লক্ষ্মীনাথ বেজবড়ুয়া

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়া থেকে পুনর্নির্দেশিত)
লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়া
জন্ম১৮৬৪, ১৪ অক্টোবর
আহঁতগুরি
মৃত্যু১৯৩৮, ২৬ মার্চ
ডিব্রুগড়
পেশাগল্পকার, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, কবি, হাস্যরসাত্মক লেখক, সমালোচক
ভাষাঅসমীয়া
জাতীয়তাঅসমীয়া
নাগরিকত্বঅসমীয়া
শিক্ষাকলা স্নাতক
সময়কাল১৮৬৪-১৯৩৮
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিমোর জীবন সোঁবরণ
শ্রী শ্রী শঙ্করদেব ও শ্রী শ্রী মাধবদেব
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারঅসম সাহিত্য সভার সভাপতি (১৯২৪ চন),
অসম ছাত্র সন্মিলনী সভাপতি (১৯১৬ চন)
দাম্পত্যসঙ্গীপ্রজ্ঞাসুন্দরী দেবী

লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়া (ইংরাজি:Lakshminath Bezbaroa; অসমীয়া:লক্ষ্মীনাথ বেজবৰুৱা) আধুনিক অসমীয়া সাহিত্যের পথ-প্রদর্শক। কবিতা, নাটক, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, রম্যরচনা, সমালোচনা, প্রহসন, জীবনী, আত্মজীবনী, শিশুসাহিত্য, ইতিহাস অধ্যয়ন, সাংবাদিকতা ইত্যাদিতে বেজবরুয়ার অবদান যথেষ্ট। তিনি কৃপাবর বরুয়া ছদ্মনামে সাহিত্য রচনা করতেন।

জন্ম ও শিক্ষা[সম্পাদনা]

লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়ার পিতা দীননাথ বেজবরুয়া বৃটিশের অধীনে চাকরি করিতেন। চাকরিসুত্রে দীননাথ বেজবরুয়াকে নগাঁও থেকে বরপেটা স্থানান্তরিত হতে হয়েছিল। যাতায়তের সে'সময় ভাল সুবিধা না থাকায় দীননাথ ব্রহ্মপুত্রের জলে নৌকাপথে যাত্রা করেছিলেন। সেদিন ছিল কার্তিক মাসের লক্ষ্মী পূর্নিমা। দীননাথের পত্নী ঠানেশ্বরী দেবী নৌকায় লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়াকে জন্ম দিয়াছিলেন। পিতা দীননাথ চাকরিসুত্রে বিভিন্ন স্থানে বদলি হওয়ার কারণে লক্ষ্মীনাথকে তেজপুর, লক্ষীমপুর ও গুয়াহাটি সহ নানান স্থান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়েছিল। অবশেষে পিতা অবসর গ্রহণ করার পর তিনি শিবসাগর থেকে ১৮৮৬ সনে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় পাশ করেন। এন্ট্রান্স পরীক্ষা পাশ করার তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য কলকাতা গিয়েছিলেন। ১৮৯০ সনে তিনি কলকাতার জেনারেল অ্যাসেম্বলি কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেছিলেন। উকিল হওয়ার লক্ষ্যে এরপর তিনি আইনের অধ্যয়ন করেন ও একই সময়ে এম.এ অধ্যয়ন করাও আরম্ভ করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি আইন ও এম.এ অধ্যয়ন সম্পূর্ণ করতে পারেন নাই। ১৮৯১ সনে তিনি কলকাতার ঠাকুর পরিবারের কন্যা প্রজ্ঞাসুন্দরীকে বিবাহ করেছিলেন।

কর্ম জীবন[সম্পাদনা]

লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়া আইন ও এম.এ অধ্যয়ন করতে থাকাকালীন অবস্থায় গুয়াহাটির বিখ্যাত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বরুয়া-ফুকন ব্রাদার্সের ম্যানেজার ভোলানাথ বরুয়ার সহিত সাক্ষাৎ হয়েছিল। লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়া ও ভোলানাথের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছিল। তারপর দুইজন মিলে কলকাতায় কাঠের ব্যবসা আরম্ভ করেছিলেন। ১৯১৬-১৭ লক্ষীনাথ বেজবরুয়া কলকাতার ওয়ার্ড কম্পানিতে কাজ করেছিলেন। ১৯১৭ সনে তিনি কাঠের ব্যবসায়ের জন্য সম্বলপুরে বসবাস করেছিলেন।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়া জীবনের শেষকাল সম্বলপুর, বরোডা, নাগপুর ও মুম্বাইতে কাটিয়েছিলেন। অবশেষে তিনি ১৯৩৮ সনের ১৮ আগস্ট অসমে আসেন । ১৯৩৮ সনের ২৬ মার্চে ডিব্রুগড়ে লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়া মৃত্যুবরণ করেন।[১]

জীবন[সম্পাদনা]

কলকাতায় থাকাকালীন অবস্থায় লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়া সাহিত্য জগতে প্রবেশ করেছিলেন। এই সময়ে তিনি চন্দ্রকুমার আগরয়ালা ও হেমচন্দ্র গোস্বামীর সহিত পরিচয় হন। অসমে অসমীয়া ভাষার পুন: স্থাপনের জন্য চন্দ্রকুমার আগরয়ালা , হেমচন্দ্র গোস্বামী, লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়া সহ কলেজের অন্যান্য সহপাঠী একত্রিত হয়ে অসমীয়া ভাষা উন্নতি সাধিনী সভা নামক একটি সভা গঠন করেছিলেন। এই সভা ১৮৮৯ সনে জোনাকি নামক একটি মুখপত্র প্রকাশ করেছিলেন। জোনাকি প্রকাশের প্রথম বৎসরের প্রথম প্রকাশন হিসেবে লিতিকাই নামক প্রহসনি প্রকাশ করা হয়েছিল। ১৯০৯ সনে প্রকাশিত হওয়া বাহী আলোচনীর তিনি প্রতিস্থাপক ও সম্পাদক ছিলেন। বাহী আলোচনীর মাধ্যমে তিনি সফল সাহিত্যিক হয়েছিলেন। তিনি সমসাময়িক চেতনা, আলোচনী, জন্মভূমি, মিলন, অসম সাহিত্য সভা প্রত্রিকা, অরুণ, আবাহন, বরদৈচিলা, ন-জোন, জয়ন্তী, দৈনিক বাতরি, অসম বন্তি ইত্যাদিতে সম্পাদনার কাজ করেছিলেন। লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়া রচনা করা কয়েকটি সাহিত্যের নাম:

আত্ম-জীবনী ও জীবনী[সম্পাদনা]

  • মোর জীবন সোঁওরণ )[২]
  • মোর জীবন সোঁওরণ (দ্বিতীয় খণ্ড, ১৯৬১)[২]
  • ডাঙরীয়া দীননাথ বেজবরুয়ার সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত
  • শ্রীশ্রী শংকরদেব
  • শ্রীশ্রী শংকরদেব আরু শ্রীশ্রী মাধবদেব

প্রবন্ধ[সম্পাদনা]

  • তত্ত্বকথা
  • শ্রীকৃষ্ণকথা
  • ভগবৎ কথা

উপন্যাস[সম্পাদনা]

  • পদুমকুঁয়রী

বৈষয়িক গদ্য[সম্পাদনা]

  • বাখর
  • কামত কৃতিত্ব লভিবর সংকেত

অনুবাদ[সম্পাদনা]

  • ভারতবর্ষর বুরঞ্জী

গল্প[সম্পাদনা]

  • সুরভি
  • সাধুকথার কুঁকি
  • জোনবিরি
  • কেহোঁকলি

শিশু সাহিত্য[সম্পাদনা]

  1. মেকুরীর জীয়েকর সাধু
  2. বান্দর আরু শিয়াল
  3. ঔ-কুঁয়রী
  4. ঢোঁরাকাউরী আরু টিপচীচরাই
  5. এজনী মালিনী আরু এজোপার ফুল
  6. বুধিয়ক শিয়াল
  7. বাঘ আরু কেঁকোরা
  8. তেজীমলা
  9. বুঢ়া-বুঢ়ী আরু শিয়াল
  10. দীঘল ঠেঙীয়া
  11. গঙ্গাটোপ
  12. নুমলীয়া পো
  13. সরবজান
  14. এটা শিঙরা মাছর কথা
  15. এটা বলী মানুহ
  16. চিলনী জীয়েকর সাধু
  17. তুলা আরু তেজা
  18. কটা যোয়া নাক,খারণী দি ঢাক
  19. তীখর আরু চুটিবাই
  20. চম্পাবতী
  21. জরদগব রজার উপাখ্যান
  22. পানেশৈ
  23. জোঁয়াইর সাধু
  24. কুকুরীকণা
  25. ভেকুলীর সাধু
  26. তায়ৈয়েকর সাধু
  27. লটকন
  28. লখিমী তিরোতা
  29. দুই বুধিয়ক
  30. কাঞ্চনী

  • ককাদেউতা আরু নাতিলরা
  • জুনুকা

নাটক[সম্পাদনা]

  • লিতিকাই
  • নোমল
  • পাচনি
  • চিকরপতি নিকরপতি
  • গদাধর রজা
  • বারেমতরা
  • হ-য-ব-র-ল
  • হেমলেত
  • মঙলা
  • চক্রধ্বজ সিংহ
  • জয়মতী কুঁয়রী
  • বেলিমার

হাস্যরসাত্মক রচনা[সম্পাদনা]

  • কৃপাবর বরুয়ার কাকতর টোপোলা
  • কৃপাবর বরুয়ার ওভতনি
  • বরবরুয়ার বুলনি
  • বরবরুয়ার ভায়র বুরবুরণি (প্রথম খণ্ড)
  • বরবরুয়ার ভায়র বুরবুরণি (দ্বিতীয় খণ্ড)
  • বরবরুয়ার চিন্তার শিলগুটি
  • বরবরুয়ার সাহিত্যিক রহস্য
  • কৃপাবর বরুয়ার সামরণি

অন্যান্য[সম্পাদনা]

  • অসমীয়া ভাষা আরু সাহিত্য
  • পত্রলেখা
  • কাঁহুদী আরু খারলি
  • সম্পাদকর চরা

সম্মান[সম্পাদনা]

  • অসম ছাত্র সন্মিলনীর সভাপতি (১৯১৬ সন) (গুয়াহাটী)
  • অসম সাহিত্য সভার সভাপতি (১৯২৪ সন) (গুয়াহাটী)[৩]
  • রসরাজ উপাধি প্রদান
  • সাহিত্যরথী উপাধি প্রদান

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়া, অসম প্রকাশন পরিষদ, প্রবন্ধ- বেজবরুয়ার জীবন-আলেখ্য, লেখক- নবকান্ত বরুয়া, পৃষ্ঠা-১
  2. Amaresh Datta (১৯৮৭)। Encyclopaedia of Indian Literature: A-Devo। Sahitya Akademi। পৃষ্ঠা 273–। আইএসবিএন 978-81-260-1803-1। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০১২ 
  3. ১৯১৭ সালের পর অসম সাহিত্য সভার সভাপতিদের তালিকা ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে অসম সাহিত্য সভার ওয়েবছাইট, আহরণ: ১৮ নৱেম্বর, ২০১২।