পাণ্ডু রাজার ঢিবি
অবস্থান | পশ্চিমবঙ্গ, ভারত |
---|---|
স্থানাঙ্ক | ২৩°৩৪′১৯″ উত্তর ৮৭°৩৮′৫৯″ পূর্ব / ২৩.৫৭১৯৪° উত্তর ৮৭.৬৪৯৭২° পূর্ব |
ধরন | পত্নস্থল |
ইতিহাস | |
প্রতিষ্ঠিত | ১৬০০ থেকে ৭৫০ খ্রিস্ট পূর্বে |
সময়কাল | Chalcolithic period |
পাণ্ডু রাজার ঢিবি হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমান জেলার সদর উত্তর মহকুমার অন্তর্গত আউসগ্রাম ব্লকের একটি প্রত্নক্ষেত্র। এটিই পশ্চিমবঙ্গে আবিষ্কৃত প্রথম তাম্রযুগীয় প্রত্নক্ষেত্র। পাণ্ডু রাজার ঢিবির প্রধান ধ্বংসস্তুপটির সঙ্গে মহাভারত-এর রাজা পাণ্ডুর নামের যোগসূত্র পাওয়া যায়।[১][২] পান্ডু কথাটি হড় বা সাঁওতালি শব্দ থেকে এসেছে । পান্ডু কথাটি প্রাচীন হড় বা সাঁওতালি ভাষায় সাদা বা ধূসর রঙের চুল থাকা বয়স্ক ব্যক্তিকে বোঝানো হয় । পান্ডুক মানে হড় বা সাঁওতালি ভাষায় কারও মাথার চুল সাদা বা ধূসর রঙ হওয়ার দিকে আছে বা এই ধরনের রঙে পরিণত হওয়ার অর্থ বোঝানো হয় । এই অনার্য হড় বা সাঁওতাল জাতি গোষ্ঠির বাসবাস আর্য জাতি আগমনের বহু আগে তাদের বসবাস এই এলাকায় ছিল । সেই কারণেও এই স্থানটির নাম পান্ডু বা পান্ডুক হতে পারে । এই প্রত্নক্ষেত্রটি অজয় নদের দক্ষিণ তীরে অবস্থিত। পাণ্ডু রাজার ঢিবি-সংলগ্ন রাজপোতডাঙা ও পাণ্ডুক গ্রামে খননকাজ চালানো হয়েছে।[১][২]
খননকার্য[সম্পাদনা]
১৯৫৪-৫৭ সালে বি. বি. লাল এই ক্ষেত্রে প্রথম খননকার্য চালান।[২] পাণ্ডু রাজার ঢিবি রাজ্যের প্রথম আবিষ্কৃত ক্যালকোলিথিক বা তাম্রযুগীয় প্রত্নক্ষেত্রথলেও বীরভূম, বর্ধমান, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ব্রাহ্মণী, ময়ূরাক্ষী, কোপাই, অজয়, কুনুর, দামোদর, দ্বারকেশ্বর, শিলাবতী ও রূপনারায়ণ নদনদী বিধৌত অঞ্চলে আরও অনেক প্রত্নক্ষেত্রের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে।[২]
এখানে প্রাপ্ত ধ্বংসাবশেষ মূলত দুই সময়পর্বের – তাম্রযুগীয় (খ্রিস্টপূর্ব ১৬০০ – ৭৫০ অব্দ) এবং লৌহযুগীয়।[২]
গুরুত্ব[সম্পাদনা]
পাণ্ডু রাজার ঢিবিতে খননকার্য চালিয়ে হড় বা সাঁওতাল অনার্য উৎস সম্পর্কে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে । পূর্ব ভারতের তাম্রযুগীয় সভ্যতার সঙ্গে মধ্য ভারত ও রাজস্থান অঞ্চলের অনুরূপ সভ্যতার মিল পাওয়া গিয়েছে। সেযুগের লোকজন সুপরিকল্পিত শহর নির্মাণ করতে পারত। তারা শহরের পথে ফুটপাথ রাখত। তাদের অর্থনীতির ভিত্তি ছিল কৃষি ও বাণিজ্য। পাণ্ডু রাজার ঢিবিকে একটি বাণিজ্য নগরীর ধ্বংসাবশেষ মনে করা হয়। এখানকার মানুষের সঙ্গে যে শুধু ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল, তাই নয়; এরা ক্রিট ও ম্যাসিডোনিয়ান দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখত। এরা ছিল মূলত সমুদ্রচারী বণিক জাতি।[৩]
২৯ শে নভেম্বর ১৯৬৩ সাল শুক্রবার দিন প্রকাশ্যে আসা গোলাকার পাথরের শিলটি মনে করা হচ্ছে কোল , সাঁওতাল অর্থাৎ হড় ভাষা দিয়ে তার বিভিন্ন মানে উদ্ধার করা সম্ভব । কারণ ভারতবর্ষের প্রাচীনতম ভাষা এবং সমাজ ব্যবস্থার উপরে ভিত্তি করে এই পান্ডু রাজার ঢিবির খৃষ্টপূর্বাব্দের অনেক অজানা তথ্য ও সমাজ সংস্কৃতির পরিচয় জানা যাবে । ধরে নেওয়া যেতে পারে বৈদিক সাহিত্য রচনাকালের বহু আগের পুরনো সভ্যতা ছিল যা বর্তমান আর্য ভাষা দিয়ে পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়নি ।
বাংলার তাম্র-প্রস্তর যুগীয় সংস্কৃতির শিল্পীদের সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায় না। সম্ভবত তারা ছিল প্রটো- অস্ট্রোলয়েড অথবা ভেড্ডেডীয়। ১৪ জন পুরুষ, মহিলা ও শিশুর অস্থিপঞ্জর বা কঙ্কালের উপর পরিচালিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে মনে হয় যে, তারা ছিল লম্বা মাথা বিশিষ্ট এবং উচ্চতায় তারা ছিল মাঝারি গড়ন থেকে লম্বাটে ধরনের। সাঁওতাল অথবা শবরদের সঙ্গে এদের যথেষ্ট মিল রয়েছে।
পাদটীকা[সম্পাদনা]
- ↑ ক খ Chattopadhyay, Akkori, Bardhaman Jelar Itihas O Lok Sanskriti (History and Folklore of Bardhaman District.), (বাংলা), Vol I, pp. 125-130, Radical Impression. আইএসবিএন ৮১-৮৫৪৫৯-৩৬-৩
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Mukherjee, Shyam Chand। "Pandu Rajar Dhibi"। Banglapedia। Asiatic Society of Bangladesh। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৫-০৪।
- ↑ Majumdar, R.C., History of Ancient Bengal, 2005 edition, pp. 20-22
৪ P.P.D. High School video link https://www.youtube.com/watch?v=flvsBG6N9OA May19 ,2019
৫ Parimal Chandra Mitra, Santhali : The Base of World Language ,1988 , Firma KLM Private Limited Page 40 to 46
Historical Back Grounds
{{#coordinates:}}: প্রতি পাতায় একাধিক প্রাথমিক ট্যাগ থাকতে পারবে না