কার্টলি অ্যামব্রোস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
স্যার কার্টলি অ্যামব্রোস
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামকার্টলি এলকন লিনওয়াল অ্যামব্রোস
জন্ম (1963-09-21) ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৬৩ (বয়স ৬০)
সুইটেজ, অ্যান্টিগুয়া ও বার্বুডা
উচ্চতা৬ ফুট ৭ ইঞ্চি (২.০১ মিটার)
ব্যাটিংয়ের ধরনবামহাতি ব্যাটসম্যান
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট
ভূমিকাবোলার
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ১৯২)
২ এপ্রিল ১৯৮৮ বনাম পাকিস্তান
শেষ টেস্ট৩১ আগস্ট ২০০০ বনাম ইংল্যান্ড
ওডিআই অভিষেক
(ক্যাপ ৫৩)
১২ মার্চ ১৯৮৮ বনাম পাকিস্তান
শেষ ওডিআই২৩ এপ্রিল ২০০০ বনাম পাকিস্তান
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৮৫-২০০০লিওয়ার্ড আইল্যান্ডস
১৯৯৮-১৯৯৯অ্যান্টিগুয়া ও বারবুদা
১৯৮৯-১৯৯৬নর্দাম্পটনশায়ার
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট ওডিআই এফসি এলএ
ম্যাচ সংখ্যা ৯৮ ১৭৬ ২৩৯ ৩২৯
রানের সংখ্যা ১৪৩৯ ৬৩৯ ৩৪৪৮ ১২৮২
ব্যাটিং গড় ১২.৪০ ১০.৬৫ ১৩.৯৫ ১১.৯৮
১০০/৫০ ০/১ ০/০ ০/৪ ০/০
সর্বোচ্চ রান ৫৩ ৩১* ৭৮ ৪৮
বল করেছে ২২১০৩ ৯৩৫৩ ৪৮৭৯৮ ১৭১৪৩
উইকেট ৪০৫ ২২৫ ৯৪১ ৪০১
বোলিং গড় ২০.৯৯ ২৪.১২ ২০.২৪ ২৩.৮৩
ইনিংসে ৫ উইকেট ২২ ৫০
ম্যাচে ১০ উইকেট - -
সেরা বোলিং ৮/৪৫ ৫/১৭ ৮/৪৫ ৫/১৭
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১৮/০ ৪৫/০ ৮৮/০ ৮২/০
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

স্যার কার্টলি এলকন লিনওয়াল অ্যামব্রোস (ইংরেজি: Curtly Ambrose; জন্ম: ২১ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৩) এন্টিগুয়ায় জন্মগ্রহণকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক ও বিখ্যাত ক্রিকেটারওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের পক্ষে তিনি টেস্টএকদিনের আন্তর্জাতিকে অংশ নিয়েছেন।

৬ ফুট ৭ ইঞ্চির আদর্শ উচ্চতার অধিকারী কার্টলি অ্যামব্রোস অপ্রত্যাশিতভাবে বলকে বাউন্স প্রদানে সক্ষম ছিলেন। বলের পেস ও নিখুঁত লক্ষ্যমাত্রায় বল ডেলিভারি দেয়ায় ব্যাটসম্যানদের পক্ষে তার বলের মোকাবেলা করা বেশ দুরূহ হয়ে পড়তো। ১৯৯০-এর দশকে সহ-খেলোয়াড় কোর্টনি ওয়ালশের সাথে বোলিং উদ্বোধনে নেতৃত্ব দিয়ে বেশ কয়েকবছর দূর্দান্ত বোলিং নৈপুণ্য প্রদর্শন করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে স্মরণীয় হয়ে আছেন।

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

অ্যামব্রোস অ্যান্টিগুয়ার সুইটস এলাকায় ২১ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৩ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন।[১] তারা সাত ভাই-বোন ছিলেন। বাবা গ্রামের এক কাঠমিস্ত্রী ছিলেন।[২] পরিবারের কেউই ক্রিকেট খেলতেন না।[২] কিন্তু তার মা ক্রিকেট অনুরাগী ছিলেন।[৩] কিশোর বয়সে ব্যাটসম্যান হিসেবে অ্যামব্রোস ক্রিকেট খেলতেন। বিদ্যালয় জীবনে গণিত ও ফরাসি ভাষায় দক্ষ ছিলেন তিনি এবং ১৭ বছর বয়সে শিক্ষানবীস কাঠমিস্ত্রীর প্রশিক্ষণ নেন।[২][৩] একসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।[৪] ঐসময় তার প্রিয় খেলা ছিল বাস্কেটবল। মাঝে-মধ্যে ক্রিকেট খেলায় আম্পায়ারিত্ব করতেন। কিশোর বয়সের শেষ দিকে ৬ ফুট ৭ ইঞ্চি (২.০১ মি) নিয়ে বেশ বেড়ে উঠেন। এ সময়েই তার মা তাকে ক্রিকেটে সম্পৃক্ত হতে উদ্দীপনা যোগাতেন।[৩] বিশ বছর বয়সে কয়েকটি ক্লাব ম্যাচের সফটবল ক্রিকেট খেলায় ফাস্ট বোলার সফলতা লাভ করলে সেন্ট জন’স ক্রিকেট দলের কোচের মনোযোগ আকর্ষণ করেন।[২] লিওয়ার্ড আইল্যান্ডস প্রতিযোগিতায় বার্বুডার হয়ে সেন্ট কিটসের বিপক্ষে ৬৭ রানের বিনিময়ে ৭ উইকেট লাভ করেন।[৫] ১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে লিওয়ার্ড আইল্যান্ডস দলে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন অ্যামব্রোস। অভিষেক খেলায় তিনি চার উইকেট পেয়েছিলেন।[৪] কিন্তু পরের বছর এ ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারেননি।[২] ১৯৮৬ সালে স্থানীয় বৃত্তি নিয়ে ইংল্যান্ডের লিভারপুল লিগে খেলতে যান।[২][৪] পরের বছর সেন্ট্রাল ল্যাঙ্কাশায়ার ক্রিকেট লিগে হেউড ক্রিকেট ক্লাবে খেলার জন্য পুনরায় খেলতে যান। ঐ মৌসুমে ১১৫ উইকেট পান ও তার বোলিং কৌশল আরও উন্নতি লাভ করে।[২]

খেলোয়াড়ী জীবন[সম্পাদনা]

১৯৮৮ সালে পাকিস্তান ক্রিকেট দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে আসলে অ্যামব্রোস একদিনের আন্তর্জাতিকের সিরিজে অংশ নেন। তখন সবেমাত্র জোয়েল গার্নার ক্রিকেট জীবন থেকে অবসর নিয়েছিলেন।[৫] ১২ মার্চ, ১৯৮৮ তারিখে জ্যামাইকার কিংস্টনের সাবিনা পার্কে তার অভিষেক ঘটে। ৩য় ও ৯ম বলে দুই উইকেট লাভসহ ১০ ওভারে ৪ উইকেট পান তিনি। দ্বিতীয় খেলায় ৩৫ রানে ৪ উইকেট ও তৃতীয় খেলায় দুই উইকেট পান। ঐ তিন খেলায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল জয়লাভ করেছিল। চতুর্থ ও পঞ্চম খেলায় অ্যামব্রোস খেলেননি।[৬] টেস্ট সিরিজে তিনি তেমন সফলতা পাননি। প্রথম টেস্টে ১২১ রানে ২ উইকেট পান। খেলায় ১০ বছরের মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পরাজিত হয়েছিল।[৭] উইজডেন তার টেস্ট অভিষেককে হতাশাব্যঞ্জক আখ্যায়িত করে কিন্তু পরবর্তী খেলাগুলোয় তিনি ঠিকই ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পেরেছিলেন।[৮] টেস্ট সিরিজে উইকেট প্রতি ৫০-এর অধিক রান দিয়ে ৭ উইকেট পান।[৫]

ঐ বছরের পর দলের সাথে ইংল্যান্ড সফর করেন। প্রস্তুতিমূলক খেলায় অংশ নিয়ে তিনি প্রথম দুইটি একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশ নেন ও সর্বসাকুল্যে তিন উইকেট পান। ফলে তৃতীয় খেলা থেকে তাকে বাদ দেয়া হয়।[৯] পাঁচ টেস্ট সিরিজের সবগুলোতেই তিনি অংশ নেন। ২০.২২ রান গড়ে ২২ উইকেট পান। চতুর্থ টেস্টে ৫৮ রানে ৪ উইকেট ও খেলায় সর্বমোট ৭ উইকেট পান। এ খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পেয়েছিলেন।[১০] এ প্রেক্ষাপটে উইজডেনের ধারাভাষ্যকার টনি কোজিয়ার অ্যামব্রোসকে জোয়েল গার্নারের পূর্ব-নির্ধারিত বিকল্পরূপে আখ্যায়িত করেন।[১১]

সম্মাননা[সম্পাদনা]

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গন থেকে অবসর গ্রহণের পর অ্যামব্রোস সঙ্গীত জীবনে মনোনিবেশ করেন ও অনেকগুলো ব্যান্ড দলের সাথে সম্পৃক্ত হন।[১][১২] বিগ ব্যাড ড্রেড ও বল্ডহেড ব্যান্ড দলে গিটার বাজাতেন। এ ব্যান্ড দলেই তার সাথের খেলোয়াড় রিচি রিচার্ডসন সদস্য ছিলেন।[১৩] বিখ্যাত ফাস্ট বোলার ও স্বল্পভাষী অ্যামব্রোস তার সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ৯৮টি টেস্টে অংশ নিয়ে ২০.৯৯ রান গড়ে ৪০৫ উইকেট লাভ করেন। একসময় তিনি আইসিসি প্লেয়ার র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থানে আসীন হন ও বিশ্বের সেরা বোলারের গৌরব অর্জন করেন। ১৯৯২ সালে উইজডেন কর্তৃপক্ষ তাকে বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত করে।

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ তারিখে রিচি রিচার্ডসনঅ্যান্ডি রবার্টসের সাথে তিনিও অ্যান্টিগুয়ার সরকার থেকে নাইট পদবীতে ভূষিত হন।[১৪] ২০১০ সালে ইএসপিএনক্রিকইনফো’র একদল ক্রিকেট লেখক ও বিশেষজ্ঞ সদস্যগণ তাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সর্বকালের সেরা একাদশের একজনরূপে নির্বাচিত করে।[১৫] পরের বছর ২০১১ সালে তাকে আইসিসি’র হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[১৬]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Curtly Ambrose (ESPNCricinfo profile)"। ESPNCricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২৯ আগস্ট ২০১২ 
  2. Streeton, Richard (২৩ মার্চ ১৯৮৮)। "Ambrose follows famous footsteps"। The Times। London। পৃষ্ঠা 46। 
  3. Sundaresan, Bharat (১৩ জুন ২০১১)। "Curtly Ambrose, a reluctant cricketer who became a legend"The Indian Express। সংগ্রহের তারিখ ৩০ আগস্ট ২০১২ 
  4. Wright, Graeme, সম্পাদক (১৯৯২)। Curtly Ambrose (Cricketer of the Year)Wisden Cricketers' Almanack। London: John Wisden & Co। পৃষ্ঠা 65–66। আইএসবিএন 978-0-947766-19-1 
  5. Lawrence and Goble, p. 12.
  6. Ahmed (1989), pp. 981–83, 985–86.
  7. Ahmed (1989), pp. 986–87.
  8. Ahmed (1989), p. 978.
  9. Cozier (1989), pp. 288–92.
  10. Cozier (1989), pp. 284, 305–07.
  11. Cozier (1989), p. 281.
  12. Spooner, Philip (৩১ আগস্ট ২০০৬)। "'I was a fast bowler, I'm now a musician' – Ambrose"। Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০১০ 
  13. Vaidyanathan, Siddhartha (৪ জুন ২০০৬)। "Reggae with Big Bad Dread and the Baldhead"। Cricinfo। ১৫ জুন ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ অক্টোবর ২০১২ 
  14. "Richie Richardson, Curtly Ambrose & Andy Roberts knighted"। BBC। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ 
  15. Becca, Tony। "The Invincibles"। ESPNCricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৫ অক্টোবর ২০১২ 
  16. "Ambrose makes it into ICC Hall of Fame"। ESPNCricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৫ অক্টোবর ২০১২ 

গ্রন্থপঞ্জী[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]