নার্গিস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নার্গিস
নার্গিস
জন্ম
ফাতিমা রশিদ

(১৯২৯-০৬-০১)১ জুন ১৯২৯
মৃত্যু৩ মে ১৯৮১(1981-05-03) (বয়স ৫১)
মৃত্যুর কারণঅগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার
সমাধিবড়কবরস্থান, মেরিন লাইনস, বোম্বে
জাতীয়তাভারতীয়
অন্যান্য নাম
  • বেবি[১]
  • বেবি নার্গিস[২]
পেশাঅভিনেত্রী
কর্মজীবন১৯৩৫–১৯৩৬
১৯৪২–১৯৬৮
দাম্পত্য সঙ্গীসুনীল দত্ত (বি. ১৯৫৮; মৃ. ১৯৮১)
সন্তানসঞ্জয় দত্ত
প্রিয়া দত্ত
নম্রতা দত্ত
পিতা-মাতাআবদুল রশিদ (পিতা)
জদ্দানবাই (মাতা)[২]
আত্মীয়দেখুন দত্ত পরিবার
পুরস্কার
সম্মাননাপদ্মশ্রী (১৯৫৮)

নার্গিস (জন্ম: ফাতিমা রশিদ; ১ জুন ১৯২৯ - ৩ মে ১৯৮১) ছিলেন একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। তিনি ধ্রুপদী বলিউড চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। সুনীল দত্তের সাথে বিবাহোত্তর তিনি নার্গিস দত্ত নামে পরিচিতি লাভ করেন।[৩] বলিউডের ইতিহাসে অন্যতম সেরা অভিনেত্রী হিসেবে গণ্য নার্গিস ১৯৩৫ সালে পাঁচ বছর বয়সে তালাশ-ই-হক চলচ্চিত্রে একটি ছোট চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে আবির্ভূতা হন। ১৯৪২ সালে তামান্না চলচ্চিত্র দিয়ে তার পূর্ণাঙ্গ অভিনয় জীবন শুরু হয়।

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

Nargis - Hindi Movie Actress

নার্গিস ১৯২৯ সালের ১লা জুন ব্রিটিশ ভারত-এর বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ, ভারত) কলকাতায় এক পাঞ্জাবি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম ফাতিমা রশিদ। তার পিতা আবদুল রশিদ, যার জন্মনাম মোহনচাঁদ উত্তমচাঁদ ("মোহন বাবু"), রাওয়ালপিণ্ডির এক ধনাঢ্য পাঞ্জাবি হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন, যিনি পরে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হন।[২][৪][৫][৬] তার মাতা জদ্দানবাই হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী এবং ভারতীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম অগ্রদূত। নার্গিসের মায়ের দিক থেকে তার সৎ ভাই আনোয়ার হুসেনও একজন চলচ্চিত্র অভিনেতা।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

ফাতিমা ১৯৩৫ সালে ছয় বছর বয়সে তালাশে হক চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন। এতে নাম প্রদর্শিত হয় বেবি নার্গিস। নার্গিস (نرگس [ˈnərɡɪs]) একটি পার্সি শব্দ, যার অর্থ নার্সিসাস, বা ড্যাফোডিল ফুল। এরপর থেকে তার সকল চলচ্চিত্রে তার নাম নার্গিস হিসেবেই প্রদর্শিত হয়।[৭][৮]

১৯৪৯ সালে নার্গিস মেহবুব খান-এর সমাদৃত নাট্যধর্মী চলচ্চিত্র আন্দাজ-এ অভিনয় করেন। এতে তাকে নীনা চরিত্রে দেখা যায়, যার স্বামী রাজন (রাজ কাপুর) তার বন্ধু দীলিপের (দীলিপ কুমার) সাথে তার সম্পর্ক রয়েছে বলে সন্দেহ করে। চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসে ধীরগতিতে চলতে শুরু করার পর লোক-মুখে ইতিবাচক প্রচারের পর ব্যবসায়িক সফল্য পায় এবং সর্বকালের সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্রের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।[৯]

উত্তরাধিকার[সম্পাদনা]

১৯৯৩ সালে ভারতের একটি ডাকটিকেটে নার্গিস।

১৯৪৯ সালের বরসাত চলচ্চিত্রের রাজ কাপুর এক হাতে নার্গিসকে এবং অন্য হাতে বেহালা ধরার দৃশ্যটির ভিত্তিতে আর. কে. ফিল্মস-এর লোগো নির্ধারণ করা হয়।[১০][১১]

নার্গিসকে নিয়ে একাধিক বই রচিত হয়েছে। তাকে নিয়ে ১৯৯৪ সালে প্রথম বইটি দ্য লাইফ অ্যান্ড টাইমস অব নার্গিস লেখেন টি. জে. এস. জর্জ।[১২] ২০০৭ সালে নার্গিসের দুই কন্যা প্রিয়া ও নম্রতা দত্ত তাদের পিতামাতার জীবনী নিয়ে একটি বই লেখেন, যার নাম মিস্টার অ্যান্ড মিসেস দত্ত: মেমোরিজ অব আওয়ার প্যারেন্টস[১৩][১৪][১৫] একই বছর কিশওয়ার দেসাই ডার্লিংজী: দ্য ট্রু লাভ স্টোরি অব নার্গিস অ্যান্ড সুনীল দত্ত প্রকাশ করেন।[১৬][১৭]

২০১৮ সালে তার পুত্র সঞ্জয় দত্তের জীবনীমূলক চলচ্চিত্র সঞ্জু-তে অভিনেত্রী মনীষা কৈরালা তার ভূমিকায় অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি ২০১৮ সালের সর্বাধিক আয়কারী চলচ্চিত্রের একটি।[১৮][১৯] একই বছর ফেরিনা ওয়াজির মান্টো চলচ্চিত্রে তার ভূমিকায় অভিনয় করেন।[২০][২১]

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার হিন্দি চলচ্চিত্রে নার্গিস দত্তের অবদানের সম্মানার্থে জাতীয় সংহতি বিষয়ক শ্রেষ্ঠ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে নার্গিস দত্ত পুরস্কার প্রদান করে।[২২]

তার স্মরণার্থে মুম্বইয়ের বান্দ্রায় একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে নার্গিস দত্ত রোড।[২৩] ১৯৯৩ সালের ৩০শে ডিসেম্বর নার্গিসের সম্মানার্থে ১০০ পয়সা মূল্যমানের একটি পোস্টাল স্ট্যাম্প প্রকাশ করা হয়।[২৪] ২০১৫ সালের ১লা জুন নার্গিস দত্তের ৮৬তম জন্মদিনে গুগল তাকে নিয়ে ডুডল প্রকাশ করে।[২৫]

পুরস্কার ও মনোনয়ন[সম্পাদনা]

নাগরিক সম্মাননা
চলচ্চিত্রের পুরস্কার
বছর পুরস্কার বিভাগ মনোনীত কর্ম ফলাফল সূত্র.
১৯৫৮ ফিল্মফেয়ার পুরস্কার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী মাদার ইন্ডিয়া বিজয়ী [২৬]
১৯৫৮ কারলভি ভ্যারি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী মাদার ইন্ডিয়া বিজয়ী [২৭]
১৯৬৮ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী রাত অউর দিন বিজয়ী [২৮]
১৯৬৯ ফিল্মফেয়ার পুরস্কার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী রাত অউর দিন মনোনীত [২৯]
২০০০ হিরো হোন্ডা ও স্টারডাস্ট ম্যাগাজিন "সহস্রাব্দের শ্রেষ্ঠ শিল্পী" অমিতাভ বচ্চনের সাথে যৌথভাবে [৩০]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Why Nargis said 'Meena, Maut Mubarak Ho!'"Times of India। ২০১৮-১২-০২। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-০২ 
  2. "Bollywood actor Nargis Dutt remembered in today's Google Doodle"The Indian Express। ১ জুন ২০১৫। 
  3. "Bollywood actor Nargis Dutt remembered in today's Google Doodle"দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস (ইংরেজি ভাষায়)। ১ জুন ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মে ২০১৯ 
  4. জর্জ, টি. জে. এস. (ডিসেম্বর ১৯৯৪)। The life and times of Nargis। মেগাটেকনিকস। আইএসবিএন 978-81-7223-149-1। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২১ 
  5. Parama Roy (৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮)। Indian traffic: identities in question in colonial and postcolonial India। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া প্রেস। পৃষ্ঠা ১৫৬। আইএসবিএন 978-0-520-20487-4। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২১ 
  6. ভাটিয়া, শ্যাম (২০ অক্টোবর ২০০৩)। "Nargis-Sunil Dutt: A real life romance"রেডিফ.কম। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২১ 
  7. "Nargis Dutt's 86th Birth Anniversary: 10 things you would want to know about beautiful Nargis"ইন্ডিয়া.কম। ২০১৫-০৬-০১। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২১ 
  8. "Nargis"মিন্ট। ৪ মে ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২১ 
  9. রাহেজা, দীনেশ (১৪ মার্চ ২০০২)। "Classics Revisited: Andaz"রেডিফ.কম। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২১ 
  10. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; TSGBetter18 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  11. "Was It a Painting That Inspired the Iconic RK Studio Logo?"দ্য কুইন্ট। ২০১৮-০৮-২৭। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২১ 
  12. Kidwai, Rasheed (২০১৮-০৭-০৯)। "Reel vs real: The politics behind the life and crimes of Sanjay Dutt"বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড India। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২১ 
  13. "To Mr. and Mrs. Dutt, with love"দ্য হিন্দু। ৭ অক্টোবর ২০০৭। ১১ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২১ 
  14. মিশ্র, নীলেশ (২০০৭-০৯-২৭)। "My father was let down, he was a lone warrior: Priya"হিন্দুস্তান টাইমস। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২১ 
  15. "A family's life story, touchingly told"বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড। ২০০৭-০৯-৩০। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২১ 
  16. সলিল, কুলদীপ (১৭ নভেম্বর ২০০৭)। "Brought Back to Life"টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২১ 
  17. "Book reveals true love story of Nargis and Sunil Dutt"দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়াপ্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া। ২৮ অক্টোবর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২১ 
  18. "Sanjay Dutt biopic: Manisha Koirala looks like a perfect replica of Nargis Dutt – Most talked about biopics you just cannot miss"দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২১ 
  19. "Manisha Koirala Is Bang on as Nargis in Sanjay Dutt Biopic"। ৫ জানুয়ারি ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২১ 
  20. দুবে, রচনা (২৮ মার্চ ২০১৭)। "Feryna Wazheir to play Nargis in 'Manto'"দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২১ 
  21. লোহানা, অবিনাশ (১১ এপ্রিল ২০১৭)। "Feryna Wazheir to portray young Nargis Dutt in Nandita Das's Manto"মুম্বই মিরর। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২১ 
  22. "An award in a different genre"দ্য হিন্দু। ৭ জানুয়ারি ২০০৫। পৃষ্ঠা ২। ১ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২১ 
  23. সিংহ, বরুণ (২০১৭-১২-২৫)। "Priya Dutt's Bandra flat sets real estate record"ডেইলি নিউজ অ্যান্ড অ্যানলিসিস। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২১ 
  24. "Nargis Dutt"ইন্ডিয়ান ফিলাটেলিক্স। ঠাক্কর নুমিসম্যাটিক অ্যান্ড আর্ট ফাউন্ডেশন। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২১ 
  25. "Google Doodle celebrates Nargis' 86th birthday"দ্য হিন্দু। ১ জুন ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২১ 
  26. "Filmfare Awards Winners From 1953 to 2018"ফিল্মফেয়ার। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২১ 
  27. "KVIFF | 1958 awards"কেভিআইএফএফ। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২১ 
  28. সিনহা, মীনাক্ষী (১৮ অক্টোবর ২০০৯)। "New ailments to spice up BO"দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৩-০১-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মে ২০১৯ 
  29. "The Filmfare Awards Nominations – 1968"দ্য টাইমস গ্রুপ। ১৪ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  30. "Amitabh, Nargis 'best artistes'"দ্য ট্রিবিউন। ৮ জানুয়ারি ২০০০। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২১ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]