ব্যবহারকারী:Jonoikobangali/খেলাঘর/রবীন্দ্রসংগীত

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বাঙালি সাহিত্যিক ও সংগীতস্রষ্টা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ও সুরারোপিত গানগুলি রবীন্দ্রসংগীত নামে পরিচিত।[১][২] রবীন্দ্রনাথ প্রায় ২,২৩০টি[৩] (মতান্তরে ১৯১৫টি[৪]) গান রচনা করেছিলেন। এই গানগুলি বাংলা সংগীতের জগতে এক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। ভারতবাংলাদেশে এই গানগুলি বিশেষ জনপ্রিয়।[৫][৬] এই দুই দেশের জাতীয় সংগীত যথাক্রমে "জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে"[৭][৮] ও "আমার সোনার বাংলা"[৯][১০] রবীন্দ্রনাথেরই রচিত ও সুরারোপিত গান। এছাড়া ভারতের জাতীয় স্তোত্র "বন্দে মাতরম্‌" (রচয়িতা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়) গানেও রবীন্দ্রনাথ সুরারোপ করেছিলেন।[১১]

সংজ্ঞা[সম্পাদনা]

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ও সুরারোপিত গানগুলিই "রবীন্দ্রসংগীত " নামে পরিচিত।[১][১২] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা কয়েকটি গানে সুরারোপ করেছিলেন তাঁর নতুনদাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই গানগুলিও "রবীন্দ্রসংগীত " নামেই প্রচলিত।[১৩] রবীন্দ্রনাথ কয়েকটি বৈদিকবৌদ্ধ মন্ত্র এবং অপরের লেখা কয়েকটি কবিতায় সুরারোপ করেছিলেন। পঙ্কজকুমার মল্লিক, শান্তিদেব ঘোষ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় প্রমুখ কয়েকজন সুরকার ও সংগীতশিল্পীও রবীন্দ্রনাথের লেখা কয়েকটি কবিতায় সুরারোপ করেছিলেন। এই গানগুলিকে "রবীন্দ্রসংগীত " পর্যায়ভুক্ত করা হয় না।[১৪]

পর্যায় বিন্যাস[সম্পাদনা]

গীতবিতান সংকলনের প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ডে রবীন্দ্রনাথ তাঁর গানগুলিকে বিষয়বস্তু অনুসারে নিম্নলিখিত পর্যায় ও উপপর্যায়ে বিন্যস্ত করেন:

পর্যায় উপপর্যায় গানের সংখ্যা ক্রমসংখ্যা
পূজা গান ৩২ ১-৩২
পূজা বন্ধু ৫৯ ৩৩-৯১
পূজা প্রার্থনা ৩৬ ৯২-১২৭
পূজা বিরহ ৪৭ ১২৮-১৭৪
পূজা সাধনা ও সংকল্প ১৭ ১৭৫-১৯১
পূজা দুঃখ ৪৯ ১৯২-২৪০
পূজা আশ্বাস ১২ ২৪১-২৫২
পূজা অন্তর্মুখে ২৫৩-২৫৮
পূজা আত্মবোধন ২৫৯-২৬৩
পূজা জাগরণ ২৬ ২৬৪-২৮৯
পূজা নিঃসংশয় ১০ ২৯০-২৯৯
পূজা সাধক ৩০০-৩০১
পূজা উৎসব ৩০২-৩০৮
পূজা আনন্দ ২৫ ৩০৯-৩৩৩
পূজা বিশ্ব ৩৯ ৩৩৪-৩৭২
পূজা বিবিধ ১৪৩ ৩৭৩-৫১৫
পূজা সুন্দর ৩০ ৫১৬-৫৪৫
পূজা বাউল ১৩ ৫৪৬-৫৫৮
পূজা পথ ২৫ ৫৫৯-৫৮৩
পূজা শেষ ৩৪ ৫৮৪-৬১৭
স্বদেশ - ৪৬ ১-৪৬
প্রেম গান ২৭ ১-২৭
প্রেম প্রেমবৈচিত্র্য ৩৬৮ ২৮-৩৯৫
প্রকৃতি সাধারণ ১-৯
প্রকৃতি গ্রীষ্ম ১৬ ১০-২৫
প্রকৃতি বর্ষা ১১৫ ২৬-১৪০
প্রকৃতি শরৎ ৩০ ১৪১-১৭০
প্রকৃতি হেমন্ত ১৭১-১৭৫
প্রকৃতি শীত ১২ ১৭৬-১৮৭
প্রকৃতি বসন্ত ৯৬ ১৮৮-২৮৩
বিচিত্র - ১৩৮ ১-১৩৮
আনুষ্ঠানিক (পরিণয়) - ১-৯
আনুষ্ঠানিক - ১০-১৮
পরিশিষ্ট - ১-২

সহযোগী বাদ্যযন্ত্র[সম্পাদনা]

রবীন্দ্রসংগীতে এসরাজ, তানপুরা, সেতার, দিলরুবা, বাঁশি, একতারা, দোতারা, তবলা, মৃদঙ্গ, পাখোয়াজ, খোল, মন্দিরা, পিয়ানো, অর্গান, গিটার, বেহালা, হারমোনিয়াম প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্র ব্যবহৃত হয়।[১৫][১৬] রবীন্দ্রনাথ চাইতেন রবীন্দ্রসংগীতের শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষার্থী ও গায়ক-গায়িকারা সকলেই এসরাজের সঙ্গতে সংগীত পরিবেশনা করুন। শান্তিনিকেতনে এই নিয়ম এখনও অনুসৃত হয়।[১৬]

তারবাদ্য[সম্পাদনা]

রবীন্দ্রনাথের রাগাশ্রয়ী গানগুলির ক্ষেত্রে যন্ত্রানুষঙ্গের বিশেষ প্রয়োজন হয় না। তানপুরার সঙ্গে মধ্য সপ্তকের উপযোগী একটি সুরযন্ত্রের (এসরাজ, দিলরুবা বা হারমোনিয়াম) সঙ্গতই এই ধরনের গানগুলির পক্ষে যথেষ্ট। সেই সঙ্গে দ্রুত চলনের গানগুলির ক্ষেত্রে সেতারের পরিমিত ব্যবহার করা হয়।[১৬] বাউলাঙ্গ, কীর্তনাঙ্গ ও অন্যান্য লোকজ সুর প্রভাবিত গানগুলির ক্ষেত্রে বাঁশিকে প্রায় অপরিহার্য একটি বাদ্যযন্ত্র মনে করা হয়। সেই সঙ্গে এই জাতীয় গানের চলন ও ভাব অনুসারে একতারা, দোতারা, সেতার বা গিটার ব্যবহার করা হয়।[১৬] উল্লেখ্য দুই ধরনের গিটারের মধ্যে হাওয়াইয়ান গিটারে মীড়, গমক, তান, ঝালা ইত্যাদি সব কিছুই বাজানো যায়। কিন্তু স্প্যানিশ গিটারে মীড়ের কাজ খুব একটা হয় না।[১৭]

তালবাদ্য[সম্পাদনা]

রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশনার ক্ষেত্রে তালবাদ্যের প্রয়োগ একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণত ধ্রুপদাঙ্গের গানগুলির সঙ্গে মৃদঙ্গ বা পাখোয়াজের ব্যবহার প্রচলিত রয়েছে।[১৬] বাউলাঙ্গ, কীর্তনাঙ্গ বা অন্যান্য লোকজ সুরের গানগুলি খোলের সঙ্গতে বাজান হয়।[১৬] অন্যান্য গানের ক্ষেত্রে সচরাচর তবলা ব্যবহৃত হয়।[১৬] রবীন্দ্রসংগীতের তালবাদ্য হিসেবে মন্দিরার ব্যবহারও বহুল প্রচলিত।[১৬]

ইংরেজি গান[সম্পাদনা]

রবীন্দ্রনাথ তাঁর একাধিক গান ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন গদ্যছন্দে। এগুলির মধ্যে দু’টি গানের স্বরলিপি পাওয়া যায়: "দ্য বি ইজ টু কাম আন্ড দ্য বি ইজ টু হাম" ও "ইন দ্য বাওয়ার অফ মাই ইউথ আ বার্ড সিংস"। গান দু’টি যথাক্রমে "অলি বার বার ফিরে যায়" ও "মম যৌবননিকুঞ্জে গাহে পাখি" গান দু’টির অনুবাদ। রবীন্দ্রনাথের কাহিনী অবলম্বনে জর্জ ক্যালেরন রচিত দ্য মহারানি অফ আরাকান একাঙ্ক নাটকে গান দু’টি তথা এগুলির পাশ্চাত্য স্বরলিপি (স্টাফ নোটেশন) যথাক্রমে "আমিনা’জ সেকেন্ড সং" ও "ডালিয়া’জ সং" শিরোনামে প্রকাশিত হয়। নাটকটি ১৯১৫ সালে লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয়েছিল।[১৮]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Sigi 2006, পৃ. 90
  2. রবীন্দ্র-নজরুল বিভাকর, প্রথম ভাগ, পৃ. ২১
  3. Sanjukta Dasgupta; Chinmoy Guha (২০১৩)। Tagore-At Home in the World। SAGE Publications। পৃষ্ঠা 254। আইএসবিএন 978-81-321-1084-2 
  4. গীতবিতানের জগৎ, পৃ. ১৭১
  5. Tagore 2007, পৃ. xii
  6. "Magic of Rabindra Sangeet"Deccan Herald। ৯ জুলাই ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুলাই ২০১৩ 
  7. http://www.news18.com/news/india/national-anthem-of-india-a-brief-on-jana-gana-mana-498576.html Quote: "Though written in Bengali, the language used was sadhu Bengali or tatsama Bengali which was heavily sanskritised. Many of the words exist with the same meaning in different Indian languages and thus, all Indian people understand the words and meaning of the national anthem"
  8. "National Symbol: National Anthem"। National Portal of India। সংগ্রহের তারিখ ১০ এপ্রিল ২০১৭  Quote: "The National Anthem of India Jana-gana-mana, composed originally in Bengali by Rabindranath Tagore, was adopted in its Hindi version by the Constituent Assembly as the National Anthem of India on 24 January 1950."
  9. "The Constitution of the People's Republic of Bangladesh - 4. National anthem, flag and emblem"। Ministry of Law, Justice and Parliamentary Affairs। 
  10. "Bangladesh: Amar Sonar Bangla"। NationalAnthems.me। সংগ্রহের তারিখ ৯ আগস্ট ২০১১ 
  11. Diana L. Eck (২০১২)। India: A Sacred Geography। New York: Random House (Harmony Books)। পৃষ্ঠা 95–97। আইএসবিএন 978-0-385-53190-0 
  12. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; rnbibhakar21 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  13. জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জীবনস্মৃতি, বসন্তকুমার চট্টোপাধ্যায়, সম্পাদক: প্রশান্তকুমার পাল, সুবর্ণরেখা, কলকাতা, ২০০২ সং, পৃ. ৪। উদ্ধৃতি:"জ্যোতিবাবুর (জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর) কাছেই শুনিলাম যে ‘বাল্মীকি-প্রতিভা’র প্রায় সব গানের সুরই জ্যোতিবাবুর সংযোজিত।"
  14. গীতবিতান, তৃতীয় খণ্ড, "গ্রন্থপরিচয়", বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ, কলকাতা, ১৪০৭ সং, পৃ. ১০২৬-২৭
  15. রবীন্দ্র-নজরুল বিভাকর, প্রথম ভাগ, সুবোধ গঙ্গোপাধ্যায়, মীরা প্রকাশনী, হাওড়া, অক্টোবর,২০১৭ সং, পৃ.৯৬-৯৮
  16. রবীন্দ্রসংগীত পরিক্রমা, অমল মুখোপাধ্যায়, করুণা প্রকাশনী, কলকাতা, ১৯৮১ সং, পৃ. ১৪১-১৪৪
  17. গীটার জিজ্ঞাসা – হাওয়াইয়ান ও স্প্যানীস, স্বপন কুমার পাল, বঙ্গীয় সঙ্গীত পরিষদ, হাওড়া, নভেম্ব্‌ ২০১৪ সং, পৃ. ১৭১
  18. গীতবিতানের জগৎ, পৃ. ৭২৩-৭২৬

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

বাংলা গ্রন্থাবলী[সম্পাদনা]

  • আনন্দধারা, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, আজকাল পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ১৯৯৮ সংস্করণ।
  • গীটার জিজ্ঞাসা – হাওয়াইয়ান ও স্প্যানীস, স্বপন কুমার পাল, বঙ্গীয় সঙ্গীত পরিষদ, হাওড়া, জানুয়ারি, ২০০২ সংস্করণ।
  • গীতবিতান ৫০, সম্পাদনা: প্রভাতচন্দ্র গুপ্ত, ভস্তক, কলকাতা, ১৯৯২ সংস্করণ।
  • গীতবিতানের আরশীনগর, প্রফুল্লকুমার চক্রবর্তী, একুশ শতক, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১১ সংস্করণ।
  • গীতবিতানের জগৎ, সুভাষ চৌধুরী, প্যাপিরাস, কলকাতা, ডিসেম্বর ২০০৬ সংস্করণ।
  • জীবনের ধ্রুবতারা, শান্তিদেব ঘোষ, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ২২ শ্রাবণ ১৪০৩ সংস্করণ।
  • জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জীবনস্মৃতি, বসন্তকুমার চট্টোপাধ্যায়, সম্পাদনা: প্রশান্তকুমার পাল, সুবর্ণরেখা, কলকাতা, ২০০২ সংস্করণ।
  • তবু মনে রেখো, সুচিত্রা মিত্র, আজকাল পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, জানুয়ারি ১৯৯৭ সংস্করণ।
  • পান্থজনের সখা, আবু সয়ীদ আইয়ুব, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, ডিসেম্বর ১৯৯৭ সংস্করণ।
  • ব্রাত্যজনের রুদ্ধসংগীত, দেবব্রত বিশ্বাস, করুণা প্রকাশনী, কলকাতা, ফাল্গুন ১৩৮৫ সংস্করণ।
  • রবীন্দ্রগানের অন্তরভুবন, অমল মুখোপাধ্যায়, করুণা প্রকাশনী, কলকাতা, আশ্বিন ১৪১৮ সংস্করণ।
  • রবীন্দ্র-নজরুল বিভাকর, প্রথম ভাগ, সুবোধ গঙ্গোপাধ্যায়, মীরা প্রকাশনী, হাওড়া অক্টোবর ২০১৭ সংস্করণ।
  • রবীন্দ্রনাথের পূর্ণাঙ্গ শিক্ষাদর্শে সঙ্গীত ও নৃত্য, শান্তিদেব ঘোষ, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ১৯৭৮ সংস্করণ।
  • রবীন্দ্রনাথের ভাঙা গান, ড. আশিস বসুমল্লিক, প্রতিভাস, কলকাতা, অক্টোবর ২০০৪ সংস্করণ।
  • রবীন্দ্রসংগীত, শান্তিদেব ঘোষ, বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ, কলকাতা, বৈশাখ ১৩৯৪ সংস্করণ।
  • রবীন্দ্রসংগীত পরিক্রমা, অমল মুখোপাধ্যায়, করুণা প্রকাশনী, কলকাতা, ১ ডিসেম্বর ১৯৮১ সংস্করণ।
  • রবীন্দ্রসংগীতের ইতিবৃত্ত, ২য় খণ্ড, শম্ভুনাথ ঘোষ, সঙ্গীত প্রকাশন, কলকাতা, জানুয়ারি ২০০০ সংস্করণ।
  • রবীন্দ্রসঙ্গীত বিচিত্রা, শান্তিদেব ঘোষ, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, নভেম্বর ১৯৮৭ সংস্করণ।
  • রবীন্দ্রস্মৃতি, ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী, বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ, কলকাতা, ২৫ বৈশাখ ১৩৬৩ সংস্করণ।
  • রবীন্দ্রের ইন্দ্রধনু, সুকুমার সেন, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ১ বৈশাখ ১৩৯০ সংস্করণ।