আওরঙ্গজেব মসজিদ
এই নিবন্ধটির একটা বড়সড় অংশ কিংবা সম্পূর্ণ অংশই একটিমাত্র সূত্রের উপর নির্ভরশীল। (জানুয়ারি ২০২৩) |
আওরঙ্গজেব মসজিদ | |
---|---|
ধরন | প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন |
অবস্থান | পাকুন্দিয়া |
অঞ্চল | কিশোরগঞ্জ জেলা |
মালিক | বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর শালংকা গ্রামের মিঞাবাড়ি পরিবার (উত্তরসূরি) |
আওরঙ্গজেব মসজিদ কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ ও বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]ঐতিহাসিক আওরঙ্গজেব মসজিদটি কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার নারান্দী ইউনিয়নে অবস্থিত। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে এটি নির্মণ করা হয়েছে বলে এর নাম তৎকালীন সম্রাটের নামানুসারেই রাখা হয়েছে।
মুঘল সাম্রাজ্যের শেষ সম্রাট আওরঙ্গজেব (বাদশা আলমগীর) এর রাজদরবারে জমিদার শেখ মুহাম্মদ হানিফ নামে অত্যন্ত জ্ঞানী একজন মুহাদ্দিস ছিলেন। তিনি সম্রাট আওরঙ্গজেবের দরবারে হাদিস বর্ণনা করতেন ও ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করতেন। দীর্ঘকাল দক্ষতার সাথে কাজ করার ফলে নবাব তার জ্ঞানের প্রতি অত্যন্ত খুশি হয়ে শেখ মুহাম্মদ হানিফকে ৬২ মৌজার জাইগির দান করেন। ধারণা করা হয়, তিনি ১৬৬৫ সালে দিল্লী হতে পূর্বে বঙ্গের এ ময়মনসিংহের এ অঞ্চলে এসে উক্ত জাইগির এর জমিদারী প্রতিষ্ঠা করেন। এর কিছু সময় পর ১৬৬৯ সালে জমিদার শেখ মুহাম্মদ হানিফের হাত ধরেই এ মসজিদের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন হয় বলে জানা যায়। জমিদার শেখ মুহাম্মদ হানিফ দিল্লী থেকে তাঁর পরিবারসহ এখানে অর্থাৎ শালংকা গ্রামে এসে প্রসাদ নির্মাণ করেন। যা বর্তমানে কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার শালংকা নামে গ্রামে অবস্থিত। ৬২ মৌজার জমিদারীতে প্রাসাদ, ঘোড়শাল, গোলাকৃতি অন্দরমহল পুকুর, দরবার ঘর, বিশাল প্রাচীর সহ ফটক উলেকযোগ্য ছিল, যা কালের আবর্তে বিলিন হয়ে যায়। এছাড়া বিচার-সালিশ, খাজনা আদায়, নিজস্ব বাহিনী সহ ব্যাপক জৌলুস ছিল।
১৯০৯ সালে তখনকার ব্রিটিশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এই মসজিদকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।[১]
অবকাঠামো
[সম্পাদনা]মুঘল স্থাপত্যকলায় তৈরি বর্গাকার আকৃতির মসজিদটির প্রধান ফটকে ছিল কালোপাথরে লেখা আরবী ফার্সি ভাষার কিছু বাণী। এটি এক গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ। চতুর্ভূজাকৃতির এ মসজিদের চার কোণায় বৃহদাকৃতির অষ্টভুজ বিশিষ্ট চারটি পিলারের মাধ্যমে একখন্ড উঁচু জমির উপর মসজিদটি নির্মিত। গম্বুজের চারপাশে রয়েছে চমৎকার কারুকার্য এবং পদ্মপাপড়ির ন্যায় গঠনশৈলী। যা মুঘল স্থাপত্যকলার সাদৃশ্য বহন করে। আবার মসজিদটির গম্বুজটির উপরের অংশ উল্টানো পদ্মফুলের ন্যায়। যা প্রমাণ করে এটি মুঘল স্থাপত্যকলার আদলে তৈরি। এছাড়াও পিলারের উপরে চারকোণায় চারটি কলস ছিল। মসজিদটির দেয়ালে লতাপতা ও ফুলের ন্যায় চমৎকার কারুকার্যে তার নৈপুণ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মসজিদের পূর্ব পাশের দেয়ালে তিনটি প্রবেশপথ রয়েছে যার মধ্যে মাঝের অর্থাৎ কেন্দ্রীয় প্রবেশপথটি অপেক্ষাকৃত বড় আকৃতির। প্রবেশদ্বারের উপরে শ্বেতপাথরে বিষ্ময়কর দোয়া খোদাই করে লিখা রয়েছে। এছাড়াও উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে একটি করে মোট দুটি প্রবেশপথ রয়েছে। আওরঙ্গজেব মসজিদটি এক গম্বুজ বিশিষ্ট।
মসজিদটির পাশে রয়েছে জমিদার শেখ মুহাম্মদ হানিফের কবর। তবে তার চিহ্ন কলের আবর্তে বিলিন হয়ে যায়। এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত জমিদার বাড়িটি কালের আবর্তে পরপর দু বার ভূমিকম্পে ও পরবর্তিতে বিলিন হয়ে যায়। তবে এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটি ফাটল সহ নামাজের অনুপযোগী হলেও এখনো জৌলুস ধরে রেখে দাঁড়িয়ে আছে।
আর জমিদার শেখ মুহাম্মদ হানিফের উত্তরসূরীরা এখনো এ গ্রামে বসবাসরত আছেন।
চিত্রশালা
[সম্পাদনা]-
সম্মুখ অংশ
-
দরজা
-
ভেতরের অংশ
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "ইতিহাসের এক স্বাক্ষী কিশোরগঞ্জের আওরঙ্গজেব মসজিদ"। দি ঢাকা টাইমস্। ২৩ অক্টোবর ২০১৫। ২৩ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০১৬।