দেবী (উপন্যাস)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দেবী
প্রথম সংস্করণের প্রচ্ছদ
লেখকহুমায়ূন আহমেদ
দেশবাংলাদেশ
ভাষাবাংলা
ধারাবাহিকমিসির আলি
বিষয়শ্রুতি বিভ্রম, এক্সট্রা সেন্সরি পারসেপশন
ধরনরহস্য
পটভূমিঢাকা
প্রকাশিতজুন ১৯৮৫
প্রকাশকঅবসর প্রকাশনা
মিডিয়া ধরনশক্ত মলাট
পৃষ্ঠাসংখ্যা৯৪
পরবর্তী বইনিশিথিনী 

দেবী বাংলাদেশী কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ রচিত একটি রহস্য উপন্যাস। এটি ১৯৮৫ সালের জুন মাসে প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাসের মধ্য দিয়ে মিসির আলি চরিত্রের পরিচয় ঘটে।[১] মিসির আলি যুক্তি দিয়ে বিভিন্ন রহস্যের স্বরূপ উদ্‌ঘাটন করে থাকেন। এই উপন্যাসে মিসির আলি রানু নামে এক শ্রুতি ভ্রমগ্রস্থ ও এক্সট্রা সেন্সরি পারসেপশন সমৃদ্ধ তরুণীর রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করেন।

প্রকাশনার ইতিহাস[সম্পাদনা]

যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটার ফার্গো শহরে অবস্থানকালে একদিন তার স্ত্রী গুলকেতিন আহমেদের সাথে গাড়িতে ভ্রমণকালে হুমায়ূন আহমেদ প্রথমবার মিসির আলি চরিত্রটির ধারণা পান। এই চরিত্রের ধারণা পাওয়ার অনেকদিন পর তিনি দেবী উপন্যাস রচনার কাজে হাত দেন।[২] বইটি ১৯৮৫ সালের জুন মাসে অবসর প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হয়।

কাহিনী সংক্ষেপ[সম্পাদনা]

মধ্যরাতে রানু অস্বাভাবিক কিছুর উপস্থিতি টের পায় এবং তার স্বামী আনিসকে ডেকে তোলে। আনিস যুক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যা দিয়ে রানুকে শান্ত করার চেষ্টা করে। বিষয়টাতে আনিস ঘাবড়ায় না।কারণ রানুর এমন আচরণ সে আগেও দেখেছে। রানু অনেক জিনিসই আগে থেকে বলতে পারে।অনেক অজানা জিনিস,যা তার জানার কথা না,তাও সে বলতে পারে। আনিসের মাঝে মাঝে মনে হয় রানু অসুস্থ।কিন্তু তার মন এতে সায় দেয় না। সে সবকিছুরই ব্যাখ্যা সরল মনে করার চেষ্টা করে।রানুর প্রতিবেশী নীলুও রানুর রহস্যময়তা টের পায়।সে রানুর প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। তার আগ্রহের কারণ সে মনোবিজ্ঞানের ছাত্রী।শিক্ষক মিসির আলির সাথে রানু এ ব্যাপারে কথাও বলে।আনিসও মিসির আলিকে সব খুলে বললে মিসির আলি রানুকে নিয়ে ভাবতে শুরু করে।রানুর অস্বাভাবিকতা ও অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার রহস্য উদঘাটনে মিসির আলি রানুর গ্রামে যায়। রানুর ভাষ্যমতে সে যখন ছোট ছিল,তখন একটা অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হয় সে।নদীতে গোসলের সময় কেউ তার পা টেনে ধরে। পরবর্তীতে দেখা যায়,তার পা জড়িয়ে রেখেছে একটা লাশ। তারপর থেকেই রানু এমন।কিন্তু গ্রামের অনেকেই এ ঘটনার কথা মনে করতে পারে না। সবাই জানায় গ্রামের একজন নিজ লালসার চরিতার্থে ভুলিয়েভালিয়ে একদিন রানুকে বিষ্ণু মন্দিরে নিয়ে যায়। কিন্তু লোকটি ওখান থেকে কিছুপর ভয় পেয়ে পালিয়ে আসে।এরপর থেকে বিষ্ণু মন্দিরের সাদা মূর্তিটার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।এদিকে নীলু এক ছেলের সাথে রেস্টুরেন্টে দেখা করতে যায়।ছেলেটি প্রথমে ভালো ব্যবহার করলেও পরে নীলুকে জোর করে তার গাড়িতে তুলে নিয়ে এক নির্জন স্থানে নিয়ে যায়।রানু বুঝতে পারে ঘটনাটি।রানু এসময় অসুস্থ হয়ে পড়ে।জ্বরের ঘোরে কার সাথে যেন কথা বলতে শুরু করে।একসময় রানু মারা যায়।ঠিক সে সময় নীলুরও খবর পাওয়া যায়।নীলুকে জিজ্ঞাসা করলে নীলু বলে,কোনো এক অদৃশ্য শক্তি তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া ছেলেটাকে মেরে ফেলেছে।মিসির আলি ঘটনাটির ব্যাখা দেয়,উত্তেজিত মনের স্বাভাবিক কল্পনা বলে। তবে এরপর থেকে মিসির আলি নীলুর মধ্যে এক অন্যরকম পরিবর্তন দেখতে পায়। তার কাছে মনে হয়,সেদিনের ঘটনার পর থেকে নীলুর চেহারা আর কথা বলার ভঙ্গি যেন একদম রানুর মতো হয়ে গেছে,যা সুপ্তভাবে ইঙ্গিত করে রানুর সাথে থাকা দেবী সত্তাটি এখন নীলুর সাথে রয়ে গেছে।

চরিত্রাবলি[সম্পাদনা]

  • মিসির আলি - ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগে ক্লিনিক্যাল সাইকিয়াট্রির খন্ডকালিন শিক্ষক।
  • রানু আহমেদ
  • নীলু
  • আনিস আহমেদ - রানুর স্বামী, দি জেনিথ ইন্টারন্যাশনালের ডিউটি অফিসার।
  • আহমেদ সাবেত
  • বিলু - নীলুর ছোট বোন
  • অনুফা - রানুর চাচাতো বোন
  • কমলেন্দু - আনিসের সহকর্মী
  • জিতু মিয়া - রানুর বাসার কাজের ছেলে

রচনাশৈলী[সম্পাদনা]

উপন্যাসের শুরুতেই হুমায়ূন আহমেদ প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে কিছুটা ভিন্নার্থজ্ঞাপক বাক্য দিয়ে শুরু করেন। প্রচলিত নিদ্রাহীনতার ধারণাকে বাদ দিয়ে তিনি উপন্যাস শুরু করেন এভাবে, "মাঝরাতের দিকে রানুর ঘুম ভেঙে গেল।" মিসির আলিকে যুক্তিবাদী হিসেবে দেখানোর পরও তাকে "ভদ্রলোকের নিজেরই মনে হয় মাথার ঠিক নেই" বলে এই চরিত্রের মধ্যে দ্বৈততার সৃষ্টি করেছেন।[১]

জনসংস্কৃতিতে দেবী[সম্পাদনা]

"ইএসপিঃ একটি রহস্য গল্প" বিতর্ক[সম্পাদনা]

২০১৬ সালে হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসটির গল্প থেকে চরিত্রের নাম ও ধর্ম ছাড়া বাকি গল্প হুবহু অনুকরণ করে হুমায়ূন আহমেদের নাম উল্লেখ না করে তাকে কৃতিত্ব না দিয়ে "ইএসপিঃ একটি রহস্য গল্প" চলচ্চিত্র নির্মাণ করা করা হয়, এবং কাহিনীকার হিসেবে শিবাশীষ রায়ের নাম উল্লেখ করা হয়, যা ২০১৬ এর আগস্টে জি বাংলা সিনেমায় দেখানোর পর এ নিয়ে বাংলাদেশী গণমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয়।[৬] হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন অনুমতি না নিয়ে ও কৃতিত্ব না দিয়ে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করার প্রতিবাদ জানান এবং এর জন্য ক্ষতিপূরণ চান।[৭] চলচ্চিত্রটির পরিচালক শেখর দাস আশ্বাস দেন যে, এ বিষয়টি তার জানা ছিল না, এবং তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন, এবং নিশ্চিত হলে ক্ষমা চাইবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।[৮]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. সালিম, মো. আদনান আরিফ (২৪ জুলাই ২০১৫)। "মিস্টিক মিসির আলি এবং হতচ্ছাড়া হিমু"বণিক বার্তা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ অক্টোবর ২০১৮ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. "হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্ট চরিত্ররা"দৈনিক ইত্তেফাক। ৯ নভেম্বর ২০১৫। ১৮ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ অক্টোবর ২০১৮ 
  3. "হ‌ুমায়ূন আহমেদ স্মরণে আজ মঞ্চে 'দেবী'"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-১৩ 
  4. "অনম বিশ্বাস পরিচালিত 'দেবী' আসছে অক্টোবরে"দৈনিক জনকন্ঠ। ২৯ আগস্ট ২০১৮। ৩০ আগস্ট ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ অক্টোবর ২০১৮ 
  5. মানজুর, মাহমুদ (১৫ মার্চ ২০১৭)। "হ‌ুমায়ূনের 'দেবী' চলচ্চিত্রে চঞ্চল-জয়া"বাংলা ট্রিবিউন। ৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ অক্টোবর ২০১৮ 
  6. "টালিগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের 'দেবী' চুরি | কালের কণ্ঠ"Kalerkantho। ২৯ আগস্ট ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০২০ 
  7. "বাংলাদেশের 'দেবী' ভারতে চুরি! | banglatribune.com"Bangla Tribune। ২৮ আগস্ট ২০১৬। ২১ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০২০ 
  8. "'দেবী'র নকল: ক্ষমা চাইবেন শেখর, ক্ষতিপূরণ চান শাওন | banglatribune.com"Bangla Tribune। ৩০ আগস্ট ২০১৬। ১২ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০২০ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]