সরপুরিয়া
উৎপত্তিস্থল | ভারত |
---|---|
অঞ্চল বা রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
প্রস্তুতকারী | সূর্যকুমার দাস |
প্রধান উপকরণ | ছানা, ক্ষীর, সর |
অনুরূপ খাদ্য | সরভাজা |
সরপুরিয়া বাংলার এক জনপ্রিয় মিষ্টান্ন। কৃষ্ণনগরের সরপুরিয়া বিখ্যাত।
ইতিহাসবিদ ও পানীয় বিশেষজ্ঞগণ একমত যে মিষ্টিটি যেমনটি আজ পরিচিত তা ১৯০০-এর দশকের গোড়ার দিকে নদীয়া জেলার প্রশাসনিক কার্যালয় কৃষ্ণনগরে অধরচন্দ্র দাস দ্বারা উদ্ভাবিত হয়েছিল; যদিও সরপুরিয়া উল্লেখ ১৫শ শতাব্দীর শেষের দিকে বাংলা সাহিত্যে পাওয়া যায়। অধরচন্দ্র ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে কৃষ্ণনগরের নেদেরপাড়ায় সরপুরিয়ার দোকান করেন, এবং দোকানটি সরপুরিয়ার জন্য বিখ্যাত হয়ে ওঠে।
উৎপত্তি
[সম্পাদনা]সরপুরিয়ার ঐতিহাসিকতা নিয়ে মতভেদ আছে। চৈতন্যদেব তিন প্রকারের সরের মিষ্টান্ন খেতেন। তার মধ্যে অন্যতম সরপুপী বা সরপুরিয়া। কৃষ্ণদাস কবিরাজ রচিত চৈতন্যচরিতামৃততে এর উল্লেখ আছে।[১] অদ্বৈত আচার্য নিজেই চৈতন্যদেবকে সরপুরিয়া পাঠাতেন।
অন্যদিকে প্রচলিত মতে সরপুরিয়ার সৃষ্টিকর্তা কৃষ্ণনগরের অধরচন্দ্র দাস।[২] আবার মতান্তরে সরপুরিয়ার সৃষ্টিকর্তা তারই পিতা সুর্যকুমার দাস। কথিত আছে যে তিনি রাতে দরজা বন্ধ করে ছানা, ক্ষীর ও সর দিয়ে তৈরী করতেন সরপুরিয়া ও তার অপর আবিষ্কার সরভাজা। পরের দিন সকালে মাথায় করে নিয়ে ফেরি করতেন। যুবক অধরচন্দ্র তার পিতার কাছে মিষ্টি তৈরী কৌশল শিখে নেন। ১৯০২ সালে নেদের পাড়ায় অর্থাৎ বর্তমান অনন্তহরি মিত্র রোডে প্রতিষ্ঠা করেন মিষ্টির দোকান। দোকানের নাম অধরচন্দ্র দাস। কালক্রমে এটি একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। তবে রেসিপি চুরি হয়ে যাওয়ার ভয়ে তিনিও দরজা বন্ধ করে রাতে মিষ্টি তৈরী করতেন। কিন্তু ক্রমশ তার রেসিপি প্রকাশ হয়ে পড়লে অন্যান্য ময়রারাও তৈরী করতে থাকেন সরপুরিয়া ও সরভাজা।
প্রণালী
[সম্পাদনা]খাঁটি দুধ জ্বাল দিলে তাতে ঘন সর পড়ে। বারে বারে জ্বাল দিয়ে তার থেকে সর তুলে একের পরে এক স্তরে সেই সরকে রাখা হয়। তার পর সেই মোটা সরকে ঘিয়ে ভাজা হয়। তার উপর আলমন্ড, খোয়া ক্ষীর ও এলাচ ছড়িয়ে তার উপর আর এক স্তর ভাজা সর রাখা হয়। তারপর তাকে চিনি মেশানো দুধে রাখা হয়।[১]
জনপ্রিয়তা
[সম্পাদনা]১৯৫৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সবার উপরে চলচ্চিত্রে ছবি বিশ্বাসের বিখ্যাত সংলাপ 'আমার কুড়িটা বছর ফিরিয়ে দাও'-এর সংলাপ ও দৃশ্য অধরচন্দ্র দাসের মিষ্টির দোকানে দৃশ্যায়িত হয়েছিল।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ ব্যানার্জি, চিত্রিতা (২০০৬)। The Hour of the Goddess: Memories of Women, Food, and Ritual in Bengal। পেঙ্গুইন বুকস ইন্ডিয়া। পৃষ্ঠা ১১২। আইএসবিএন 9780144001422। সংগ্রহের তারিখ ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪।
- ↑ হালদার, সুস্মিত (৩১ জুলাই ২০১৪)। "অনাদর আর উপেক্ষায় ম্লান কৃষ্ণনগরের গরিমা"। আনন্দবাজার পত্রিকা। কলকাতা। ২০ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪।