দুপচাঁচিয়া উপজেলা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

স্থানাঙ্ক: ২৪°৫২′০.০১২″ উত্তর ৮৯°১০′০.০১২″ পূর্ব / ২৪.৮৬৬৬৭০০০° উত্তর ৮৯.১৬৬৬৭০০০° পূর্ব / 24.86667000; 89.16667000
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
JackieBot (আলোচনা | অবদান)
Fix URL prefix
১১ নং লাইন: ১১ নং লাইন:
| area_total = ১৬২.৪৫
| area_total = ১৬২.৪৫
| literacy_rate = ৫৬.৫%
| literacy_rate = ৫৬.৫%
| website =http://dupchanchia.bogra.gov.bd/
| website =dupchanchia.bogra.gov.bd/
| website_caption = উপজেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইট
| website_caption = উপজেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইট
}}
}}

১৩:২৭, ২২ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

দুপচাঁচিয়া উপজেলা
স্থানাঙ্ক: ২৪°৫২′০.০১২″ উত্তর ৮৯°১০′০.০১২″ পূর্ব / ২৪.৮৬৬৬৭০০০° উত্তর ৮৯.১৬৬৬৭০০০° পূর্ব / 24.86667000; 89.16667000 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগরাজশাহী বিভাগ
জেলাবগুড়া জেলা
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড৫৮৮০,৫৮৮১ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৫০ ১০ ৩৩
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

দুপচাঁচিয়া (Dupchanchia) বাংলাদেশের বগুড়া জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। যা পূর্বে "ধুপচাঁচিয়া" নামে পরিচিত ছিল।

অবস্থান

বগুড়া সদর থেকে দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। এর মোট আয়তন ১৬২.৪৫ বর্গ কিলোমিটার এবং দুপচাঁচিয়া পৌরসভার আয়তন প্রায় ১০.৯৩ বর্গ কিলোমিটার। এর পূর্ব পাশ দিয়ে নাগর নদী বয়ে গেছে। দুপচাঁচিয়া বগুড়া জেলার অন্যতম বড় একটি উপজেলা। দুপচাঁচিয়া এর উত্তরে- জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলা, দক্ষিণে- বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলাকাহালু উপজেলা, পুর্বে-জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলা এবং বগুড়া জেলার কাহালু উপজেলা, পশ্চিমে-জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলা ও বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলা

প্রশাসনিক এলাকা

চিত্র:Maph of Dupchanchia Upazila.jpg
দুপচাঁচিয়া উপজেলার মানচিত্র

দুপচাঁচিয়া পৌরসভা ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। যা নয়টি ওয়ার্ড ও আটত্রিশটি মহল্লার সমন্বয়ে গঠিত। দুপচাঁচিয়া পৌরসভা ছাড়াও তালোড়া পৌরসভা নামে আরও আরও একটি পৌরসভা ২০১২ সালে গঠিত হয়। এছারাও এই উপজেলার অন্তর্গত ৬ টি ইউনিয়ন, ১১৫ টি মৌজা এবং ২৩০ টি গ্রাম আছে। পোস্ট অফিস আছে ১১ টি।

জনসংখ্যার উপাত্ত

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী দুপচাঁচিয়া উপজেলার মোট জনসংখ্যা ৪,৪৬,২৬৩ জন।[১] যার ১,৬০,৮৯৪ জন পুরুষ ও ১৭৯,২৯০ জন নারী। প্রতি কিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ৯৯০ জন। দুপচাঁচিয়া উপজেলার মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ২৫ হাজার ৬৮৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬১ হাজার ৮১৯ জন ও মহিলা ভোটার ৬৩ হাজার ৮৭০ জন।

ইতিহাস

"দুপচাঁচিয়া" নামটির উৎপত্তি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোন ধারণা পাওয়া যায় না। জনশ্রুতি আছে যে এখানে নাকি একসময় প্রচুর "ধুপ" উৎপন্ন হত। অনেকে বলেন সেই "ধুপ" হতেই "ধুপচাঁচিয়া" নামের সৃষ্টি। আবার অনেকে বলেন এককালে হিন্দু প্রধান এলাকা হিসাবে এখানে প্রচুর ধোপা শ্রেণির লোক বাস করত। এই ধোপা কথাটি থেকেই কালক্রমে এই এলাকার নামকরণ হয়েছে ধোপচাঁচিয়া। এছাড়াও প্রচলিত আছে এখানে একসময় "ধূপছায়া" নামে একধরনের শাড়ী পাওয়া যেত। যা দেশে বিদেশে অনেক বিখ্যাত ছিল। সেই ধূপছায়া হতে "ধুপচাঁচিয়া" নামের উৎপত্তি, যা পরবর্তীতে "দুপচাঁচিয়াতে" পরিবর্তিত হয়েছে।[২]

দুপচাঁচিয়া পুলিশ থানার কার্যক্রম ১৮৮০ সালে শুরু হয়। দুপচাঁচিয়া থানাটি ১৯৮৩ সালের ১২ ডিসেম্বর বগুড়া জেলার মধ্যে প্রথম পর্যায়ে উপজেলায় উন্নীত হয়। পরবর্তীতে ২০০০ সালের ২০ এপ্রিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রলায়ের আদেশ বলে দুপচাঁচিয়া পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়।

শিক্ষা

দুপচাঁচিয়া উপজেলাতে সরঃ প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৮৪ টি[৩], মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে ২৬ টি, মাদ্রাসা আছে ২৬ টি, কলেজ আছে ৮ টি[৪]। দুপচাঁচিয়াতে বর্তমানে শিক্ষার হার ৫৬.৫%। উপজেলার একমাত্র সরকারি কলেজ হচ্ছে সরঃ শাহ্‌ এয়তেবারিয়া কলেজ। উল্লেখযোগ্য কলেজগুলির মধ্যে দুপচাঁচিয়া জে, কে, কলেজ এবং দুপচাঁচিয়া মহিলা ডিগ্রী কলেজ অন্যতম। এছারাও তালোড়া আলতাফ আলী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), দুপচাঁচিয়া মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৩), দুপচাঁচিয়া পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (১৯৪৪) দুপচাঁচিয়া উপজেলার উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

কৃষি

দুপচাঁচিয়া উপজেলাতে মোট জমির পরিমাণ ২৪,০৫৪ হেক্টর। এতে মোট ফসলী জমির পরিমাণ ৫৫,৬৯০ হেক্টর। অধিকাংশই দুই ফসলী জমি বা তিন ফসলী জমি। জমিতে সেচ দেয়ার জন্য গভীর নলকূপ আছে ৫৬৭ টি এবং অ-গভীর নলকূপ আছে ৬৯৯ টি। এ উপজেলাতে বাৎসরিক মোট ১,৩২,০০০মে: টন খাদ্য উৎপাদিত হয় যেখানে বাৎসরিক খাদ্য চাহিদা ৩৭,৯৯০মেঃ টন। উদ্ধৃত খাদ্য রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়।

অর্থনীতি

কৃষিপণ্যঃ দুপচাঁচিয়া উপজেলার কৃষিপণ্যকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। খাদ্যশস্য জাতীয়- ধান, গম, আলু, সরিষা। শাক সবজি- লাউ, শিম, লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাল শাক, পালং শাক, ঢেঁড়স, ডাটা শাক, সজিনা, বরবটি, কচু। মসলা- পিঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, মরিচ

খোলাশ খেলনা শিল্পঃ উপজেলার আড়াই কিঃ মিঃ উত্তরে ঐতিহাসিক ধাপসুলতানগঞ্জ হাটের পরেই খোলাশ গ্রাম। এ গ্রামের মোন্না পাড়ায় বহু পরিবার খেলনা শিল্পের সাথে জড়িত। শুরুতে এখানে টমটম, ঘিরনি সহ ৭/৮ ধরনের খেলনা তৈরি হত। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে প্লাস্টিক খেলনা তৈরিতে জড়িয়ে পড়েছে এসব শিল্পীরা। দেশের বিভিন্ন স্থানে এ এলাকার খেলনার কদর রয়েছে।

এলুমিনিয়াম ফ্যাক্টরিঃ তালোড়ায় ১৯৫৪ সালে উত্তর বঙ্গের প্রথম এলুমিনিয়াম ফ্যাক্টরি স্থাপিত হয়। লাদুরাম আগারওয়ালা নামে এক মারোয়ারী খেতওয়াত এলুমিনিয়াম ফ্যাক্টরি চালু করেন। পরবর্তীতে আরও বেশ কয়েকটি এলুমিনিয়াম ফ্যাক্টরি এখানে গড়ে উঠে। এসব ফ্যাক্টরিতে উৎপাদিত মালামাল উত্তরবঙ্গ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সমাদৃত।

মিল-চাতালঃ উত্তরবঙ্গের মধ্যে দুপচাঁচিয়া উপজেলার চাল প্রসিদ্ধ। এ উপজেলার চাল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে সুনামের সাথে বিক্রি হয়। এ উপজেলায় ৫ শতাধিক চাতাল ও চাউলকল স্থাপিত রয়েছে। উপজেলা সদর, তালোড়া, চৌমুহনী ও সাহারপুকুরে এ ধরনের মিল চাতাল বেশী।

তাঁত শিল্পঃ দুপচাঁচিয়া উপজেলার তাঁত শিল্পের ইতিহাস বহু পুরাতন। দুপচাঁচিয়া থানা সৃষ্টির অনেক আগে তাঁত শিল্প গড়ে উঠেছিল। তাঁত শিল্পের তৈরি ধূপছায়া নামক শাড়ী এ অঞ্চলে প্রসিদ্ধ ছিল। কালক্রমে ধূপছায়া শাড়ীর নাম থেকেই দুপচাঁচিয়া নামকরণ করা হয়েছে বলে কথিত আছে। পরে তাঁত শিল্পের বিলুপ্তি ঘটে। এ তাঁত সূত্র ধরেই উপজেলার দেবখন্ড তাঁতিপাড়া, নলঘড়িয়া, ডাকাহার গ্রাম, তারাজুন গ্রাম, চান্দাইল গ্রাম, নূরপুর গ্রাম, নওদাপাড়া, ফুটানিগঞ্জ গ্রামের প্রায় ৩ শত পরিবার এ তাঁত শিল্পের সাথে জড়িত হয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। এসব তাঁত শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে গায়ের চাদর, গামছা, লুঙ্গি, বিছানার চাদর উল্লেখযোগ্য।

মৎস্য চাষঃ দুপচাঁচিয়া উপজেলায় প্রায় ৩,৫০০ টি পুকুর ও ৪৪৬ টি জলাশয় রয়েছে। উপজেলার খাস পুকুরগুলো সরকারীভাবে লিজ দিয়ে মাছ চাষ করা হয়। এছাড়াও ব্যক্তিগত পর্যায়ে পুকুরগুলোকে ব্যবসায়ের কেন্দ্র হিসেবে ব্যাপকভাবে মাছ চাষ করা হয়। উপজেলার অধিকাংশ পুকুর ও জলাশয়ে রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প, পাংগাস মাছ ব্যাপকহারে চাষ করা হয়ে থাকে। ব্যাপকভাবে মাছ চাষ বিস্তার লাভ করায় মাছের পোনার চাহিদা পূরণের জন্য অনেক মৎস্য বীজাগার অত্র এলাকায় গড়ে উঠেছে।

গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগী পালনঃ ২০০৬ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী উপজেলা পশু পালন অফিস সূত্রে জানা যায় গরুর সংখ্যা ২৭১৫০ টি, মহিষের সংখ্যা ৩১২০ টি, ছাগলের সংখ্যা ২৪,৭৮৬ টি, ভেড়ার সংখ্যা ৫২৪২ টি, মোরগ-মুরগীর সংখ্যা ৪৫,৬৮২ টি, হাঁসের সংখ্যা ৪৮৩০২ টি। উপজেলায় ২৬ টি ডেইরী ফার্ম ও ২৯ টি মুরগীর ফার্ম গড়ে উঠেছে।

দুপচাঁচিয়া উপজেলাতে সরকারী ও বেসরকারী মিলেয়ে ব্যাংকের সংখ্যা ১১টি।

বিবিধ

দুপচাঁচিয়াতে সরকারী হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিক এর পাশাপাশি বেশ কিছু ক্লিনিক বেসরকারীভাবে গড়ে উঠেছে। বর্তমানে দুপচাঁচিয়া উপজেলাতে ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে ০১টি, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কেন্দ্র আছে ০৪টি, কমিউনিটি ক্লিনিক আছে ২৪টি এবং বেসরকারী ক্লিনিক আছে ০৮ টি। বগুড়া জেলার সবচেয়ে বড় হাট "ধাপের হাট" এই দুপচাঁচিয়াতেই অবস্থিত। এছারাও আরও ছোট-বড় ২১ টি হাট-বাজার আছে।[১]

ঐতিহাসিক উল্লেখযোগ্য স্থান

ধাপসুলতানগঞ্জঃ ধাপসুলতানগঞ্জ একটি প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক স্থান। দুপচাঁচিয়া উপজেলার উত্তরে নাগর নদের তীরে এর অবস্থান এবং উপজেলা সদর থেকে এটি দেড় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। স্থানটির নাম হয় ধাপসুলতান নামকরণ করা হয় করাণ কথিত রয়েছে এখানকার ঢিবি বা ধাপের উপর হযরত শাহ্ সুলতান বলখী (রঃ) এর আস্থানা ছিল। এছাড়াও দুপচাঁচিয়া পৌরসভার নিয়ন্ত্রানাধীন গো-হাটের জন্যও স্থানটি বিখ্যাত।

বেড়ুঞ্জঃ দুপচাঁচিয়া উপজেলার চামরুল ইউনিয়নের প্রাচীন গ্রাম হিসেবে বেড়ুঞ্জে অনেক পুরাতন পুকুর, অট্টালিকা, মসজিদের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। লোকমুখে জানা যায়, খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দির শেষ দিকে সৈয়দ হোসেন আলী নামক আরবের একজন সাধক ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে স্বীয় স্ত্রী এবং কিছু সংখ্যক শিষ্য সমেত এ অঞ্চলে আগমন করেন। পরবর্তীতে এখানে একটি পরগনার পত্তন করেন।

গোবিন্দপুর মন্দিরঃ গোবিন্দপুর মন্দির গোবিন্দপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর মৌজার একটি প্রাচীন মন্দির। বর্তমানে মন্দিরের জমিতে গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও সরঃ প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পূবেই এ মন্দির থেকে পাথরের পুরাতন মূতি নিয়ে মহাস্থানগড়ে স্থাপন করা হয়। এছাড়াও এখানকার মন্দিরের দেওয়ালে অন্তর্ভাগে ও বহিঃর্ভাগে অনেক হস্তশিল্প রয়েছে।

গান্ধি ভিটাঃ এ উপজেলার তালোড়ায় উনবিংশ শতাব্দির প্রথমদিকে উপমহাদেশের বিখ্যাত রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব মহাত্মা গান্ধী আসেন ও ৮/১০ দিন অবস্থান করেন। পরবর্তীতে জায়গাটি গান্ধি ভিটা নামকরণ করা হয়। এখানে অবস্থানকালীন সময়ে তিনি তালোড়া তিন মাথা থেকে দূর্গাপুর সড়কের ২ শত গজ দক্ষিনে রাস্তার পূর্ব পার্শ্বে চরকাই টোল (স্কুল) উদ্বোধন করেন।

স্মৃতি অম্লান

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস

১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে গোটা বাংলাদেশের বৃহত্তম জনগোস্টি যেমন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে তেমনি দুপচাঁচিয়া উপজেলার অধিবাসীরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৭১ সালে এই উপজেলার অবস্থানগত গুরুত্ব ছিল যথেষ্ট। এই উপজেলা বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়কের মাঝে হওয়ায় এবং উপজেলার মধ্যে তালোরা ও আলতাফনগর রেলওয়ে ষ্টেশন থাকায় একাত্তরের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে এই উপজেলা নানাভাবেই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অসহযোগ আন্দোলনের সময় সারা দেশের ন্যায় এই এই উপজেলাও সংগ্রাম মুখর হয়ে ওঠেছিল। ৭ ই মার্চে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণার পর এই উপজেলার সচেতন নেতা ও কর্মীদের মধ্যে আসন্ন স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহণের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। এ উপজেলা হিন্দু অধ্যুষিত হওয়ায় পাক বাহিনীর বর্বরোচিত হামলার পরিমান ছিল খুব বেশী। উপজেলা সদরে বাড়ি ঘরে আগুন লাগানো, মানুষ হত্যা, লুটপাট ও বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় এলাকার দামাল ছেলেরা সশস্ত্র যুদ্ধে যাবার প্রেরণা পায়। নয় মাসে সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কালে এ উপজেলার প্রায় দেড়শ মুক্তিযোদ্ধা ভারত ও দেশের অভ্যন্তরে প্রশিক্ষণ নিয়ে শত্রু সেনাদের প্রতিরোধ ও তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ছিলেন এফ এফ ( ফ্রিডম ফাইটার বা মুক্তিযোদ্ধা) এবং মুজিব বাহিনী। মুজিব বাহিনীর নেতৃত্ত্বে ছিলনে এ, বি, এম শাহজাহান। বিভিন্ন এফ এফ দলের নেতৃত্ত্বে ছিলেন মাহবুবুর রহমান মুকুল, আবুল কাসেম গেরিলা, নজরুল ইসলাম, মজিবর রহমান, আব্দুল মালেক সরকার, সৈয়দ বদরুল আলম দুলাল, এ, টি, এম সিরাজুল ইসলাম, শামসুল হক প্রমুখ।

এ, বি, এম শাহজাহান ভারতে গেরিলা প্রশিক্ষণ নিয়ে এ এলাকায় আসার আগে এই উপজেলার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৩/৪ টি দল (প্রতি দলে ১২-১৫ জন করে) বিভিন্ন অবস্থানে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কিছু অপারেশনে অংশ নিচ্ছিল। এ, বি, এম শাহজাহান প্রশিক্ষণ শেষে এলাকায় আসার পর গোবিন্দপুর, তালোড়া, গুনাহার ইউনিয়ন সহ পার্শ্ববর্তী উপজেলা কাহালু, আদমদীঘি ও নন্দীগ্রামের মুক্তিযোদ্ধারা এ, বি, এম শাহজাহানের সমন্বিত নেতৃত্ত্বে চলে আসেন। মুক্তিযোদ্ধারা উপজেলার বড় চাপরা রেলওয়ে ব্রীজ ৭১ এর আগস্ট মাসের প্রথম দিকে, জিয়ানগরের আক্কেলপুরে রায়কালী রাস্তার উপরের ব্রীজ আগস্ট মাসের শেষ দিকে, কাহালু ব্রীজ ধ্বংস করা সহ বেশ কিছু অপারেশনে অংশ গ্রহণ করে। এছাড়াও দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরে অবস্থিত ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনে রেস্টুরেন্ট ই, পি, আর এর ওপর হানা দিয়ে ২ জন ই, পি আরকে হত্যা করে। একাত্তরের নয় মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য হাসান আলী তালুকদারও মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত ও প্রশিক্ষণের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

দুপচাঁচিয়া উপজেলায় একাত্তরে ১০ এপ্রিল রাতে পাকহানাদার বাহিনী প্রথম প্রবেশ করে। পরদিন সকালে থানা সদরে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে সতীশ চন্দ্র বসাকের দোকানে হানা দিয়ে তাকে প্রথমে গুলি করে হত্যা করে। পরে তার দোকানে আগুন জ্বালিয়ে তাকে সহ গোটা দোকান পুড়িয়ে ফেলে। সেই সাথে আওয়ামীলীগ সেক্রেটারি ডাঃ এ, এস, এম আনোয়ার হোসেনের দোকান ঘর সহ একই দিনে জমিদার বাড়ীর ক্ষিতীশ চন্দ্র চৌধুরীর বাড়ীতে আশ্রয় নেয়া মম্মথ চন্দ্র কুণ্ডু ও তার পরিবার সহ ৮/৯ জনকে একই সাথে হত্যা করে।[৫]

মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে খণ্ড খণ্ড যুদ্ধে এই উপজেলার চার জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাঁরা হলেন শহীদ নজরুল ইসলাম, পিতা-নজাবত আলী, সাং-ডিমশহর; শহীদ নিজাম উদ্দিন, পিতা-হালিম উদ্দিন প্রাং, সাং-গোবিন্দপুর; শহীদ মুনছুর রহমান, পিতা-আব্বাস আলী, সাং-গাড়ী বেলঘড়িয়া; শহীদ গোলাম মোস্তফা, পিতা-মেছের আলী ফকির, সাং-পাঁচথিতা, দুপচাঁচিয়া, বগুড়া। এছাড়াও পদ্মপুকুর ও চৌধুরীপাড়া বধ্যভূমিতে আরও নাম জানা অজানা অনেকেই হত্যা করা হয়।[৬]

কৃতী ব্যক্তিত্ব

আরও দেখুন

বহিঃসংযোগ

তথ্যসূত্র

  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন, ২০১৪)। "এক নজরে দুপচাঁচিয়া"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই, ২০১৪  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  2. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন, ২০১৪)। "দুপচাঁচিয়ার ইতিহাস"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই, ২০১৪  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  3. উপজেলা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ঃ ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩
  4. উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়; ৩০সে ডিসেম্বর, ২০১৩
  5. মোঃ আনিছুল ইসলাম লিটন, সাংবাদিক, দৈনিক প্রথম আলো
  6. মাহবুবুর রহমান মুকুল, বীর মুক্তিযোদ্ধা