নবীজি (উপন্যাস)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(নবীজি থেকে পুনর্নির্দেশিত)
নবীজি
লেখকহুমায়ূন আহমেদ
প্রচ্ছদ শিল্পীমাসুম রহমান
দেশবাংলাদেশ
ভাষাবাংলা
বিষয়ইসলামী নবী মুহাম্মাদ (সা:)-এর জীবনী
ধরনইতিহাস
প্রকাশকঅন্যদিন (২০১৩ ঈদ সংখ্যা), অন্যপ্রকাশ (লীলাবতীর মৃত্যু)
প্রকাশনার তারিখ
২০১৩, ২০১৪

নবীজি হলো বাংলাদেশী কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ রচিত একটি অসমাপ্ত উপন্যাস যা ইসলামী নবী মুহাম্মাদ (সা:) এর জীবনীর উপর ভিত্তি করে রচিত হয়েছিল। এটি ছিল হুমায়ূন আহমেদ রচিত সর্বশেষ সাহিত্য।[১]

প্রেক্ষাপট[সম্পাদনা]

২০১১ সালের ২১ অক্টোবর কালের কন্ঠের সাপ্তাহিক শিলালিপি ক্রোড়পত্রে এমদাদুল হক মিলনকে দেওয়া এক স্বাক্ষাৎকারে হুমায়ুন আহমেদ প্রথম এই উপন্যাসের বিষয়টি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বাংলাবাজারে অন্যপ্রকাশ প্রকাশনীর একটি নতুন বিক্রয় কেন্দ্র উদ্বোধনের সময় যে মাওলানা দোয়া করেছিলেন তিনি তার বহু দিনের পুষে রাখা স্বপ্ন হিসেবে হুমায়ূন আহমেদকে ইসলামী নবী মুহাম্মদ (সা:) এর জীবনী লেখার জন্য অনুরোধ করেন। হুমায়ূন আহমেদ তাতে রাজি হন এবং প্রস্তুতি হিসেবে মাওলানা মুহিউদ্দীন খানের সিরাত গ্রন্থগুলো সংগ্রহ করেন ও প্রাথমিকভাবে তার পরামর্শ নেন। তিনি অন্যদিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ও ইলাস্ট্রেটর মাসুম রহমানকে উপন্যাসটির জন্য একটি কভার তৈরি করে দিতে বলেন এবং মাসুম রহমান তাকে কভারটি তৈরি করে দেন। কয়েক লাইন লেখার পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন মোহাম্মদ (সা:)কে স্বপ্নে দেখার পর তিনি লেখা শুরু করবেন। এ লক্ষ্যে মহিউদ্দিন খানের কাছে গিয়ে তার স্বপ্নযোগে রাসূল (সা:) বইটি সংগ্রহ করে সে অনুযায়ী আমল করতে থাকেন। কিছুদিন পর তার ক্যান্সার ধরা পড়লে এই বইটির সাথে নিয়ে তিনি নিউইয়র্কে চিকিৎসার জন্য যান সেখানে উপন্যাসটি লেখার জন্য নিয়মিত তিনি এই বইটি এবং পাশাপাশি সিরাত গ্রন্থগুলি চর্চা করতেন এবং পাশাপাশি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। আমেরিকাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক রাতে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে উপন্যাসটি লেখা ফের শুরু করেন এবং এটি লিখনরত অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।[২] এছাড়াও তিনি উপন্যাসটি লেখার ব্যাপারে মুহিউদ্দীন খানের পাশাপাশি মোস্তফা জামান আব্বাসীর সাথেও সাথে আলাপ-আলোচনা করেন।[১]

সারসংক্ষেপ[সম্পাদনা]

হুমায়ুন আহমেদ আউজের দ্বারা তার কন্যা শামাকে জীবন্ত কবর দেওয়ার তৎকালীন প্রচলিত আরব রীতির ঘটনার বর্ণনার মাধ্যমে লেখাটি শুরু করেন। এরপর সূরা তাকবীরের প্রথম কয়েকটি আয়াত দিয়ে কুরআন নাজিল হওয়া নবী মুহাম্মদ সা: এর জীবনী লেখার মাধ্যমে ধর্মীয় ঋণ শোধ করার প্রসঙ্গ অবতারণার মাধ্যমে উপন্যাসটির বিষয়বস্তু স্পষ্ট করেন। এরপর তৎকালীন আরবের চিত্রের বর্ননা দেন। গোত্রে গোত্রে যুদ্ধ, মারামারি, হানাহানি, লুটপাট, কন্যা সন্তান হত্যাসহ নানা ঘটনার সংক্ষেপে বিবরণ তুলে ধরেন। একে তিনি তখনকার সময়ের সাধারণ চিত্র বলে উল্লেখ করেন। এরপর তিনি মুহাম্মাদ (সা:) এর জন্মের বর্ণনা দেন। জন্ম সংক্রান্ত অর্থাৎ তারিখ নিয়ে নানা বিতর্কের কথা উল্লেখ করেন। এরপর দাদা আব্দুল মোতালিব কর্তৃক তার নামকরণের বিষয়টি উল্লেখ করেন। এরপর দুধ মা হালিমার ঘরে তার প্রতিপালনের ঘটনা এবং এবং শিশু অবস্থায় মেঘের দ্বারা তাকে ছায়া দান করার ঘটনার বর্ণনার মাধ্যমে অসমাপ্ত রচনাটির সমাপ্তি ঘটে।

চরিত্রসমূহ[সম্পাদনা]

প্রকাশনা[সম্পাদনা]

২০১৩ সালে অন্যদিন পত্রিকার ঈদ সংখ্যায় এবং ২০১৪ সালে প্রকাশিত হুমায়ুন আহমেদের অপ্রকাশিত রচনা সংকলন "লীলাবতীর মৃত্যু" তে লেখাটি প্রকাশিত হয়।[১]

অভিমত[সম্পাদনা]

লেখক খোরশেদ মুকুল একটি প্রবন্ধে উপন্যাসটি সম্বন্ধে বলেন, "অসমাপ্ত এই লেখায় তিনি অসাধারণ গদ্যশৈলীর পরিচয় দিয়েছেন। ঝরঝরে শব্দে, ছোট ছোট বাক্যে ইতিহাস ফিরে পায় প্রাণ। শব্দশৈলীর নান্দনিক গাঁথুনিতে আর গল্প বলার ঢঙে বাঙময় হয়ে উঠে এই লেখাটি। অর্ধফর্মার (‘লীলাবতির মৃত্যু’ বইয়ে সংকলিত, যেটি তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়) অসমাপ্ত এই লেখা পাঠকের মনে তীব্র পাঠস্পৃহা জাগাতে সক্ষম হয়েছে।"[৩]

লেখক হাসান শাওন বলেন, "ইতিহাস নির্ভর উপন্যাস হুমায়ূন আহমেদ কম লেখেননি। মধ্যাহ্ন, মাতাল হাওয়া, দেয়াল, বাদশাহ নামদার - এর সাক্ষ্য দেয়। বিস্তৃত বিষয়ে পাঠে উৎসাহী এই লেখকের ‘নবীজি’ তিনি যতটুকু লিখেছেন ও প্রকাশ হয়েছে তাতে প্রমাণ মেলে এটি হতে পারতো অনবদ্য এক সাহিত্য কর্ম। নবীজি (দ.)-র আর্বিভাবকালে আরবের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন হুমায়ূন আহমেদ। ভক্তিবাদের বদলে তিনি আশ্রয় নেন তৎকালীন অর্থনীতি ও সমাজ কাঠামো ব্যাখ্যায়। গোত্রে গোত্রে যুদ্ধ, ধূসর মরুতে শুধু প্রাণটুকু বাঁচানোর চেষ্টা আসে তার বর্ণনায়। অজ্ঞানতা আর সীমা ছাড়ানো নিপীড়নের প্রেক্ষাপট প্রামাণ্য। শুরুতেই বিবরণ দেন কন্যা শিশুকে কূপে পুঁতে হত্যার লোমস্পর্শী ঘটনা। লেখক হুমায়ূন পবিত্র কুরআনের সুরা তাকবীরের মর্মার্থ তুলে আনেন।... লেখার একপর্যায়ে হুমায়ূন আহমেদ লেখেন, “সব মানুষের পিতৃঋণ-মাতৃঋণ থাকে। নবীজির কাছেও আমাদের ঋণ আছে। সেই বিপুল ঋণ শোধের অতি অক্ষম চেষ্টা। ভুলভ্রান্তি যদি কিছু করে ফেলি তার জন্যে ক্ষমা চাচ্ছি পরম করুণাময় মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে। তিনি তো ক্ষমা করার জন্যেই আছেন। ক্ষমা প্রার্থনা করছি নবীজি (সা.) কাছেও। উনার কাছেও আছে ক্ষমার অথৈ সাগর।”...ঘাতক ক্যানসারের ছোবলে মায়েস্ত্রো হহুমায়ূন আহমেদ শেষ করে যেতে পারেননি ‘নবীজি’। পাঠককূল বঞ্চিত অনবদ্য এক সীরাত গ্রন্থ থেকে। যা হুমায়ূন শুরু করেছেন নিজের কায়দায় স্টোরি টেলিংয়ে। শুধু তারুণ্য ভোলানো বৃষ্টি, জোছনার কারিগরই হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন না, মহাবিশ্বের কল্যাণেষু হিসেবে নিশ্চয়ই এক দিন স্বীকৃতি আসবে তার। সে পর্যন্ত অপেক্ষা।"[৪]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. আব্দুল্লাহ, সৈয়দ আনোয়ার (১ এপ্রিল ২০১৮)। "হুমায়ূন আহমেদের নবীজি ও শেষ দিনগুলোতে মুহিউদ্দীন খানের প্রভাব"যুগান্তর (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০২৩ 
  2. খন্দকার, ছোঁয়া (১১ জানুয়ারি ২০২২)। "'নবীজি' লেখা বন্ধ করে দিয়েছিলেন হুমায়ূন!"সময় টিভি। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০২৩ 
  3. মুকুল, খোরশেদ (২০ জুলাই ২০১৯)। "হুমায়ূন আহমেদ'র 'নবীজি' এবং কিছু কথা"Odhikar। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০২৩ 
  4. শাওন, হাসান (২০ অক্টোবর ২০২১)। "জনপ্রিয় সাহিত্য, নবীজি (সা.) ও হ‌ুমায়ূন আহমেদ প্রসঙ্গ"দেশ রূপান্তর। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০২৩