মুহাম্মাদ: প্রাথমিক সূত্রের উপর ভিত্তি করে তার জীবন
 বইয়ের প্রচ্ছদ | |
| লেখক | মার্টিন লিংগস |
|---|---|
| মূল শিরোনাম | Muhammad: His Life Based on the Earliest Sources |
| দেশ | যুক্তরাজ্য |
| ভাষা | ইংরেজি |
| ধারাবাহিক | ১ম সংস্করণ (১৯৮৩) ২য় সংস্করণ (১৯৯১) |
| বিষয় |
|
| ধরন | অ-কাল্পনিক |
| প্রকাশক | ইসলামিক টেক্সটস সোসাইটি (১৯৯১), ইনার ট্রাডিশন (২০০৬) |
প্রকাশনার তারিখ | ১ জানুয়ারি ১৯৮৩ |
| মিডিয়া ধরন | প্রিন্ট |
| পৃষ্ঠাসংখ্যা | ৩৬২ |
| পুরস্কারসমূহ | জাতীয় সিরাহ অ্যাওয়ার্ড, ১৯৮৩ (পাকিস্তান) |
| আইএসবিএন | ৯৭৮-০৯৪৬৬২১৩৩০ |
| ওসিএলসি | ৯১৯৫৫৩৩ |
মুহাম্মাদ: প্রাথমিক সূত্রের উপর ভিক্তি করে তার জীবন ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত মার্টিন লিংসের লেখা ইসলামিক নবী মুহাম্মদের একটি জীবনীগ্রন্থ। বইটি ইসলামের প্রাথমিম যুগ ৯ম শতাব্দীর সূত্রের উপর ভিক্তি করে রচনা করা হয়েছে। ১৯৮৩ সালে, ইসলামাবাদে জাতীয় সিরাত সম্মেলনে বইটি "ইংরেজি ভাষায় মুহাম্মাদের সেরা জীবনী" হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিল। এই বইটিকে পাকিস্তান সরকার "জাতীয় সিরাহ অ্যাওয়ার্ড" প্রদান করেছে।[১][২][৩] এছাড়াও বইটি ১৯৯০ সালে আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করার পর, মার্টিন লিংস মিশরের রাষ্ট্রপতি হোসনি মোবারকের কাছ থেকে একটি অলঙ্করণ গ্রহণ করেছিলো।[১]
বিষয়বস্তু আলোচনা[সম্পাদনা]
বইটি মুহাম্মাদের জীবনের একটি নতুন বিবরণ প্রদান করে, যার বিবরণ অন্যান্য বিবরণে বিশদভাবে বলা হয়নি। এটি প্রাথমিকভাবে পুরানো আরব উৎসগুলোর উপর ভিত্তি করে যা ৯ম শতাব্দী থেকে নেওয়া হয়েছে এবং এসব সূত্রের মধ্যে কিছু অনুচ্ছেদ প্রথমবারের মত অনুবাদ করা হয়েছে। এই অনুবাদ অন্যান্য বিষয়সমূহের সাথে বিরোধীতা করেনা বরং নতুন অন্তর্দৃষ্টি এবং নতুন বিবরণ প্রদান করে। বইটিতে মুহাম্মাদের কাছাকাছি বসবাসকারী পুরুষ ও মহিলাদের বক্তৃতাগুলির মূল ইংরেজি অনুবাদ। যাঁরা মুহাম্মাদকে কথা বলতে শুনেছেন, তাঁর ক্রিয়াকলাপ প্রত্যক্ষ করেছেন, পরিস্থিতির সাথে তিনি যেভাবে ব্যবহার করেছেন এবং তাঁর জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে উপস্থিত থেকে সম্মুখভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন, বইটিতে শুধু ঐ সমস্ত ব্যক্তিদের উদ্ধৃতাংশ সংগ্রহ করা হয়েছে।
ইবনে ইসহাকের সূত্র ব্যবহার করা হয়েছে। পাশাপাশি ফারদিনান্দ উস্টেনফেল্ডের সিরাতে রাসুল আল্লাহ-এর সংস্করণ, মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক কর্তৃক ইবনে হিশামের সংশোধিত টীকাযুক্ত সংস্করণ ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও ইবনে সা'দ (উল্লেখগুলি জন লেইডেনের কিতাব আল-তাবাকাত আল কবির মুহাম্মাদ ইবনে সা'দের সংস্করণ) সূত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও আল-ওয়াকিদি (উল্লেখগুলি কিতাব আল মাগাজির মার্সডেন জোন্সের সংস্করণ, মুহাম্মদ ইবনে উমর আল-ওয়াকিদির লেখা নবীর প্রচারণার একটি সময়কাল) সূত্র ব্যবহার করা হয়েছে।[৪]
এটি আরবের ইতিহাস এবং মুহাম্মাদের জন্ম ও জীবনের বর্ণনা। জীবনীগ্রন্থটি ৮৫টি ছোট অধ্যায় নিয়ে গঠিত, কিছু অধ্যায় মাত্র দুই পৃষ্ঠার মতো ছোট। প্রতিটি অধ্যায় ইসলামের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নিয়ে কাজ করে এবং ইসলামের আবির্ভাবের জন্য কালানুক্রমিক প্রেক্ষাপট, সেইসাথে মুহাম্মাদ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করে।[৪][৫]
রচনাশৈলী[সম্পাদনা]
জীবনীগ্রন্থটির একটি স্বতন্ত্র উপাদান হল এটি অত্যন্ত প্রাণবন্ত, উপলব্ধিযোগ্য বর্ণনা শৈলীযুক্ত একটি বই, যা দ্রুত চলমান এবং সাবলীলভাবে প্রবাহিত হয়।[৫][৬]বইটি পড়তে একটি উপন্যাসের মতো, এবং এমন একটি শৈলীতে লেখা হয়েছে, যা সহজেই পাঠযোগ্য ও বোধগম্য।[৪][৭] বইটিতে লেখকের ভাষার দক্ষতার সাক্ষর পাওয়া যায় এবং বইয়ের যা সরলতা এবং মহিমা উভয়কেই প্রতিফলিত করে।[৮] কুরআনের কথোপকথন এবং অনুবাদগুলিকে চিত্রিত করার জন্য মার্টিন লিংস ইংরেজির আরও প্রাচীন শৈলী ব্যবহার করে, যা বর্ণনার দ্রুত প্রবাহকে ধীর করতে সাহায্য করে। বইটিতে ইসলামের শিক্ষা তুলনামূলক কম আলোচনা রয়েছে বরং মুহাম্মাদ সম্পর্কে বেশি আলোচনা রয়েছে।[৫]
সংস্করণসমূহ[সম্পাদনা]
বইটি প্রকাশের পর বহুবার পুনঃমুদ্রণের করা হয়েছে এবং ফরাসি, ইতালীয়, স্প্যানিশ, তুর্কি, ডাচ, মালয় এবং তামিলসহ অনেক ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে।[৮] প্রতিটা সংস্করণ প্রকাশের পর বইটির বহু কপি বিক্রি হয়েছে।
১৯৮৩ সংস্করণ[সম্পাদনা]
এর প্রথম সংস্করণে, বইটি কিছু মুসলমানদের দ্বারা সমালোচনার শিকার হয়েছিল যারা বইটিতে "পারেনিয়ালিস্ট বিষ" এর নিন্দা করেছিল। লেখক সৌদির একটি পত্রিকায় জনসমক্ষে আপত্তির জবাব দিয়েছেন।[৯]
১৯৯১ সংস্করণ[সম্পাদনা]
১৯৯১ সালে ২২টি অতিরিক্ত পৃষ্ঠাসহ বইটির একটি দ্বিতীয় সংশোধিত সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল, যাতে মুহাম্মদের প্রচেষ্টা সম্পর্কিত অতিরিক্ত বিবরণের পাশাপাশি সিরিয়া এবং আরব উপদ্বীপের পার্শ্ববর্তী তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলিতে ইসলামের বিস্তারের বিবরণ রয়েছে।[৮]
২০০৬ সংস্করণ[সম্পাদনা]
২০০৫ সালে লেখক মার্টিন লিংসের মৃত্যুর পরে বইটির একটি নতুন সংস্করণ বের হয়। এই সংস্করণে বইয়ের অভ্যন্তরীণ শব্দ বাক্য বা বানান সংশোধন করা হয়েছিলো।[৮][৬]
সমালোচনামূলক অভ্যর্থনা[সম্পাদনা]
হামজা ইউসুফ এই কাজটিকে "ইংরেজি ভাষার মহান" জীবনীগুলির মধ্যে একটি" হিসাবে প্রশংসা করেছেন, "পাঠের ঐতিহাসিক নির্ভুলতা এবং ভবিষ্যতগত যত্নের প্রশংসা করেছেন। আরো বলেছেন, লেখক সংস্করণের পছন্দের পাশাপাশি গল্পের অন্তর্নিহিত কাঠামোতে যেমন তিনি বেছে নিয়েছেন। তিনি মার্টিন লিংসের কাছ থেকে আরও রিপোর্ট করেছেন যে কীভাবে এই বইটি লেখার সময়, "তিনি পুরো সময় জুড়ে নবীর প্রেমে আবেগে অভিভূত হয়েছিলেন এবং এটি সম্পূর্ণ করতে পেরে একটি মহান আশীর্বাদ অনুভব করেছিলেন।[১০]
দ্য স্পেক্টেটর বইটিকে "একটি চিত্তাকর্ষক গল্প হিসাবে বর্ণনা করেছেন যা তার বিষয়ের পবিত্র যোগ্য একটি বিরল অনুভূতির সাথে অনবদ্য পাণ্ডিত্যকে একত্রিত করে।" ইসলামিক ত্রৈমাসিক বইটিকে "শিল্পের একটি সত্যিকারের কাজ" বলে অভিহিত করেছে, এটি কল্পকাহিনী নয় বরং সত্যের পার্থক্যের সাথে সেরা উপন্যাসের মতো মুগ্ধকর।" [১১] দ্য টাইমস পত্রিকা বলেছে, "এই কাজটি এখন পর্যন্ত নবীর জীবনের সবচেয়ে পাঠযোগ্য বিবরণ হিসেবে স্বীকৃত।" [৮] প্যারাবোলা ম্যাগাজিন বলেছেন "যারা ইসলামে আগ্রহী তাদের জন্য এক বা অন্যভাবে, এটি মন্ত্রমুগ্ধকর।" [১২]
খালিদ ইয়াহিয়া লিখেছেন যে লিংসের বইটি ইবনে ইসহাকের কালানুক্রমিক স্কিম অনুসারে একটি একক বর্ণনায় প্রাথমিক ইসলামিক বিবরণ নিয়ে আসে, যার মধ্যে অনেকগুলি বিক্ষিপ্ত। ইয়াহিয়ার মতে, মার্টিন লিংস সফলভাবে উপস্থাপন করেছেন যা অধিকাংশ মুসলমান বিশ্বাস করে এবং মুহাম্মদ সম্পর্কে বিস্তৃত ইতিহাস জুড়ে বিশ্বাস করে।[১৩]
ডব্লিউ মন্টগোমারি ওয়াট সম্মত হন যে লিংসের বইটি একটি ধারণা দেয় যে মুহাম্মাদকে মুসলমানরা কীভাবে দেখেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে বইটি প্রাচীনতম ইসলামিক উৎসগুলির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল এবং যেখানে সেই উৎসগুলিতে মতভেদ রয়েছে, বইটি সর্বাধিক গৃহীত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে; এবং লিংস তাদের মূল্য নিয়ে আলোচনা না করেই প্রাথমিক ইসলামিক উৎসগুলোকে সহজভাবে গ্রহণ করেছে।[১৪] আসমা আসফারউদ্দিন বলেন, বইটি "অনবদ্য স্কলারশিপের সাথে বর্ণনার উপহার" এর একটি বিরল উদাহরণ।[১৫]
আরও দেখুন[সম্পাদনা]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ ক খ Book description at Islamic Texts Society.
- ↑ AMJAD, NAUMANA (২০০৫)। "Dr Martin Lings: Some Personal Recollections": 459–462। আইএসএসএন 0578-8072।
- ↑ Eaton, Gai (২০০৫-০৫-২৭)। "Obituary: Martin Lings"। the Guardian (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-১৩।
- ↑ ক খ গ "Muhammad: His Life Based on the Earliest Sources"। Fons Vitae। ১ জুলাই ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ জুলাই ২০১৩।
- ↑ ক খ গ Tausif, Gulrukh (১১ অক্টোবর ২০১২)। "Book reviews: Muhammad: His Life Based on the Earliest Sources, by Martin Lings"। Helium। পৃষ্ঠা 1।
- ↑ ক খ Youssuf, Maha (৮ জুলাই ২০১১)। "Muhammad: His Life Based on the Earliest Sources"। The Muslim Tribune। সংগ্রহের তারিখ ১ জুলাই ২০১৩।
- ↑ Hernandez, Aaminah (১৪ জুলাই ২০০৫)। "Best Biographies of the Prophet Muhammad"। OnIslam। সংগ্রহের তারিখ ১ জুলাই ২০১৩।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "Muhammad : His Life Based on the Earliest Sources : Revised Edition : Martin Lings (Abu Bakr Siraj Ad-Din)"। Islamic Bookstore.com। সংগ্রহের তারিখ ১ জুলাই ২০১৩।
- ↑ Mustafaa al Kanadee, Aboo Bilaal। "Perinnialist Poison in Martin Lings' Biography of the Prophet: A Discussion with Martin Lings" (পিডিএফ)। Fandango। ১০ মে ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুলাই ২০১৩।
- ↑ "A Spiritual Giant" (পিডিএফ) (363 সংস্করণ)। Q News। জুন ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুলাই ২০১৩।[অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "Muhammad: His Life Based on the Earliest Sources"। Amazon.co.uk। ১ জানুয়ারি ১৯৮৩। সংগ্রহের তারিখ ১ জুলাই ২০১৩।
- ↑ "Muhammad: His Life Based on the Earliest Sources"। Amazon.com। ৬ অক্টোবর ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ১ জুলাই ২০১৩।
- ↑ Yahya, Khalid A। "Review of Muhammad: His Life Based on the Earliest Sources, by M. Lings": 68-69।
- ↑ W. Montgomery Watt (১৯৮৪)। "Review of Muhammad: His Life Based on the Earliest Sources, by M. Lings": 504–5।
- ↑ Asma Asfaruddin (জুলাই ১৯৯৬)। "Review: [Untitled] Reviewed Work: Muhammad: His Life Based on the Earliest Sources by Martin Lings": 65।
আরো পড়ুন[সম্পাদনা]
- উইলিয়ামস, রেবেকা, সিরা, মডার্ন ইংলিশ, মুহাম্মাদ ইন হিস্ট্রি, থট অ্যান্ড কালচার: অ্যান এনসাইক্লোপিডিয়া অফ দ্য প্রফেট অফ গড (২য় খণ্ড। ), সি. ফিটজপ্যাট্রিক এবং এ. ওয়াকার দ্বারা সম্পাদিত, সান্তা বারবারা, এবিসি-ক্লিয়ো, ২০১৪, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৮২-৫৮৫ আইএসবিএন ১৬১০৬৯১৭৭৬ ও আইএসবিএন ১৬১০৬৯১৭৭৬