শান্তিদেব ঘোষ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
শান্তিদেব ঘোষ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (বামে) সঙ্গে যুবক শান্তিদেব ঘোষ (ডানে)
জন্ম(১৯১০-০৫-০৭)৭ মে ১৯১০
মৃত্যু১ ডিসেম্বর ১৯৯৯(1999-12-01) (বয়স ৮৯)
জাতীয়তাভারতীয়
পেশা
  • লেখক
  • সংগীতশিল্পী
  • নৃত্যশিল্পী
  • রবীন্দ্রসংগীতজ্ঞ

শান্তিদেব ঘোষ (৭ মে ১৯১০ – ১ ডিসেম্বর ১৯৯৯)[১] ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি লেখক, কণ্ঠশিল্পী, অভিনেতা, নৃত্যশিল্পী ও রবীন্দ্রসংগীত-বিশারদ। তিনি ছিলেন শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক। কৈশোরে তিনি রবীন্দ্রনাথের ঠাকুরের কাছে গান শিখতে শুরু করেন। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তিনি শ্রীলঙ্কা, জাভাবালিতে গিয়েও সংগীত ও নৃত্যশিক্ষা গ্রহণ করেন। রবীন্দ্রনাথের উৎসাহে তিনি কবির লেখা গীতিনাট্য-নৃত্যনাট্য ও নাটকে গান, নাচ ও অভিনয়ও করতে শুরু করেন। রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি কবিতায় তিনি ধ্রুবপদের পুনরুল্লেখ ছাড়াই এক বিশেষ সুরে গেয়ে শোনাতে শুরু করেন। এর মধ্যে "কৃষ্ণকলি" গানটিও রয়েছে। শান্তিনিকেতনে দীর্ঘজীবনে তিনি বহু ছাত্রছাত্রীকে গান শিখিয়েছেন। এঁদের অনেকেই পরে খ্যাতনামা সংগীতশিল্পী হন। তার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সুচিত্রা মিত্র ও প্রমিতা মল্লিকের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শান্তিদেব ঘোষ রবীন্দ্রসংগীতের এক খ্যাতনামা বিশারদও ছিলেন। ভারত সরকার ও একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানিত করেন। ভারত সরকার তাকে জাতীয় পণ্ডিতের মর্যাদা দিয়েছিল।[২] সাহিত্যিক, সাংবাদিক সাগরময় ঘোষ তার ভ্রাতা।

জীবনী[সম্পাদনা]

ব্রিটিশ ভারতের পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের চাঁদপুরের নিকট বাজাপ্তি গ্রামে (অধুনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চাঁদপুর জেলায়) ১৯১০ সালের ৭ মে (১৩১৭ বঙ্গাব্দের ২৪ বৈশাখ) শান্তিদেব ঘোষের জন্ম হয়।

শান্তিদেবের পিতা কালীমোহন ঘোষ শান্তিদেবের জন্মের আগে থেকেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ছিলেন এবং বিশ্বভারতীর গ্রাম পুনর্নির্মাণ শাখা স্থাপনে রবীন্দ্রনাথকে সহায়কের কাজ করতেন। শান্তিদেবের মায়ের নাম ছিল মনোরমা দেবী। প্রথমদিকে রবীন্দ্রনাথ কালীমোহনকে শিলাইদহে গ্রামোন্নয়নের কাজে নিযুক্ত করেছিলেন। পরে তিনি তাকে শান্তিনিকেতনে এনে সেখানেই গ্রাম সংস্কারের কাজে নিযুক্ত করেন। কালীমোহন তার ছয় মাসের শিশুপুত্র শান্তিময়কে রবীন্দ্রনাথের কাছে নিয়ে আসেন। রবীন্দ্রনাথ তার নাম পালটে "শান্তিদেব" রাখেন।

শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মবিদ্যালয়ে শান্তিদেবের পড়াশোনা শুরু হয়। এখানে রবীন্দ্রনাথ ও দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষকতায় সংগীত, নৃত্য ও অভিনয়ে তিনি বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করেন। পরে রবীন্দ্রনাথ ভারতের প্রতিবেশী ও নিকটবর্তী দেশগুলির সংগীত ও নৃত্যকলা শিক্ষার জন্য তাকে সঙ্গে নিয়ে শ্রীলঙ্কা, ব্রহ্মদেশ এবং অধুনা ইন্দোনেশিয়ার জাভাবালি ভ্রমণ করেন।

১৯৩০ সালে মাত্র কুড়ি বছর বয়সে শান্তিদেব শিক্ষক হিসেবে বিশ্বভারতীতে যোগ দেন। ১৯৩৬ সালে ইলা ঘোষের সঙ্গে তার বিবাহ হয়। পরে তিনি বিশ্বভারতীর সংগীত ভবনে রবীন্দ্রসংগীত ও নৃত্য বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হয়েছিলেন। ১৯৬৪-৬৮ ও ১৯৭১-৭৩ সময়পর্বে তিনি উক্ত প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের দায়িত্বও পালন করেন।

১৯৪৮ সালে শান্তিদেব আকাশবাণী কলকাতার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৬-৬০ সালে তিনি ভারতের সংগীত-নাটক অকাদেমির প্রকাশনা সমিতির সদস্য হন। তিনি প্রবাসী বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন ও আসাম সাহিত্য সম্মেলনের সংগীত বিভাগের সভাপতিও হয়েছিলেন। রবীন্দ্রসংগীত জগতে তিনি প্রবাদপ্রতিম শিল্পী হয়ে উঠেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কাসোভিয়েত রাশিয়া ভ্রমণ করে তিনি সেই সকল দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে নিজেকে পরিচিত করেন এবং সেই সকল দেশে রবীন্দ্রসংগীতের প্রচার করেন।

সম্মাননা ও পুরস্কার[সম্পাদনা]

  • ১৯৭৭: সংগীত-নাটক অকাদেমির ফেলোশিপ।
  • ১৯৮০: সংস্কৃতি জগতে অসামান্য অবদানের জন্য সুরেশচন্দ্র স্মৃতি আনন্দ পুরস্কার।
  • ১৯৮৪: পদ্মভূষণ সম্মান।
  • ১৯৮৪: বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সম্মান "দেশিকোত্তম"।
  • ১৯৯১: রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডি. লিট.

এছাড়া বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সাম্মানিক ডি. লিট. প্রদান করেছিল এবং কলকাতার রবীন্দ্রচর্চাকেন্দ্র থেকে তিনি "রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য" উপাধি পেয়েছিলেন।

প্রকাশিত গ্রন্থ[সম্পাদনা]

শান্তিদেব ঘোষের রচিত গ্রন্থগুলি হল:[৩]

  • রবীন্দ্রসঙ্গীত (১৯৪২)
  • জাভা ও বালির নৃত্যগীত (১৯৬৩)
  • রূপকার নন্দলাল (নন্দলাল বসুর জীবনী, ১৯৫৬)
  • ভারতীয় গ্রামীণ সংস্কৃতি (১৯৫৬)
  • রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শে সংগীত ও নৃত্য
  • গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ও আধুনিক ভারতীয় নৃত্য (১৯৮৬)
  • রবীন্দ্রসংগীত-বিচিত্রা
  • নৃত্যকলা ও রবীন্দ্রনাথ
  • জীবনের ধ্রুবতারা (আত্মজীবনী)

পাদটীকা[সম্পাদনা]

  1. The Tribune (December 2, 1999) Spotlight tribuneindia.com Retrieved 17/03/08.
  2. Times of India. (December 1, 2002) Stamp on Rabindra Sangeet maestro Santidev Ghosh released. indiatimes.com Retrieved 17/03/08.
  3. বঙ্গসাহিত্যাভিধান, তৃতীয় খণ্ড, হংসনারায়ণ ভট্টাচার্য, ফার্মা কেএলএম প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, ১৯৯২, পৃ. ১৮৮-৮৯

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]