আখড়াই গান
পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গীত | |
---|---|
ধারা | |
| |
নির্দিষ্ট ফর্ম | |
ধর্মীয় সঙ্গীত | |
জাতিগত সঙ্গীত | |
ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত | |
গণমাধ্যম ও অনুষ্ঠান | |
সঙ্গীত মাধ্যম | বেতার
টেলিভিশন ইন্টারনেট |
অঞ্চলিক সঙ্গীত | |
সম্পর্কিত এলাকা | |
অন্যান্য অঞ্চল | |
আখড়াই গান অষ্টাদশ শতকের শেষে এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে প্রচলিত একটি বিশেষ রীতির জনপ্রিয় গান। কুলুইচন্দ্র সেন এবং রামনিধি গুপ্ত এই নতুন রীতির গানের প্রবর্তক। রাজা নবকৃষ্ণ ছিলেন এই রীতির পৃষ্ঠপোষক।[১]
অষ্টাদশ শতকে বাংলা গানের যে ধারাগুলি বিশেষ প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি হলো আখড়াই গান। মনে করা হয় সেন রাজাদের আমলে নৃত্যগীত সহযোগে যে শাস্ত্রীয় গীতের প্রচলন ছিল তারই একটি শাখা 'আখড়াই' নামে পরিচিত হয়েছিল। অন্যমতে, 'গীতগোবিন্দে' উল্লিখিত 'প্রবন্ধম্' শৈলী নানা বিবর্তনে নাটগীতি থেকে আখড়াই গান এর রূপ নিয়েছে। আবুল ফজলের 'আইন ই আকবরী' থেকেও জানা যায় যে গায়ক বাদক ও নর্তক দের যৌথ সম্প্রদায় কে 'আখড়া' বলা হত। শাস্ত্রীয় তাল সমন্বিত প্রেমগীতিই পরিবেশন করতেন তারা। এই আখড়াই সঙ্গীতই কালক্রমে স্বভাব কবিদের জীবিকা অর্জনের উপায় হিসেবে 'কবির লড়াই' তথা কবিগানের জন্ম দিয়েছে।
কবি ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্ত তার 'সংবাদ প্রভাকর' পত্রিকার ১২৬০ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ-ভাদ্র সংখ্যায় লিখেছেন যে প্রায় দেড় শত বৎসর পূর্বে শান্তিপুরের ভদ্র সন্তানেরা আখড়াই গানের সৃষ্টি করেন। অর্থাৎ আখড়াই প্রায় তিনশত বৎসরেরও বেশি পুরনো সঙ্গীত ধারা। অষ্টাদশ শতকে আখড়াই গানের দুটি শাখা ছিল- একটি খেউর, এবং অন্যটি প্রভাতী। খেউর ছিল অত্যন্ত অশ্লীল, প্রভাতীও সুশ্রাব্য ছিল না। মনে করা হয় গৌড়বঙ্গ উদ্ভূত হয়ে, শান্তিপুর-কৃষ্ণনগর অঞ্চলে অবস্থিতির পর অষ্টম শতকে চুঁচুড়া হয়ে আখড়াই গান কলকাতায় প্রবেশ করে। কলকাতায় প্রবেশ করার পর আখড়াই গানকে অনেকটা শালীন করে তোলা হয় এবং সেইসঙ্গে ভবানী বিষয়ক এক নতুন অংশ এর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। আখড়াই গানের প্রতিযোগিতা হত,তবে কবির দলের মতো উত্তর প্রত্যুত্তর ছিল না। আখড়াই থেকে পরে হাফ-আখড়াই নামে আর এক শ্রেণীর গীতধারার উদ্ভব হয়।[১]
আখড়াই গানে ঢোল, কাঁসি প্রভৃতি দেশীয় বাদ্যযন্ত্র বাজানো হতো। চুঁচুড়া অঞ্চলে ঢোল-কাঁসি থেকে হাঁড়ি-কলসি মিলিয়ে মোট বাইশ রকমের বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হতো। সেই জন্য সেখানকার দলের নাম হয়েছিল 'বাইশেরা'।
রামনিধি গুপ্ত(নিধুবাবু) ও তার আত্মীয় কুলুই চন্দ্র সেন আখড়াই গানের সংশোধন করেন। পরে ছাপরা থেকে ফিরে এসে নিধুবাবুও ভদ্র আখড়াই গান শেখানোর জন্য কলকাতায় এক আখড়াই শিক্ষাকেন্দ্র খোলেন। এছাড়াও কলকাতার শৌখিন ব্যক্তিদের কেউ কেউ আরো কয়েকটি আখড়াই শিক্ষাকেন্দ্র খোলেন। নিধুবাবুর প্রভাবে টপ্পার গায়ন রীতি এবং তানপুরা, বেহালা, সেতার, বীণা, বাঁশি, জলতরঙ্গ, ঢোল প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্রের সমাহারে বিভিন্ন রাগ রাগিনী তে বাজানো সাজের বাজনা বা অর্কেস্ট্রা এই গানে স্থান করে নেয়। এইভাবে আখড়াই গান উচ্চাঙ্গের বৈঠকী গানে পর্যবসিত হয়। আখড়াই গানে রামনিধি গুপ্ত বা নিধুবাবুই শ্রেষ্ঠ শিল্পী।
আখড়াই এর ভবানী বিষয়ক অংশে পার্বতী সম্পর্কিত গান, খেউড়ে লৌকিক প্রেমের তীব্র মিলন আকাঙ্ক্ষা এবং প্রভাতীতে রজনি প্রভাতের অবসন্নতা জনিত বেদনার গান গাওয়া হতো। প্রতি অংশে মহড়া, কিতেন আর অন্তরা থাকতো। গানগুলি মূলত পয়ার ত্রিপদীতে রচিত হতো। উনিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত আখড়াই গান বেশ জনপ্রিয় ছিল। তারপর অন্যান্য গানের স্রোতে এটি হারিয়ে যেতে বসে।
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
- ↑ ক খ শিশিরকুমার দাশ সংকলিত ও সম্পাদিত, সংসদ বাংলা সাহিত্যসঙ্গী, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৯, পৃষ্ঠা ১৯ আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-০০৭-৯ {{আইএসবিএন}} এ প্যারামিটার ত্রুটি: চেকসাম
বঙ্গের সংস্কৃতি |
---|
বিষয় সম্পর্কিত ধারাবাহিক |
ইতিহাস |