বাংলাদেশের লোকসঙ্গীত উৎসবাদি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বাংলাদেশ-এর সঙ্গীত
বাউল, বাংলার আধ্যাত্মিক গান
ধরন
  • ধ্রুপদী
  • রক
  • হিপ হপ
  • নির্দিষ্ট ধরন
    ধর্মীয় সঙ্গীত
    জাতিগত সঙ্গীত
    ঐতিহ্যবাহি সঙ্গীত
    মিডিয়া এবং কর্মক্ষমতা
    সঙ্গীত পুরস্কার
    সঙ্গীত উৎসব
    সঙ্গীত মিডিয়াবেতার

    টেলিভিশন

    ইন্টারনেট
    জাতীয় এবং দেশাত্মবোধক গান
    জাতীয় সঙ্গীতআমার সোনার বাংলা
    অন্যান্যনতুনের গান (রণসঙ্গীত)
    একুশের গান (ভাষা আন্দোলন গাথা)
    আঞ্চলিক সঙ্গীত
    সম্পর্কিত এলাকা
    অন্যান্য এলাকা

    বাংলাদেশের সঙ্গীতের অন্যতম ধারা হলো লোকসংগীত। এটি মূলত বাঙালির নিজস্ব সঙ্গীত। গ্রামবাংলার মানুষের জীবন, সুখ-দুঃখের কথা বলে এই সঙ্গীত। এর আবার অনেকগুলি অংশ আছে। এটি একটি দেশ বা দেশের যেকোনো অঞ্চলের সংস্কৃতিকে তুলে ধরে।

    এই উৎসবের ভিত্তি বা বলতে গেলে আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে বিলুপ্তপ্রায় আচার-অনুষ্ঠান হল যৌথ কার্যক্রম। বাংলার বাসিন্দাদের প্রয়োজনীয় ক্রিয়াকলাপগুলি বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা উৎসবের সাথে সাথে কৃষির সঙ্গেও অতিরিক্তভাবে যুক্ত ছিল এবং সেগুলি নাটক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত। বিলুপ্তপ্রায় আচার-অনুষ্ঠানগুলি ছিল অতিপ্রাকৃত শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করার এক ঐন্দ্রজালিক প্রক্রিয়া; অতিপ্রাকৃত শক্তির চরিত্র পরবর্তী সংস্কৃতিতে থেকে যায়। বিলুপ্তপ্রায় কৃষি উৎসব ছিল স্বতঃস্ফূর্ত, যা পরবর্তীতে অত্যন্ত আনুষ্ঠানিক হয়ে ওঠে এবং স্বতঃস্ফূর্ততা হারিয়ে ফেলে।

    উৎসবসমূহ[সম্পাদনা]

    ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকউৎসব[সম্পাদনা]

    ঢাকা বিশ্ব সঙ্গীত উৎসব, যেটি ঢাকা ওয়ার্ল্ড মিউজিক ফেস্ট নামেও পরিচিত, সেটি হলো একটি আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসব যা বাংলাদেশের ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিভিন্ন ঘরানার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সঙ্গীত তারকারা অংশগ্রহণ করেন। উৎসবটি স্থানীয় লোকজ এবং ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত ঘরানা থেকে বিশ্ব ফিউশন এবং বিশ্বজুড়ে সমসাময়িক বিশ্ব সঙ্গীত প্রদর্শনের একটি বিস্তৃত সুযোগ এনে দেয়। বিশ্ব সঙ্গীতের আকারে সত্যিকারের সংমিশ্রণ প্রত্যক্ষ করার জন্য উৎসবটিকে বাংলাদেশের একটি প্রধান মঞ্চ বলে মনে করা হয়।[১][২]

    পহেলা বৈশাখ[সম্পাদনা]

    পহেলা বৈশাখ (পয়লা বৈশাখ) হল বাংলা দিন পঞ্জিকার প্রথম দিন এবং এটি বাংলাদেশের সরকারী ক্যালেণ্ডার। এই উৎসবটি বাংলাদেশে ১৪ই এপ্রিল এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরাআসাম (বরাক উপত্যকা) রাজ্যে ধর্মীয় বিশ্বাস নির্বিশেষে ১৫ই এপ্রিল সমস্ত বাঙালিদের দ্বারা পালিত হয়।[৩][৪][৫][৬][৭]

    পহেলা ফাল্গুন[সম্পাদনা]

    পহেলা ফাল্গুন (বসন্ত উৎসব) হল বসন্তের একটি উৎসব, যেটি বাংলা মাসের ফাল্গুনের প্রথম দিন এবং সেটি বসন্তের প্রথম দিন হিসেবেও পরিচিত।[৮] ১৯৯১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা এই উদযাপন শুরু করেন।[৯] পহেলা ফাল্গুন সাধারণত গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির ১৩ই ফেব্রুয়ারি পড়ে।[১০]

    নবান্ন[সম্পাদনা]

    নবান্ন হল একটি শীতকালীন এবং ফসল কাটার বাঙালি উৎসব। বাংলাদেশে এটি সাধারণত খাদ্য, নৃত্য এবং লোক সঙ্গীত সহযোগে উদযাপন করা হয়।[১১]

    বর্ষা উৎসব[সম্পাদনা]

    বর্ষা উৎসব নামে পরিচিত একটি বর্ষা মঙ্গল উৎসব হল বাংলাদেশে পালিত এক দিনব্যাপী একটি বর্ষা অভিবাদন উৎসব। উৎসবের তারিখটি সৌর-চান্দ্র মাসের বাংলা দিনপঞ্জি অনুসারে তার তৃতীয় মাস আষাঢ়ের প্রথম দিনে পড়ে, সাধারণত গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জিতে এটি ১৫ই জুন পড়ে।[১২][১৩][১৪] এই দিনটি বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপিত হয়, অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে লোকসংগীত পরিবেশন, নাটক, কবিতা আবৃত্তি, বৃষ্টি নিয়ে সিনেমা প্রদর্শন ইত্যাদি।[১৫][১৬]

    বিজু[সম্পাদনা]

    বিজু হল একটি তিন দিনব্যাপী উৎসব যা চাকমাদের নতুন বছরের সূচনাকে স্মরণ করে এবং এটি তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। বিজু চৈত্র সংক্রান্তিকে চিহ্নিত করে, যা বাংলা বর্ষপঞ্জির শেষ দিন। বিজুও লোকসংগীতের একটি অনুষঙ্গ উৎসব।[১৭]

    নৌকা বাইচ[সম্পাদনা]

    নৌকা বাইচ হলো নৌ-দৌড়ের একটি উৎসব, বর্ষার পর বাংলাদেশের নদী ভরে গেলে এটি পালিত হয়। এটি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ড্রাগন নৌকা -শৈলীর একটি প্যাডলিং (বৈঠা চালিত) ক্রীড়াও। ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ রোয়িং ফেডারেশন হলো বাংলাদেশের সকল রোয়িং কার্যক্রমের কর্তৃপক্ষ।[১৮]

    অস্টক গীত[সম্পাদনা]

    পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের প্রাচীন লোকসংস্কৃতির অন্যতম প্রধান প্রবণতা হল অস্টক গান বা অস্টক নৃত্য। এটি সাধারণত 'বাঙালি হিন্দু' সমাজে বিভিন্ন চৈত্র সংক্রান্তির অনুষ্ঠানের সময় করা হয়।

    সাধারণভাবে, "নীলের / শিবের গাজন" উপলক্ষ্যে চৈত্র মাসের শেষ তিন দিনে "গাজন উৎসব"-এর আনুষঙ্গিক উপলক্ষ্যে, দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিমে আয়োজিত লোক মেলায় এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন ধরনের গান ও আচার-অনুষ্ঠানের প্রধান আনুষঙ্গিক পরিবেশনা হিসেবে আয়োজিত লোকমেলায় তাক গান ও নাচ হয়।

    আখড়াই গান[সম্পাদনা]

    আখড়াই গান হল একটি বিশেষ ধারার জনপ্রিয় গান যা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ১৮ শতকের শেষের দিকে এবং ১৯ শতকের শুরুতে প্রচলিত ছিল। কুলুইচন্দ্র সেন এবং রামনিধি গুপ্ত এই নতুন ধারার গানের প্রবর্তক। রাজা নবকৃষ্ণ এই রীতির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।[১৯]

    কবিগান[সম্পাদনা]

    কবিগান বাংলা লোকসঙ্গীতের একটি বিশেষ ধারা। এই ধারায় লোককবিরা প্রতিযোগিতামূলক সঙ্গীতে অংশগ্রহণ করেন। গায়ককে কবি হতে হয়। তিনি মুখে মুখে পদ রচনা করেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে গান করেন। কবির সহযোগীদেরও কবি বলা হয়।

    গাজীর পাত্র[সম্পাদনা]

    গাজীর পাত্র হলো বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকচিত্র।[২০] লোকগানের বিষয়বস্তু হল পীর বড়খান গাজীর গল্প, যা গাজী পীরের বিভিন্ন ঘটনাকে গানের আকারে বর্ণনা করে। গাজীর পাত্র পর্বটি আগে বৃহত্তর ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, কুমিল্লা, নোয়াখালী, যশোর, খুলনা, রাজশাহীর গ্রামীণ এলাকায় বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল। পুরাতন গাজীর পাত্র বর্তমানে আশুতোষ জাদুঘর, শিল্পাচার্য জয়নুল লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর, বাংলা একাডেমি জাদুঘর ইত্যাদিতে সংরক্ষিত আছে। পর্বের মূল উপজীব্য গাজী পীরের মাহাত্ম্য ও অলৌকিক ক্ষমতা, কৌতুক মিশ্র প্রবাদ এবং মৃত্যুর ভয়।[২১]

    বাংলা লোক সঙ্গীতের ধরন[সম্পাদনা]

    বৈশিষ্ট্য[সম্পাদনা]

    • মৌখিকভাবে জনসমাজে প্রচারিত।
    • যৌথ বা একক কণ্ঠে গান থাকতে পারে।
    • সাধারণত নিরক্ষর মানুষের কথাগুলি এখানে লেখা ও সুরের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
    • এটি আঞ্চলিক ভাষায় উচ্চারিত হয়।
    • প্রকৃতির আধিপত্য বেশি।
    • দৈনন্দিন জীবনের সুখ-দুঃখ প্রকাশ পায়।

    তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

    1. "Music without Boundaries"Star Weekend MagazineThe Daily Star। ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১১। ২২ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ আগস্ট ২০১২ 
    2. "A World of Music Descends on Dhaka"The Daily Star। ২২ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ আগস্ট ২০১২ 
    3. Kapila D. Silva; Amita Sinha (২০১৬)। Cultural Landscapes of South Asia: Studies in Heritage Conservation and Management। Taylor & Francis। পৃষ্ঠা 159–162। আইএসবিএন 978-1-317-36592-1 
    4. "BBC – Religion: Hinduism – Vaisakhi"BBC। সংগ্রহের তারিখ ২২ জানুয়ারি ২০১২ 
    5. Crump, William D. (2014), Encyclopedia of New Year's Holidays Worldwide, MacFarland, page 114
    6. Gordon Melton, J. (১৩ সেপ্টেম্বর ২০১১)। Religious Celebrations: An Encyclopedia of Holidays, Festivals, Solemn Observances, and Spiritual Commemorations [2 volumes]: An Encyclopedia of Holidays, Festivals, Solemn Observances, and Spiritual Commemorationsআইএসবিএন 9781598842067 
    7. "Ushering in Noboborsho in a thousand voices"The Daily Star। ১৬ এপ্রিল ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৩-১৯ 
    8. "Pohela Falgun celebrated"The Daily Star। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ 
    9. "Falgun Fest at DU: How it all began"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৯ 
    10. "Nepali Date Converter"। banned-books.info। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-২১ 
    11. "Nobanno celebrations in Chittagong"The Daily Star। ১৬ নভেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৩-১৯ 
    12. "Barsha festival"bdnews24.com। সংগ্রহের তারিখ ৭ এপ্রিল ২০১৭ 
    13. "Monsoon festival celebrated in capital, calls for rain water conservation"Dhaka Tribune। ৮ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ এপ্রিল ২০১৭ 
    14. "'Monsoon Festival' held in city"Prothom Alo। ৮ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ এপ্রিল ২০১৭ 
    15. "Come rain or shine: Monsoon festivals around Asia"The Myanmar Times। ২৯ মে ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৭ এপ্রিল ২০১৭ 
    16. "'Barsha Festival' held in city"The News Today। ২০১৭-০৪-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ এপ্রিল ২০১৭ 
    17. "Chakmas – Bizhu Dance" (পিডিএফ)। Information Cultural Affairs & Tourism Department, Tripura। ২ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ এপ্রিল ২০১৩ 
    18. Bentley, David (২৯ জুলাই ২০১৮)। "Free festival with street food and dragon boat racing returns to Birmingham"Birmingham Mail 
    19. Das, Sisir Kumar (২০০৩)। Saṃsada Bāṃlā sāhityasaṅgīআইএসবিএন 978-81-7955-007-6 
    20. রইল বাকি একSamakal। ২৭ এপ্রিল ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ এপ্রিল ২০১৬ 
    21. "Gazir Pat"Banglapedia