আনন্দরাম বড়ুয়া
আনন্দরাম বড়ুয়া | |
---|---|
আনন্দৰাম বৰুৱা | |
জন্ম | ২১ মে ১৮৫০[১] রাজাদুয়ার, উত্তর গুয়াহাটি, আসাম, ভারত |
মৃত্যু | ১৯ জানুয়ারি ১৮৮৯ | (বয়স ৩৮)
মাতৃশিক্ষায়তন | প্রেসিডেন্সি কলেজ, কলিকাতা |
পেশা | আইনজীবী, আইসিএস কর্মকর্তা |
কর্মজীবন | ১৮৬৪-১৮৬৯ |
পরিচিতির কারণ | ভারতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের পদ অর্জনকারী প্রথম ভারতীয়। ১৮৭০ সালে আসাম থেকে সিভিল সার্ভিসের (আইসিএস) জন্য যোগ্যতা অর্জনকারী প্রথম ব্যক্তি এবং ভারত থেকে পঞ্চম, আসামের প্রথম স্নাতক। |
আনন্দরাম বড়ুয়া (ইংরেজি: Ananda Ram Baruah; ১৮৫০-১৮৮৯) ছিলেন সংস্কৃতের একজন দক্ষ পণ্ডিত।[২] তিনি ছিলেন প্রথম অসমীয়া প্রশাসনিক কর্মকর্তা (আইসিএস)[৩], প্রথম স্নাতক[৪] এবং একজন আইনজীবী। সংস্কৃতে তিনি রচনা করা গ্রন্থগুলো সমগ্র বিশ্বের পণ্ডিতদের দ্বারা প্রশংসিত হয়। তাঁর কাজের দক্ষতা এবং সাধারণ মানুষের প্রতি তাঁর দয়া ছাড়াও আনন্দরাম বড়ুয়া ছিলেন সংস্কৃতের একজন দক্ষ পণ্ডিত। যদিও তিনি পশ্চিমা সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন, তিনি ভারতীয় ইতিহাসের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। সংস্কৃতে তাঁর কাজ ছিল পাশ্চাত্য বস্তুনিষ্ঠতার সাথে সংস্কৃত ভাষার প্রথম সংক্ষিপ্ত বিবরণ। উল্লেখযোগ্যভাবে তিনি অসমীয়া ভাষায় কোনো বই লেখেননি।[৫][৬]
জন্ম ও শিক্ষা
[সম্পাদনা]উত্তর গুয়াহাটির রাজাদুয়ারে আনন্দরাম বড়ুয়ার জন্ম হয়েছিল। তিনি ছিলেন মজিন্দার বড়ুয়ার পরিবারের গর্গরাম বড়ুয়ার পুত্র। ওনার মার নাম ছিল দুর্লভেশ্বরী বড়ুয়া। পরশুরাম এবং জানকীরাম বড়ুয়া নামে ওনার দুই বড় ভাই ছিল। আনন্দরাম বড়ুয়া ছিলেন গর্গরাম বড়ুয়ার চার সন্তানের মধ্যে তৃতীয় যিনি বেশ কয়েক বছর ধরে সদরমিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আনন্দরাম বড়ুয়া প্রথম সংস্কৃত শিক্ষা লাভ করেন। তিনি একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ১৪ বছর বয়সে, তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বাছাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে এফএ পড়তে ভর্তি হন। প্রেসিডেন্সি কলেজের শিক্ষক স্যার গুরুদাস বন্দোপাধ্যায় আনন্দরাম বড়ুয়া সম্পর্কে বলেছিলেন, "১৮৬৫ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজে বেশ কয়েকজন উজ্জ্বল ছাত্র ছিল, যাদের মধ্যে আনন্দরাম বড়ুয়া ছিলেন সবচেয়ে মেধাবী।" ১৮৬৬ সালে তিনি এফএ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেন এবং গণিতে ডাফ স্কলারশিপ পান। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পরীক্ষায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। এরপর তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য বৃত্তি নিয়ে ইংল্যান্ডে যান।
১৮৬৯ সালে, আনন্দরাম বড়ুয়া ইংল্যান্ডে পদার্পণ করেন। তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান এবং মিডল টেম্পল এ আইন অধ্যয়ন করেন।[৭] একসাথে, তিনি প্রশাসনিক পরিষেবা সহকারী হিসাবে যোগদান করেন। ১৮৭০ সালে, তিনি আইসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি ১৮৭১ সালে আইন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন; একই বছর তিনি বিএসসি ডিগ্রিও পেয়েছিলেন।
আনন্দরাম বড়ুয়া ছিলেন আসামের প্রথম স্নাতক, আইনজীবী এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তিনি ভারতীয় প্রশাসনিক পরিষেবার পঞ্চম কর্মকর্তা ছিলেন।
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]১৮৭২ সালে, আনন্দরাম বড়ুয়া ভারতে ফিরে আসেন এবং শিবসাগর জেলার সহকারী কমিশনার পদে যোগদান করেন। এক বছর আসামে কাজ করার পর, তিনি বাংলায় স্থানান্তরিত হন এবং সেখানে তাঁর বাকি কর্মজীবন অতিবাহিত করেন। শিবসাগরে সেবা করার সময় তিনি চৌগাচাপকন পরতেন।
তার চাকরির বছরগুলোতেও আনন্দরাম বড়ুয়া পড়াশোনা ছেড়ে দেন নি। তার নাকি কাজের মাঝে মাঝে কার্যালয়েও বই পড়তেন। সরকারি চাকরির পাশাপাশি তিনি পড়াশোনাও চালিয়ে যান। ১৮৮১ সালে, তিনি সংস্কৃতের একটি বৃহৎ ব্যাকরণ রচনার পরিকল্পনা করেছিলেন। প্রতিটি খণ্ডে ১০০০ পৃষ্ঠা সম্বলিত মোট ১২-টি খণ্ডের এই ব্যাকরণের জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে তিনি আবার লন্ডনে যান। ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত বিভিন্ন বই ও শিলালিপি প্রায় দুই বছর নাগাদ অধ্যয়ন করে এবং বইয়ের জন্য উপকরণ সংগ্রহ করার পর ১৮৮৩ সালের অক্টোবর মাসে তিনি ভারতে ফিরে আসেন।
১৮৮৫ সালে, আনন্দরাম বড়ুয়া কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো নির্বাচিত হন এবং কলা অনুষদের সাথে যুক্ত ছিলেন।
১৮৮৭ সালে তিনি দ্বিতীয়বারের জন্য বাংলার নোয়াখালী জেলায় বদলি হন।
আনন্দরাম বড়ুয়া অত্যন্ত দয়ালু মনের মানুষ ছিলেন বলে জানা যায়। তিনি নাকি মফসলে যাওয়ার সময় একটি গাড়িতে কিছু খাবার নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি তৎকালীন বাংলার দরিদ্রতম কৃষকদের মধ্যে সেগুলো বিতরণ করেন। বাংলা (বর্তমানে বাংলাদেশ)র বিভিন্ন অঞ্চলের স্কুল, কলেজ ও পুকুরও তাঁর নামে নামকরণ করা হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে তার দক্ষতার জন্য তিনি সরকারের আস্থাভাজন হতে সক্ষম হয়েছিলেন।
সাহিত্যকর্ম
[সম্পাদনা]১৮৮৭-১৮৮০ সালের মধ্যে আনন্দরাম বড়ুয়া তিনটি খণ্ডে ইংরেজি-সংস্কৃত অভিধান প্রণয়ন করেন। ১৮৭৭ সালে তিনি বর্ধমানে কর্মরত অবস্থায় প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়েছিল। দ্বিতীয় খণ্ড, উচ্চতর সংস্কৃত ব্যাকরণ, ১৮৭৮ সালে প্রকাশিত হয় যখন তিনি গোয়ালপাড়ায় কর্মরত ছিলেন। তৃতীয় খণ্ড, ভারতের প্রাচীন ভূগোল, ১৮৮০ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। ১৮৮৭ সালে, তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত-পঠন স্নাতকদের সহচর নামে আরেকটি মূল্যবান রচনা প্রকাশ করেন। একই বছর মহাবীর চরিতম প্রকাশিত হয়। এগুলো ছাড়াও তিনি সরস্বতী কথাভরণম, নামলিঙ্গানুশসন এবং বাংলার সমস্ত উপভাষার একটি বিস্তৃত অভিধানের সংকলনসংকলন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ রচনা করেন।[৮]
মৃত্যু
[সম্পাদনা]১৮৮৮ সালে, আনন্দরাম বড়ুয়া অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং পক্ষাঘাতজনিত রোগে আক্রান্ত হন। তিন মাসের ছুটি নিয়ে তিনি চিকিৎসার জন্য কলকাতায় আসেন। কিন্তু চিকিৎসা ফলপ্রসূ হয়নি। ১৮৮৯ সালের ১৯ জানুয়ারি কলকাতায় তিনি মারা যান।
সম্মাননা
[সম্পাদনা]- আসাম সরকার তার সম্মানে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষান্ত পরীক্ষায় যারা ভালো ফলাফল দেখিয়েছে তাদের জন্য আনন্দরাম বড়ুয়া পুরস্কার চালু করেছে। প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। শিক্ষার্থীরা নগদ টাকা বা ল্যাপটপ (পূর্বে কম্পিউটার) পায়।
- গুয়াহাটির চানমারীতে অবস্থিত একটি উড়াল-পথ আনন্দরাম বড়ুয়া সেতু নামে নামকরণ করা হয়েছে এবং আসামের অনেক রাস্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ছাত্রাবাস এবং উদ্যান ওনার নামে নামকরণ করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Anundoram Borooah Award Scheme"। Assam Government। সংগ্রহের তারিখ ২১ মে ২০১৯।
- ↑ Phani Deka (২০০৭)। The Great Indian Corridor In The East। Mittal Publications। পৃষ্ঠা 101–। আইএসবিএন 978-81-8324-179-3। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০১২।
- ↑ Dipankar Banerjee। "A tale of the first torchbearer of higher education in Northeast"। The Telegraph। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ২৭, ২০১২।
- ↑ "For the first time in Assam"। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ২৭, ২০১২।
- ↑ উপেন্দ্ৰচন্দ্ৰ লেখাৰু। "আনন্দৰাম বৰুৱা, জীৱন আৰু কৃতি"। অসমীয়া অনলাইন ডট কম। ৮ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ নৱেম্বৰ ২৭, ২০১২। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ Kanakasena Ḍekā (১৯৯১)। Youths in turmoil: Assam। Gurupada Chaudhury। পৃষ্ঠা 92। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০১২।
- ↑ Willis's Current notes (১৮৬৯)। Willis's Current notes। পৃষ্ঠা 54–। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০১২।
- ↑ http://amarasom.glpublications.in/Details.aspx?id=12131&boxid=13554234[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], আমাৰ অসম, লেখক দিলীপ কুমাৰ গংগোপাধ্যায়, আহৰণ কৰা হৈছে: ২১ জানুৱাৰী ২০১৩