রামমোহন রায়: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ট্যাগ: পুনর্বহালকৃত মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
MdsShakil (আলোচনা | অবদান)
2409:4061:50E:9309:B4ED:9B91:5A9D:B83E-এর সম্পাদিত সংস্করণ হতে HirokBot-এর সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণে ফেরত
ট্যাগ: পুনর্বহাল মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা উচ্চতর মোবাইল সম্পাদনা
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{ref improve|date=জুন ২০১২}}
{{Infobox revolution biography
|name=রাজা রামমোহন রায়
|lived={{জন্ম তারিখ|1772|5|22}} – {{death date|1833|9|27}}
|image= [[File:Raja Ram Mohan Roy (রামমোহন রায়) অথবা রাজা রাম মোহন রায়.jpg|thumb|এইচ. পি. ব্রিগস দ্বারা আঁকা রাজা রামমোহন রায়ের প্রতিকৃতি – ব্রিস্টল যাদুঘরে সংরক্ষিত]]
|caption= বাংলার নবজাগরণের জনক রাজা রামমোহন রায়
|alternate name=রামমোহন রায়
|dateofbirth={{জন্ম তারিখ|1772|5|22}}
|placeofbirth= জন্ম (মামার বাড়ি)-[[শ্রীরামপুর, পশ্চিমবঙ্গ|শ্রীরামপুর]] (অধুনা [[পশ্চিমবঙ্গ]])<br>বাড়ি- [[রাধানগর]], [[হুগলী জেলা]], অধুনা [[পশ্চিমবঙ্গ]]
|dateofdeath={{মৃত্যু তারিখ ও বয়স|1833|09|27|1772|5|22}}
| spouse =
| parents =
| children =
|prizes=
|religion=[[ব্রাহ্ম ধর্ম]],[[হিন্দুধর্মের শাখা]]
|footnotes=
|placeofdeath=[[স্টেপল্‌টন]], [[ব্রিস্টল]], [[ইংল্যান্ড]]
|movement=[[বাংলার নবজাগরণ]]
|organizations=[[ব্রাহ্মসমাজ]]
}}
[[File:রাজা রামমোহন রায়ের মূর্তি ২০১৯.jpg|থাম্ব|রাজা রামমোহন রায় সরণিতে রামমোহনের আবক্ষ মূর্তি]]
'''রাজা রামমোহন রায়''' অথবা '''রামমোহন রায়''' ([[২২ মে]], [[১৭৭২]] – [[সেপ্টেম্বর ২৭]], [[১৮৩৩]]) প্রথম [[ভারত]]ীয় ধর্মীয়-সামাজিক পুনর্গঠন আন্দোলন [[ব্রাহ্মসমাজ]]ের প্রতিষ্ঠাতা<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.yourarticlelibrary.com/history/ram-mohan-roy-and-brahmo-samaj/22830/|শিরোনাম=Ram Mohan Roy and Brahmo Samaj|শেষাংশ=মণ্ডল|প্রথমাংশ=পূজা|তারিখ=|ওয়েবসাইট=Your Article Library|প্রকাশক=|ভাষা=ইংরেজি|সংগ্রহের-তারিখ=14 December 2016}}</ref>{{rs|certain=y|কারণ=স্বপ্রকাশিত}} এবং [[বাঙালি]] [[দার্শনিক]]। তৎকালীন [[রাজনীতি]], [[জনপ্রশাসন]], [[ধর্ম]]ীয় এবং [[শিক্ষা]]ক্ষেত্রে তিনি উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখতে পেরেছিলেন। তিনি সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত হয়েছেন, [[সতীদাহ]] প্রথা বিলুপ্ত করার প্রচেষ্টার জন্য। তখন [[হিন্দু]] [[বিধবা]] [[নারী]]দের [[স্বামী]]র চিতায় [[সহমরণ]]ে যেতে বা আত্মাহুতি দিতে বাধ্য করা হত।

রামমোহন রায় কলকাতায় [[২০ আগস্ট]], [[১৮২৮]] সালে [[ইংল্যান্ড]] যাত্রার আগে [[দ্বারকানাথ ঠাকুর]]ের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ব্রাহ্মসমাজ স্থাপন করেন। পরবর্তীকালে এই ব্রাহ্মসমাজ এক [[সামাজিক আন্দোলন|সামাজিক ও ধর্মীয় আন্দোলন]] এবং বাংলার পুনর্জাগরণের পুরোধা হিসাবে কাজ করে।

== শৈশব ও শিক্ষা ==
== শৈশব ও শিক্ষা ==
[[মে ২২]], [[১৭৭২]] সালে [[হুগলী জেলা|হুগলী জেলার]] রাধানগর গ্রামে রামমোহন রায় জন্মগ্রহণ করেন এক সম্ভ্রান্ত ও ব্রাহ্মণ পরিবারে। প্রপিতামহ কৃষ্ণকান্ত ফারুখশিয়ারের আমলে বাংলার সুবেদারের আমিনের কার্য করতেন। সেই সূত্রেই 'রায়' পদবীর ব্যবহার বলে অনুমান করা হয়। কৃষ্ণকান্তের কনিষ্ঠ পুত্র ব্রজবিনোদ রামমোহনের পিতামহ। পিতা রামকান্ত। রামকান্তের তিন বিবাহ। মধ্যমা পত্নী তারিণীর এক কন্যা ও দুই পুত্র : জগমোহন ও রামমোহন। এঁদের বংশ ছিল বৈষ্ণব, কিন্তু রামমোহনের মাতা ছিলেন ঘোর তান্ত্রিক ঘরের কন্যা। রামকান্ত পৈতৃক এজমালি ভদ্রাসন ছেড়ে পার্শ্ববর্তী লাঙ্গুলপাড়া গ্রামে স্ব-পরিবারে উঠে যান। তার পিতা রামকান্ত রায় ছিলেন বৈষ্ণবী এবং মাতা তারিণী দেবী ছিলেন শাক্ত। পনেরো-ষোলো বছর বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করে নানা স্থানে ঘোরেন। কাশীতে ও পাটনায় কিছুকাল ছিলেন এবং নেপালে গিয়েছিলেন। এর আগে তার সঙ্গে তন্ত্রশাস্ত্রবেত্তা সুপণ্ডিত [[নন্দকুমার বিদ্যালঙ্কার|নন্দকুমার বিদ্যালঙ্কারের]] (পরে হরিহরানন্দ তীর্থস্বামী [[কুলাবধূত]] নামে পরিচিত) যোগাযোগ হয়। রামমোহনের সংস্কৃতে ব্যুৎপত্তি, তার বেদান্তে অনুরাগ নন্দকুমারের সহযোগিতায় হয়েছিল। ব্রাহ্ম উপাসনালয় প্রতিষ্ঠায় হরিহরানন্দই তার দক্ষিণ-হস্ত ছিলেন। [[বারাণসী]] থেকে প্রথাগত [[সংস্কৃত]] শিক্ষার পর তিনি [[পাটনা]] থেকে [[আরবি]] ও [[ফারসি ভাষা|পারসি]] ভাষা শেখেন। পরে তিনি [[ইংরেজি]], [[গ্রিক]] ও [[হিব্রু ভাষা|হিব্রু]] ভাষাও শেখেন।
[[মে ২২]], [[১৭৭২]] সালে [[হুগলী জেলা|হুগলী জেলার]] রাধানগর গ্রামে রামমোহন রায় জন্মগ্রহণ করেন এক সম্ভ্রান্ত ও ব্রাহ্মণ পরিবারে। প্রপিতামহ কৃষ্ণকান্ত ফারুখশিয়ারের আমলে বাংলার সুবেদারের আমিনের কার্য করতেন। সেই সূত্রেই 'রায়' পদবীর ব্যবহার বলে অনুমান করা হয়। কৃষ্ণকান্তের কনিষ্ঠ পুত্র ব্রজবিনোদ রামমোহনের পিতামহ। পিতা রামকান্ত। রামকান্তের তিন বিবাহ। মধ্যমা পত্নী তারিণীর এক কন্যা ও দুই পুত্র : জগমোহন ও রামমোহন। এঁদের বংশ ছিল বৈষ্ণব, কিন্তু রামমোহনের মাতা ছিলেন ঘোর তান্ত্রিক ঘরের কন্যা। রামকান্ত পৈতৃক এজমালি ভদ্রাসন ছেড়ে পার্শ্ববর্তী লাঙ্গুলপাড়া গ্রামে স্ব-পরিবারে উঠে যান। তার পিতা রামকান্ত রায় ছিলেন বৈষ্ণবী এবং মাতা তারিণী দেবী ছিলেন শাক্ত। পনেরো-ষোলো বছর বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করে নানা স্থানে ঘোরেন। কাশীতে ও পাটনায় কিছুকাল ছিলেন এবং নেপালে গিয়েছিলেন। এর আগে তার সঙ্গে তন্ত্রশাস্ত্রবেত্তা সুপণ্ডিত [[নন্দকুমার বিদ্যালঙ্কার|নন্দকুমার বিদ্যালঙ্কারের]] (পরে হরিহরানন্দ তীর্থস্বামী [[কুলাবধূত]] নামে পরিচিত) যোগাযোগ হয়। রামমোহনের সংস্কৃতে ব্যুৎপত্তি, তার বেদান্তে অনুরাগ নন্দকুমারের সহযোগিতায় হয়েছিল। ব্রাহ্ম উপাসনালয় প্রতিষ্ঠায় হরিহরানন্দই তার দক্ষিণ-হস্ত ছিলেন। [[বারাণসী]] থেকে প্রথাগত [[সংস্কৃত]] শিক্ষার পর তিনি [[পাটনা]] থেকে [[আরবি]] ও [[ফারসি ভাষা|পারসি]] ভাষা শেখেন। পরে তিনি [[ইংরেজি]], [[গ্রিক]] ও [[হিব্রু ভাষা|হিব্রু]] ভাষাও শেখেন।

০৪:৩৭, ১৯ মে ২০২১ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

রাজা রামমোহন রায়
(১৭৭২-০৫-২২)২২ মে ১৭৭২ – সেপ্টেম্বর ২৭, ১৮৩৩(১৮৩৩-০৯-২৭)
এইচ. পি. ব্রিগস দ্বারা আঁকা রাজা রামমোহন রায়ের প্রতিকৃতি – ব্রিস্টল যাদুঘরে সংরক্ষিত

বাংলার নবজাগরণের জনক রাজা রামমোহন রায়
ডাক নাম রামমোহন রায়
জন্ম তারিখ (১৭৭২-০৫-২২)২২ মে ১৭৭২
জন্মস্থান জন্ম (মামার বাড়ি)-শ্রীরামপুর (অধুনা পশ্চিমবঙ্গ)
বাড়ি- রাধানগর, হুগলী জেলা, অধুনা পশ্চিমবঙ্গ
মৃত্যু তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর ১৮৩৩(1833-09-27) (বয়স ৬১)
মৃত্যুস্থান স্টেপল্‌টন, ব্রিস্টল, ইংল্যান্ড
আন্দোলন বাংলার নবজাগরণ
প্রধান সংগঠন ব্রাহ্মসমাজ
ধর্ম ব্রাহ্ম ধর্ম,হিন্দুধর্মের শাখা
রাজা রামমোহন রায় সরণিতে রামমোহনের আবক্ষ মূর্তি

রাজা রামমোহন রায় অথবা রামমোহন রায় (২২ মে, ১৭৭২সেপ্টেম্বর ২৭, ১৮৩৩) প্রথম ভারতীয় ধর্মীয়-সামাজিক পুনর্গঠন আন্দোলন ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা[১][অনির্ভরযোগ্য উৎস] এবং বাঙালি দার্শনিক। তৎকালীন রাজনীতি, জনপ্রশাসন, ধর্মীয় এবং শিক্ষাক্ষেত্রে তিনি উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখতে পেরেছিলেন। তিনি সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত হয়েছেন, সতীদাহ প্রথা বিলুপ্ত করার প্রচেষ্টার জন্য। তখন হিন্দু বিধবা নারীদের স্বামীর চিতায় সহমরণে যেতে বা আত্মাহুতি দিতে বাধ্য করা হত।

রামমোহন রায় কলকাতায় ২০ আগস্ট, ১৮২৮ সালে ইংল্যান্ড যাত্রার আগে দ্বারকানাথ ঠাকুরের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ব্রাহ্মসমাজ স্থাপন করেন। পরবর্তীকালে এই ব্রাহ্মসমাজ এক সামাজিক ও ধর্মীয় আন্দোলন এবং বাংলার পুনর্জাগরণের পুরোধা হিসাবে কাজ করে।

শৈশব ও শিক্ষা

মে ২২, ১৭৭২ সালে হুগলী জেলার রাধানগর গ্রামে রামমোহন রায় জন্মগ্রহণ করেন এক সম্ভ্রান্ত ও ব্রাহ্মণ পরিবারে। প্রপিতামহ কৃষ্ণকান্ত ফারুখশিয়ারের আমলে বাংলার সুবেদারের আমিনের কার্য করতেন। সেই সূত্রেই 'রায়' পদবীর ব্যবহার বলে অনুমান করা হয়। কৃষ্ণকান্তের কনিষ্ঠ পুত্র ব্রজবিনোদ রামমোহনের পিতামহ। পিতা রামকান্ত। রামকান্তের তিন বিবাহ। মধ্যমা পত্নী তারিণীর এক কন্যা ও দুই পুত্র : জগমোহন ও রামমোহন। এঁদের বংশ ছিল বৈষ্ণব, কিন্তু রামমোহনের মাতা ছিলেন ঘোর তান্ত্রিক ঘরের কন্যা। রামকান্ত পৈতৃক এজমালি ভদ্রাসন ছেড়ে পার্শ্ববর্তী লাঙ্গুলপাড়া গ্রামে স্ব-পরিবারে উঠে যান। তার পিতা রামকান্ত রায় ছিলেন বৈষ্ণবী এবং মাতা তারিণী দেবী ছিলেন শাক্ত। পনেরো-ষোলো বছর বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করে নানা স্থানে ঘোরেন। কাশীতে ও পাটনায় কিছুকাল ছিলেন এবং নেপালে গিয়েছিলেন। এর আগে তার সঙ্গে তন্ত্রশাস্ত্রবেত্তা সুপণ্ডিত নন্দকুমার বিদ্যালঙ্কারের (পরে হরিহরানন্দ তীর্থস্বামী কুলাবধূত নামে পরিচিত) যোগাযোগ হয়। রামমোহনের সংস্কৃতে ব্যুৎপত্তি, তার বেদান্তে অনুরাগ নন্দকুমারের সহযোগিতায় হয়েছিল। ব্রাহ্ম উপাসনালয় প্রতিষ্ঠায় হরিহরানন্দই তার দক্ষিণ-হস্ত ছিলেন। বারাণসী থেকে প্রথাগত সংস্কৃত শিক্ষার পর তিনি পাটনা থেকে আরবিপারসি ভাষা শেখেন। পরে তিনি ইংরেজি, গ্রিকহিব্রু ভাষাও শেখেন।

কর্ম-জীবন

তরুণ বয়সে তিনি কলকাতায় মহাজনের কাজ করতেন। ১৭৯৬ সালে রামমোহন অর্থোপার্জন শুরু করেন। ১৮০৩ থেকে ১৮১৪ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারী ছিলেন। কলকাতায় প্রায়ই আসতেন এবং কোম্পানির নবাগত অসামরিক কর্মচারীদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে তাদের নানা বিষয়ে সাহায্য করেন। এই সুযোগে ভালো করে ইংরেজি শিখে নেন। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাজে সিভিলিয়ান কর্মচারীদের মধ্যে জন ডিগবির সঙ্গে তার সর্বাধিক ঘনিষ্ঠতা হয়। কোম্পানির কাজে ডিগবির অধীনে তিনি দেওয়ানরূপে রংপুরে কাজ করেন ১৮০৩ থেকে ১৮১৪ সাল পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে তিনি দু'বার ভুটান সীমান্তে যান কোম্পানির হয়ে দৌত্যকার্যে ডিগবির সাহচর্যে তার সমস্ত নতুন চিন্তা এই সময়ের মধ্যেই পরিপক্কতা লাভ করে। ১৮১৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে রামমোহন কলকাতার স্থায়ী বাসিন্দা হন, এখন থেকেই প্রকাশ্যে তার সংস্কার-প্রচেষ্টার শুরু।

তার প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ফারসি ভাষায় লেখা (ভূমিকা অংশ আরবিতে) তুহফাতুল মুহাহহিদিন। বইটিতে একেশ্বরবাদের সমর্থন আছে। এরপর একেশ্বরবাদ (বা ব্রাহ্মবাদ) প্রতিষ্ঠা করার জন্য বেদান্ত-সূত্র ও তার সমর্থক উপনিষদগুলি বাংলার অনুবাদ করে প্রচার করতে থাকেন। ১৮১৫ থেকে ১৮১৯ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে প্রকাশিত হয় বেদান্তগ্রন্থ, বেদান্তসার, কেনোপনিষদ, ঈশোপনিষদ, কঠোপনিষদ, মাণ্ডূক্যোপনিষদমুণ্ডকোপনিষদ। রক্ষণশীল ব্যক্তিরা ক্রুদ্ধ হয়ে তার লেখার প্রতিবাদ দেখাতে লাগলেন। এই সব প্রতিবাদ কটূক্তিপূর্ণ এবং বিদ্বেষ ভাবাপন্ন। রামমোহনও প্রতিবাদের প্রতিবাদ করলেন যুক্তি দিয়ে ও ভদ্রভাষায়। প্রতিবাদ-কর্তারা অবিলম্বে থেমে গিয়েছিলেন। প্রতিবাদ-কর্তাদের মধ্যে প্রথম ও প্রধান ছিলেন মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার, এঁর গ্রন্থের নাম 'বেদান্তচন্দ্রিকা'। বেদান্তচন্দ্রিকা'র প্রতিবাদে রামমোহন ভট্টাচার্যের সহিত বিচার লিখে প্রতিবাদীদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। 'বেদান্ত গ্রন্থ' প্রকাশের সঙ্গে তিনি ব্রহ্মনিষ্ঠ একেশ্বর উপাসনার পথ দেখালেন আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠা করে। এই আত্মীয় সভাকেই পরে তিনি ব্রাহ্মসমাজ নাম ও রূপ দেন। সাহেবদের বাংলা শেখানোর জন্য তিনি বাংলা ও ইংরেজিতে ব্যাকরণ রচনা করেন। [২]

সতীদাহ ও রামমোহন রায়

বেদান্ত-উপনিষদগুলি বের করবার সময়ই তিনি সতীদাহ অশাস্ত্রীয় এবং নীতিবিগর্হিত প্রমাণ করে পুস্তিকা লিখলেন 'প্রবর্তক ও নিবর্তকের সম্বাদ'। প্রতিবাদে পুস্তিকা বের হল 'বিধায়ক নিষেধকের সম্বাদ'। তার প্রতিবাদে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুস্তিকা বের হয়। এই বছরেই ডিসেম্বর মাসে আইন করে সহমরণ-রীতি নিষিদ্ধ করা হয়। তবুও গোঁড়ারা চেষ্টা করতে লাগল যাতে পার্লামেন্টে বিষয়টি পুনর্বিবেচিত হয়। এই চেষ্টায় বাধা দেওয়ার জন্য রামমোহন বিলেত যেতে প্রস্তুত হলেন। এব্যাপারে তাকে আর্থিক সহায়তা দান করেন প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। মোঘল সম্রাট ২য় আকবর তার দাবি ব্রিটিশ সরকারের কাছে পেশ করার জন্য ১৮৩০ সালে রামমোহনকে বিলেত পাঠান, তিনি রামমোহনকে রাজা উপাধি দেন।

ব্রাহ্মসমাজ ও রামমোহন রায়

বেদান্তচন্দ্রিকার প্রতিবাদে রামমোহন ভট্টাচার্যের সঙ্গে বিচার লিখে প্রতিবাদীদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বেদান্ত গ্রন্থ প্রকাশের সঙ্গে তিনি ব্রহ্মনিষ্ঠ একেশ্বর উপাসনার পথ দেখান আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠা করে। এই আত্মীয় সভাকেই পরে তিনি ব্রাহ্মসমাজ নামে নতুন রূপ দেন।

বিলেত ভ্রমণ

১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ নভেম্বর তিনি কলকাতা থেকে বিলেত যাত্রা করেন। দিল্লির বাদশাহ দ্বিতীয় আকবর তাকে 'রাজা' উপাধি দিয়ে ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে কিছুদিনের জন্য তিনি ফ্রান্সেও গিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন আধুনিক ভারতের সমাজ সংস্কারের অন্যতম পথিকৃত্।

সমাজ সংস্কার

ধর্মীয় সংস্কার

রামমোহন রায় একেশ্বরবাদে বিশ্বাস করতেন। তিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মূর্তি পূজার বিরোধী ছিলেন। এই বিশ্বাস থেকে তিনি ব্রাহ্মসমাজ ও ব্রাহ্মধর্ম প্রতিষ্ঠা করেন। রামমোহন রায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আচরণীয় ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান মানতেন না ও তা প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতেন। তিনি মনে করতেন সকল ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান কুসংস্কার ছাড়া কিছু নয়। রামমোহন রায় বেদের বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করে তার বক্তব্য প্রমাণ করেন।

শেষ জীবন

রামমোহন রায় ১৮৩১ সালে মুঘল সাম্রাজ্যের দূত হিসেবে যুক্তরাজ্য ভ্রমণ করেন, তিনি ফ্রান্সও পরিদর্শন করেছিলেন। ১৮৩৩ সালে মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হয়ে ব্রিস্টলের কাছে স্টেপল্‌টনে মৃত্যুবরণ করেন। ব্রিস্টলে আর্নস ভ্যাল সমাধিস্থলে তাকে কবর দেওয়া হয়। ১৯৯৭ সালে মধ্য ব্রিস্টলে তার একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. মণ্ডল, পূজা। "Ram Mohan Roy and Brahmo Samaj"Your Article Library (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  2. দেবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় রামমোহনের গৌড়ীয় ব্যাকরণ Rammohan Roy's Goudiya/Bangla Grammar.

আরও পড়ুন

  • নগেন্দ্রনাথ চট্টপাধ্যায়, মহাত্মা রাজা রামমোহন রায়ের জীবন চরিত, কলকাতা, ১৮৮১;
  • SD Collet, Life and Letters of Raja Rammohun Roy (2nd edition), Calcutta, 1914;
  • K Nag & D Burman (ed), The English Works of Rammohun Roy, Calcutta, 1945-48.
  • Sivanath Sastri, History of the Brahmo Samaj, 1911