ক্লদ অ্যাশটন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ক্লদ অ্যাশটন
ক্রিকেট তথ্য
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি মিডিয়াম পেস
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ১২৭
রানের সংখ্যা ৪৭২৩
ব্যাটিং গড় ২৪.৯৮
১০০/৫০ ৪/২৬
সর্বোচ্চ রান ১১৮
বল করেছে ৭৭১৮
উইকেট ১৩৯
বোলিং গড় ৩০.৯২
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৭/৫১
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১১৩/-
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ক্লদ দেসিগার অ্যাশটন (ইংরেজি: Claude Ashton; জন্ম: ১৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯০১ - মৃত্যু: ৩১ অক্টোবর, ১৯৪২) তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণকারী প্রথিতযশা ইংরেজ শৌখিন ফুটবলার ও প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটার ছিলেন। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে এসেক্সকেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও ডানহাতে মিডিয়াম পেস বোলিং করে প্রভূতঃ সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন ক্লদ অ্যাশটন

ফুটবলার হিসেবে করিন্থিয়ান্সের পক্ষে খেলেছেন। গোলরক্ষক ও মধ্যমাঠের খেলোয়াড় হিসেবেও খেলেছেন তিনি। তবে, তার প্রিয় অবস্থান ছিল উইং-হাফ। ১৯২৫ সালে ইংল্যান্ড জাতীয় ফুটবল দলের পক্ষে একটি খেলায় অংশ নিয়েছিলেন ও অধিনায়কত্ব করেছিলেন।

অক্সিলিয়ারি এয়ার ফোর্সের প্রাক-যুদ্ধ কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে প্রশিক্ষণকালীন দূর্ঘটনায় মধ্য-আকাশে সংঘর্ষে তিনি নিহত হন।

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

ভারতের কলকাতায় ক্লদ অ্যাশটনের জন্ম। হুবার্ট শোরক অ্যাশটন ও ভিক্টোরিয়া আলেকজান্দ্রিয়া অ্যাশটন (বিবাহ-পূর্ব: ইংলিশ) দম্পতির চার পুত্রসন্তানের সর্বকনিষ্ঠ সন্তান ছিলেন তিনি। লক্ষনৌউ দখলে নেতৃত্বদানকারী স্যার জন ইয়ার্ডলি উইলমট ইংলিশ ও জুলিয়া সেলিনা থিসিজার দম্পতির কন্যা ছিলেন অ্যাশটনের মাতা ভিক্টোরিয়া।[১]

তার অন্যান্য ভাই - হুবার্ট অ্যাশটন, গিলবার্ট অ্যাশটন ও পার্সি অ্যাশটন প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। উইনচেস্টার কলেজে অধ্যয়ন করেছেন ক্লদ অ্যাশটন। সেখানে তিনি ক্রিকেট, ফুটবল, র‌্যাকেটস ও ফাইভসে দলের অধিনায়কত্ব করেছিলেন। এরপর কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে চলে যান এবং হকি, ক্রিকেট ও ফুটবলে ব্লু লাভ করেন। ১৯২০ সালে কেমব্রিজ ফুটবল দলে অপর দুই ভাই হুবার্ট ও গিলবার্টকে নিয়ে একত্রে খেলেন। ফলশ্রুতিতে বিশ্ববিদ্যালয় দলটি ‘অ্যাশটন ভিলা’ ডাকনামে আখ্যায়িত হয়েছিল।[২] বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নকালে ফুটবল দলের অধিনায়কের দায়িত্বে থাকা স্বত্ত্বেও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত খেলায় অংশ নিতে পারেননি তিনি।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট[সম্পাদনা]

মে, ১৯২১ সালে ক্লদ অ্যাশটন প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট একাদশের পক্ষে খেলেন। ১৯২১ সালে ৪৬.৪১ গড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ৫৫৭ রান তুলেন। তন্মধ্যে, ওভালে সারের বিপক্ষে ১০১ রান করে অপরাজিত ছিলেন।[৩] এছাড়াও, এমসিসি’র বিপক্ষে লর্ডসে ৯৮ রান তুলেছিলেন।[৪] জুলাইয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে গিলবার্টের অধিনায়কত্বে হুবার্টসহ তিনি খেলেন। হুবার্টের সাথে ৪৮ রানের জুটি গড়েন। খেলায় হুবার্ট ১১৮ করে কেমব্রিজকে ইনিংস ও ২৪ রানের ব্যবধানে জয় এনে দেন।[৫]

বিশ্ববিদ্যালয় খেলার পর হুবার্টের সাথে তিনিও এসেক্সে যোগ দেন। ক্লাবে মাঝারিমানের সফলতা পান। ১৮.৪৬ গড়ে ২৪০ রান তুলেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইংরেজ একাদশের সদস্যরূপে একটি খেলায়ও তিনি অংশ নেন। ঐ মৌসুমে ২৯.৫৫ গড়ে ৭৯৮ রান তুলেন।

জুলাই, ১৯২২ সালে তিনি আবারও অধিনায়ক হুবার্টের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয় খেলায় অংশ নেন। ইনিংস ও ১০০ রানের ব্যবধানে জয়ী হওয়া ঐ খেলায় হুবার্ট ৯০ ও পার্সি চ্যাপম্যান ১০২ করে ৪০৩/৪ ইনিংস ঘোষণা করে। ফলে ক্লদকে ব্যাট হাতে মাঠে নামার প্রয়োজন পড়েনি। মাত্র তিন ওভার বোলিং করে কোন উইকেটও পাননি তিনি।[৬] ১৯২২ সালে বৃষ্টির কারণে অনেকগুলো খেলায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তবে, বিশ্ববিদ্যালয় ও এসেক্সের পক্ষে ২৮.৪৬ গড়ে ৭৯৭ রান তুলেছিলেন ক্লদ অ্যাশটন। আগস্টের প্রথমদিকে মিডলসেক্সের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সেরা অপরাজিত ১১০ রান তুললেও খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল।

১৯২৩ সালে জ্যেষ্ঠ দুই ভ্রাতার পদাঙ্ক অনুসরণে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনায়ক মনোনীত হন। কিন্তু, ভ্রাতৃদ্বয়ের ন্যায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলায় সফলতা পাননি। অক্সফোর্ড দল প্রথম দিন ব্যাট করে। রাতে বজ্রঝড়ের সাথে প্রচণ্ড বৃষ্টি নামলে লর্ডসের পিচ অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ফলে কেমব্রিজ দল দুইবার আউট হয়ে যায় ও মঙ্গলবারে ইনিংস ও ২২৭ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাভূত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলায় সর্বাপেক্ষা শোচনীয় পরাজয়বরণ ও ধারাবাহিকভাবে তিনটি সর্বাধিক সিদ্ধান্তসূচক ফলাফল পায়।[৭] বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষদিকে বেশ কয়েকবার আউট হয়েছিলেন তিনি। ১৯২৩ সালের পুরো মৌসুমে অংশ নেন ও ২৪.৭৫ গড়ে ৯১৬ রান তুলেন তিনি। এছাড়াও, মিডিয়াম পেস বোলিংয়ে ৫০ উইকেট দখল ও ২১ ক্যাচ নিয়েছিলেন।

পরবর্তী কয়েক বছর ব্যবসায়িক কারণে ক্রিকেট খেলা থেকে দূরে অবস্থান করতে বাধ্য হন। ১৯৩০ থেকে ১৯৩৩ সালের মধ্যে কোন প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিতে পারেননি। পাঁচ বছর মাঠের বাইরে অবস্থানের পর প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ফিরে আসেন। মে, ১৯৩৪ সালে ব্রেন্টউডে কেন্টের বিপক্ষে অংশ নেন। বিস্ময়কর খেলায় কেন্ট দল বিল অ্যাশডাউনের ৩৩২, ফ্রাঙ্ক ওলি’র ১৭২ ও লেস অ্যামিসের অপরাজিত ২০২ রানের কল্যাণে ৮০৩/৪ করে। তন্মধ্যে, অ্যাশটনের ৩১ ওভারে ১৮৫ রান ওঠে। এর জবাবে এসেক্স তাদের প্রথম ইনিংসে ডাডলি পোপজ্যাক ও’কনরের সেঞ্চুরিতে ৪০৮ রান তুলতে সক্ষম হয়। অ্যাশটন করেন মাত্র ১১ রান। ফলো-অনের কবলে পড়ে এসেক্স দল ২০৩ রানে অল-আউট হয়। এ ইনিংসে তিনি অপরাজিত ৭১ রানের ইনিংস খেলেন।[৮]

কিছুদিন পর ব্রেন্টউডে সারের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে নিজস্ব সর্বোচ্চ ১১৮ রান তুলেন। এ পর্যায়ে পঞ্চম উইকেট জুটিতে ও’কনরের সাথে ২৮৭ রান তুলেন যা তৎকালীন এসেক্স রেকর্ড ছিল। সর্বমোট ৫৭০ রান তুলে ইনিংস ও ১৯২ রানের ব্যবধানে জয়ী হয় তার দল।[৯] তারা মাত্র দুই ঘণ্টা বিশ মিনিট ক্রিজে অবস্থান করেছিলেন ও ইনিংসের চতুর্থ সেঞ্চুরিটি আসে মাত্র ৩৮ মিনিটে।[১০] দুই খেলায় ২৩৬২ রান আসে। ১৯৩৪ সালে এসেক্সের পক্ষে ছয় খেলায় অংশ নেন তিনি। ৫৯.৪২ গড়ে ৪১৬ রান তুলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন ক্লদ অ্যাশটন।

জুলাই, ১৯৩৬ সালে গ্লুচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে চতুর্থ ও শেষ সেঞ্চুরিটি করেন তিনি। ড্র হওয়া ঐ খেলায় তিনি ১০০ রান তুলেন ও পাশাপাশি ৪৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন।[১১]

১৯২১ থেকে ১৯৩৮ সময়কালে ১৮ বছর প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ২৪.৯৮ গড়ে ৪৭২৩ রান তুলেন। এছাড়াও ১৩৯ উইকেট ও ১১৩ ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন।

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভের পর চার্টার্ড একাউন্টেন্ট হিসেবে যোগ্যতা লাভ করেন। এরপর তিনি লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে কাজ করেন। ইসাবেল নরম্যান-বাটলার নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। তাদের সংসারে তিন সন্তান ছিল। স্বীয় স্ত্রীর বোনের সাথে ওরচেস্টারশায়ার ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্বকারী ক্রিকেটার জর্জ অ্যাবেলের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ[সম্পাদনা]

৫ জুলাই, ১৯৩৮ তারিখে অক্সিলারি এয়ার ফোর্সের নিয়ন্ত্রণাধীন ৯০৯নং এসেক্স কাউন্টির বেলুন স্কোয়াড্রনে ভারপ্রাপ্ত পাইলট অফিসার হিসেবে কমিশন্ডপ্রাপ্ত হন।[১২] ঐ বছরের শেষদিকে ফ্লাইং অফিসার হিসেবে পদোন্নতি পান।[১৩] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন ও ১৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৯ তারিখে ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট হিসেবে পদোন্নতি পান।[১৪] ২৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪২ তারিখে বিমান প্রশিক্ষণ গ্রহণের উদ্দেশ্যে জেনারেল ডিউটিস ব্রাঞ্চে স্থানান্তরিত হন। এ সময় ফ্লাইং অফিসারের পূর্বোক্ত পদে ফিরিয়ে নেয়া হয় তাকে।[১৫]

৩১ অক্টোবর, ১৯৪২ তারিখে নিহত হন তিনি।[১৬] উত্তর ওয়েলসের কেয়ার্নারফনের কাছাকাছি প্রশিক্ষণ কার্যাদি গ্রহণকালে ভাইকার্স ওয়েলিংটনের সাথে ব্রিস্ট বিউফাইটারের পর্যবেক্ষণকালীন উড্ডয়নে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। অপর বিমানে ওল্ড ওয়াকেহামিস্টের সতীর্থ রজার উইনল স্কোয়াড্রন লিডার হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং কেমব্রিজ ও সারের পক্ষে ৫২ খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। এসেক্সের ইঙ্গেটেস্টোন ও ফ্রাইয়েরনিং সিমেট্রিতে তাকে সমাহিত করা হয়।[১৬]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Victoria Alexandrina Inglis"। Family Search। ৩০ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১১ 
  2. The Trusty Servant, November 2011
  3. Surrey v Cambridge University; June 1921 (Match summary)
  4. Marylebone Cricket Club v Cambridge University, June 1921 (Match summary)
  5. Oxford University v Cambridge University; July 1921 (Match summary)
  6. Oxford University v Cambridge University; July 1922 (Match summary)
  7. Oxford University v Cambridge University; July 1923 (Match summary)
  8. Essex v Kent; May/June 1934 (Match summary)
  9. Haigh, Gideon (২০০৬)। Peter The Lord's Cat and Other Unexpected Obituaries from Wisden। London, Eng: John Wisden & Co। পৃষ্ঠা 11আইএসবিএন 1845131630 
  10. Essex v Surrey; June 1934 (Match summary)
  11. Gloucestershire v Essex; July 1936 (Match summary)
  12. "নং. 34544"দ্যা লন্ডন গেজেট (ইংরেজি ভাষায়)। ২৩ আগস্ট ১৯৩৮। 
  13. "নং. 34581"দ্যা লন্ডন গেজেট (সম্পূরক) (ইংরেজি ভাষায়)। ২০ ডিসেম্বর ১৯৩৮। 
  14. "নং. 34581"দ্যা লন্ডন গেজেট (সম্পূরক) (ইংরেজি ভাষায়)। ২৭ অক্টোবর ১৯৩৯। 
  15. "নং. 35630"দ্যা লন্ডন গেজেট (সম্পূরক) (ইংরেজি ভাষায়)। ১০ জুলাই ১৯৪২। 
  16. Casualty details—Ashton, Claude Thesiger, Commonwealth War Graves Commission. Retrieved 1 May 2008

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

টেমপ্লেট:Inglis family