কুরআনের ইতিহাস
এই নিবন্ধটিতে একজন বিশেষজ্ঞের মনোযোগ প্রয়োজন।(মে ২০১৮) |
এই নিবন্ধটির তথ্যসমূহের যথার্থতা সম্পর্কে বিতর্ক রয়েছে। (মে ২০১৮) |
কুরআন |
---|
ধারাবাহিক নিবন্ধশ্রেণীর অংশ |
পবিত্র কুরআনের ইতিহাস বলতে নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর ধারাবাহিকভাবে নাযিলকৃত আয়াত গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করাকে বোঝানো হয়। এটি কয়েক যুগ যাবত ব্যাপ্ত ছিল এবং ইসলামের প্রাথমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
মুসলমানদের বিশ্বাস ও ইসলামি গবেষকদের তথ্য মতে, কুরআন নাযিল ৬১০ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়, যখন ফেরেশতা জিবরাইল (Arabic: جبريل, Jibrīl or جبرائيل, Jibrāʾīl) মক্কা নগরীর হেরা পর্বতে, সর্ব প্রথম কোরআনের সূরা আলাক্ব এর প্রথম পাঁচটি আয়াত নবী মুহাম্মাদ ﷺ কে পাঠ করান। আর এই ধারাবাহিকতা ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর ইন্তেকালের মাধ্যমে শেষ হয়।[১] আমরা আজ যে কোরআন গ্রন্থাকারে দেখতে পাই, সেটি সংকলন করেছেন ইসলামের তৃতীয় খলিফা উসমান রাযিআল্লাহু তা'আলা আনহু(৬৪৪ থেকে ৬৫৬)। তিনি আমিরুল মু'মিনিন বা বিশ্বাসীদের নেতা হিসাবে তার খিলাফতের (ইসলামিক সরকারের) সময় হুুযায়ফা ইবনে ইয়েমেনি (রা:) এর পরামর্শে এ দায়িত্ব পালন করেন। যার জন্য তাকে আজও জামিউল কুরআন বা কুরআন সংকলনকারি বলা হয়। আর পুরো বিশ্বে তার সময়ে লিপিবদ্ধ করা কুরআন প্রচলিত রয়েছে। অধ্যাপক ফ্রান্সিস এডওয়ার্ড পিটার্স এর ভাষ্যমতে, কুরআন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে, পক্ষপাত এড়াতে অত্যন্ত রক্ষণশীলতা ও সর্বাধিক সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।[২]
প্রাতিষ্ঠানিক পণ্ডিতদের মতে ব্যুৎপত্তি
[সম্পাদনা]কুরআনের ব্যুৎপত্তি দীর্ঘ সময় যাবত প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণার বিষয়বস্তু হিসেবে রয়েছে।[৩] অনেক বিশেষজ্ঞই কুরআনের সৃষ্টি কীভাবে হলো, এ প্রসঙ্গে যে সুপ্রাচীন ধারণা আছে; তাকেই গ্রহণ করেছে। যেখানে ঐশীর প্রাপক হিসেবে মুহম্মদের ভূমিকা সংকলক হিসেবে প্রাথমিক খলিফাদের ভূমিকা থেকে ভিন্ন।[৩] কুরআনের বুনিয়াদী যে দৃষ্টিভঙ্গি আছে; তা যেন পরিমার্জন করা হয়, এমনকি এর যে মৌলিক নীতি আছে তাও যেন পুনঃমূল্যায়ন করা হয়, সে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছিল।[৩] ইসলামিক বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ফ্রেড ডোনার কোরআন নিয়ে গবেষণার জায়গাটিকে সারসংক্ষেপ করে ২০০৮ সালে বলেনঃ[৪]
কুরআন নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা একপ্রকার বিশৃঙ্খল গবেষণায় দাড়িয়েছে। আমাদের মধ্যে যারা ইসলামের সূচনাকাল নিয়ে গবেষণা করে, আমাদের এটা মেনে নিতে হবে যে, আমরা কুরআনের ভিত্তিগত বিষয় জানি না। এরকম কিছু প্রশ্ন হলোঃ কীরূপে কুরআনের সূচনা হলো? কোথা থেকে এটি আসলো? এবং প্রথম কখন এটি দৃশ্যমান হলো? এর প্রথম লেখা কেমন ছিল? কোন ভাষায় এটি লেখা হলো? আদৌ কী লেখা হয়েছিল? এর প্রথম গঠন কেমন ছিল? এর প্রথম শ্রোতা যারা হবেন, তা কে নির্ধারণ করেছিল? কীভাবে এটি এক প্রজন্ম থেকে অপর প্রজন্মে (বিশেষ করে কোরান সৃষ্টির প্রথম দিকে) সংরক্ষিত হলো? কখন, কোথায় এবং কে একে সংগ্রহ করে লিপিবদ্ধ করলো? যারা কোরআন নিয়ে গবেষণা করে, তাদের মধ্যে এ বিষয়গুলোর উত্তর নিয়ে তীব্র রকমের অনৈক্য আছে এবং কোরআন গবেষকদের কাছে এ প্রশ্ন গুলোর উত্তর অন্বেষন করতে গেলে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয় এবং যাতে বিতর্ক স্ফুলিঙ্গের মত ফেটে উঠতে পারে।
জন ওয়ান্সবোরো, মিশাইল কুক এবং প্যাট্রিশিয়া ক্রোন এর মত বিশেষজ্ঞরা পুরো কুরআন তৈরীর কৃতিত্ব মুাহম্মাদ সা: (অথবা উসমান ইবন আফ্ফান) কে দিতে নারাজ। তাদের মতে, "এখন আমরা কুরআন মাজিদ নামক যে গ্রন্থ দেখি, এরকম কোনো গ্রন্থের অস্তিত্ব ৭ম শতকের শেষ দশকের পুর্বে দেখাই যায় নি...আর এই মতবাদ দ্বারা বরং এর ঐতিহাসিক ভিত্তি অস্পষ্ট হিসেবেই প্রতীয়মান হয়। প্রমাণ হয় কুরআন মাজিদের অস্তিত্ব অষ্টম শতক-এর মধ্যভাগের পূর্বে ছিল না।" "এমন কোনো প্রমাণ নেই যে, কোরআনের লিপি উসমান ইবন আফ্ফানের অধীনে সংগৃহীত হয়েছিল। কুরআনের প্রথমদিকের যে অবশিষ্টাংশ গুলো পাওয়া গিয়েছে তা উসমান ইবন আফ্ফানের শতবছর পরে (সবচেয়ে প্রাচীন অস্তিত্বত্বমান সম্পূর্ণ কুরান শরীফ ৯ম শতকের পুরাতন।[৫]) তাদের মতে মুসলিম শাসকদের রাজ্য বিজয়ের মাধ্যমে ইসলাম ধীরে ধীরে গঠিত হয়েছে এবং ইহুদী ও খ্রিষ্টানদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের প্রতিক্রিয়ায়, মুসলিম রাজ্য বিজেতারা তাদের বিশ্বাসকে বিস্তৃতভাবে ইসলামের সাথে মিশেল করেছেন।[৬]
দাবী করা হয়, এইজাতীয় বিশেষজ্ঞরা বৈজ্ঞানিক প্রমাণের ভিত্তিতে ভুল প্রমাণিত হয়েছেন কারণ কুরআনের কিছু পুর্বেকার দলিল পাওয়া গিয়েছে। ফ্রেড ডোনারের "ন্যারেটিভ অব ইসলামিক অরিজিনস:দ্য বিগিনিংস অব ইসলামিক হিস্ট্রিকাল রাইটিং" এর প্রথম অনুচ্ছেদে এই সমস্ত যুক্তিকে খণ্ডন করা হয়েছে।[৭] ডোনারের দৃষ্টিভঙ্গী বর্তমানে মূলধারার বিশেষজ্ঞদের প্রতিনিধিত্ব করে[৮] ব্রান্ডিস বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্রুপদী ইসলামের সহকারী অধ্যাপক জোসেফ ই.বি লুমবার্ড; ২০১৫ সালে বার্মিংহাম কুরআনের প্রাচীন পত্র সংগ্রহে নের্তৃত্ব দেন, তিনি বলেন:[৯]
সাম্প্রতিক সময়ের এই আবিষ্কার; মৌলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই আবিষ্কার থেকে এটাই অনুমিত হয়ে উঠে, ধ্রুপদী ইসলামিক উৎস থেকে কুরআনের পাঠ্যের যে ইতিহাস বর্ণিত হয়; তা সঠিক। পশ্চিমা তাত্ত্বিকদের সিংহভাগ কুরআনের ইতিহাস নিয়ে যে সন্দেহ পোষণ করেছে; তা অসমর্থনযোগ্য
— জোসেফ ই. বি. লুমবার্ড
কুব্বাত-আস-সাখরা কুরআনের প্রাচীনত্ব নির্ধারনী আগ্রহোদ্দীপক স্থাপত্য নিদর্শন।[১০] এ স্থাপনায় খোদাইকৃত আয়াত বিদ্যমান। পণ্ডিতেরা এইসব খোদাইকৃত লিপির অস্তিত্ব সম্বন্ধে কয়েক শতাব্দী যাবত অবহিত । এগুলো বারংবার তাদের অনুবাদের বিষয়বস্তু হিসেবে থাকা সত্তেও এখনো সেই উপাদানটির উপর খুব কমই নজর দেয়া হয়েছে যেটা থেকে এইসব খোদাইকৃত লিপি, অনুলিপি করা হয়েছে। এই অষ্টভুজাকৃতি কুব্বাত আল সাখরার সম্মুখদিকে রয়েছে কালিমা শাহাদাহ্ ও কিছু আয়াত, যা আল্লাহর প্রশংসা ও তার ক্ষমতার ঘোষণা দিচ্ছে। এরপর মুহাম্মদের নাম এবং তার প্রশংসা বর্ণীত হয়েছে , এটি কুরআন থেকে সরাসরি উদ্ধৃত করা হয় নি। এটি ৬৯৪ সালের দিকে ব্যবহৃত হয়েছিল (শাহাদা)। তারপর খ্রিষ্টানদের উদ্দেশ্যে ধর্মীয় বানী বর্ণীত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, যীশুখ্রিষ্ট ছিলেন একজন নবী এবং মরণশীল মানুষ; যা খৃষ্টান বিশ্বাসের সাথে পুরোপুরি মেলেনা। অতঃপর দাবী করা হয়েছে যে, আল্লাহ সর্বশক্তিমান এবং তিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ। সবশেষে একটি আদেশ দেয়া হয়েছে যেখানে তার আনুগত্যের প্রতি নির্দেশ এবং অমান্যকারীকে কঠিন শাস্তির সাবধানবানী করা হয়েছে।[১০]
ওয়ান্সবোরো প্রায় হার্মাটিক স্টাইলে জটিল করে লিখতেন[১০] ইসলামিক বিষয়ের উপর তার গবেষণা তার শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত করেছিল। তার শিক্ষার্থী ক্রোন ও কুক ১৯৭৭ সালে হ্যাগারিজমঃ দ্য মেকিং অব দ্য ইসলামিক ওয়ার্ল্ড শিরোনামে যুগপৎভাবে একটি বই লিখেন। তৎকালীন সময়ে এটা নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠে, কারণ তা শুধু মুসলিমদের বুনিয়াদী ভাবনাকেই আঘাত করেনি বরং ধর্মনিরপেক্ষ ইসলামিক গবেষকদের প্রচলিত ভাবনায়ও একটা ধাক্কা দিয়েছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
ক্রোন, ওয়ান্সবোরো এবং নেভোর মতে তৎকালীন বিভিন্ন ঘটনা সম্বন্ধে আমরা যা জানি এবং এই জানার উৎস হিসেবে যে আদি তথ্যসূত্র ব্যবহার করা হয়, এই তথ্যসূত্রগুলো সৃষ্টি হয়েছে মুল ঘটনার ১৫০-৩৫০ বছর পরে। অর্থাৎ, একটা ঘটনা হয়তো আজকে ঘটেছে কিন্তু সাথে সাথে তা লিপিবদ্ধ হয় নি, তা মুখে মুখে প্রচলিত হয়ে ৩০০ বছর পরে হয়ত কেউ সেই ঘটনাটা লিপিবদ্ধ করলেন। এইরকম বিষয়ের কারণে গবেষকরা মনে করছেন, যে তথ্যসূত্র থেকে ঘটনা জানা যায়, তা নির্ভরযোগ্য নয়, এবং মূল ঘটনা অন্য হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।[১১][১২][১৩]
ইসলামিক সভ্যতার প্রথম শতকের সমসাময়িক প্রকৃত তথ্যসূত্র না থাকায় কুরআন শরীফের নিশ্চয়তা নিয়ে নানামুখী প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে। যদিও সেসময়কার কিছু ইতিহাস বিভিন্ন শিলালিপি ও মুদ্রায় সংরক্ষিত হয়েছে।[১৪] এই ক্ষুদ্র পরিমাণ ইতিহাসকে কুরআনের উদ্ভবের নির্ভরযোগ্য ইতিহাস হিসেবে গণ্য করতে অনেক বিশেষজ্ঞই অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছেন। উপরে উল্লেখিত কুব্বাত আল সাখরা স্থাপনায় কুরানের আয়াত থাকার পাশাপাশি আবাদ আল মালিক ইবনে মারওয়ানের সময়কালে মুদ্রায় (৬৯৭-৭৫০ খ্রি.) কুরআনের অনুচ্ছেদ মুদ্রিত হয়েছে। এই অনুচ্ছেদে কুরান শরীফের ১১২:১-৩ (অথবা ৪) পর্যন্ত সম্পূর্ণ আয়াত বর্নিত হয়েছে। শুধুমাত্র "বাসমাল্লাহ" এবং সূচনা শব্দ "বলো" বাদ গিয়েছে। এই অনুচ্ছেদে ৯:৩৩ এর আয়াত একটু ভিন্নতা সহকারে বর্ণিত হয়েছে: তিনি (আল্লাহ) তাকে (মুহম্মদকে) পথপ্রদর্শক ও সত্য ধর্মের বার্তা সহকারে পাঠিয়েছে; যা সকল ধর্মের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।" কুব্বাত আল সাখরায়ও সমান্তরালভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, ইসলাম ধর্ম খ্রিষ্ঠান ধর্মের চেয়েও প্রাচীন, প্রাচীন অন্য সকল ধর্ম থেকে।[১০]
সন্দেহবাদী বিশেষজ্ঞরা মুহম্মদের জীবনীকার ইবনে ইসহাকের লেখা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলেছেন, একেতো ইবনে ইসহাক মুহম্মদের মৃত্যুর প্রায় একশ বছর পরে মুহম্মদের জীবনী বর্ণনা করেছেন, তার উপর এর পরে যারা মুহম্মদের জীবনী বর্ণনা করেছেন, তাদের বর্ণনায় ইবনে ইসহাকের চেয়ে অনেক বেশি বর্ণনাসংক্রান্ত বিষয় ছিল। পরবর্তী জীবনীকারদের বর্ণনার উৎস কোথায় এটা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন সন্দেহবাদী বিশেষজ্ঞরা।[১৫]
কুরআনের উৎস্য নিয়ে গবেষণারত প্যাট্রিশিয়া ক্লোন এসম্পর্কিত সপ্তম ও অষ্টম শতকের অমুসলিম গ্রীক, আর্মেনীয়, হিব্রু, আরামীয়, সিরিয়াক ও কপটিক দলিলগুলো নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন যেগুলো অনেক ক্ষেত্রেই প্রথাগত ইসলামী ব্যাখ্যার বিরুদ্ধে যায়। তিনি যুক্তি দেখান, একটি বৃহৎ ভৌগোলিক অঞ্চল জুড়েই এই অমুসলিম উৎস্যসমূহের সঙ্গতি লক্ষ্য করা যায় যা থেকে অমুসলিম ও ইসলামবিরোধী উদ্দেশ্যের সন্দেহগুলো নাকচ হয়ে যায়।[১৬]
ক্রিস্টফ লুক্সেমবার্গ দ্বারা কুরআন এর উৎস্যের ব্যাখ্যার এই সন্দেহবাদী ধারাটি আরও বিস্তৃত হয়। তিনি কুরআনের পরবর্তি সময়ে রচনার দাবীকে সমর্থন করেন এবং বলেন যে এর অনেকাংশই মুহম্মদ ভিন্ন উৎস্য থেকে নেয়া হয়েছে। লুক্সেনবার্গ তার অভিসন্দর্ভের জন্য বিখ্যাত, যেটি বলে কুরআন সিরিয়াক ভাষায় রচিত একটি প্রাথমিক খ্রিস্টীয় সংকলনের পুনর্লেখন।[১৭] (জার্ড আর. পুইন এবং কোরানে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট নিবন্ধ দুটিও দেখুন।)
ফ্রেড ডোনার কুরআন নিয়ে তার বক্তব্যে বলেন, যদি কুরআন ইসলামিক বিজয়ের শাসনামলে সংগ্রহ করা হত, বা সেসময় লিখা হত, তাহলে সেসব রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ আর খলিফাদের মধ্যে বিবদমান যুদ্ধের ইতিহাস সম্বন্ধে কিছু না কিছু লিপিবদ্ধ থাকত। অথচ এমনটা হয় না। কুরআন পরে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রথম দিকের কোনোকিছুই জানা যায় না।[১৮]
১৯৭২ সালে ইয়েমেনে বিখ্যাত মসজিদ সানার পুনঃস্থাপনের সময়, শ্রমিকেরা হঠাৎ করে, কাগজের স্তুপ আবিষ্কার করেন। এটা ছিল কুরআনের আয়াত সংবলিত দশ সহস্রাধিক কাগজের টুকরো। বিশ্বাস করা হয়, এর মধ্যে এর মধ্যে কিছু টুকরো এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত সবচেয়ে পুরাতন টুকরো।[১৯]
বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নের্তৃত্বে কুরআনের কিছু অংশ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে এর কার্বন ডেটিং করার পর ৯৫.৪ শতাংশ ক্ষেত্রে নিশ্চিত হয়ে বলা যায় ৫৬৮ থেকে ৬৪৫ খ্রিষ্ঠাব্দের মধ্যে কুরআনের আয়াত লিখা হয়েছিল। সাধারণের মতে মুহম্মদ ৫৭০ খ্রিষ্ঠাব্দ থেকে ৬৩২ খ্রিষ্ঠাব্দ পর্যন্ত বেচেঁ ছিলেন। মুহম্মদ (সা:) এর জীবনী আর কোরানের আয়াত সংবলিত এই পাতার বয়স দেখে এটাই অনুমান করা যায় যে, সম্ভবয় কুরানকে বই হিসেবে মুহম্মদের বেচেঁ থাকার সময়ে বা তার মৃত্যুর পরপরই সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছিল।[২০]
বাইবেলের সাথে সাদৃশ্য
[সম্পাদনা]ব্যুৎপত্তি ও সংকলন
[সম্পাদনা]মুহাম্মাদ |
---|
বিষয়ের ধারাবাহিকের একটি অংশ |
ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে, কুরআন মুহাম্মদ স. এর উপর নাজিল হয়েছিল । তার চল্লিশ বছর বয়সে, ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে রমজান মাসের এক রাতে এটি শুরু হয়েছিল । ফেরেশতা জিব্রাইলের মাধ্যমে প্রাপ্ত আয়াত বা আল্লাহ্র বানী মানবজাতির নিকট পৌঁছে দেয়া ও লিপিবদ্ধ করার দায়ীত্ব তিনি পেয়েছিলেন।
ইমাম বুখারী (র) এর হাদীস গ্রন্থে উম্মুল মুমিনুন হয়রত আয়িশা হতে বর্ণিত আছে, যখন প্রথম কুরআন নাযিল হয় ফেরেশতা জিব্রাঈল আ. নবী মুহাম্মদ এর নিকট সাক্ষাত করেন এবং পাঠ করতে বলেন। নবী মুহাম্মাদ বলেন, মা আনা বিক্বারিউ। যার অর্থ বেশ কতটি হতে পারে। যেমন, 'আমি পড়তে পারি না' বা আমি কী পাঠ/আবৃত্তি করব? অথবা 'আমি তো পড়তে/অধ্যায়ন করতে জানি না। তিন বার এমন প্রশ্ন-উত্তর হল দু'জনের মাঝে। এর পর চতুর্থ বার জিব্রাঈল নবী মুহাম্মদকে(স) সমস্ত শক্তি দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলেন, তারপর ছেড়ে দিলেন। এরপর আবার বললেন, পাঠ করুন আপনার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে! পাঠ করুন আপনার পালনকর্তা মহা দয়ালুর নামে, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না"[২১]:৩৯–৪১ এরপর মুহাম্মদ এর নিকট ধারাবাহিক ভাবে দীর্ঘ ২৩ বছর সময়ে মানব জীবনের প্রয়োজন অনুযায়ী পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ হয়। যা ৬৩২ খ্রীস্টাব্দে তাঁর মৃত্যুর মাধ্যমে শেষ হয়।[২১]:৪৫
মুসলিমগণ বিশ্বাস করেন যে, জিব্রাঈল, আল্লাহ প্রদত্ত কুরআনের সকল কথা কোন প্রকার বিকৃতি ও পরিবর্তন ব্যতীত, নবি মুহাম্মাদ এর নিকট পৌঁছে দিয়েছেন। আল-কুরআন এই কথায় গুরুত্বারোপ করে, মুহাম্মদ (স) শুধুমাত্র গ্রহীতা বা সংবাদবাহক হিসাবেই পবিত্র কথাগুলো গ্রহণ করেন। আর এর কোন ব্যতিক্রম ঘটে নি।(১০:১৫)। আর এই কথাও বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ নিজে নিজের পরিচয় করান নি, যেটা তিনি করতে পারতেন, বরং তিনি প্রতিনিধি প্রেরণ করেন। আর নবি নিজের থেকে কিছুই বলেন না, তিনি সেটাই বলেন, যা তাকে বলা হয় ওহির মাধ্যমে।।[২২] নবি মুহাম্মাদ এর জন্য আয়াত গুলো খুবই বাস্তব ছিল, এর একটা প্রেক্ষাপটও ছিল, এ আয়াতগুলো দুই ধরনের - স্পষ্ট ও অস্পষ্ট আয়াত (আল ইমরান ৩:৭)। নবি (সা) শুধুমাত্র স্পষ্ট আয়াতের অর্থই জানতেন, এর অস্পষ্ট আয়াতের অর্থ জানতেন না।[২২]
যখন তাকে কুরআন অবতীর্ণের অভিজ্ঞতা জিজ্ঞাসা করা হয়, তখন তিনি বর্ণনা করেন,
"কখন কখন এটি ঘণ্টার ধ্বনির মত হয়,আর তখন ভয়ন্কর কষ্ট অনুভব করি। এ অবস্থা কেটে গেলে উপলব্ধি করি কি জানানো হয়েছে। আবার কখন অন্তরে ঢেলে দেয়া হয়, তা আমি বুঝতে পারি। কিছু কিছু সময় আমার নিকট মানুষের রুপ ধারণ করে ফেরেশতা জিব্রাঈল আসেন। আর আমাকে পাঠ করতে বলেন। আমি তখন তা দৃঢ়ভাবে আয়ত্ত করি। "[২১]:৪৩
তিনি এই অভিজ্ঞতাও বর্ণনা করেন যে, কোন সময় খুব যন্ত্রণা হয়। যেমন, "আমি শুনছি, অন্য কেউ বুুঝতে পারছে না, অথচ আমার অন্তরে গেথে যাচ্ছে।"[২১]:৪৩ আর এভাবেই মুহাম্মাদ পবিত্র কোনআনের ওহী গ্রহণ করেন ও তার সাথীদের সাহাবিদের পাঠ করাতেন, মুখস্থ করাতেন, তাদের দিয়ে লিখে রাখতেন। যদিও মক্কা বাণিজ্যিক নগরী ছিল, সে সময় অল্প সংখ্যক লোকই লিখতে জানতেন। এতদ্বসত্ত্বেও নবুওয়তের ২৩ বছরে ৪৮ জন সাহাবী লেখার দায়ীত্বে ছিলেন মর্মে বর্ণনা পাওয়া যায়। আর তিনি জিব্রাঈলের মাধ্যমে এটা কণ্ঠস্থ বা হিফজ্ করেন । প্রত্যেক রমজান মাসে নবী জিব্রাঈলকে সমগ্র কুরআন পাঠ করে শুনাতেন, আবার জিব্রাঈল নবী কে কুরঅান পাঠ করে শুনাতেন। প্রাথমিক যুগে কুরআন গাছের ছালে, পাথরে, খেজুর গাছের বাকলে সংরক্ষণ করা হত। কোরআন মাজিদ লেখার পাশাপাশি সাহাবিগণ মুখস্থ করে তার সংরক্ষণ করতেন। পুরো কুরআন মাজিদ হিফজ করার প্রচলন মুসলিমদের মাঝে এখনও বিদ্যমান রয়েছে। ইসলামের শুরু থেকেই লক্ষ লক্ষ মানুষ কুরআনের হাফেজ হয়ে আসছে। সপ্তম শতাব্দীর আরবের প্রেক্ষাপটে এটা তেমন কোন কৃতিত্বের ছিল না, যখন আরব বিশ্বে, কবিতা আবৃত্তি করা, কবিতা মুখস্থ করা ছিল গৌরবের বিষয়। তারা এতে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতাগুলোতে কবিতা ছিল সবচেয়ে আকর্ষনিয় বিষয়।[২৩]
ওহীর প্রকৃতি ও কাব্যিক বিষয় নিয়ে, মুশরিকগণ প্রশ্ন তুলেছিল। মুহাম্মদ আধ্যাত্যিক উৎস থেকে বিবেচনা করে তাদেরকে বুঝিয়েছিলেন। তবে তাদের জীবন ছিল কবিতা'র সাথে গভীর ভাবে সম্পর্ক যুক্ত । আর তাই মুহাম্মাদ যখন প্রথম মক্কায় ইসলাম প্রচার ও কুরআন আবৃত্তি করছিলেন তখন তাকে একজন 'কবি(২১.৫) বা ভুতে পাওয়া কবি' (৩৭.৩৬) হিসাবে আখ্যায়িত করে।[২৪]
কুরআন যেহেতু অন্য কোন গ্রন্থের মত এক সাথে অবতীর্ণ হয় নি, তাই এর প্রতিটি পরিচ্ছেদ, অধ্যায় সুসংবদ্ধ ছিল না। তাই এর সংরক্ষণ করা সময়ের দাবী হয়ে দাড়ায়। কুরআন সংকলন কখন শেষ হয় এটা নিয়ে মুসলিম অমুসলিম পণ্ডিতগণের মাঝে মতবিরোধ দেখা যায়। কিছু সংখ্যক বিশ্বাস করে যে নবী মুহাম্মাদ তার মৃত্যুর পূর্বেই কুুরআর সংকলন করেন। আবার কিছু সংখ্যক বিশ্বাস করে, অালি অথবা আবু বকর সাহাবা কুরআন সংকলন করেন।[২৫]
মুহাম্মদ স.
[সম্পাদনা]নবী করিম মুহাম্মাদ স. এর সময় কুরআনের আয়াত, সূরা পরিবর্তনের সম্ভাবনা ছিল। আর তাই তিনি সেই সময় কুরআন মুখস্থ করা ও অধ্যয়ন করার পদ্ধতি সাহাবিদের শিক্ষা দিতেন। যদিও সাহাবিগণ কুরআন সংকলন করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু নবি তাদের অনুমতি দেন নি। কারণ কুরআনের হুকুম বাতিল হতে পারত। তারপরও ইচ্ছা করলে যে কেউ সংকলন করতে পারতেন। তারপর মক্কা ছিল সেই সময়ে বিশ্বের অন্যতম বাণিজ্যিক নগরী । কিন্তু অধিকাংশ জনগণ লিখতে পারত না। তা সত্ত্বেওজায়েদ ইবনে সাবিত ও উবাই ইবনে কাব সহ অন্তত ৪৮ জনের নাম পাওয়া যায় যারা কুরআনের আয়াত লিখার দায়িত্বে ছিলেন,যারা কাগজ ছাড়াও খেজুরের ডাল, গাছের পাতা,বাঁশের টুকরা এবং চতুষ্পদ জন্তুর হাড্ডির উপর কোরআন লিখে রাখতেন। এভাবে নবী তত্ত্বাবধানে কোরআনের একটি কপি প্রস্তুত হয়ে যায় যদিও তা পুস্তিকা রূপে বা গ্রন্থিত আকারে ছিল না। তাছাড়াও সাহাবাদের কারো কারো কাছে ব্যক্তিগত ভাবে কোরআনের সম্পূর্ণ বা আংশিক কপি ছিল। যেমন ইবনে ওমর বলেন, নবী কোরআন বা কোরআনের কপি নিয়ে) শত্রু এলাকা ভ্রমণ করতে নিষেধ করেন। (বুখারী খন্ড ১ পৃ ৪১৯)।[২১]:৮৩
অধিকাংশ শিয়া ও সুন্নি আলেমগণের মতে, সম্পূর্ণ কোরআন নবী মুহাম্মাদের মৃত্যুর পূর্বেই সংকলিত হয়েছিল। ইবনে আব্বাস বলেন, "যেটা কুরআনের চূড়ান্ত লিপি সেটি সংরক্ষিত ছিল। কেননা নবি কুরআন তেলাওয়াত করতেন, আর জিব্রাঈল (আ) শুনতেন, আর জিব্র্রাঈল তেলাওয়াত করলে নবি শুনতেন" এটা হত প্রতি রমজান মাসে। আর তার মৃত্যুর পূর্বের রমজান মাসে মুহাম্মাদ দুই বার তিলওয়াত করে শুনান। যা থেকে সাহাবারা বুঝেছিলেন নবী এর মৃত্যু আসন্ন এবং সম্পূর্ণ কোরআন নাজিল সমাপ্তির।"[২৬] আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম,এবং তোমাদের উপর আমার নিয়ামতকে সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দ্বীন হিসাবে পছন্দ করলাম ইসলামকে( ৫:৩)। আয়াত দ্বারা কোরআন নাজিলের সমাপ্তি টানা হয়েছে। আবার কিছু সংখ্যক আলেমের মতে, কুরআন নবী জীবিত অবস্থায় অবতীর্ণ ও গ্রন্থকারে সাজানো হয়েছে আর তার কোন পরিবর্তন হয়নি। আর কুরআনের ঐতিহ্যগত আইন দ্বারা প্রকাশ পায়, মুহাম্মাদ ই-কুরআনের চূড়ান্ত ধারক, যেটা তিনি জিব্রাঈল এর কাছ থেকে ধারাবাহিক ভাবে শুনে শুনে অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।[২৭]
মুহাম্মদ (স:)বিদায় হজ্জ এর ভাষণে বলেন, আমি তোমাদের জন্য দুইটি ভারী জিনিস রেখে যাচ্ছি; এই দুইটি হল, আল্লাহর কিতাব-ও সুন্নতে রাসূল। একদল আলেম মনে করেন, যেহেতু কিতাব বলতে মুখস্থ কোন কিছু বা বিচ্ছিন্ন ভাবে লিখিত কোন লিখাকে বুঝায় না, তাই নবীর জীবদ্দশায় কোরআন মাজিদ বই আকারে সংকলিত হয়।[২৮] আবার, কিছু সংখ্যক আলেম মনে করেন, কুরআন লিপিবদ্ধ করা হয়েছে কিতাবে (মাকতাবে) যা সংগৃহিত ছিল এবং যা সাহাবিগণ লিখে রেখেছিলেন। কুরআনের সবটুকু তখন ঠিক ছিল তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছিল না। কারণ তখন ওহী অব্যাহত ছিল। কেবল মাত্র নবি (স) এর মুখস্থ করা আয়াতই ছিল সর্বাধিক সত্য।[২৯]
অন্য একদল আলেম (ইসলামি পণ্ডিত) মনে করেন, কুরআন হল সেটা যা মুহাম্মদ নিজে সংরক্ষণ করেছেন এবং তার জীবদ্দশায় যা সংরক্ষণ করেছেন বা করতে বলেছেন তাই। যেমন, জায়েদ ইবনে সাবিত বর্ণনা করেন, "আমরা কুরআন লিপিবদ্ধ করতাম আল্লাহর রাসূলের অনুমতির পর।"[৩০]
আবার অন্য কিছু ব্যক্তি বলেন, মুহাম্মদ জীবিত থাকাকালে এটা সম্ভব ছিল কুরআনের আয়াত যে কোন সময় পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংশোধন বা রহিত হওয়ার। সুতরাং ওহী সম্পূর্ণ নাজিলের পূর্বেই তা সংরক্ষণ করা নির্ভুল কিতাব হত না।[৩১]
আলি ইবনে আবু তালিব
[সম্পাদনা]আলি ইবনে আবি তালিব |
---|
ধারাবাহিক নিবন্ধের অংশ |
শিয়া অনুসারিগণ মনে করে আলী ব্যক্তিগত ভাবে কুরআনের একটি অনুলিপি তৈরী করেছিলেন। যেটি সংকলিত হয়েছিল নবী মুহাম্মদের মৃত্যুর ছয় মাস মধ্যে। আর তাদের মতে এটিই পবিত্র আল কুরআনের প্রথম ও পরিপূর্ণ সংকলন। তারা এও মনে করে নবী (স) এর আদেশে এই কুরআনের সংকলনটি সংরক্ষণ করা হয় ওহী নাযিলের পর থেকেই।[৩২] কতিপয় শিয়া অবলম্বিগন মনে করে আলির পাণ্ডুলিপির সাথে আজকের কুরআনের কিছুটা পার্থক্য ছিল।[২১]:৮৯–৯০ আবার কিছু শিয়া সম্প্রদায় মনে করে আলী কুরআন একত্র করেছেন, কিন্তু তার অনুলিপির বৈধতা ছিলা না। অন্য একটি শিয়া দল দাবী করে, "তিনি পবিত্র কুরআনের সম্পূর্ণ অংশ লিপিবদ্ধ করেছেন। যেখানে আয়াত, সূরা, পারা ইত্যাদির নির্ভুল বর্ণনা ছিল। যার মধ্যে কোন কিছুই বাদ পড়ে নি। এমনকি একটি একক অক্ষর আলিফ বা লাম পর্যন্তও না। তবে কোরআনের সংকলকগন এটাকে গ্রহণ করে নাই।"[৩৩] তারা বিশ্বাস করে আলী কর্তৃক লিপিবদ্ধ কুরআন ছিল সবচেয়ে উপযুক্ত, তবে উসমানীয় সাম্রাজ্যে আমরা আজ যে কুরআন দেখি সেটি নয়। তারা এটাও বিশ্বাস করে, কুরআনের সূরা পরিবর্তন করা হয়েছে, পাঠ পদ্ধতির কিছু অংশ পরিবর্তন এনেছে, তাবদিল, করে উম্মা থেকে ইমমা করা হয়েছে। তাছাড়া আলি খিলাফত এর অধিকার সংক্রান্ত আয়াত বাতিল করা হয়েছে। আর এ সকল পরিবর্তন করা হয়েছে ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকর এর খেলাফত কালে।[৩৪]
উপর্যুক্ত দাবীর বিপক্ষে সমসাময়িক শিয়া আলেম আবুল কাশেম আল-খুইল যুক্তি প্রদান করে বলেন, আলি কর্তৃক সংরক্ষিত অংশ কুরআনে যুক্ত হয়নি কারণ তা ছিল আয়াতের ব্যাখ্যা বা নবী এর হাদীস। তবু তিনি যে আয়াত সংগ্রহ করেছিলেন সে কথাটা সত্য। কুরআন ততটুকু যেটা আল্লাহ তায়ালা মানব জাতির জন্য অবতীর্ণ করেছেন আর মুসলিম বিশ্বও মেনে নিয়েছে।[৩৫]
আবু বকর (রা.)
[সম্পাদনা]সুন্নি আলেমগণের মতে, নবী (স) এর জীবিত অবস্থায় কুরআর লেখা বা সংরক্ষণ করা সীমাবদ্ধ ছিল তার সাহাবিদের মাঝে।[৩৬] তবে অনুমোদন প্রাপ্তগণ ছিলেন প্রায় ৪৩ জন। তাদের বাহিরে অনেকেই কুরআনকে পুরোপুরি মুখস্থ করেন। নবী মুহাম্মদের মৃত্যুর পর আবু বকর অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে অবাধ নীতি চালু করলেন। আর এই নীতি চালু থাকে ইয়ামামার যুদ্ধের পর্যন্ত যা সংঘটিত হয় ৬৩৩ খ্রিষ্টাব্দে।[৩৭][৩৮] এই যুদ্ধের সময়, ৭০ জন হাফিজে কুরআন শহিদ হয়। তখন হযরত ওমর কুরআন সংরক্ষণের গুরুত্ব অনুভব করেন। আর তিনি আবু বকর কে পরামর্শ দেন কুরআন সংরক্ষণ করতে। প্রথমে আবু বকর বিষয়টি আমলে না নিলেও পরে এর প্রয়োজনীতা বুঝতে পারেন। আর আবু বকর কুরআন সংরক্ষণে পূর্ণ মনোযোগ দেন।[৩৭][৩৯] জায়েদ ইবনে সাবিত ছিলেন রাসূল এর প্রথমিক ওহী লেখক। তাকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল পরামর্শ সভায়, যখন কুরআন সংকলনের কথা চলছিল। আর সেখানে উক্ত বৈঠকে আবু বকর, ওমর ও তার মাঝে যে কথা হয় তা তিনি ব্যক্ত করেছেন:
- " আবু বকর আমাকে ডেকে পাঠান, যখন তিনি ইয়ামামার যুদ্ধে কুরআনের হাফেজদের শহীদ হতে সংবাদ পান। আমি দেখলাম সেখানে ওমরও উপস্থিত আছেন। তিনি সবে মাত্র এসেছেন। আবু বকর বললেন, "ওমরই আমাকে পরামর্শ দিয়েছে, ইয়ামামার যুদ্ধে হাফেজদের শহীদ হবার পর, কুরআন সংকলন করা খুবই প্রয়োজন। কেননা হাফেজদের শহীদ হবার ফলে কুরআনের সংরক্ষণ হুমকির মুখে পড়েছে।" আর তাই তিনি মনে করছিলেন কুরআন সংকলন দরকার। তিনি এভাবেই বলে যাচ্ছিলেন। আমি ওমরকে প্রশ্ন করলাম আমরা কেমন করে শুরু করতে পারি, যেটা নবী পর্যন্ত করেননি? ওমর বললেন, "এটা ছিল একটা নিদিষ্ট সময়ের জন্য যখন কুরআন অবতীর্ণ হচ্ছিল। তখন যেহেতু কুরআনের আয়াত পরিবর্তন হবার সম্ভবনা ছিল তাই কুরআন সংকলনের কথা উঠত না। আর তাই আমি তোমাকে কুরআন সংকলেনর কথা বলছি। যায়েদ তুমি বুদ্ধিমান ও বয়সে তরুণ। তুমি পারবে, নবী এর সময় তুমি কুরআন সংকলন করেছ। তোমার সততা ও সাধুতা নিয়ে কারো কোন বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হওয়ার অবকাশ নেই । সুতরাং তুমি কুরআন সংগ্রহ ও একত্র কর।" আল্লাহর কসম, তারা আমাকে যদি একটি পাহাড় সরাতে বলত সেটা ভালো ছিল, এটা আমার কাছে তার চেয়ে অধিক গুরুতর অনুরোধ মনে হচ্ছে।(আল বুখারি, সাহিহ,জাম'ঈ আল কুরআন, হাদিস নং,৪৯৮৬; আরও দেখুন, ইবনে আবু দাউদ, পৃ, ৬-৯)
এই কাজে তার আরো কিছু প্রতিক্রিয়া:
- "...আল্লাহর কসম, যদি তিনি (আবু বকর) আমাকে পাহাড় এক স্থান হতে অন্য স্থানে নিতে বলতেন, যেটা আমার জন্য খুব কষ্টের হত কিন্তু, কুরআন সংকলন তার চেয়ে বেশি কষ্টের। তারপর আমি কুরআন সংগ্রহণ শুরু করি - পান্ডুলিপি, খেজুরের বাকল, পাথরে লেখা ও কোরআনে হাফেজদের থেকে।[Bukhari সহীহ বুখারী, ৬:৬০:২০১ (ইংরেজি)]
আল জারাখসী মন্তব্য,[৪০]
- যায়েদ তার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার মাধ্যমে কুরআন সংরক্ষণ করতেন। কুরআনের প্রতিটি আয়াত, সূরা সহ সব কিছু ঠিক রাখতেন। আর এ কাজে তিনি "হাফেজগণের" সাহায্য নিতেন। আর এ কাজের সহযোগীত করা ছিল প্রতিটি মুসলমানের জন্য অবশ্যপালনীয়। কুরআন সংকলন বোর্ডের সবাই নিজেদের সব ধরনের ত্রুটি মুক্ত রাখতে চেষ্টা করতেন।[৪০]
যায়েদ আরো বলেন:
- "আর তাই আমি আমার কাজ শুরু করি, আর কুরআন সংগ্রহ করতে থাকি। এটা কখনো খেজুরের বাকল থেকে, কখনো পাথরের লেখা থেকে, কখনো চামড়ার উপর লেখা থেকে, সর্বোপরি মানুষের মুখস্থ করা কুরআন থেকে। আর কুরআন সংরক্ষণ করতে আমি কোন প্রকার ভুল ত্রুটির আশ্রয় নেইনি। (সহীহ আল-বুখারী, খন্ড. ৬, পৃ. ৪৭৮)।[৪১]
যায়েদ আরও বর্ণনা করেন- আমি সুরা তওবার শেষ দুটি আয়াত, যা শুধু আবু খুযায়মা আনসারীর নিকট পাওয়া যায়, আমার অন্বেষণ চালিয়ে যাই। আয়াতদ্বয় আমার স্মৃতিতে থাকা সত্ত্বেও সংকলনে অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি, কারণ প্রতিটি আয়াত কমপক্ষে দুজন সাহাবী কর্তৃক স্বীকৃত হতে হবে। যেহেতু আবু খুযায়মার সাক্ষী দুজনের সাক্ষীর সমান((নবী বলেছেন)) তাই আয়াতদ্বয় কোরআনের অন্তরর্ভুক্ত করি।"(সহিহ বুখারী ৬ খন্ড হা ৪৭৮) আল কুরআন সংকলক বোর্ডের দশজন সাহাবী হলেন,
- ওমর ইবনে খাত্তাব [৪২]
- উসমান ইবনে আফফান[৪৩]
- আলী ইবনে আবু তালিব[৪৪]
- আবু মুসা আল আশ'আরী[৪৫]
- উবাই ইবনে কাব[৪৬]
- আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ[৪৭]
- যায়েদ ইবেন সাবিত[৪৮]
- আবু হুরায়রা[৪৯]
- আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস[৫০]
- আবু আল-দারদা[৫১]
আর এদের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দুইজন হলেন, জায়েদ ইবনে সাবিত যিনি নবী মুহাম্মদের নিযুক্ত লেখক ছিলেন। অপর জন হলেন উবাই ইবনে কাব, যিনি জায়েদের পর সবচেয়ে বেশি কোরআন সংকলনে অবদান রেখেছিলেন।[৫২][৫৩]
কোরআন সংকলনের পর তা আবু বকর হেফাজতে রাখা হয়। তার মৃত্যুর আগে তিনি ওমর কাছে রেখে যান। তিনি তার মৃত্যুকালে তার মেয়ে নবীর বিধবা স্ত্রী হাফসার নিকট দিয়ে যান উল্লেখ্য যে, জায়দিয়া শিয়া ব্যতীত, যারা বুখারীর হাদীসকে শুদ্ধ হিসাবে মেনে নিয়েছে, অন্য সকল শিয়াদের আপত্তি সুন্নিগন প্রত্যাখ্যান করে।
উসমান ইবনে আফফান এবং বিধিবদ্ধ পাঠ নীতি
[সম্পাদনা]উসমান (জিন্নুরাইন) (গনি) |
---|
সুনির্দিষ্ট নিয়ম বিধিবদ্ধ করে আল কুরআনের সংকলন ও গ্রন্থাকারে চূড়ান্তভাবে প্রকাশ পায় তৃতীয় খলিফা উসমান ইবন আফ্ফান এর খেলাফত কালে। উসমান ইবনে আফফান মুসলিম জাতির জন্য আল কুরআনকে গ্রন্থাকারে সংকলন করেন (সংকলন. ২৩/৬৪৪-৩৫/৬৫৫) যা ছিল নবী এর ওফাতের প্রায় বিশ বছর পর।[৫৪]
উসমানের খেলাফতের সময় আল কুরআন বিধিবদ্ধ করনের প্রয়োজন ছিল, কেননা মোহাম্মদ সা এর সময় যে রাজ্য বিস্তার শুরু হয় উসমানের সময়ে এসে তা আরব এলাকা ইরাক, সিরীয়া, মিশর, ছাড়িয়ে অনারব রাজ্য ইরান, তুরস্ক ইসালামি খেলাফতের আওতায় আসে। বিভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতি, বর্ণ, ধর্মের লোকজন ইসলাম গ্রহণ করে। দৈনন্দিন জীবনের প্রার্থনা যেমন -সালাতে কোরআন তেলাওয়াত বাধ্যতামূলক। শুধু অনারব মুসলিম জনগনই নন বরং আরব লোকদের মধ্যেও উচ্চারণে ব্যপক তারতম্য দেখা যায়। বুখারীর বর্ণনামতে, আর্মেনিয়া অভিযানে সীরিয়া ও ইরাকের সেনাগন অংশ গ্রহণ করে, যার নেতৃত্বে ছিলেন হুযায়ফা ইবনে ইয়েমেনি। তিনি এ সফরে বিভিন্ন এলাকায় সালাতে সময় উচ্চারণে পার্থক্য লক্ষ্য করেন। বিশেষ করে যারা অনারব ছিল তাদের জন্য কুরআন অধ্যায়ন খুব কষ্টকর ছিল। তিনি উসমান ( রাঃ) নিকট এ সমস্যার প্রতিকার ও তা সমাধানে পরামর্শ দিয়ে চিঠি পাঠান। তার প্রস্তাব ছিল , হাফসা থেকে উসমান যেন কোরআনের পান্ডুলিপি চেয়ে নেন। তারপর যাবেত নেতৃত্বে চার সদস্যের দল গঠন করে একক প্রমিত রীতির কোরআনের অনুলিপি তৈরি করেন। হুযায়ফা এর আবেদন ও ইত্যবসরে বহুসংখ্যক হাফেজে সাহাবাদের মৃত্য, উসমান ( রাঃ) সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হয়। উসমান এর প্রতিক্রিয়া " আমি উম্মুল মুমিনিন হাফসা কে চিঠি লিখে জানাই তিনি যেন তার কাছে রক্ষিত কোরআন মাজিদের পান্ডুলিপি পাঠিয়ে দেন। আমরা কোরাইশদের বাচনিক অনুসারে একটি অনুলিপি প্রস্তুত করে মূল লিপি আপনাকে ফেরত দিব।" হাফসা মূল লিপি উসমান নিকট প্রেরন করেন। উসমান যায়েদ বিন সাবিত, আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের,সাইদ ইবনে আল-আস, আব্দুর রাহমান ইবনে হারিস ইবনে হিশামকে কোরআনের অনুলিপি প্রস্তুত করার নির্দেশ দেন। তিনি তাদেরকে বলেন "যদি কোন বিষয়ে যায়িদ ইবনে সাবিতের সাথে তোমাদের মতভিন্নতা দেখা দেয়, তবে তোমরা কোরাইশদের বাচনিক অনুসরন করবে, কারণ কোরআন তাদের ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে।" তারা তার নির্দেশনা অনুসারে কাজ সম্পাদন করেন। অনুলিপি প্রস্তুতের পর পান্ডুলিপি হাফসা নিকট পাঠিয়ে দেয়া হয়। উসমান এক কপি মদিনায় রেখে বাকী কপি প্রতিটি প্রদেশে পাঠিয়ে দেন, এবং সেই সাথে কোরআনের পুরাতন আংশিক বা পূর্ণ কপি পুড়িয়ে ফেলার আদেশ জারী করেন। (সহি বুখারী ৬/৫১০).[৫৫]
অনুলিপি যাচাই ও প্রামাণ্য পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত
[সম্পাদনা]উসমান কর্তৃক প্রামাণ্য পাণ্ডুলিপি প্রস্তুতের আগে , কুরআনের কিছু অনুলিপি ছিল যার কোনটিই বর্তমানে পাওয়া যায় না । এই অনুলিপিগুলো কখনোই সার্বজনীন অনুমোদন পায়নি এবং মুসলমানরা এগুলোকে ব্যক্তিগত নকল হিসেবেই দেখত ।[৫৬] দুটি অনুলিপি এর ব্যতিক্রম। যথা -
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের অনুলিপি
[সম্পাদনা]আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের অনুলিপিটি ছিল সবচেয়ে প্রভাবশালী ও বিশ্বাসযোগ্য । তিনি ছিলেন প্রথমদিকে ইসলাম গ্রহণকারীদের একজন এবং পরবর্তীতে মুহাম্মদের ব্যক্তিগত সেবক হয়েছিলেন। বর্ণনায় এসেছে যে, তিনি সত্তরটি সূরা সরাসরি মুহাম্মদের থেকে শিক্ষা পেয়েছিলেন। তিনি ছিলেন প্রথমদিকের কোরআন তিলাওয়াতকারীদের একজন। ওমর তার খিলাফতকালে ইবনে মাসুদকে কুফার গভর্নর দায়ীত্ব দেন। তিনি সেখানে কোরআন ও হাদিসের শিক্ষা দান করতেন। তাকে ঘিরে সেখানে দ্বীনি শিক্ষার মজলিস গড়ে উঠে। বলা হয়ে থাাক যে, উসমানের সময় কোরআনের ব্যক্তিগত অনুলিপি পুড়িয়ে ফেলার আদেশ আসলে তিনি তা মানতে অস্বীকার করেন। তার কপিতে সুরার ক্রমবিন্যাস, কয়েক আয়াতের উচ্চারণ এবং শেষ দুটি সুরা নিয়ে ভিন্নতার কথা বলা হয়। সমসাময়িক ইসলামি গবেষক মোহাম্মদ মোস্তফা আল আল আজামির রচনা the history of the quranic text বলা হয়েছে যে, আল কুরাইজি ইবনে মাসুদ এবং জায়িদ বিন সাবিতের অনুলিপি দেখেছেন কিন্তু দু'টির মধ্যে কোন পার্থক্য খুজে পান নি।
উবাই ইবনে কাবের অনুলিপি
[সম্পাদনা]দ্বিতীয় প্রভাবশালী অনুলিপিটি ছিল উবাই ইবনে কাবের। তিনি মদিনায় খাযরায গোত্রে জন্ম নেন। "বাইয়াতে আকাবা"য় যারা ইসলাম গ্রহণ করেন তিনি তাদের একজন। মুহাম্মদ যাদের কোরআন লেখার দায়ীত্ব প্রদান করেন তিনি তাদের অন্যতম। তিনি ছিলেন নবী এর ব্যক্তিগত লেখক। যে চার জন সাহাবী থেকে মুহাম্মদ কোরআন শিখার কথা বলেন তিনি তাদের একজন। ( সহীহ বুখারী খন্ড ৫ পৃ ৯৬)। নবী মৃত্যুর সময় যে ২৫ জন সাহাবী কোরআন সম্পূর্ণ মুখস্থ জানতেন তিনি তাদের একজন। তিনি বিশেষ ভাবে দন্ডবিধি আয়াত সম্পর্কে জানতেন। এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে, মুহাম্মদের জীবদ্দশায় তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের চেয়েও বড় কুরআন বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তিনি যথাক্রমে আবু বকর, ওমর ও উসমান এর সময় তদের পরামর্শক ছিলেন। ৬৪৯ সালে তার মৃত্যু হয়।
বলা হয় যে, তাঁর পাণ্ঠুলিপিতে দুটি ছোট সূরা, তিন আয়াত বিশিষ্ট 'Surah al khal', ছয় আয়াত বিশিষ্ট 'Surah al-Hafd' ছিল, যা উসমানী অনুলিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি এবং উসমানী ও ইবনে মাসুদের সুরার ক্রমবিন্যাস থেকে তাঁর ক্রম পৃথক ছিল, যদিও বা তা ছিল পর্যায়গত পার্থক্য। ( Encyclopedia of Islam, second edition, brill online).
কথিত সুরা Al-khal(seperaton) এর অর্থ এরূপ " আমরা তোমারই কাছে সাহায্য চাই, তোমার কাছেই মাফিমাগি, তোমারই গুনাগুন গাই, তোমাতে করি না অবিশ্বাস।" আর Al-hafd(haste) এর অর্থ এরূপ " আমরা তোমারই ইবাদত করি, তোমারই সাহায্য চাই, তোমাকে সেজদা করি, তোমার প্রার্থনায় আামদের ব্যাকুলতা, আমরা কামনা করি তোমার করুণা, ভয় করি তোমার শাস্তির, নিশ্চয়ই অবিশ্বাসীরা তোমার শাস্তি আস্বাদন করবে।" স্পষ্টত উপর্যুক্ত দুটি 'qunt' বা দোয়া বা আবেদন, যা মোহাম্মদ ফজর ও ঈশার সালাতে কোরআন তেলাওয়াতের পর কখন কখন ও পাঠ করতেন। তাছাড়া উক্ত শব্দগুলি হাদিসে বর্ণীত অন্যান্য কুনুতের অনুরূপ। ( Al adhkr, cairo, 1955, pp 57-58)।
অন্য যে আয়াতটির ভিন্নতার কথা বলা হয়, তার বর্ণনা এরূপ " আদম সন্তান এক পাত্র খাবার পেলে আরেক পাত্র চায়...। মূলত মাটি ছাড়া তার উদরপূর্তি সম্ভব নয়।" তা আসলে হাদীস। (বুখারী ৮/৪৪৪-৪৪৭)। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের (৪৪৫নং) ও উবাই ইবনে কাবের বরাতে (৪৪৬নং) বলা হয়েছে, এক সময় এ কথাগুলিকে কোরানের আয়াত মনে কার হত, ইবনে কাব নিজেই পরে স্বীকার করছেন সুরা ১০২ঃ১ আয়াতের পর সাহাবারা তা আর কোরআনের আয়াত মনে করেননি ( বুখারী ৮/৪৪৬)।
উবাই এর উপর্যুক্ত ব্যাখ্যা এটাও স্পষ্ট করে যে, কোরআন নাজিল যখন বন্ধ হয়, কোনটি কোরআনের আয়াত আর কোনটি তা নয়, তাতে সাহাবাদের মধ্যে কোন দ্বিমত ছিলনা। এটা আরও প্রতিয়মান হয় যে, উবাই এর যে 'মুসহাফে' হাদিস সংকলিত ছিল, তা ছিল তার ব্যক্তিগত 'মুসহাফ'। তিনি বুজতেন কোনটি আয়াত, আর কোনটি তার ব্যাখ্যা ও কোনটি হাদিস। মুসহাফটি তিনি নিজের ব্যবহারের জন্য সংকলন করেন, সর্ব সাধারনের জন্য নয়। একই কথা অন্যান্য ব্যক্তিগত মুসহাফের জন্যও প্রজোয্য। অধিকন্তু, কোরআনের পান্ডুলিপি এবং তার মধ্যে যে ভিন্নতার বিবরণ আমাদের কাছে পৌঁচেছে, তা মূলত হাদিসের (৮/৪৪৪-৪৪৭) মাধ্যমে। কিন্তু মূল পান্ডুলিপি গুলো আমাদের কাছে আসেনি, কারণ উসমান কর্তৃক যে অনুলিপিটি সংকলিত হয়, তার ব্যাপারে সাহাবিদের ঐকমত ছিল। আর তাই অন্যান্য ব্যক্তিগত কপিগুলো কিছু হারিয়ে যায়, আর কিছু নষ্ট করে ফেলা হয়। ( Ahmad Von Deffner: An introduction to the Science of the Qur'an)।
প্রথম দিকের অনুলিপি থেকে শেষ বিশুদ্ধ পাণ্ডুলিপি
[সম্পাদনা]উসমান কর্তৃক অন্যান্য অনুলিপিগুলো নষ্ট করার পরও, বিভিন্ন স্থানে পড়ার পদ্ধতি ও উচ্চারণে পার্থক্য করা হচ্ছিল। আলেমগন এ ধরনের পার্থক্য খুব বড় ছিল বলে মনে করেন না। কারণ যদি তা হত, তবে তারা মনে করেন, এ বিতর্কের রেশ এ সময় পর্যন্ত চলে আসত। কিন্তু তার কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়না। তাছাড়া যদিও উসমান কোন জনপ্রিয় খলিফা ছিলেন না, তথাপি আয়াতের পরিবর্তন, কাটছাট বা বাতিল করা হয়েছে - এ অভিযোগ তার বিরুদ্ধে কখনো উঠেনি। ( Introduction to the Qur'an. Richard Bell, W.M. Watt. 1995.P51 )
হস্তলিখিত পুঁথির যুগে কুরআনই ছিল সবচেয়ে বেশি অনুলিপি করা আরবি পাঠ্য । এটা বিশ্বাস করা হয় যে, কুরআনের অনুলিপি করা লেখক ও এর মালিক উভয়ই ঈশ্বরের আশীর্বাদপ্রাপ্ত ।[৫৭]
উমাইয়া শাসনামলে (৪৪/৬৬১-১৩২/৭৫০) - হেজাজ লিপি
[সম্পাদনা]কুরআনের যেসব হস্তলিখিত অনুলিপি পাওয়া গেছে তার মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন গুলোকে একত্রে বলা হয় হেজাজ লিপি ; যেগুলোর অধিকাংশই উমাইয়া শাসনামলে লেখা হয়েছিল।[৫৭]
এই হস্তলিখিত অনুলিপিকরন পদ্ধতির অধিকাংশের উন্নয়ন ঘটে পঞ্চম উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিকের শাসনামলে(৬৫/৬৮৫-৮৬/৭০৫)। মালিকের শাসনামলে একজন আলেম, আবুল আসওয়াদ আদদুইলি আরবী ব্যাকরণ তৈরি করেন এবং বর্ণের উপর নোক্তা বা ডট ব্যবহারের পরামর্শ দেন। হাজ্জাজ বিন ইউসুফ তা কার্যযকর করেন। (Oliver Leaman 2006. Calligraphy and the Qur'an.)
এ সময়ে (৬৭২-৬৯১/৯২ সাল) জেরুজালেমে 'ডুম অফ দা রক' নির্মাণ করা হয়, যার কাজ কোরআন থেকে উদ্ধৃতি খোদাই করার মাধ্যমে সমাপ্ত হয়। এ লেখাই জানা সবচেয়ে পুরাণ খোদাইকৃত লেখা। এ লেখায় যে বর্ণ ব্যবহৃত হয়েছে, তা থেকে একই বর্ণের বিভিন্ন উচ্চারণের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ( Oliver Leaman.2006. manuscript and the qur'an)।
উমাইয়া শাসনামলে কোরআন একখন্ডে বাঁধাই করা হত, যা তার বিশালাকৃতি থেকে জানা যায়। এই সময়ে লেখার ধরন উলম্ব থেকে অনুভূমিকে পরিবর্তন করা হয়। ধারণা করা হয় যে, যিইশ ও খৃষ্টানদের ধরন থেকে নিজেদের লেখার ধরনে স্বতন্ত্রতার জন্য তা করা হয়। (Oliver Leaman. 2006. Manuscript and th Qur'an. pp 384–389)
আবার এ সময় লেখার ধরনে বিভিন্নতা দেখা যায়। খুব সাধারণ বিষয়টি ছিল 'আলিফ' ব্যবহারে। তা কখনো বিচ্ছিন্ন 'খাড়া'ভাবে, কখনোবা নিচের অংশ 'বাঁকা' করে আলাদাভাবে ব্যবহৃত হত। সুরার শুরুতে কোন নাম ব্যবহার করা হতনা, শুধু কয়েকটি 'সারি' খালি রেখে নতুন সুরা শুরু করা হত। (Oliver Leaman. Manuscript and the Qur'an. pp 384–389)।
আব্বাসীয় শাসনামলে (১৩২/৭৫০-৬৪০/১২৫৮)
[সম্পাদনা]আদী আব্বসীয় শৈলী
[সম্পাদনা]প্রথম দিককার আব্বাসীয় অনুলিপিগুলো অনেকগুলো খণ্ডে নকল করা হয়েছিল, যেমনটা উমাইয়া শাসনামলে করা হয়নি । সেখানে বড় আকৃতির লিপি এবং প্রতি পাতাতে কম সংখক লাইন লেখা হয়েছিল । লিপি এবং কাঠামো উভয়টিই তৈরি করা হয়েছিল জ্যামেতিক এবং আনুপাতিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ।
নতুন আব্বাসীয় শৈলী
[সম্পাদনা]কুরআনের নকল করার জন্য নতুন আব্বাসীয় শৈলীর ব্যবহার শুরু হয় ৯ম শতাব্দীর শেষ থেকে ১২ শতাব্দী পর্যন্ত।এতে উল্লম্ব বিন্যাস পদ্ধতিতে অনুলিপি নকল করা হয়েছিল যা আদী আব্বসীয় শৈলীর থেকে বাতিক্রম।[৫৭] এই সময়ে আল খলিল ইবন আহমেদ আল-ফরহেদি (মৃত্যু ৭৮৬) আবু আল আসওয়াদের পদ্ধতি প্রতিস্থাপন করে তাসকীল পদ্ধতি প্রণয়ন করেন। ১১ শতকের পর থেকে তার প্রণীত পদ্ধতি সর্বজনীনভাবে গৃহীত ও ব্যবহৃত হচ্ছে । এতে ছয়টি বৈশিষ্ট সূচক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছেঃ ফাতহাহ্ (আ), যাম্মাহ্ (উ), কাছরাহ্ (ই), সুকূন (স্বরধ্বনি-মুক্ত), শাদ্দাহ্ (দ্বৈত ব্যাঞ্জনধ্বনি), মদ (স্বর দীর্ঘায়ন; আলিফ এর উপর প্রয়োগ করা হয়)।[৫৮]
সম্পূর্ণতা
[সম্পাদনা]ইসলামী উৎস
[সম্পাদনা]ইসলামী উৎস হতে জানা যায় যে খলীফা উসমান কর্তৃক প্রামাণ্য পাণ্ডুলিপি তৈরির পর পূর্বের অনুলিপিগুলো বাতিল এবং নষ্ট করে দেয়া হয়েছিল ।
ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গীঃ সুন্নী এবং শিয়া
[সম্পাদনা]মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে, বর্তমানে আমরা যে কুরআনকে দেখি তা আসলে একটি এবং একমাত্র মৌলিক গ্রন্থ যা নাযিলের পর থেকে একটুও বিকৃত হয়নি । এর মৌলিকতা সম্পূর্ণ অক্ষুণ্ণ রয়েছে যার দাবী এই আয়াতটিতেও করা হয়েছে । "নিশ্চয় আমিই কুরআন নাযিল করেছি আর অবশ্যই আমি তার সংরক্ষক।" (কুরআনঃ ১৫ঃ ৯)
কয়েকটি বর্ণনা এবং হাদিসের কারণে কোন কোন ব্যক্তি সন্দেহপোষন করেন, উসমান কর্তৃক সংকলিত কোরআন পূর্ণাঙ্গ কোরআন কি না বা কোরআনের কোন আয়াত বাদ পড়ে গেল কি না। উদাহরণ হিসাবে কোন কোন সুন্নী লেখক বলেন, কিছু আয়াত আবু বকরের সংকলনের আগেই হারিয়ে যায়। যেমন, একদা ওমর ব্যভিচারের শাস্তি সংক্রান্ত আয়াত খু্ঁজতেছিলেন, যা তিনি মুখস্থ জানতেন। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায়, যে সাহাবীর নিকট তা লিখিত ছিল, তিনি ইয়ামামার যুদ্ধে শহীদ হন। ফলে ঐ আায়তটি হারিয়ে যায়। নবী পত্নী আয়শার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয় 'রজম সংক্রান্ত আয়াত ও অন্য একটি আয়াত তার বিছানার নিচে ছিল। নবীর দাফনকালে গৃহপালিত পশু তা খেয়ে ফেলে।' মুহাদ্দিসগন হাদীসগুলিকে প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ তাদের মতে, হাদীসগুলি তিনটি দোষে দূষ্ট। হাদীসের সনদে অসৎ রাবী রয়েছে, অন্যান্য সহী হাদীসের বিপরীত এবং মতন আংশিক জুড়ে দেয়া হয়েছে। (সুয়াইব আল আরনাত, তাহকিক মুসনাদ আহমাদ বিন হাম্বল ৬/২৬৯)
কতিপয় শিয়া পণ্ডিত বলেন, আলীর পূর্বসূরি - আবু বকর, ওমর, উসমান- ইচ্ছাকৃতভাবে আলীরর খলীফা হওয়া সংক্রান্ত আয়াত বাতিল করেছে। আবার কোন কোন শিয়া এই দাবী করে যে, 'দুটি সূরা আল নুরিয়ান' (The two lights) 'আল ওয়ালিয়া' (the guardian) যা নবী পরিবারের মর্যাদা বিষয়ক, তা উসমান কর্তৃক সংকলিত অনুলিপি থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। (Esack Farid.2005. The Qur'an: Learners Guide.pp 89–90)
উপর্যুক্ত বিষয়ে সমসাময়িক পণ্ডিত আল -খই ভিন্ন মত পোষন করেন। খেলাফতের বিষয় নিয়ে তার অভিমত -'আবু বকর, ওমর উসমান কর্তৃক কোরআন সংকলিত হয় খেলাফত প্রতিষ্ঠার পর। এ সংক্রান্ত আয়াত যদি থাকত, তবে আল্লাহ'র নির্দেশনা অনুসারপ আলী হতেন প্রথম খলীফা। এর জন্য মুসলমানদেরকে 'বনী সকীফায়' মিলিত হওয়ার প্রয়োজন ছিলনা। এমনকি আলী যখন খেলাফতের দায়িত্ব পান, তিনি বিষয়টি নিয়ে কখনো কথা বলেননি। যা থেকে প্রমাণিত হয় যে, আয়াত পরিবর্তনের ধারনাটি অমূলক। [ Al-Khui,Al-Sayyid(1998). The prolegomna to the Qur'an.New York:Oxford University Press. p150]
আল-খইল আরও বলেন, উসমান যে সময়ে খলীফা হিসেবে নিযুক্ত হন সে সময়ে ইসলাম এত দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল যে তিনি বা তার চেয়ে ক্ষমতাশালী কারও পক্ষেও কোরআনের সামান্যতম অংশ পরিবর্তন করা সম্ভব ছিলনা। সে সময়ে কুরআনের মূল্য ও গুরুত্বববোধই একে রদবদল হওয়া থেকে রক্ষা করেছিল। ইসলাম পূর্ব যুগে আরবরা পদ্য মুখস্থকরনকে অনেক গুরুত্ব দিত । এই পদ্ধতি তাদের সংস্কৃতিরই অংশ ছিল এবং তারা এতে অত্যন্ত দক্ষ ছিল। এটা কল্পনা করা কঠিন যে, সর্বশক্তিমান আল্লাহ'র গ্রন্থকে সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে তারা অনুরুপ গুরুত্ব দেয়নি, বিশেষকরে যখন তারা এটা বিশ্বাস করত যে মুখস্থকরনের ফলস্বরূপ তাদেরকে মৃত্যুর পরেও পুরুষ্কৃত করা হবে। তাছাড়া, যদিও উসমান অনুলিপি করার সময় রদবদল করত কিন্তুুু, মুখস্থকারি মুসলমানগনের হৃদয় থেকে কুরআনের সামান্যতম অংশও মুছে ফেলা তার পক্ষে সম্ভব হত না।
সর্বোপরি, উসমান যদি কোরআনে কোন ধরনের পরিবর্তন করত, তবে তাকে হত্যা করার পেছনে কোরআনের পরিবর্তনকেই মূল কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হত। এর কোন দলিল পাওয়া যায়না। আল কুহিল আরো যুক্তি দেখান যে, উসমান কোরআন পরিবর্তন করলে, বিশেষত আলি সংক্রান্ত বিষয়ে, তবে আলি তার খেলাফতকালে অবশ্যই তা সংশোধন করতেন। উল্টো, কোরআনের প্রচার ও প্রসারে তা বলিষ্ঠ ভুমিকাই দেখা যায়।[৫৯]
হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপি
[সম্পাদনা]বিংশ শতাব্দীতে সানার অনুলিপি আবিষ্কৃত হয় । কার্বন পরীক্ষার মাধ্যমে এটি ৬৩২-৬৭১ খ্রিষ্টাব্দের বলে নির্ধারণ করা গেছে । এর প্রতি পাতার উপরের অংশে এক ধরনের লিপি এবং নিচের অংশে ভিন্ন ধরনের লিপি দেখা যায়। উপরের অংশের আয়াত এবং ক্রমবিন্যাস হুবহু বর্তমানের প্রমিত কুরআনের অনুরুপ।[৬০] নিচের অংশের লিপিতে সুরার ক্রমবিন্যাসে পার্থক্য রয়েছে। আর যে ভিন্নতা রয়েছে, যেমন শব্দ ও বাক্যাংশ, তার বেশিরভাগই প্রমিত কোরআনের সংশ্লিষ্ট আয়াতের ব্যাখ্যা। নিচের অংশের লিপি প্রমিত, আবদুল্লাহ ইবনে মাসুদ, উবাই ইবনে কাবের অনুলিপি থেকে ভিন্ন। অনেক পণ্ডিত মনে করেন, নিচের অংশের লিপি হয়ত কোন সাহাবীর ব্যক্তিগত পান্ডুলিপির অনুলিপি।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]আরো পড়ুন
[সম্পাদনা]- M. M. Azami (২০০৩)। The History of the Qur'anic Text from Revelation to Compilation: A Comparative Study with the Old and New Testaments। UK Islamic Academy। আইএসবিএন 978-1872531656।
- Gibson, Dan (2011). Qur’anic Geography: A Survey and Evaluation of the Geographical References in the Qur’an with Suggested Solutions for Various Problems and Issues. Independent Scholars Press, Canada. আইএসবিএন ৯৭৮-০-৯৭৩৩৬৪২-৮-৬.
- Jane Dammen McAuliffe, সম্পাদক (২০০৬)। The Cambridge Companion to the Quar'an। Cambridge University Press। আইএসবিএন 978-0-521-53934-0।
- Adam J. Silverstein (২০১০)। Islamic History: A Very Short Introduction। Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0-19-954572-8।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- Read Quran Online
- Dated Muslim Texts From 1-72 AH / 622-691 AD: Documentary Evidence For Early Islam Islamic Awareness
- Corpus Coranicum: comprehensive website on early Quran manuscripts by the Berlin-Brandenburg Academy of Sciences and Humanities
- Several early Qur'ans: information, zoomable images ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৫ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে British Library website
- History of the Quran ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ আগস্ট ২০১৭ তারিখে
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Donner, Fred (২০১০)। Muhammad and the Believers: at the Origins of Islam। London, England: Harvard University Press। পৃষ্ঠা 153–154। আইএসবিএন 978-0-674-05097-6।
- ↑ F. E. Peters, The Quest of the Historical Muhammad, International Journal of Middle East Studies, Vol. 23, No. 3 (Aug.,1991), p. 297
- ↑ ক খ গ Andrew Rippin (২০০৯)। "Qur'an"। Oxford Bibliographies। Oxford: Oxford University Press। (সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য))।
How the Qurʾan came into being and why it looks the way it does has proven to be a continual focus of attention for scholarship. Most accounts accept the basic framework of the Muslim memory, with the role of Muhammad as the recipient of revelation and the role subsequent caliphs in bringing the text together clearly separated. Some scholarship has wanted to challenge the originality and source of the text itself, tracing it to other religious communities (especially Christian: Lüling 2003; Luxenberg 2007). Others have tried to refine the Muslim accounts of revelation and collection.
- ↑ Fred Donner (২০০৮)। Gabriel Said Reynolds, সম্পাদক। The Qur'an in Recent Scholarship। The Quran in its historical context। Routledge। পৃষ্ঠা 29।
- ↑ Hagarism: The Making of the Islamic World, Crone, Patricia & Cook, Michael, p. 3 Cambridge, Cambridge University Press, 1977
- ↑ P. Crone and M. Cook, Hagarism: The Making Of The Islamic World, 1977, Cambridge University Press
- ↑ Emran El- Badawi "Sectarian Scripture: The Quran's Dogmatic Re-articulation of the Aramaic Gospel Tradition in the Late Antique Near East" Research Dissertation University of Chicago., p 16
- ↑ Emran El- Badawi "Sectarian Scripture: The Quran's Dogmatic Re-articulation of the Aramaic Gospel Tradition in the Late Antique Near East" Research Dissertation University of Chicago., p 17
- ↑ Lumbard, Joseph। "New Light on the History of the Quranic Text?"। HuffPost। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০১৫।
- ↑ ক খ গ ঘ Estelle Whelan, Forgotten Witness: Evidence For The Early Codification Of The Qur'an, 1988, Journal Of The American Oriental Society, 1998, Volume 118, pp. 1-14.
- ↑ Yehuda D. Nevo "Towards a Prehistory of Islam," Jerusalem Studies in Arabic and Islam, vol.17, Hebrew University of Jerusalem, 1994 p. 108.
- ↑ John Wansbrough The Sectarian Milieu: Content and Composition of Islamic Salvation History, Oxford, Oxford University Press, 1978 p,119
- ↑ Patricia Crone, Meccan Trade and the Rise of Islam, Princeton University Press, 1987 p. 204.
- ↑ "Archived copy"। সেপ্টেম্বর ৫, ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৬-১৮।
- ↑ Patricia Crone, Meccan Trade and the Rise of Islam, pp. 203-30, where she argues that much of the classical Muslim understanding of the Koran rests on the work of storytellers and that this work is of very dubious historical value. These storytellers contributed to the tradition on the rise of Islam, and this is evident in the steady growth of information: "If one storyteller should happen to mention a raid, the next storyteller would know the date of this raid, while the third would know everything that an audience might wish to hear about it." 53 Then, comparing the accounts of the raid of Kharrar by Ibn Ishaq and al-Waqidi, Crone shows that al-Waqidi, influenced by and in the manner of the storytellers, "will always give precise dates, locations, names, where Ibn Ishaq has none, accounts of what triggered the expedition, miscellaneous information to lend color to the event, as well as reasons why, as was usually the case, no fighting took place."
- ↑ Patricia Crone, Slaves on Horses, pp. 15-16.
- ↑ The Syro-Aramaic Reading Of The Qur'an, 2007 English edition
- ↑ Narratives of Islamic Origins: The Beginnings of Islamic Historical Writing, Donner, Darwin Press, 1998, p. 60, আইএসবিএন ০-৮৭৮৫০-১২৭-৪.
- ↑ Lester, Toby (জানুয়ারি ১৯৯৯)। "What Is the Quran?"। The Atlantic।
- ↑ https://www.birmingham.ac.uk/news/latest/2015/07/quran-manuscript-22-07-15.aspx
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ Esack, Farid (২০০৫)। The Qur'an: A User's Guide। Oxford England: Oneworld Publications। আইএসবিএন 978-1851683543।
- ↑ ক খ Leaman, Oliver (২০০৬)। "Revelation"। The Qur'an: an Encyclopedia। New York, NY: Routledge। পৃষ্ঠা 540–543। আইএসবিএন 0-415-32639-7।
- ↑ Al Faruqi, Lois Ibsen (১৯৮৭)। "The Cantillation of the Qur'an"। Asian Music। 19 (1): 3–4। ডিওআই:10.2307/833761।
- ↑ Leaman, Oliver (২০০৬)। The Qur'an: an Encyclopedia। New York, NY: Routledge। পৃষ্ঠা 540–543। আইএসবিএন 0-415-32639-7।
- ↑ khaled (১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭)। "The Truth of Islam"। ২৮ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ Rippin, Andrew (২০০৯)। The Blackwell Companion to the Qur'an। Chichester, West Sussex: Blackwell Publishing। পৃষ্ঠা 165। আইএসবিএন 978-1-4051-8820-3।
- ↑ Rippin, Andrew (২০০৯)। The Blackwell Companion to the Qur'an। Chichester, West Sussex: Blackwell Publishing। পৃষ্ঠা 165–166। আইএসবিএন 978-1-4051-8820-3।
- ↑ Ibn al-Hajjaj, Muslim। "Sahih Muslim, Book 31, #5920"।
- ↑ Al-Khu'i, Al-Sayyid (১৯৯৮)। The Prolegomena to the Qur'an। New York: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 172। আইএসবিএন 0-19-511675-5।
- ↑ Al-Khu'i, Al-Sayyid (১৯৯৮)। The Prolegomena to the Qur'an। New York: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 173। আইএসবিএন 0-19-511675-5।
- ↑ Modarressi, Hossein (১৯৯৩)। "Early Debates on the Integrity of the Qur'an: A Brief Survey"। Studia Islamica। 77: 8। ডিওআই:10.2307/1595789।
- ↑ Leaman, Oliver (২০০৬)। "Ali"। The Qur'an: an Encyclopedia। New York, NY: Routledge। পৃষ্ঠা 30–31। আইএসবিএন 0-415-32639-7।
- ↑ Al-Khu'i, Al-Sayyid (১৯৯৮)। The Prolegomena to the Qur'an। New York: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 153। আইএসবিএন 0-19-511675-5।
- ↑ Leaman, Oliver (২০০৬)। "Ali"। The Qur'an: an Encyclopedia। New York: Routledge। পৃষ্ঠা 30–31। আইএসবিএন 0-415-32639-7।
- ↑ Al-Khu'i, Al-Sayyid (১৯৯৮)। The Prolegomena to the Qur'an। New York: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 154–155। আইএসবিএন 0-19-511675-5।
- ↑ "The Biography of Abu Bakr As-Siddeeq"। Archive.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৭-২৪।
- ↑ ক খ "Hadith - Book of Judgments (Ahkaam) - Sahih al-Bukhari - Sunnah.com - Sayings and Teachings of Prophet Muhammad (صلى الله عليه و سلم)"। Sunnah.com। ২০১২-০৪-২৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৭-২৪।
- ↑ Usmani, Mohammad Taqi (২০০০)। Abdur Rehman, Rafiq, সম্পাদক। An approach to the Quranic sciences। Siddiqui, Mohammed Swaleh কর্তৃক অনূদিত। Birmingham: Darul Ish'at। পৃষ্ঠা 191–6।
- ↑ Hasan, Sayyid Siddiq; Nadwi, Abul Hasan Ali (২০০০)। The collection of the Qur'an। Kidwai, A.R. কর্তৃক অনূদিত। Karachi: Qur'anic Arabic Foundation। পৃষ্ঠা 34–5।
- ↑ ক খ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;Al-A'zami1
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ "The Biography of Abu Bakr As-Siddeeq"। Archive.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৭-২৪।
- ↑ "Hadith - Chapters on Virtues - Jami` at-Tirmidhi - Sunnah.com - Sayings and Teachings of Prophet Muhammad (صلى الله عليه و سلم)"। Sunnah.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৭-২৪।
- ↑ "Hadith - Prophetic Commentary on the Qur'an (Tafseer of the Prophet (pbuh)) - Sahih al-Bukhari - Sunnah.com - Sayings and Teachings of Prophet Muhammad (صلى الله عليه و سلم)"। Sunnah.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৭-২৪।
- ↑ "Hadith - Book of Prayer (Kitab Al-Salat): Detailed Injunctions about Witr - Sunan Abi Dawud - Sunnah.com - Sayings and Teachings of Prophet Muhammad (صلى الله عليه و سلم)"। Sunnah.com। ২০১৩-০৪-০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৭-২৪।
- ↑ "Hadith - The Book of Virtue, Enjoining Good Manners, and Joining of the Ties of Kinship - Sahih Muslim - Sunnah.com - Sayings and Teachings of Prophet Muhammad (صلى الله عليه و سلم)"। Sunnah.com। ২০১২-০৪-২৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৭-২৪।
- ↑ "Hadith - Prophetic Commentary on the Qur'an (Tafseer of the Prophet (pbuh)) - Sahih al-Bukhari - Sunnah.com - Sayings and Teachings of Prophet Muhammad (صلى الله عليه و سلم)"। Sunnah.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৭-২৪।
- ↑ "Hadith - Book of Dialects and Readings of the Qur'an (Kitab Al-Huruf Wa Al-Qira'at) - Sunan Abi Dawud - Sunnah.com - Sayings and Teachings of Prophet Muhammad (صلى الله عليه و سلم)"। Sunnah.com। ২০১২-১০-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৭-২৪।
- ↑ "Hadith - The Book of Fighting [The Prohibition of Bloodshed] - Sunan an-Nasa'i - Sunnah.com - Sayings and Teachings of Prophet Muhammad (صلى الله عليه و سلم)"। Sunnah.com। ২০১৪-০১-৩১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৭-২৪।
- ↑ "Hadith - The Book of Mosques and Places of Prayer - Sahih Muslim - Sunnah.com - Sayings and Teachings of Prophet Muhammad (صلى الله عليه و سلم)"। Sunnah.com। ২০১২-০৪-২৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৭-২৪।
- ↑ "Hadith - Prophetic Commentary on the Qur'an (Tafseer of the Prophet (pbuh)) - Sahih al-Bukhari - Sunnah.com - Sayings and Teachings of Prophet Muhammad (صلى الله عليه و سلم)"। Sunnah.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৭-২৪।
- ↑ "Hadith - Chapters on Tafsir - Jami` at-Tirmidhi - Sunnah.com - Sayings and Teachings of Prophet Muhammad (صلى الله عليه و سلم)"। Sunnah.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৭-২৪।
- ↑ "Hadith - Prophetic Commentary on the Qur'an (Tafseer of the Prophet (pbuh)) - Sahih al-Bukhari - Sunnah.com - Sayings and Teachings of Prophet Muhammad (صلى الله عليه و سلم)"। Sunnah.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৭-২৪।
- ↑ "Hadith - Prophetic Commentary on the Qur'an (Tafseer of the Prophet (pbuh)) - Sahih al-Bukhari - Sunnah.com - Sayings and Teachings of Prophet Muhammad (صلى الله عليه و سلم)"। Sunnah.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৭-২৪।
- ↑ Leaman, Oliver (২০০৬)। "Canon"। The Qur'an: an Encyclopedia। New York, NY: Routledge। পৃষ্ঠা 136–139। আইএসবিএন 0-415-32639-7।
- ↑ Al-Tabari (১৯৮৯)। Ihsan Abbas; C. E. Bosworth; Jacob Lassner; Franz Rosenthal; Ehsan Yar-Shater, সম্পাদকগণ। The History of al-Tabari: The Conquest of Iraq, Southwestern Persia, and Egypt। Gautier H. A. Juynboll (trans.)। Albany, NY: State University of New York Press। পৃষ্ঠা 2–6। আইএসবিএন 0-88706-876-6।
- ↑ Esack, Farid (২০০৫)। The Qur'an: A User's Guide। Oxford England: Oneworld Publications। আইএসবিএন 978-1851683543।
- ↑ ক খ গ Leaman, Oliver (২০০৬)। "Manuscript and the Qur'an"। The Qur'an: an Encyclopedia। New York, NY: Routledge। পৃষ্ঠা 384–389। আইএসবিএন 0-415-32639-7।
- ↑ Leaman, Oliver (২০০৬)। "Calligraphy and the Qur'an"। The Qur'an: an Encyclopedia। New York, NY: Routledge। পৃষ্ঠা 130–131। আইএসবিএন 0-415-32639-7।
- ↑ Al-Khu'i, Al-Sayyid (১৯৯৮)। The Prolegomena the Qur'an। New York: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 172। আইএসবিএন 0-19-511675-5।
- ↑ Behnam Sadeghi & Mohsen Goudarzi, "Sana'a and the Origins of the Qu'ran", Der Islam, 87 (2012), 26.