বিষয়বস্তুতে চলুন

সরকারি বাঙলা কলেজ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(মিরপুর বাঙলা কলেজ থেকে পুনর্নির্দেশিত)
সরকারি বাঙলা কলেজ, ঢাকা
প্রাক্তন নাম
বাঙলা কলেজ
নীতিবাক্য"হে প্রভু আমাকে জ্ঞান দাও"
ধরনসরকারি মহাবিদ্যালয়
স্থাপিত২০ জুন ১৯৬২; ৬৩ বছর আগে (1962-06-20)
প্রতিষ্ঠাতাআবুল কাসেম
মূল প্রতিষ্ঠান
ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়
ইআইআইএন১০৮২১০ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
আচার্যবাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি
অধ্যক্ষমো. কামরুল হাসান
শিক্ষায়তনিক ব্যক্তিবর্গ
১৫৮
শিক্ষার্থী১৩,১৭৬
স্নাতক৯,৬৭৪
স্নাতকোত্তর১,৩৩১
অন্যান্য শিক্ষার্থী
২,১৭১ (এইচএসসি)
অবস্থান,
শিক্ষাঙ্গনশহুরে, ২২ একর (৮.৯ হেক্টর)
ভাষাবাংলা
ওয়েবসাইটsarkaribanglacollege.gov.bd
মানচিত্র

সরকারি বাঙলা কলেজ বাংলাদেশের ঢাকা শহরে অবস্থিত একটি সরকারি মহাবিদ্যালয়, যা ১৯৬২ সালের ২০শে জুন প্রতিষ্ঠিত হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষায় কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষাকে মাধ্যম হিসেবে পরিচয় করার চাহিদা থেকে প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম এই কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। কলেজটি ঢাকা শহরের ২৫ একর জমির উপর মিরপুরে অবস্থিত।[] ২০২৪ সালের ব্যানবেইসের তথ্যানুসারে এখানে মোট ১৩,১৭৬ জন শিক্ষার্থী শিক্ষাগ্রহণ করছে।[]

বর্তমানে কলেজটিতে উচ্চমাধ্যমিকসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ১৯৮৫ সালে কলেজটিকে সরকারিকরণ করা হয় এবং ১৯৯৭ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়-এর অধিভুক্ত করে কলেজটির স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। তবে ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ হতে কলেজটির স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোর্স ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এর অধিভুক্ত করা হয়। এরপর ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে এই অধিভুক্ত বাতিল করা হয়।[][]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম বাংলা ভাষা আন্দোলনের একজন ভাষা সৈনিক যিনি ১ অক্টোবর ১৯৬২ সালে বাঙলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬৪ সালে বাঙলা কলেজ মিরপুরে স্থানান্তরিত হয়। এর আগে প্রতিষ্ঠাকালীন বছরে এর ক্লাস হতো নবকুমার ইন্সটিটিউটে রাতের শিফটে।[] ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা বাঙলা কলেজকে একটি বধ্যভূমি হিসাবে ব্যবহার করেছিল।

বাঙলা কলেজ প্রতিষ্ঠার শুরুতে শিক্ষিত বাঙালি বিদ্বান ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিরোধিতায় নেমেছিলেন। তাঁদের যুক্তি ছিল, বাংলা মাধ্যমে লেখাপড়া করলে ছাত্র-ছাত্রীরা চাকরি ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়বে। এমনকি ‘বাঙলা মৌলবি’ জন্ম হবে বলেও ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করতেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাঙলা মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ দ্রুতই জনপ্রিয়তা লাভ করে।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ'র সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর অবাঙালি বিহারীরা বাঙলা কলেজ দখল করে নেয়। দীর্ঘ নয় মাস অবরুদ্ধ ছিল এ কলেজটি, কলেজের সাইনবোর্ড নামিয়ে এ সময় ‘উর্দু কলেজ’ সাইনবোর্ড লাগানো হয়।

১৯৮৫ সালে কলেজটিকে সরকারিকরণ করা হয় ও কলেজের নামের শুরুতে "সরকারি" শব্দটি যোগ করা হয়।

বিভাগ ও অনুষদসমূহ

[সম্পাদনা]

বিজ্ঞান অনুষদ

[সম্পাদনা]
  • পদার্থবিজ্ঞান
  • রসায়ন
  • গণিত
  • উদ্ভিদবিজ্ঞান
  • প্রাণিবিদ্যা
  • মৃত্তিকাবিজ্ঞান
  • ভূগোল ও পরিবেশ

কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদ

[সম্পাদনা]
  • বাংলা
  • ইংরেজি
  • অর্থনীতি
  • রাষ্ট্রবিজ্ঞান
  • সমাজকর্ম
  • ইতিহাস
  • ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি
  • ইসলামিক স্টাডিজ
  • দর্শন

ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ

[সম্পাদনা]
  • হিসাববিজ্ঞান
  • ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং
  • মার্কেটিং
  • ব্যবস্থাপনা

উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণী

[সম্পাদনা]
  • বিজ্ঞান
  • বাণিজ্য
  • মানবিক

প্রাঙ্গণ ও অবকাঠামো

[সম্পাদনা]
সরকারি বাঙলা কলেজের ফটক

কলেজটিতে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা রয়েছে। যেমনঃ একাডেমিক ভবন, গ্রন্থাগার, ল্যাব, আবাসিক হল, বাস, মসজিদ, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, অডিটোরিয়াম, সুবিশাল খেলার মাঠ ইত্যাদি। এছাড়া কলেজে রয়েছে সুবিশাল একটি পুকুর ও অনেকগুলো ফুলের বাগান যা ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বর্ধন করে।

একাডেমিক ভবন

[সম্পাদনা]

কলেজটিতে মোট ৮টি ভবন রয়েছে। ভবন সমূহঃ-

  • ভবন-১ (প্রশাসনিক ভবন)
  • ভবন-২ (কলা ভবন)
  • ভবন-৩ (বিজ্ঞান ভবন)
  • ভবন-৪
  • ভবন-৫ (বাণিজ্য ভবন)
  • ভবন-৬
  • ভবন-৭
  • ভবন-৮

গ্রন্থাগার

[সম্পাদনা]

কলেজের ৭নং ভবনে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার অবস্থিত। লাইব্রেরিতে সজ্জিত পাঠকক্ষ সহ বিভিন্ন ধরনের বই সংগৃহীত রয়েছে। এছাড়া প্রতিটি বিভাগের রয়েছে নিজস্ব গ্রন্থাগার বা সেমিনার।

মসজিদ

[সম্পাদনা]

কলেজ ক্যাম্পাসে সকলের জন্য সরকারি বাঙলা কলেজ জামে মসজিদ রয়েছে। যেখানে ছেলে ও মেয়ে উভয়ের নামাজ আদায় করার জন্য নির্ধারিত স্থানের সুব্যবস্থা রয়েছে।

খেলার মাঠ

[সম্পাদনা]

কলেজের নিজস্ব এক বিশাল মাঠ রয়েছে যেখানে ক্রিকেট, ফুটবল সহ বিভিন্ন ধরনের খেলার আয়োজন এবং বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

আবাসন ও যাতায়াত

[সম্পাদনা]

যাতায়াত ব্যবস্থা

[সম্পাদনা]

ঢাকার মিরপুর-১ দারুস সালাম বাসস্ট্যান্ড থেকে ৫০ গজ দক্ষিণে রাস্তার পশ্চিম পাশে সরকারি বাঙলা কলেজের অবস্থান। কলেজের ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য রয়েছে "বিজয়" ও "স্বাধীনতা" এবং "মুক্তি" নামের ৩টি বাস যা শিডিউল অনুযায়ী শহরের নির্ধারিত রুট হতে ছাত্র/ছাত্রীদের কলেজ ক্যাম্পাসে নিয়ে আসে এবং ক্যাম্পাস হতে নিয়ে যায়। এছাড়াও ক্যাম্পাসের রুটে অনেক লোকাল ও সিটিং সার্ভিস বাস ও বি আর টি সি বাস প্রতিনিয়ত চলাচল করে। যা ব্যবহার করেও ছাত্র/ছাত্রীরা কলেজ ক্যাম্পাসে আসা যাওয়া করে থাকে।

আবাসন ব্যবস্থা

[সম্পাদনা]

বর্তমানে কলেজটিতে আবাসিক ভাবে থাকার জন্য ছাত্রদের জন্য "প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম ছাত্রাবাস" ও "শেখ কামাল ছাত্রাবাস" নামের দুটি হল আছে। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি অনুদানে ছাত্রদের জন্য আরো ১টি হল এবং ছাত্রীদের জন্য ১টি হল নির্মাণ কাজ হাতে নিয়েছে কলেজ প্রশাসন।

সরকারি বাঙলা কলেজের আবাসিক হলসমূহ হলো:

  • প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম ছাত্রাবাস,
  • শেখ কামাল ছাত্রাবাস,
  • বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রাবাস (প্রস্তাবিত),
  • শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী নিবাস (প্রস্তাবিত)।

সহশিক্ষা কার্যক্রম

[সম্পাদনা]

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক

[সম্পাদনা]
  • বাঙলা কলেজ সাংবাদিক সমিতি (বাকসাস)
  • বাঙলা কলেজ বিজনেস এন্ড ক্যারিয়ার ক্লাব
  • সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ
  • বাঙলা কলেজ যুব থিয়েটার (বাকযুথি)
  • বাঙলা কলেজ আইটি সোসাইটি
  • বাঙলা কলেজ ডিবেটিং সোসাইটি
  • বাঙলা কলেজ আবৃত্তি সংসদ
  • বাঙলা কলেজ সাহিত্য সংসদ
  • বাঙলা কলেজ চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র সংসদ
  • বাঁধন (স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন)
  • পথের দাবী (সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন)
  • ক্লিন এন্ড গ্রীন ক্যাম্পাস
  • সেভ দ্য ফিউচার ফাউন্ডেশন
  • ইয়ুথ গ্রাসিয়াস হিউম্যান

অন্যান্য

[সম্পাদনা]
  • বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (সেনা, নৌ)
  • রোভার স্কাউট
  • বাঙলা কলেজ রেঞ্জার ইউনিট (গার্লস গাইড)
  • বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ
  • ৭১'র চেতনা
  • বাঙলা কলেজ ফেন্সিং ক্লাব
  • বাঙলা কলেজ বিজ্ঞান ক্লাব
  • বাঙলা কলেজ ইংরেজি ভাষা ক্লাব
  • বাঙলা কলেজ কুইজ ক্লাব
  • বাঙলা কলেজ পরিবেশ ক্লাব
  • দৈনিক অধিকার
  • বন্ধুমঞ্চ
  • বাঙলা কলেজ ইকোনমিক্স ক্লাব
  • বাঙলা কলেজ একাউন্টিং এসোসিয়েশন

আন্তর্জাতিক

[সম্পাদনা]

চিত্রশালা

[সম্পাদনা]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. মাহমুদ, আকিফ বিন, অধ্যক্ষ আবুল কাশেম: মাতৃভাষাকে ঘিরে যে ফুল বিকশিত। সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা, শুক্রবার ২৪ মার্চ২০০৬।
  2. "e-Survey"বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) (ইংরেজি ভাষায়)। ৩০ আগস্ট ২০২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  3. "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকছে না সাত কলেজ"দৈনিক প্রথম আলো। ২৭ জানুয়ারি ২০২৫।
  4. "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকছে না ৭ কলেজ"দৈনিক সমকাল। ২৭ জানুয়ারি ২০২৫।
  5. সাদাত উল্লাহ খান (২০১২)। "নবকুমার ইনস্টিটিউট"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর (সম্পাদকগণ)। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন ৯৮৪৩২০৫৯০১ওসিএলসি 883871743ওএল 30677644M

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]