ঢপ গান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গীত
Baul Song Performance - Saturday Haat - Sonajhuri - Birbhum 2014-06-28 5286.JPG
বীরভূমে বাউল গানের একটি অনুষ্ঠান
ধারা
নির্দিষ্ট ফর্ম
ধর্মীয় সঙ্গীত
জাতিগত সঙ্গীত
ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত
গণমাধ্যম ও অনুষ্ঠান
সঙ্গীত মাধ্যমবেতার

টেলিভিশন

ইন্টারনেট

অঞ্চলিক সঙ্গীত
সম্পর্কিত এলাকা
অন্যান্য অঞ্চল

ঢপ গান বা ঢপ কীর্তন বাংলার এক জনপ্রিয় কীর্তনাঙ্গের গান।[১] ঢপ গান মূলতঃ বৈষ্ণব কীর্তনের দিব্যভাবরোহিত একটি লৌকিক ধারা। রূপচাঁদ অধিকারী মুর্শিদাবাদের মনোহরশাহী ঘরানার সঙ্গীতকে কীর্তনের আঙ্গিকে হালকা সুরের ছন্দে নতুন করে উপস্থাপনা করেন। যা পরে অষ্টাদশ শতাব্দীতে ঢপ কীর্তন নামে পরিচিতি লাভ করে কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ঢপ কীর্তন ভীষণ জনপ্রিয় হয়। মধুসূদন কিন্নর ও রূপচাঁদ পক্ষী ছিলেন ঢপ গানের বিখ্যাত দুই গায়ক। এছাড়াও রূপচাঁদের দেখানো পথ ধরে পরে অঘোর দাস, দ্বারিক দাস, মধুসূদন কান, মোহন দাসের মতো শিল্পীরা খ্যাতি পেয়েছিলেন।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

মধ্যযুগের শেষের দিকে বৈষ্ণব কীর্তন তার দিব্যভাব হারিয়ে বিভিন্ন লৌকিক রূপ ধারণ করতে শুরু করে। ঢপ গান তাদের মধ্যে অন্যতম। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের রচনায় ঢপ গানের উল্লেখ পাওয়া যায় যদিও তার বহু আগে থেকেই ঢপ গান প্রচলিত ছিল। কীর্তন বিশেষজ্ঞরা অনুমান করেন রূপচাঁদ অধিকারীই প্রথম মুর্শিদাবাদের অন্যতম ঘরানা বা মনোহরশাহীকে ভেঙে হাল্কা সুরের সৃষ্টি করেন। এই কীর্তন গানই জনসমাজে ঢপ কীর্তন নামে পরবর্তীতে জনপ্রিয়তা লাভ করে। প্রচলিত কীর্তন গানের থেকে ঢপ কীর্তন ছিল অনেক সহজ, সরল ও লৌকিক ধারার। এমনকী অনেকের দাবি সেই সময় হিন্দু শ্রাদ্ধবাসরেও ঢপ কীর্তন গাওয়া হতো। সাধারণ পালা কীর্তনের মতো রূপচাঁদ ঢপ কীর্তনে দান, মাথুর, মান, নৌকা বিলাস পালার প্রচলন ঘটিয়েছিলেন। এছাড়াও যশোহর জেলার রাঢ়খাদিয়া নিবাসী জনৈক রাধামোহন বাউল ঢপ গানের চারটি পালা - 'মান', 'মাথুর', 'অক্রূর সংবাদ' ও 'কুরুক্ষেত্র' রচনা করেন। তার গানগুলি ছিল ভক্তিরসে পরিপূর্ণ। ঢপ গানের শ্রেষ্ঠ গায়ক মধুসূদন কিন্নর তার ছাত্র ছিলেন। মধুসূদন কিন্নর বা মধুকানের ঢপ ছিল প্রধানতঃ ভক্তিমূলক। শৈশবে রবীন্দ্রনাথ মধুকানের ঢপ গান শুনেছিলেন।[২] ঊনবিংশ শতাব্দীতে কলকাতার বিখ্যাত গীতিকার ও গায়ক রূপচাঁদ পক্ষী ঢপ গান গাইতেন। তার সংকলিত সঙ্গীতরসকল্লোলে ঢপ গান স্থান পেয়েছিল।[৩]

বর্তমান অবস্থা[সম্পাদনা]

বর্তমানে ঢপ গান লুপ্তপ্রায়। ২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের উদ্যোগে নবদ্বীপে রাজ্য কীর্তন উৎসবে ঢপ কীর্তন পরিবেশিত হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার নবদ্বীপে কীর্তন গুরুকুল স্থাপনের মাধ্যমে বাংলার অন্যান্য কীর্তনের পাশাপাশি ঢপ কীর্তন চর্চার ব্যবস্থা করছে।[৪]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. রায়, ডঃ তপন (২০০৭)। "ঢপ গান"। চক্রবর্তী, ডঃ বরুণকুমার। বঙ্গীয় লোকসংস্কৃতি কোষ। কলকাতা: অপর্ণা বুক ডিস্ট্রবিউটার্স (প্রকাশন বিভাগ)। পৃষ্ঠা ২১৮–২১৯। আইএসবিএন 81-86036-13-X 
  2. দত্ত, শৌনক (মে ২০১৭)। "কীর্তন,বাউল ও রবীন্দ্রনাথ………"অন্যদেশ। দেবশিস সেনগুপ্ত। 2 (12)। আইএসএসএন 2456-5539। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০১৮ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. আহমদ, ওয়াকিল (২০১২)। "রূপচাঁদ পক্ষী"। ইসলাম চৌধুরী, আমিরুল। বাংলাপিডিয়া। এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বাংলাদেশ। 
  4. "রাজ্য কীর্তন উৎসব শুরু হল নবদ্বীপে"আনন্দবাজার পত্রিকা। এবিপি গ্রুপ। ১০ অক্টোবর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০১৮ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]