অ্যান্ডি রবার্টস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
স্যার
অ্যান্ডি রবার্টস
কেএনএইচ
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামঅ্যান্ডারসন মন্টগোমারি এভারটন রবার্টস
জন্ম (1951-01-29) ২৯ জানুয়ারি ১৯৫১ (বয়স ৭৩)
আর্লিংস ভিলেজ, এন্টিগুয়া
উচ্চতা৬ ফুট ২ ইঞ্চি (১.৮৮ মিটার)
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট
ভূমিকাবোলার
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ১৪৯)
৬ মার্চ ১৯৭৪ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ টেস্ট২৪ ডিসেম্বর ১৯৮৩ বনাম ভারত
ওডিআই অভিষেক
(ক্যাপ ১৫)
৭ জুন ১৯৭৫ বনাম শ্রীলঙ্কা
শেষ ওডিআই৭ ডিসেম্বর ১৯৮৩ বনাম ভারত
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৭০–১৯৮৪লিওয়ার্ড আইল্যান্ডস
১৯৭০–১৯৮১কম্বাইন্ড আইল্যান্ডস
১৯৭৩–১৯৭৮হ্যাম্পশায়ার
১৯৭৬নিউ সাউথ ওয়েলস
১৯৮১–১৯৮৪লিচেস্টারশায়ার
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট ওডিআই এফসি এলএ
ম্যাচ সংখ্যা ৪৭ ৫৬ ২২৮ ১৯৫
রানের সংখ্যা ৭৬২ ২৩১ ৩,৫১৬ ১,০৯১
ব্যাটিং গড় ১৪.৯৪ ১০.০৪ ১৫.৬৯ ১৪.৫৪
১০০/৫০ ০/৩ ০/০ ০/১০ ০/১
সর্বোচ্চ রান ৬৮ ৩৭* ৮৯ ৫৯*
বল করেছে ১১,১৩৫ ৩,১২৩ ৪২,৭৬০ ৯,৮৪১
উইকেট ২০২ ৮৭ ৮৮৯ ২৭৪
বোলিং গড় ২৫.৬১ ২০.৩৫ ২১.০১ ১৮.৫৮
ইনিংসে ৫ উইকেট ১১ ৪৭
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৭/৫৪ ৫/২২ ৮/৪৭ ৫/১৩
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৯/– ৬/– ৫২/– ৩৩/–
উৎস: ক্রিকইনফো.কম, ১১ এপ্রিল ২০১৭

স্যার অ্যান্ডারসন মন্টগোমারি এভারটন "অ্যান্ডি" রবার্টস, কেএনএইচ (ইংরেজি: Andy Roberts; জন্ম: ২৯ জানুয়ারি, ১৯৫১) এন্টিগুয়ার আর্লিংস ভিলেজ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী সাবেক ও বিখ্যাত ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের অন্যতম বোলিং স্তম্ভ হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন অ্যান্ডি রবার্টস। ডানহাতি ফাস্ট বোলার রবার্টস দলের প্রয়োজনে ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। ইংল্যান্ডের কাউন্টির প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে হ্যাম্পশায়ারলিচেস্টারশায়ারের হয়ে খেলেছেন। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইতিহাসের প্রথম দুইটি প্রতিযোগিতার শিরোপা বিজয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি।

রবার্টসের বোলিংয়ের মাধ্যমে পরবর্তী সিকি শতাব্দীকাল ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফাস্ট বোলিং আক্রমণের দূর্দান্ত সূচনা ঘটে। সেজন্যেই তাকে ‘আধুনিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফাস্ট বোলিংয়ের জনকরূপে’ গণ্য করা হয়। উর্বর মস্তিষ্কসম্পন্ন ও তুখোড় বুদ্ধিমত্তা সহযোগে যথাসময়ে শক্তিমত্তা প্রয়োগ করে বোলিং করতেন। তার বাউন্সারগুলো অত্যন্ত বিপজ্জ্বনক বাউন্সাররূপে বিবেচিত হয়ে আসছে।

খেলোয়াড়ী জীবন[সম্পাদনা]

সত্তরের দশক থেকে আশির দশক পর্যন্ত মাইকেল হোল্ডিং, জোয়েল গার্নারকলিন ক্রফটের সাথে দলের বোলিং আক্রমণে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ চার-রত্নের বোলিং আক্রমণে টেস্টএকদিনের আন্তর্জাতিক স্তরের ক্রিকেটে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের উপর ত্রাসের রাজত্ব কায়েমসহ বৈশ্বিক ক্রিকেটে একাধিপত্য বিস্তার করেছেন। দশ বছরের কম সময় খেললেও বিশ্বের সেরা দলগুলোর মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। দলের জ্যেষ্ঠ ফাস্ট বোলার হিসেবে পরবর্তীতে তিনি তার অভিজ্ঞতার ঝুলি ওয়েন ড্যানিয়েল, কোর্টনি ওয়ালশ ও কার্টলি অ্যামব্রোসের কাছে হস্তান্তর করেন।

১৯৭৫ সালে ভারত সফরে তিনি তার সেরা সময় অতিবাহিত করেন। ইংল্যান্ড সফরে হেডিংলিতে অনুষ্ঠিত টেস্টে তিনি তার সেরা বোলিং করেছিলেন। তার তথ্য মোতাবেক জানান, আমি তিনটি উইকেট পেলেও আমার অনুকূলে সঠিক সিদ্ধান্ত দেয়া হয়নি। পিটার উইলিকে লেগ-বিফোরের আবেদন জানালেও আম্পায়ার তাতে কর্ণপাত করেননি। যদি আম্পায়ার সঠিক সিদ্ধান্ত দিতেন, তাহলে ইংল্যান্ডকে বিকালেই অল-আউট করতাম।[১] টেস্টে চমৎকার রেকর্ড থাকা স্বত্ত্বেও তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবন তুলনামূলকভাবে স্বল্প সময়ের ছিল যা ১৯৮৩ সালে থেমে যায়।

টেস্ট ক্রিকেটে ইনিংসে দুইবার সাত উইকেট লাভ করার পারঙ্গমতা প্রদর্শন করেছেন। টেস্ট জীবন শুরু করার মাত্র আড়াই বছরে নিজস্ব ১৯শ টেস্টে তিনি শততম উইকেট লাভ করেন যা অদ্যাবধি অক্ষুণ্ন রয়েছে। ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়কালে প্রশ্নাতীতভাবে তার সেরা সময় কাঁটে। পরবর্তীতে তার পেস আক্রমণ কমে গেলেও অভিজ্ঞতা এবং যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে ১৯৮৩-৮৪ সাল পর্যন্ত বলকে ঘুরাতে পারতেন। মাত্র ৪৭ টেস্টে ২০২ উইকেট শিকার করেন তিনি। পাশাপাশি ব্যাটসম্যান হিসেবেও তিনটি অর্ধ-শতকের সন্ধান পান।

১৯৭৫১৯৭৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত প্রুডেন্সিয়াল বিশ্বকাপ ক্রিকেটের প্রথম দুইটি প্রতিযোগিতায় শিরোপা জয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। তন্মধ্যে, ১৯৭৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০ম উইকেটে ডেরেক মারে’র সাথে ৬০ রানের জুটি গড়ে দলকে নাটকীয়ভাবে বিজয় এনে দেন। আঘাতপ্রাপ্তি ও তরুণ ফাস্ট বোলারদের জায়গা করে দিতে ১৯৮৩ সালে স্বল্পকালীন খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপ্তি ঘটে তার।

খেলার ধরন[সম্পাদনা]

তার বোলিংয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল দুই ধরনের বাউন্সার দেয়া। দীর্ঘ দৌঁড়ে উইকেটে ধাবমান হয়ে তার গতিকে কাজে লাগিয়ে বল ছুড়তেন। প্রথমবার তিনি ধীরগতিতে পেস বল ছুড়তেন যা ব্যাটসম্যান বেশ সহজভাবে মোকাবেলা করতেন। এরফলে ব্যাটসম্যান প্রলুদ্ধ হয়ে দ্বিতীয় বাউন্সারে আউট হতেন কিংবা বেশ আঘাত পেতেন। দ্বিতীয় বাউন্সারটি পিচের একই জায়গায় ফেলতেন যা পূর্বের তুলনায় অতিরিক্ত গতিময়তা ও ক্ষীপ্রতা থাকতো।

পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ইমরান খান একবার বলেছিলেন যে, অ্যান্ডি রবার্টসের বলে নিজের আউট হবার ধরনটি ছিল খুব দ্রুতগতির বলে যা তিনি কখনও মুখোমুখি হননি।

কোচিং[সম্পাদনা]

২০০১ সালে বাংলাদেশের ফাস্ট বোলারদের সহায়তায় বোলিং কোচের দায়িত্ব পান। এরপর তিনি পুনরায় ২০০৫ সালে বাংলাদেশ দলকে সহায়তা করেছিলেন।[২] ২০০৬ সালে ভারতের কোচ থাকা অবস্থায় বোলিং অল-রাউন্ডার ইরফান পাঠানকে সহায়তা করেন।[৩] খেলোয়াড়ী জীবন থেকে অবসর নেয়ার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজে ক্রিকেট সম্প্রসারণ অবদান রেখে চলেছেন। জুলাই, ২০০৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য হিসেবে যোগদান করেন।[৪] ক্রিকেট প্রশাসক হিসেবে পিচ প্রস্তুতে দেখাশোনার দায়িত্ব নেন। এন্টিগুয়ার পিচ প্রস্তুতে বেশ সহায়তা করেন। এরফলেই ব্রায়ান লারা দুইবার টেস্টের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলতে সমর্থ হন। প্রথম এন্টিগুয়ান হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অংশ নেন। পরবর্তীতে ভিভ রিচার্ডস, রিচি রিচার্ডসনকার্টলি অ্যামব্রোসের ন্যায় জনপ্রিয় ক্রিকেটারগণ এ অঞ্চল থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দৃপ্ত পদচারণা করেন।

সম্মাননা[সম্পাদনা]

১৯৭৫ সালে উইজডেন কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার লাভ করেন। অক্টোবর, ২০০৫ সালে ক্রিকেটে অসামান্য অবদান রাখায় দ্বিতীয় এন্টিগুয়ান হিসেবে ইউনাইটেড স্টেটস ক্রিকেট হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত হন তিনি। ২০০৯ সালে আইসিসি ক্রিকেট হল অব ফেমের উদ্বোধনী অন্তর্ভুক্তিতে তিনিও অন্তর্ভুক্ত হন। ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ তারিখে তিনি নাইট পদবীতে ভূষিত হন।[৫]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Nagraj Gollapudi (৮ নভেম্বর ২০০৮)। "'Gavaskar was better than Boycott'"। ESPN Cricinfo। 
  2. "Bangladesh hire Andy Roberts"। ESPN Cricinfo। ২৫ জুলাই ২০০৫। 
  3. Siddhartha Vaidyanathan (৬ জুন ২০০৬)। "Roberts helps Pathan with action"। ESPN Cricinfo। 
  4. "Greenidge replaces Carew as convener of selectors"। ESPN Cricinfo। ১৫ জুলাই ২০০৬। 
  5. "Richie Richardson, Curtly Ambrose & Andy Roberts knighted"। BBC। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ 

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

পূর্বসূরী:
ট্রেভর চ্যাপেল
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের কোচ
২০০১-২০০২
উত্তরসূরী:
মহসিন কামাল