অন্তরীয়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

অন্তরীয় (অন্তরীয়) হল প্রাচীন ভারতে প্রচলিত থাকা শরীরের নিম্ন ভাগের একটি পোশাক। এটি সাদা বা রঙিন সুতির লম্বা একটি সেলাইবিহীন কাপড়। এটি দুই পায়ের মধ্যে দিয়ে পিছন দিকে নিয়ে গিয়ে পিছনে গুঁজে দেওয়া হয়। এটি পদদ্বয়কে ঢিলেঢালাভাবে আচ্ছাদিত করে, তারপর পায়ের সামনে লম্বাভাবে পাটে পাটে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে।[১][২][৩][৪] একটি উত্তরী বা কায়াবন্ধ দিয়ে একে কোমরে সুরক্ষিত ভাবে বাঁধা থাকে।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

অন্তরীয় হল একটি প্রাচীন পোশাক। রামায়ণ এবং মহাভারতে এই বস্ত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়।[৫]ভারতীয় উপমহাদেশের ভাস্কর্যে হিন্দু দেবতাদের উত্তরীয় এবং অন্তরীয় পরিধান করতে দেখা যায়,[৬] বিশেষ করে দেখা যায় হিন্দু মন্দির এবং হিন্দু পঞ্জিকার ছবিতে।

মৌর্য ও শুঙ্গ যুগে (৩২১-৭২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ), পুরুষ ও মহিলা উভয়েই ৩টি সেলাইবিহীন পোশাক পরিধান করতেন, যেগুলির নাম অন্তরীয়, মুরাজা এবং উত্তরীয়। সাদা রঙের সুতী, লিনেন বা মসলিন দিয়ে তৈরি প্রধান পোশাক ছিল অন্তরীয়। তাঁরা কখনও কখনও সোনা বা অন্যান্য মূল্যবান পাথর দিয়ে এটির উপর সূচিকর্ম করতেন। এটি একটি সেলাইবিহীন লম্বা কাপড়, যেটি কাছা শৈলীতে নিতম্বের চারপাশে ঘুরিয়ে পরা হত। এটি কোমর থেকে পায়ের গুল অথবা গোড়ালি পর্যন্ত প্রসারিত থাকত। এটি কোমরের চারপাশে একটি বন্ধনী দ্বারা সুরক্ষিত থাকত, যার নাম ভেতাকা, মুরাজা, পট্টিকা বা কাল্লাবুকা। তৃতীয় ভাগের পরিচ্ছদটির নাম উত্তরীয়। এটি সূক্ষ্ম সুতো বা সিল্ক থেকে তৈরি করা হত। কিন্তু নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য এটি মোটা সুতো থেকে তৈরি করা হত। এটি শরীরের উপরের অংশ ঢেকে রাখার জন্য একটি দীর্ঘ চাদর হিসাবে ব্যবহৃত হত।[৭]

খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে বৌদ্ধ পালি সাহিত্যে করা উল্লেখ অনুযায়ী, শাড়ি সাটিকা (সংস্কৃত: शाटिका) হল অন্তরীয়র একটি বিবর্তিত রূপ। এটি প্রাচীন যুগে মহিলারা পরিধান করতেন। তাঁদের পরিহিত তিন খণ্ড পোশাকের মধ্যে এটি একটি ছিল।[১][২][৩][৮][৯][১০]

পরিভাষা[সম্পাদনা]

অন্তরীয়র জন্য সংস্কৃত শব্দটি হল অন্তরীয়া।[১১] সেই সময়ের মহিলাদের নিম্নাঙ্গের পোশাকগুলিকে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন সাহিত্যে অম্বরা, অমসুকা, অন্তরীয়, নিবাসন, পরিধান, বাসনা, বস্ত্রম, ভাসা এবং শৌলি হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।[১২]

ব্যবহার[সম্পাদনা]

অন্তরীয় সাধারণত সূক্ষ্ম তুলা বা সিল্কের তৈরি হত। এটি সাধারণত উত্তরীয়ের সঙ্গে পরিধান করা হত।

ছবিঘর[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Nair, Rukmini Bhaya; deSouza, Peter Ronald (২০২০-০২-২০)। Keywords for India: A Conceptual Lexicon for the 21st Century (ইংরেজি ভাষায়)। Bloomsbury Publishing। আইএসবিএন 978-1-350-03925-4 
  2. Mehta, Tarla (১৯৯৫)। Sanskrit Play Production in Ancient India (ইংরেজি ভাষায়)। Motilal Banarsidass Publ.। আইএসবিএন 978-81-208-1057-0 
  3. Ayyar, Sulochana (১৯৮৭)। Costumes and Ornaments as Depicted in the Sculptures of Gwalior Museum (ইংরেজি ভাষায়)। Mittal Publications। পৃষ্ঠা 62। আইএসবিএন 978-81-7099-002-4 
  4. Shastri, Ajay Mitra; Varāhamihira (১৯৯৬)। Ancient Indian Heritage, Varahamihira's India: Historical geography, religion, and society (ইংরেজি ভাষায়)। Aryan Books International। পৃষ্ঠা 224। আইএসবিএন 978-81-7305-081-7 
  5. McLain, Karline (২০০৯)। India's Immortal Comic Books: Gods, Kings, and Other Heroes (ইংরেজি ভাষায়)। Indiana University Press। পৃষ্ঠা 72। আইএসবিএন 978-0-253-22052-3 
  6. Ancient India (ইংরেজি ভাষায়)। Director General of Archaeology in India.। ১৯৫০। পৃষ্ঠা 37। 
  7. "https://textilevaluechain.in/in-depth-analysis/articles/traditional-textiles/history-of-indian-costumes/"। সংগ্রহের তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২  |title= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  8. Prasad Mohapatra, Ramesh (১৯৯২)। Fashion Styles of Ancient India: A Study of Kalinga from Earliest Times to Sixteenth Century Ad। B.R. Publishing Corporation। পৃষ্ঠা 35। আইএসবিএন 9788170187233 
  9. Prachya Pratibha, 1978 "Prachya Pratibha, Volume 6", p. 121
  10. Agam Kala Prakashan, 1991 "Costume, coiffure, and ornaments in the temple sculpture of northern Andhra", p. 118
  11. www.wisdomlib.org (২০১৮-০৫-০৬)। "Antariya, Antarīya: 7 definitions"www.wisdomlib.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-০৯ 
  12. Mohapatra, Ramesh Prasad (১৯৯২)। Fashion Styles of Ancient India: (a Study of Kalinga from Earliest Times to Sixteenth Century A.D.) (ইংরেজি ভাষায়)। B.R. Publishing Corporation। পৃষ্ঠা 26। আইএসবিএন 978-81-7018-723-3