ডলী অস্ট্রেলিয়া সফরের জন্য অধিনায়ক নির্বাচনে অগ্রসর হন। কমপক্ষে একজন নির্বাচক অনিয়মিতভাবে খেলায় অংশগ্রহণকারী ক্লদ অ্যাশটনের অনুকূলে মতামত ব্যক্ত করেন। কিন্তু অ্যালেন দল নির্বাচকমণ্ডলীকে জানিয়ে দেন যে, যদি ক্লদ অ্যাশটনকে অধিনায়ক মনোনীত করা হয় তাহলে নিজেকে সফর থেকে দূরে সরিয়ে রাখবেন।[৩০] প্রথম টেস্ট শেষে জেন্টলম্যানের অধিনায়ক হিসেবে প্লেয়ার্সের বিপক্ষে খেলেন। অবশেষে এমসিসি তাকে দলের অধিনায়করূপে ঘোষণা করে।[৩১] ১৯৩৬-৩৭ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। প্রথম দুই খেলায় পরাজিত হলেও স্বাগতিক দল ৩-২ ব্যবধানে জয় পায়। অ্যালেন মনে করেন যে, ওয়ার্নার তার এ নিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গেছেন। এছাড়াও, তার অস্ট্রেলীয় সম্পৃক্ততাও গুরুত্বতা পেয়েছে যা ১৯৩২-৩৩ মৌসুমের সফরের উত্তেজনা প্রশমনে ব্যাপক প্রভাববিস্তারে সহায়ক হবে।[৩০]

ভারতের বিপক্ষে বাদ-বাকী দুই টেস্টেও অধিনায়কত্ব করেন তিনি। দ্বিতীয় টেস্ট ড্র হলেও তৃতীয় টেস্টে ইংল্যান্ড জয় পায়। এতে তিনি ৭/৮০ পান যা তার টেস্টে সেরা বোলিং পরিসংখ্যান ছিল।[১০][৩২] টেস্টগুলোয় তিনি তিন ইনিংসে ২৭ রান পান ও ১৬.৫০ গড়ে ২০ উইকেট তুলে নেন।[৩৩][৩৪]

অ্যালেনের নির্দেশনামাফিক এমসিসি কর্তৃপক্ষ অস্ট্রেলিয়ায় দল প্রেরণে অনেকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করে।[৩৫] অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ও বডিলাইনের সমর্থনে প্রচারমাধ্যমে বক্তব্য দেয়ায় লারউডকে বিবেচনায় আনা হয়নি। ১৯৩২-৩৩ মৌসুমের পর বিল ভোস কোন টেস্টে অংশ নেননি।[৩৬] নির্বাচকমণ্ডলী ভোসকে অন্তর্ভূক্তিতে আগ্রহ দেখালেও অ্যালেন পদত্যাগের হুমকি দেন। তিনি ভোসের সাথে এ বিষয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে সৌজন্য স্বাক্ষাতে মিলিত হন। পরবর্তীতে অতীতের কর্মকাণ্ড ও বডিলাইনের ন্যায় বোলিং না করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে লিখিত বক্তব্য দেন। এরপরই তাকে সফরকারী দলে নেয়া হয়েছিল।[৩৭] ১৯৪৭-৪৮ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে সর্বশেষ টেস্ট সিরিজে অংশ নেন। ঐ সিরিজে তিনি দলের অধিনায়কত্ব করেন।

খেলার ধরন[সম্পাদনা]

A cricketer pictured just after having bowled the ball
১৯৩২ সালে গাবি অ্যালেনের বোলিং ভঙ্গীমা

দলে নিয়মিতভাবে না খেলায় তার খেলাতেও প্রভাব বিস্তার করতো। দুইবার অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। সেখানেই তিনি তার সর্বোত্তম ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করতে পেরেছিলেন। এ সময়ে তিনি নিজের সেরা অবস্থানে ছিলেন। অন্য সময়ে তার বোলিংয়ে তেমন ধারাবাহিকতা ছিল না তবে মাঝে-মধ্যেই তিনি নিজেকে জ্বালিয়ে তুলতেন। অর্থোডক্স ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি প্রায়শঃই দলের আপদকালীন সময়ে রান তুলতে সক্ষমতা দেখিয়েছেন।

অ্যালেন অপ্রত্যাশিতভাবে দ্রুতগতিতে বোলিং করতে সক্ষম ছিলেন। ক্রিকেটবোদ্ধাদের অভিমত, তিনি তার পেসের মাধ্যমে[৩] চমকপ্রদ বোলিং ভঙ্গীমার অধিকারী ছিলেন।[৩৮] তিনি এক পাশ থেকে বোলিং করতেন।[৩৯] উইজডেন তার স্মরণে মন্তব্য করে যে, ছন্দোময় রান-আপ ও পূর্ণাঙ্গ ফলো-থ্রোর অধিকারী ছিলেন অ্যালেন।[৩৮] আর. সি. রবার্টসন-গ্লাসগো ১৯৪৩ সালে অ্যালেন সম্পর্কে বলেন যে, ‘মাঝারি উচ্চতার অধিকারী হিসেবে তিনি খাঁটি মজবুত শক্তিমত্তার ছিলেন। ডেলিভারি প্রদানের ক্ষেত্রে তিনি তাঁর প্রত্যেক অংশকে ব্যবহারে নিপুণতার স্বাক্ষর রেখেছেন। ফলো-থ্রোর ক্ষেত্রে আমি তাঁর চেয়ে সেরা আর কাউকে দেখিনি।’[৪০] অস্ট্রেলিয়ায় বডিলাইন কৌশলের বিপক্ষে অবস্থান করলেও অ্যালেন মাঝে-মধ্যেই কাউন্টি ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানকে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে খাঁটোমানের বল ছুঁড়তেন। একবার তার ছোঁড়া ফাস্ট বল ওয়াটের বুক বরাবর আঘাত হেনেছিল।[৪১][৪২]

ক্রিকেট প্রশাসন[সম্পাদনা]

উইজডেনের স্মরণীকায় অ্যালেনের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। এতে মন্তব্য করা হয় যে, ক্রিকেটের কল্যাণার্থে ও উন্নয়নে তিনি শক্ত প্রভাব দেখিয়েছেন। কেবলমাত্র লর্ড হ্যারিসের ৫০ বছরের অধিক রাজত্বই তার তুলনায় সেরা ছিল।[৩৮]

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে অ্যালেন অবসর গ্রহণের পর প্রশাসনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ইংরেজ ও বিশ্ব ক্রিকেটে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষমতা দেখান। এমসিসির কোচিং নির্দেশিকা প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। অবৈধ বোলিং ভঙ্গীমা কঠোর হস্তে দমনে কাজ করেন। ১৯৫৫ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত দল নির্বাচকমণ্ডলীর সভাপতিত্ব করেন। এ সময়কালে ইংরেজ ক্রিকেটে ব্যাপক সফলতা পান। টেস্ট অধিনায়ক পিটার মে’র সাথে একযোগে কাজ করেন। ১৯৬৩ সালে এমসিসির সভাপতি মনোনীত হন ও পরের বছর ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। এ দায়িত্ব পালনকালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শঙ্করগোত্রীয় ক্রিকেটার ব্যাসিল ডি’অলিভেইরা’র অন্তর্ভূক্তিকে ঘিরে তিনি ডি’অলিভেইরা কেলেঙ্কারীর সাথে গভীরভাবে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন।[৪৩] প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন শেষে আনুষ্ঠানিক অবসর নেন। ১৯৭৯ সালে গিবসন অ্যালেনকে লর্ডসের অন্যতম ব্যক্তিত্বরূপে বর্ণনা করেন যিনি শক্তিধর সদস্য ছিলেন কিন্তু মিশুক ছিলেন না।[৪৪] অন্যদিকে মিডলসেক্সের দলীয় সঙ্গী ও পরবর্তীতে সাংবাদিকতায় ঝুঁকে পড়া ইয়ান পিবলস তাকে লর্ডসের প্রশাসক হিসেবে ভয়ঙ্করভাবে প্রভাব খাটানো কথা বলেন। খেলার প্রত্যেক সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ভিত্তি গড়ে তুলতে অগ্রসর হয়ে স্মরণীয় ভূমিকা পালনকারীরূপে আখ্যায়িত করেন।[৪৫]

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

১৯৬২ সালে তিনি সিবিই পদবী ও ১৯৮৬ সালে নাইট পদবীতে ভূষিত হন।[৩] ১৯৭২ সালে স্টক এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম থেকে অবসর নেন। ১৯৭৬ সালে এমসিসি’র কোষাধ্যক্ষ থেকে পদত্যাগ এবং ১৯৮২ সালে ক্রিকেট কাউন্সিল থেকে চলে আসেন।[৩]

১৯৬৮ সালে লর্ডস প্যাভিলিয়নের ঠিক পিছনের ফ্ল্যাটে চলে যান[৪৬] ও সেখানেই মৃত্যু পূর্ব-পর্যন্ত বাদ-বাকী জীবন অতিবাহিত করতে থাকেন।[৩] অবসর নেয়ার পর অধিকাংশ সময়ই এমসিসির কমিটি কক্ষে ব্যয় করতেন ও লর্ডসে ক্রিকেট খেলা উপভোগ করতেন।[৩]

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অকৃতদার ছিলেন।[৪৭] ২৯ নভেম্বর, ১৯৮৯ তারিখে ৮৭ বছর বয়সে গাবি অ্যালেনের দেহাবসান ঘটে।[৩] ঐ বছরের শুরুর দিকে তার তলপেটে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল।[৪৮]

পাদটীকা[সম্পাদনা]

  1. অ্যালেন একজন ক্রিকেটার হিসাবে জি. ও. অ্যালেন নামে পরিচিত ছিলেন এবং তার তৃতীয় নামটি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহার করা হয়নি। However, while at Eton, his initials of G. O. B. Allen gave rise to the nickname "Gobby", which in time became "Gubby". His family knew him as "Obie", but very few of even his close friends and family ever called him "George".[১]
  2. অ্যালেনের দাদার দাদা ১৮১৬ সালে ইংল্যান্ডে থেকে চলে আসার পর থেকেই তাঁদের পরিবার অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছে,[২] এবং তার পিতামাতা চাচা, রেগনাল্ড অ্যালেন, অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ক্রিকেট খেলেছেন।[৩][৪]
  3. অ্যালেনের দলীয় সঙ্গী বব ওয়াট ১৯৩০-এর দশকে গুজব ছড়ান যে, ওয়ার্নার তাঁর প্রকৃত বাবা। ক্রিকেট ঐতিহাসিক ডেভিড ফ্রিড মনে করেন যে, ১৯৮০-এর দশকে একই ধরনের তথ্য প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু, ঐ গুজবগুলো প্রমাণের অভাবে বাতিল হয়ে যায়। ফ্রিডের ধারণা, অ্যালেনের শত্রুরা তাঁকে অপদস্থ করতেই তা করেছিল। তবে, অ্যালেনের খেলোয়াড়ী জীবনে বেশ কয়েকবার কাছে থেকে ওয়ার্নার সহায়তা করেছিলেন। ফ্রিড বিশ্বাস করেন যে, তিনি ওয়াল্টার অ্যালেনের তুলনায় ওয়ার্নারকেই অধিক পছন্দ করতেন। তিনি মন্তব্য করেন যে, ১৯০০-এর দশকের শুরুতে ওয়ার্নার পার্ল অ্যালেনের পাণিপ্রার্থী ছিলেন। ঠিক ঐ সময়েই তিনি সংক্ষিপ্তকালের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছিলেন। ফ্রিডের অভিমত, জেরাল্ড হাউয়েট কর্তৃক রচিত ওয়ার্নারের জীবনীমূলক গ্রন্থে ওয়ার্নারের স্ত্রী পার্লের বিষয়ে ঈর্ষাকাতর ছিলেন। ওয়ার্নার অ্যালেনকে ‘তাঁদের পরিবারের একজন সদস্যরূপে’ গণ্য করতেন। এছাড়াও হাউয়েট অ্যালেনকে ওয়ার্নারের ‘প্রিয়পুত্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।[৬]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Swanton, p. 1.
  2. "Gubby Allen" (ইংরেজি ভাষায়)। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০১৪ 
  3. Woodcock, John (২০০৪)। "Allen, Sir George Oswald Browning (1902–1989)"Oxford Dictionary of National Biography (online সংস্করণ)। Oxford University Press। সংগ্রহের তারিখ ১১ মার্চ ২০১৩ 
  4. "Reginald Allen" (ইংরেজি ভাষায়)। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ১ মে ২০১৪ 
  5. Swanton, p. 20.
  6. Frith, pp. 63–64.
  7. Swanton, p. 21.
  8. Swanton, p. 2.
  9. Marshall, pp. 8–9.
  10. "Player Oracle GOB Allen" (ইংরেজি ভাষায়)। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০১৩ 
  11. ACS (১৯৮২)। A Guide to First-Class Cricket Matches Played in the British Isles। Nottingham: ACS। 
  12. "Marylebone Cricket Club Players"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৭ 
  13. Swanton, pp. 85–86.
  14. Swanton, p. 86.
  15. Swanton, p. 87.
  16. Williamson, Martin। "A brief history ... Bodyline" (ইংরেজি ভাষায়)। ESPNCricinfo। সংগ্রহের তারিখ ৮ এপ্রিল ২০১৩ 
  17. Douglas, p. 103.
  18. Swanton, p. 110.
  19. Douglas, pp. 86, 111.
  20. Swanton, p. 111.
  21. Swanton, p. 109.
  22. Frith, p. 116.
  23. Frith, pp. 107, 116.
  24. Swanton, p. 161.
  25. "First-class Batting and Fielding in Each Season by Gubby Allen" (ইংরেজি ভাষায়)। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মার্চ ২০১৩ 
  26. "First-class Bowling in Each Season by Gubby Allen" (ইংরেজি ভাষায়)। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মার্চ ২০১৩ 
  27. Swanton, pp. 162–64.
  28. Swanton, pp. 161, 164.
  29. Swanton, pp. 165–66.
  30. Marshall, p. 114.
  31. Swanton, p. 167.
  32. Swanton, pp. 168–69, 172–73.
  33. "Test Batting and Fielding in Each Season by Gubby Allen" (ইংরেজি ভাষায়)। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৬ এপ্রিল ২০১৩ 
  34. "Test Bowling in Each Season by Gubby Allen" (ইংরেজি ভাষায়)। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৬ এপ্রিল ২০১৩ 
  35. Swanton, pp. 167–68.
  36. Swanton, pp. 154–55.
  37. Swanton, pp. 167–71.
  38. "Gubby Allen (Obituary)"Wisden Cricketers' Almanack (ইংরেজি ভাষায়)। London: John Wisden & Co। ১৯৯০। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১৪ 
  39. Swanton, p. 148.
  40. Robertson-Glasgow, p. 67.
  41. Marshall, p. 16.
  42. Douglas, pp. 133, 135.
  43. Oborne, pp. 145–46.
  44. Gibson, p. 169.
  45. Quoted in Keating, Frank (২৬ আগস্ট ১৯৮২)। "Who's fit to play Gubby the gent?"। The Guardian (ইংরেজি ভাষায়)। London। পৃষ্ঠা 19। 
  46. Swanton, pp. 291–92.
  47. Keating, Frank (২৬ আগস্ট ১৯৮২)। "Who's fit to play Gubby the gent?"। The Guardian (ইংরেজি ভাষায়)। London। পৃষ্ঠা 19। 
  48. "Sir Gubby Allen (Cricinfo profile)" (ইংরেজি ভাষায়)। ESPNCricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০১৩ 

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

গ্রন্থপঞ্জী[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

ক্রীড়া অবস্থান
পূর্বসূরী
বব ওয়াট
ইংরেজ ক্রিকেট অধিনায়ক
১৯৩৬-১৯৩৬/৩৭
উত্তরসূরী
ওয়াল্টার রবিন্স
পূর্বসূরী
নরম্যান ইয়ার্ডলি
ইংরেজ ক্রিকেট অধিনায়ক
১৯৪৭/৪৮
উত্তরসূরী
নরম্যান ইয়ার্ডলি