শাফায়াত জামিল: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
BellayetBot (আলোচনা | অবদান)
Adding {{Refimprove}}
Hasive (আলোচনা | অবদান)
৪১ নং লাইন: ৪১ নং লাইন:
১৯৭১ সালের মার্চ মাসে জামিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে মেজর পদে উন্নীত হন। ২৭ মার্চ ১৯৭১ তারিখে, পূর্ব পাকিস্তান/বাংলাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যার খবর জানতে পেরে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনী অন্যান্য বাঙালী অফিসার এবং ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের (ডাকনাম বেবি টাইগার্স) সেনাদের সাথে সেনাবাহিনী ছেড়ে চলে আসেন। ১০ অক্টোবর হটাৎ সিলেট সেক্টরে বদলি হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি সেক্টর-১১ এর অধিনে বাংলাদেশ ফোর্সের (BDF) অফিসার হিসেবে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন।
১৯৭১ সালের মার্চ মাসে জামিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে মেজর পদে উন্নীত হন। ২৭ মার্চ ১৯৭১ তারিখে, পূর্ব পাকিস্তান/বাংলাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যার খবর জানতে পেরে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনী অন্যান্য বাঙালী অফিসার এবং ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের (ডাকনাম বেবি টাইগার্স) সেনাদের সাথে সেনাবাহিনী ছেড়ে চলে আসেন। ১০ অক্টোবর হটাৎ সিলেট সেক্টরে বদলি হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি সেক্টর-১১ এর অধিনে বাংলাদেশ ফোর্সের (BDF) অফিসার হিসেবে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন।


জুন মাসে তিনি সেক্টর ১১ এর অধিনে ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার হিসাবে নিয়োগ পান, এই সেক্টরের সেক্টর কামান্ডার ছিলেন মেজর [[জিয়াউর রহমান|জিয়াউর রহমান,]] পরবর্তীতে তিনি জেড ফোর্স ব্রিগেড গঠন করেছিলেন। ৩য় [[ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট]] ছোট এবং বড় আকারের গেরিলা অভিযানের অংশ নিয়েছিলো। এছাড়াও জিয়া জামিলকে তেলঢাকা এলাকা মুক্ত এবং নিরাপদ রাখার দায়িত্ব অর্পন করেছিলেন। জিয়ার নির্দেশে লেফট্যানেন্ট 'নুরুন নবী এবং আনোয়ার মেজর জামিলকে এই এলাকার প্রথমিক প্রশাসনিক কার্যকলাপে সহায়তা করেছিলেন। আগস্ট ২৭ তারিখে প্রথম ডাকঘর এবং দুটি সাব পোস্টঅফিসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জিয়ার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। ১১ অক্টোবর ১৯৭১ মেজর শাফাত জামিলের নেতৃত্বে ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সিলেটের ছাতকের যুদ্ধেঅংশ নেয়। যদিও ছাতক অপারেশন ব্যর্থ তবুও ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ৩৬৪জন পাকিস্তানি সৈন্যকে হত্যা করে।
জুন মাসে তিনি সেক্টর ১১ এর অধিনে ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার হিসাবে নিয়োগ পান, এই সেক্টরের সেক্টর কামান্ডার ছিলেন মেজর [[জিয়াউর রহমান|জিয়াউর রহমান,]] পরবর্তীতে তিনি জেড ফোর্স ব্রিগেড গঠন করেছিলেন। ৩য় [[ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট]] ছোট এবং বড় আকারের গেরিলা অভিযানের অংশ নিয়েছিলো। এছাড়াও জিয়া জামিলকে তেলঢাকা এলাকা মুক্ত এবং নিরাপদ রাখার দায়িত্ব অর্পন করেছিলেন। জিয়ার নির্দেশে লেফট্যানেন্ট 'নুরুন নবী এবং আনোয়ার মেজর জামিলকে এই এলাকার প্রথমিক প্রশাসনিক কার্যকলাপে সহায়তা করেছিলেন। আগস্ট ২৭ তারিখে প্রথম ডাকঘর এবং দুটি সাব পোস্টঅফিসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জিয়ার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। ১১ অক্টোবর ১৯৭১ মেজর শাফাত জামিলের নেতৃত্বে ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সিলেটের ছাতকের যুদ্ধেঅংশ নেয়। যদিও ছাতক অপারেশন ব্যর্থ তবুও ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ৩৬৪জন পাকিস্তানি সৈন্যকে হত্যা করে। <ref>{{cite book |title= বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ (দলিলপত্র: নবম খন্ড)|last= |first= |authorlink= |coauthors= |year=১৯৮৪ |publisher= তথ্য মন্ত্রনালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার |location= |isbn= |page= ১৭৭|pages= |accessdate= |url=}}</ref>


[[১৯৭১]] সালের [[নভেম্বর ২৬|২৬ নভেম্বর]] ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৫/৫ গোর্খা রেজিমেন্টের তিনটি কোম্পানি [[সিলেট জেলা|সিলেটের]] রাধানগরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থানে আক্রমণ করে। কিন্তু তাদের সেই আক্রমণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। পাকিস্তানিদের পাল্টা আক্রমণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়ে তারা রণে ভঙ্গ দিতে বাধ্য হয়। তাঁদের একজন কোম্পানি অধিনায়কসহ দেড় শতাধিক নিহত ও শতাধিক আহত হন। এরপর মিত্রবাহিনীর জেনারেল গিল নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর ৩ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক শাফায়াত জামিলের ওপর দায়িত্ব দিলেন সিলেটের রাধানগর এলাকার ছোটখেল মুক্ত করার। শাফায়াত জামিল সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি নিজেই ওই যুদ্ধে নেতৃত্ব দেবেন। প্রথাগত সামরিক যুদ্ধে এক কোম্পানি বা তার কম সেনা থাকলে ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক সাধারণত যুদ্ধের ময়দানে যান না। কয়েকজন তাঁকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু তিনি তাঁর সিদ্ধান্তে অটল থাকলেন। যোদ্ধা হিসেবে গোর্খাদের সুনাম পৃথিবীব্যাপী। ভারতীয় সেনাবাহিনীর গোর্খা রেজিমেন্ট যা পারেনি, তা বাঙালি মুক্তিযোদ্ধারা [[১৯৭১]] সালে সম্ভব করেন। অকৃত্রিম দেশপ্রেম, মমত্ব ও দেশকে শত্রুমুক্ত করার দৃঢ় সংকল্প এবং অন্যদিকে শাফায়াত জামিলের অদম্য ও অটল মনোভাব সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসী যোদ্ধায় রূপান্তর করেছিল। [[নভেম্বর ২৭|২৭ নভেম্বর]] গভীর রাতে শুরু হলো সেই ঐতিহাসিক অভিযান। ধানখেতের মধ্য দিয়ে প্রায় ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা এগিয়ে চললেন পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থানের দিকে। সবার সামনে শাফায়াত জামিল ও কোম্পানি অধিনায়ক এস আই নূরুন্নবী খান। সমরে জয় অথবা মৃত্যু, সম্মুখযুদ্ধে যোদ্ধাদের যেকোনো একটি বেছে নিতে হয়। শাফায়াত জামিলের প্রত্যয় তা-ই। পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থানের কাছাকাছি গিয়ে তিনি অগ্রসর হলেন বাঁ দিক থেকে এবং এস আই নূরুন্নবী ডান দিক দিয়ে। ক্ষিপ্রতার সঙ্গে গুলি করতে করতে তাঁরা পাকিস্তানি সেনাদের বিভিন্ন বাংকারের দিকে এগিয়ে চললেন। কয়েকটি বাংকারে হাতাহাতি যুদ্ধ হলো। তাঁরা তখন অজেয়, অপ্রতিরোধ্য। প্রচণ্ড আক্রমণের তীব্রতায় কিছুক্ষণের মধ্যেই পাকিস্তানি সেনারা সেখান থেকে পালিয়ে গেল। মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যেই ছোটখেল মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে এল। নিহত হলো অসংখ্য পাকিস্তানি সেনা। কয়েকজন তাঁদের হাতে ধরা পড়ল। তখনো আশপাশে বিক্ষিপ্ত গোলাগুলি চলছে। চারদিকে মৃত পাকিস্তানি সেনাদের লাশ, অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। ভোরের আলোয় শাফায়াত জামিল তদারক করছেন অবস্থান সুদৃঢ় করার কাজ। এমন সময় তাঁর ডান কোমরে গুলি লাগে। ছিটকে পড়েন তিনি, গুরুতর আহত হন। সহযোদ্ধারা তাঁকে ফিল্ড হাসপাতালে পাঠান। পরে যুদ্ধ জখমের কারণে জামিল পরবর্তীতে ভারতের শিলং সামরিক হাসপাতাল, শিলং, থেকে চিকিৎসা গ্রহন করেন।
[[১৯৭১]] সালের [[নভেম্বর ২৬|২৬ নভেম্বর]] ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৫/৫ গোর্খা রেজিমেন্টের তিনটি কোম্পানি [[সিলেট জেলা|সিলেটের]] রাধানগরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থানে আক্রমণ করে। কিন্তু তাদের সেই আক্রমণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। পাকিস্তানিদের পাল্টা আক্রমণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়ে তারা রণে ভঙ্গ দিতে বাধ্য হয়। তাঁদের একজন কোম্পানি অধিনায়কসহ দেড় শতাধিক নিহত ও শতাধিক আহত হন। এরপর মিত্রবাহিনীর জেনারেল গিল নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর ৩ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক শাফায়াত জামিলের ওপর দায়িত্ব দিলেন সিলেটের রাধানগর এলাকার ছোটখেল মুক্ত করার। শাফায়াত জামিল সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি নিজেই ওই যুদ্ধে নেতৃত্ব দেবেন। প্রথাগত সামরিক যুদ্ধে এক কোম্পানি বা তার কম সেনা থাকলে ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক সাধারণত যুদ্ধের ময়দানে যান না। কয়েকজন তাঁকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু তিনি তাঁর সিদ্ধান্তে অটল থাকলেন। যোদ্ধা হিসেবে গোর্খাদের সুনাম পৃথিবীব্যাপী। ভারতীয় সেনাবাহিনীর গোর্খা রেজিমেন্ট যা পারেনি, তা বাঙালি মুক্তিযোদ্ধারা [[১৯৭১]] সালে সম্ভব করেন। অকৃত্রিম দেশপ্রেম, মমত্ব ও দেশকে শত্রুমুক্ত করার দৃঢ় সংকল্প এবং অন্যদিকে শাফায়াত জামিলের অদম্য ও অটল মনোভাব সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসী যোদ্ধায় রূপান্তর করেছিল। [[নভেম্বর ২৭|২৭ নভেম্বর]] গভীর রাতে শুরু হলো সেই ঐতিহাসিক অভিযান। ধানখেতের মধ্য দিয়ে প্রায় ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা এগিয়ে চললেন পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থানের দিকে। সবার সামনে শাফায়াত জামিল ও কোম্পানি অধিনায়ক এস আই নূরুন্নবী খান। সমরে জয় অথবা মৃত্যু, সম্মুখযুদ্ধে যোদ্ধাদের যেকোনো একটি বেছে নিতে হয়। শাফায়াত জামিলের প্রত্যয় তা-ই। পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থানের কাছাকাছি গিয়ে তিনি অগ্রসর হলেন বাঁ দিক থেকে এবং এস আই নূরুন্নবী ডান দিক দিয়ে। ক্ষিপ্রতার সঙ্গে গুলি করতে করতে তাঁরা পাকিস্তানি সেনাদের বিভিন্ন বাংকারের দিকে এগিয়ে চললেন। কয়েকটি বাংকারে হাতাহাতি যুদ্ধ হলো। তাঁরা তখন অজেয়, অপ্রতিরোধ্য। প্রচণ্ড আক্রমণের তীব্রতায় কিছুক্ষণের মধ্যেই পাকিস্তানি সেনারা সেখান থেকে পালিয়ে গেল। মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যেই ছোটখেল মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে এল। নিহত হলো অসংখ্য পাকিস্তানি সেনা। কয়েকজন তাঁদের হাতে ধরা পড়ল। তখনো আশপাশে বিক্ষিপ্ত গোলাগুলি চলছে। চারদিকে মৃত পাকিস্তানি সেনাদের লাশ, অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। ভোরের আলোয় শাফায়াত জামিল তদারক করছেন অবস্থান সুদৃঢ় করার কাজ। এমন সময় তাঁর ডান কোমরে গুলি লাগে। ছিটকে পড়েন তিনি, গুরুতর আহত হন। সহযোদ্ধারা তাঁকে ফিল্ড হাসপাতালে পাঠান। পরে যুদ্ধ জখমের কারণে জামিল পরবর্তীতে ভারতের শিলং সামরিক হাসপাতাল, শিলং, থেকে চিকিৎসা গ্রহন করেন।

==যুদ্ধের পরে==
==যুদ্ধের পরে==
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে, জামিল লে কর্নেল এবং উন্নীত হন বীর বিক্রম (তৃতীয় সর্বোচ্চ বাংলাদেশ gallantry পুরস্কার) পদক লাভ করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি কর্নেল পদে উন্নীত হন এবং ঢাকা সেনানিবাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ঢাকা সেনানিবাস ৪৬ পদাতিক ব্রিগেডের এর ব্রিগেড কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। নভেম্বর ৩, ১৯৭৫ তারিখে [[খন্দকার মোশতাক আহমেদ|খন্দকার মোস্তাক আহমদের]] শাষনের বিরুদ্ধে একটি সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করার জন্য তিনি ব্রিগেডিয়ার [[খালেদ মোশাররফ|খালেদ মোশাররফকে]] সহায়তা করেছিলেন এবং তারা বঙ্গভবনের দিকে ধাবিত হন। ৭ নভেম্বর এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, খালেদ মুশাররফকে হত্যা করা হয়েছিলে এবং কর্নেল জামিল গ্রেফতার হয়েছিলেন। ৬ নভেম্বর পরিবর্তন এসেছিল মোস্তাক রাষ্ট্র দায়িত্ব থেকে সরে দাড়ান এবং বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম তার স্থলাভিসিক্ত হন।<ref>http://www.thedailystar.net/magazine/2007/08/03/perspective.htm</ref> তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর থেকে অবসর গ্রহণ করেন। পরে তিনি ব্যবসাকে পেশা হিসাবে গ্রহন করেন। তিনি ঢাকা, বাংলাদেশে বসবাস করতেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে, জামিল লে কর্নেল এবং উন্নীত হন বীর বিক্রম (তৃতীয় সর্বোচ্চ বাংলাদেশ gallantry পুরস্কার) পদক লাভ করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি কর্নেল পদে উন্নীত হন এবং ঢাকা সেনানিবাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ঢাকা সেনানিবাস ৪৬ পদাতিক ব্রিগেডের এর ব্রিগেড কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। নভেম্বর ৩, ১৯৭৫ তারিখে [[খন্দকার মোশতাক আহমেদ|খন্দকার মোস্তাক আহমদের]] শাষনের বিরুদ্ধে একটি সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করার জন্য তিনি ব্রিগেডিয়ার [[খালেদ মোশাররফ|খালেদ মোশাররফকে]] সহায়তা করেছিলেন এবং তারা বঙ্গভবনের দিকে ধাবিত হন। ৭ নভেম্বর এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, খালেদ মুশাররফকে হত্যা করা হয়েছিলে এবং কর্নেল জামিল গ্রেফতার হয়েছিলেন। ৬ নভেম্বর পরিবর্তন এসেছিল মোস্তাক রাষ্ট্র দায়িত্ব থেকে সরে দাড়ান এবং বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম তার স্থলাভিসিক্ত হন।<ref>http://www.thedailystar.net/magazine/2007/08/03/perspective.htm</ref> তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর থেকে অবসর গ্রহণ করেন। পরে তিনি ব্যবসাকে পেশা হিসাবে গ্রহন করেন। তিনি ঢাকা, বাংলাদেশে বসবাস করতেন।

১৩:৫৯, ৯ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

শাফায়াত জামিল
চিত্র:Safayat Jamil.jpg
জন্ম১ মার্চ, ১৯৪০
মৃত্যু১১ আগস্ট, ২০১২
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ববাংলাদেশ
পেশাসামরিক কর্মকর্তা
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম

শাফায়াত জামিল (জন্ম: ১ মার্চ, ১৯৪০ - মৃত্যু: ১১ আগস্ট, ২০১২)[১] বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে। [২]

প্রারম্ভিক জীবন

শাফায়াত জামিল মার্চ ১, ১৯৪০ তারিখে কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার খড়গমারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম এ এইচ এম করিমউল্লাহ এবং মায়ের নাম লায়লা জোহরা বেগম। তাঁর পিতা এএইচ করিমুল্লাহ ছিল ইস্ট পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস (জুডিশিয়াল) অফিসার ছিলেন। তার স্ত্রীর নাম রাশিদা শাফায়াত। তাঁদের তিন ছেলে। শাফায়াত জামিল ঢাকা কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং কাকুলে পাকিস্তান সামরিক একাডেমি থেকে শিক্ষা গ্রহন করেন। তিনি পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রপতি জেনারেল পারভেজ মুশাররফের সহপাঠি ছিলেন।

কর্মজীবন

শাফায়াত জামিল ১৯৬৪ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড লেফট্যানেন্ট হিসাবে নিয়োগ পান। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি চতুর্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল কুমিল্লা সেনানিবাসে। সম্ভাব্য ভারতীয় আগ্রাসনের কথা বলে পাকিস্তানি সেনারা এই রেজিমেন্টের দুটি কোম্পানিকে ১৯৭১ সালের ১ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাঠায়। একটি কোম্পানির নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। ২৬ মার্চ পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের সংবাদ পেয়ে তিনি তাঁর ও অপর কোম্পানির সবাইকে নিয়ে বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধপর্বে আশুগঞ্জ-ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আখাউড়া-গঙ্গাসাগর এলাকায় যুদ্ধ করেন। এরপর ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মতিনগরে যান। পরে তাঁকে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি দেওয়ানগঞ্জ, সিলেটের ছাতকসহ আরও কয়েক স্থানে যুদ্ধ করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের মার্চ মাসে জামিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে মেজর পদে উন্নীত হন। ২৭ মার্চ ১৯৭১ তারিখে, পূর্ব পাকিস্তান/বাংলাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যার খবর জানতে পেরে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনী অন্যান্য বাঙালী অফিসার এবং ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের (ডাকনাম বেবি টাইগার্স) সেনাদের সাথে সেনাবাহিনী ছেড়ে চলে আসেন। ১০ অক্টোবর হটাৎ সিলেট সেক্টরে বদলি হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি সেক্টর-১১ এর অধিনে বাংলাদেশ ফোর্সের (BDF) অফিসার হিসেবে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন।

জুন মাসে তিনি সেক্টর ১১ এর অধিনে ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার হিসাবে নিয়োগ পান, এই সেক্টরের সেক্টর কামান্ডার ছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান, পরবর্তীতে তিনি জেড ফোর্স ব্রিগেড গঠন করেছিলেন। ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ছোট এবং বড় আকারের গেরিলা অভিযানের অংশ নিয়েছিলো। এছাড়াও জিয়া জামিলকে তেলঢাকা এলাকা মুক্ত এবং নিরাপদ রাখার দায়িত্ব অর্পন করেছিলেন। জিয়ার নির্দেশে লেফট্যানেন্ট 'নুরুন নবী এবং আনোয়ার মেজর জামিলকে এই এলাকার প্রথমিক প্রশাসনিক কার্যকলাপে সহায়তা করেছিলেন। আগস্ট ২৭ তারিখে প্রথম ডাকঘর এবং দুটি সাব পোস্টঅফিসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জিয়ার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। ১১ অক্টোবর ১৯৭১ মেজর শাফাত জামিলের নেতৃত্বে ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সিলেটের ছাতকের যুদ্ধেঅংশ নেয়। যদিও ছাতক অপারেশন ব্যর্থ তবুও ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ৩৬৪জন পাকিস্তানি সৈন্যকে হত্যা করে। [৩]

১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৫/৫ গোর্খা রেজিমেন্টের তিনটি কোম্পানি সিলেটের রাধানগরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থানে আক্রমণ করে। কিন্তু তাদের সেই আক্রমণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। পাকিস্তানিদের পাল্টা আক্রমণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়ে তারা রণে ভঙ্গ দিতে বাধ্য হয়। তাঁদের একজন কোম্পানি অধিনায়কসহ দেড় শতাধিক নিহত ও শতাধিক আহত হন। এরপর মিত্রবাহিনীর জেনারেল গিল নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর ৩ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক শাফায়াত জামিলের ওপর দায়িত্ব দিলেন সিলেটের রাধানগর এলাকার ছোটখেল মুক্ত করার। শাফায়াত জামিল সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি নিজেই ওই যুদ্ধে নেতৃত্ব দেবেন। প্রথাগত সামরিক যুদ্ধে এক কোম্পানি বা তার কম সেনা থাকলে ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক সাধারণত যুদ্ধের ময়দানে যান না। কয়েকজন তাঁকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু তিনি তাঁর সিদ্ধান্তে অটল থাকলেন। যোদ্ধা হিসেবে গোর্খাদের সুনাম পৃথিবীব্যাপী। ভারতীয় সেনাবাহিনীর গোর্খা রেজিমেন্ট যা পারেনি, তা বাঙালি মুক্তিযোদ্ধারা ১৯৭১ সালে সম্ভব করেন। অকৃত্রিম দেশপ্রেম, মমত্ব ও দেশকে শত্রুমুক্ত করার দৃঢ় সংকল্প এবং অন্যদিকে শাফায়াত জামিলের অদম্য ও অটল মনোভাব সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসী যোদ্ধায় রূপান্তর করেছিল। ২৭ নভেম্বর গভীর রাতে শুরু হলো সেই ঐতিহাসিক অভিযান। ধানখেতের মধ্য দিয়ে প্রায় ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা এগিয়ে চললেন পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থানের দিকে। সবার সামনে শাফায়াত জামিল ও কোম্পানি অধিনায়ক এস আই নূরুন্নবী খান। সমরে জয় অথবা মৃত্যু, সম্মুখযুদ্ধে যোদ্ধাদের যেকোনো একটি বেছে নিতে হয়। শাফায়াত জামিলের প্রত্যয় তা-ই। পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থানের কাছাকাছি গিয়ে তিনি অগ্রসর হলেন বাঁ দিক থেকে এবং এস আই নূরুন্নবী ডান দিক দিয়ে। ক্ষিপ্রতার সঙ্গে গুলি করতে করতে তাঁরা পাকিস্তানি সেনাদের বিভিন্ন বাংকারের দিকে এগিয়ে চললেন। কয়েকটি বাংকারে হাতাহাতি যুদ্ধ হলো। তাঁরা তখন অজেয়, অপ্রতিরোধ্য। প্রচণ্ড আক্রমণের তীব্রতায় কিছুক্ষণের মধ্যেই পাকিস্তানি সেনারা সেখান থেকে পালিয়ে গেল। মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যেই ছোটখেল মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে এল। নিহত হলো অসংখ্য পাকিস্তানি সেনা। কয়েকজন তাঁদের হাতে ধরা পড়ল। তখনো আশপাশে বিক্ষিপ্ত গোলাগুলি চলছে। চারদিকে মৃত পাকিস্তানি সেনাদের লাশ, অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। ভোরের আলোয় শাফায়াত জামিল তদারক করছেন অবস্থান সুদৃঢ় করার কাজ। এমন সময় তাঁর ডান কোমরে গুলি লাগে। ছিটকে পড়েন তিনি, গুরুতর আহত হন। সহযোদ্ধারা তাঁকে ফিল্ড হাসপাতালে পাঠান। পরে যুদ্ধ জখমের কারণে জামিল পরবর্তীতে ভারতের শিলং সামরিক হাসপাতাল, শিলং, থেকে চিকিৎসা গ্রহন করেন।

যুদ্ধের পরে

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে, জামিল লে কর্নেল এবং উন্নীত হন বীর বিক্রম (তৃতীয় সর্বোচ্চ বাংলাদেশ gallantry পুরস্কার) পদক লাভ করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি কর্নেল পদে উন্নীত হন এবং ঢাকা সেনানিবাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ঢাকা সেনানিবাস ৪৬ পদাতিক ব্রিগেডের এর ব্রিগেড কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। নভেম্বর ৩, ১৯৭৫ তারিখে খন্দকার মোস্তাক আহমদের শাষনের বিরুদ্ধে একটি সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করার জন্য তিনি ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফকে সহায়তা করেছিলেন এবং তারা বঙ্গভবনের দিকে ধাবিত হন। ৭ নভেম্বর এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, খালেদ মুশাররফকে হত্যা করা হয়েছিলে এবং কর্নেল জামিল গ্রেফতার হয়েছিলেন। ৬ নভেম্বর পরিবর্তন এসেছিল মোস্তাক রাষ্ট্র দায়িত্ব থেকে সরে দাড়ান এবং বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম তার স্থলাভিসিক্ত হন।[৪] তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর থেকে অবসর গ্রহণ করেন। পরে তিনি ব্যবসাকে পেশা হিসাবে গ্রহন করেন। তিনি ঢাকা, বাংলাদেশে বসবাস করতেন।

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  • উত্স: "জীবন যুদ্ধ: যুদ্ধের জীবন" লে কর্নেল নুরুন নবী খান
  • জামিল, শাফাত, "'৭১ স্বাধীনতা যুদ্ধ - রক্তাক্ত মিড আগস্ট এবং নভেম্বর ষড়যন্ত্র"
  • বাংলাদেশ সেক্টর কমান্ডারদের সম্মেলন ১৯৭১
  1. বাংলা নিউজ ২৪ ডট কম
  2. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ২৭-০৭-২০১১
  3. বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ (দলিলপত্র: নবম খন্ড)। তথ্য মন্ত্রনালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১৯৮৪। পৃষ্ঠা ১৭৭। 
  4. http://www.thedailystar.net/magazine/2007/08/03/perspective.htm

টেমপ্লেট:Persondata