কুরআনের অলৌকিকতা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পবিত্র কুরআন শরীফ

পারিভাষিক অর্থে, ই'জায হল এমন এক গুণ যা অনুরূপ কোনো কিছু নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সাধারণ ক্ষমতাকে অতিক্রম করে যায়। কুরআন মুসলমানদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ। ইসলাম ধর্ম মতে, এটি আল্লাহর বাণী এবং এর ই'জায গুণ রয়েছে।

কুরআনে বলা হয়েছে,

নাকি তারা বলে, ‘তিনি এটা রচনা করেছেন?’ বলুন, ‘তবে তোমরা এর অনুরূপ একটি সূরা নিয়ে আস এবং আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য যাকে পার ডাক, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’[১]

আরও বলা হয়েছে,

বলুন, ‘যদি কুরআনের অনুরুপ কুরআন আনার জন্য মানুষ ও জিন সমবেত হয় এবং যদিও তারা পরস্পরকে সাহায্য করে তবুও তারা এর অনুরুপ আনতে পারবে না।[২]

কুরআনে ভিত্তি[সম্পাদনা]

বৈজ্ঞানিক ই'জায সাহিত্য[সম্পাদনা]

কুরআনের কিছু আয়াত আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে মিল রয়েছে বলা হয়। প্রায় চৌদ্দশ বছর পূর্বে এসব বিষয় উল্লেখ থাকাকে অনেকে কুরআনের অলৌকিকতা বলে উল্লেখ করে। যেমন - মহাবিস্ফোরণ তত্ত্বের সাথে সূরা আল-আম্বিয়ার ৩০ নং আয়াতের মিল রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে,

"যারা কুফরী করে তারা কি (ভেবে) দেখে না যে, আকাশসমূহ ও পৃৃথিবী ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিল, তারপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম, আর আমি প্রাণবান সবকিছুকে পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। তবুও কি তারা ঈমান আনবে না?"[৩]

আবার সূরা ফুসসিলাত (হা-মীম সিজদাহ) এর ১১ নং আয়াতে মহাবিশ্বের প্রাথমিক অবস্থার কথা বলা হয়েছে,

"তারপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করেন। তা ছিল ধোঁয়া। তারপর তিনি আকাশ ও পৃৃথিবীকে বললেন, ‘তোমরা উভয়ে স্বেচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় আস’। তারা উভয়ে বলল, ‘আমরা অনুগত হয়ে আসলাম’।"[৪]

কুরআনে বিজ্ঞান সংক্রান্ত বিস্তারিত আলোচনা আসে নি। বরং কুরআন মানুষকে মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করতে বলেছে এবং দাবি করেছে,

"নিশ্চয় আকাশসমূহ ও পৃৃথিবীর সৃষ্টি এবং রাত ও দিনের বিবর্তনের মধ্যে রয়েছে বিবেকসম্পন্নদের জন্য বহু নির্দশন।"[৫]

মুহাম্মাদ (ﷺ) এর অলৌকিকতা[সম্পাদনা]

চন্দ্র বিভাজন[সম্পাদনা]

কুরআন অনুসারে, আল্লাহ্ তাঁর প্রেরিত নবিগণের নবুয়ত এর প্রমাণ হিসেবে কিছু অলৌকিক ঘটনা ঘটাতেন। অলৌকিক ঘটনাগুলো আল্লাহ তা'আলার ইচ্ছা ও ক্ষমতায় ঘটত। যেমন- মুসলিমরা বিশ্বাস করে মক্কার কাফেররা মুহাম্মাদ (স.) এর কাছে নবুয়তের সপক্ষে কোনো নিদর্শন চাইলে আল্লাহ তা'আলা চাঁদকে সাময়িকভাবে দ্বিখন্ডিত করেছিলেন। কুরআনের সূরা কামার-এর প্রথম আয়াতে এর উল্লেখ পাওয়া যায়।[৬][৭]

মুহাম্মদ (ﷺ) অক্ষর-জ্ঞান[সম্পাদনা]

ইসলামী ধর্ম তত্ত্বে, যেহেতু একজন নিরক্ষর নবীর ক্ষেত্রে অলঙ্কারপূর্ণ কাব্য অথবা কুরআনের কোন গদ্য রচনা করা অসম্ভব, তাই মুহাম্মদের অক্ষর জ্ঞানহীনতা জোরালোভাবে তার নবী হওয়ার সত্যতা প্রমাণ করে।[৮] মুসলিম চিন্তাবীদ তাবাতাবেয়ির মতে, এই বিতর্কের অবসান ঘটে যখন আমরা অনুধাবন করতে পারি এটি এমন একজনের ওপর অবতীর্ণ হয়েছে, যার জীবন মুহাম্মদের মত একজন অনাথের জীবন, যিনি আনুষ্ঠানিক অর্থে নিরক্ষর, যিনি পড়তে ও লিখতে জানতেন না এবং ইসলাম পূর্ববর্তী সময় জাহেলিয়ার যুগে (মূর্খতার যুগে) বড় হন।[৯]

মুহাম্মদের নিরক্ষরতার উল্লেখ কুরআনের ৭:১৫৮,[১০] ২৯:৪৮,[১১] এবং ৬২:২ নম্বর আয়াতে করা হয়েছে।[১২] ২৫:৫ আয়াতে[১৩] নবীর লিখতে ও পড়তে অক্ষম হওয়ার কথা বলা হয়েছে। কুরআনের ৭:১৫৮ এবং ৬২:২ নং আয়াতে আরবি শব্দ ‘’’’উম্মি’ ব্যবহার করা হয়েছে, যার অর্থ ‘অশিক্ষিত’ এবং ‘নিরক্ষর’।[১৪]

দ্বাদশ শতাব্দীর ইসলামী ধর্মতত্ত্ববিদ ফখর্ আল-রাযী তার বই তাফসীর আল-রাযীতে বলেন:[১৫]

...অধিকাংশ আরব পড়তে কিংবা লিখতে জানতেন না এবং রাসূল তাদের একজন ছিলেন। রাসূল তাদের নিকট একটি নিখুঁত বই শব্দের কোন সংযোজন বা পরিবর্তন ছাড়াই বারংবার পাঠ করে শোনান, অন্যদিকে আরব বাগ্মীরা যখন তাদের বক্তৃতা প্রস্তুত করে তখন বক্তৃতা প্রদানের পুর্বে তারা এতে ক্ষুদ্র অথবা বৃহৎ অংশ সংযোজন অথবা বিয়োজন করেছিল। কিন্তু রাসূল স্রষ্টার গ্রন্থ নিজে রচনা করেন নি এবং তিনি এটি সংযোজন এবং বিয়োজন ছাড়াই পড়ে শোনান...যদি তিনি লিখতে ও পড়তে জানতেন, লোকজন সন্দেহ করত তিনি পুর্ববর্তী কিতাব পাঠ করেছিলেন, কিন্তু তিনি এই পবিত্র কুরআন এনেছেন কোন শিক্ষাগ্রহণ ছাড়াই...রাসূল কোন শিক্ষক থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেননি, তিনি কোন বই পড়েননি, এবং কোন পন্ডিতের পাঠদানেও অংশ নেননি কারণ মক্কা পন্ডিতদের স্থান ছিলনা। এবং তিনি মক্কায় দীর্ঘ সময়ের জন্য অনুপস্থিত ছিলেন না যাতে করে দাবী করা যেত তিনি ঐ অনুপস্থিতিতে শিক্ষাগ্রহণ করেছিলেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. কুরআন ১০:৩৮
  2. কুরআন ১৭:৮৮
  3. কুরআন ২১:৩০
  4. কুরআন ৪১:১১
  5. কুরআন ৩:১৯০
  6. কুরআন ৫৪:১
  7. "সূরা ক্বামার, আল-কুরআন"। ১৫ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জানুয়ারি ২০১৯ 
  8. Weddle, David L. (২০১০)। Miracles. ; Wonder and Meaning in World Religions.। New York University Press। পৃষ্ঠা 177–209। আইএসবিএন 978-0814794166 
  9. TabaTaba'i, Allamah Sayyid M. H. (১৯৮৭)। The Qur'an in Islam : its impact and influence on the life of muslims। Zahra Publ.। পৃষ্ঠা 65। আইএসবিএন 0710302665 
  10. " Say, "O mankind, indeed I am the Messenger of God to you all, to whom belongs the dominion of the heavens and the earth. There is no deity except Him, He gives life and causes death." So believe in God and His Messenger, the unlettered prophet, who believes in God and His words, and follow him that you may be guided."(7:158)
  11. "And you (Muhammad) were not a reader of any scripture before it, nor did you write it with your right hand, for then those who follow falsehood, might have doubted."(29:48)
  12. " It is He (God) who has sent among the unlettered a Messenger from themselves reciting to them His verses and purifying them and teaching them the Book and wisdom, although they were before in clear error."(62:2)
  13. "They say, 'Fairy-tales of the ancients that he has had written down, so that they are recited to him at the dawn and in the evening."(25:5)
  14. see for example translations by Pickthall, Yusuf Ali, and Daryabadi. It has also been translated to 'Gentile'. Arberry translates to 'the prophet of the common folk'.
  15. Tafsir Al Razi by Fakhr Al Din Al Razi, volume 15 pages 23 and 29, translated in Günther, Sebastian (2002). "Muhammad, the Illiterate Prophet: An Islamic Creed in the Qur'an and Qur'anic Exegesis". Journal of Qur'anic Studies 4 (1): 1–26.

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

  • "Muhammad in History, Thought, and Culture: An Encyclopedia of the Prophet of God" (২ খন্ড), সম্পাদক-সি. ফিটজপাট্রিক এবং এ. ওয়ালকার, শান্ত বারবার, ABC-CLID 2014. আইএসবিএন ১৬১০৬৯১৭৭৬