পার্সলে
পার্সলে | |
---|---|
পার্সলে পাতা ও ফুল | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ/রাজ্য: | প্লান্টি (Plante) |
গোষ্ঠী: | ট্র্যাকিওফাইট (Tracheophytes) |
ক্লেড: | সপুষ্পক উদ্ভিদ (অ্যাঞ্জিওস্পার্মস) |
ক্লেড: | ইউডিকটস |
গোষ্ঠী: | অ্যাস্টেরিডস (Asterids) |
বর্গ: | Apiales |
পরিবার: | Apiaceae |
গণ: | Petroselinum (মিল.) ফুস |
প্রজাতি: | P. crispum |
দ্বিপদী নাম | |
Petroselinum crispum (মিল.) ফুস | |
প্রতিশব্দ[১] | |
তালিকা
|
পার্সলে বা গার্ডেন পার্সলে (বৈজ্ঞানিক নাম: Petroselinum crispum; পেট্রোসেলিনাম ক্রিস্পাম) হলো অ্যাপিয়াসি গোত্রের পেট্রোসেলিনাম গণের একটি পুষ্পক উদ্ভিদ। এটি মধ্য ও পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের (সার্ডিনিয়া, লেবানন, ইসরায়েল, সাইপ্রাস, তুরস্ক, দক্ষিণ ইতালি, গ্রিস, পর্তুগাল, স্পেন, মাল্টা, মরক্কো, আলজেরিয়া ও তিউনিসিয়া) স্থানীয় একটি প্রজাতি। তবে ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চলেও এটি অভিযোজিত এবং ভেষজ ও সবজি হিসেবে এর চাষ করা হচ্ছে।
ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আমেরিকার খাবারে পার্সলে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। পার্সলের কুঁকড়ানো পাতা (কার্লি লিফ পার্সলে) খাবার পরিবেশনে ব্যবহার করা হয়। মধ্য, পূর্ব ও দক্ষিণ ইউরোপে এবং পশ্চিম এশিয়ায় অনেক খাবার পরিবেশনে কুচি করা তাজা পার্সলে পাতা উপর থেকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সোজা পাতার পার্সলের (ফ্ল্যাট লিফ পার্সলে) ব্যবহারও প্রায় একইরকম এবং এটি চাষ করাও সহজ। কারও কারও মতে এর সুবাস তুলনামূলক তীব্র। মধ্য, পূর্ব ও দক্ষিণ ইউরোপের খাবারে রুট পার্সলেও অত্যন্ত সাধারণ একটি উপকরণ। বিভিন্ন স্যুপ, স্ট্যু ও ক্যাসেরোলে এটি ব্যবহার করা হয়। ধারণা করা হয়, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের সার্ডিনিয়ায় এর উদ্ভব ঘটে এবং খ্রিষ্টপূর্ব ৩য় শতাব্দী থেকে এর চাষ হয়ে আসছে। ক্যারোলাস লিনিয়াস পার্সলের আদি বন্য নিবাস সার্ডিনিয়া বলে উল্লেখ করেন। সেখান থেকে একে ইংল্যান্ডে নিয়ে আসা হয় এবং ১৫৪৮ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ব্রিটেনে প্রথম এর আবাদ করা হয়।[২]
ব্যুৎপত্তি
[সম্পাদনা]বাংলায় “পার্সলে” শব্দটি ইংরেজি “পার্সলি” (parsley) থেকে এসেছে। ইংরেজি ভাষার parsley আবার প্রাচীন ইংরেজি শব্দ petersilie (পার্সলের সামসময়িক জার্মান প্রতিশব্দ petersilie-এর অনুরূপ) এবং প্রাচীন ফরাসি শব্দ peresil-এর মিলিত শব্দ থেকে উদ্ভূত। উভয় শব্দই মধ্যযুগীয় লাতিন শব্দ petrosilium থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যা আবার লাতিন petroselinum থেকে এসেছে।[৩] গ্রিক πετροσέλινον (পেট্রোসেলিনন, পাথুনি শাক;[৪] πέτρα [পেত্রা], “পাথর”,[৫] + σέλινον [সেলিনন], “সেলেরি জাতীয় শাকবিশেষ”[৬][৭][৮]) শব্দের লাতিনীকরণের মাধ্যমে petroselinum শব্দের উৎপত্তি ঘটে। মাইসিনীয় গ্রিকে লেখা রেখালিপি লিনিয়ার বিতে সে-রি-নো শব্দ পাওয়া যায়, যা সেলিনন শব্দের স্বীকৃত আদিরূপ।[৯]
বর্ণনা
[সম্পাদনা]নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে পার্সলে দ্বিবর্ষজীবী উদ্ভিদ এবং উপ-ক্রান্তীয় ও ক্রান্তীয় অঞ্চলে একবর্ষজীবী গুল্ম হিসেবে জন্মায়।
দ্বিবর্ষজীবী উদ্ভিদের অনুকূল আবহাওয়ায় এতে ১–৩ সেমি লম্বা পত্রফলকযুক্ত ১০–২৫ সেমি লম্বা ট্রাইপিনেট ধরনের পাতা রোজেট আকারে জন্মায়। প্রধান মূল স্ফীত হয়ে শীতকালের জন্য খাদ্য সঞ্চয় করে। দ্বিতীয় বছরে পুষ্প ধারণের জন্য ৭৫ সেমি (৩০ ইঞ্চি) লম্বা শাখা গজায়, যাতে পাতার পরিমাণ অত্যন্ত কম থাকে। এর মাথায় ৩–১০ সেমি ব্যাসের একটি সমতল আম্বেল বা পুষ্পধারক থাকে। ২ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের ফুলগুলো হলুদ থেকে হলুদাভ-সবুজ বর্ণের হয়ে থাকে। একসাথে অসংখ্য পরিমাণে ফুল ফোটে। ২–৩ মিলিমিটার লম্বা বীজগুলো ডিম্বাকৃতির হয়ে থাকে। বীজের শীর্ষে স্ত্রীকেশরের অবশিষ্টাংশ থাকে। এর উদ্বায়ী তেলের অন্যতম উপাদান হলো অ্যাপিওল। সাধারণত বীজগুলো পূর্ণতা লাভের পরপরই উদ্ভিদ মারা যায়।[৮][১০][১১]
রান্নায় ব্যবহার
[সম্পাদনা]মধ্যপ্রাচ্য, ভূমধ্যসাগর, ব্রাজিল এবং আমেরিকায় পার্সলে একটি অতিব্যবহৃত রন্ধন উপকরণ। খাবার পরিবেশনে কুকড়ানো পাতার পার্সলে বা কার্লি লিফ পার্সলে প্রায়ই ব্যবহৃত হয়। আলুর তৈরি খাবার (আলু সিদ্ধ বা ভর্তা), ভাত-জাতীয় পদ (রিসোত্তো বা পোলাও), মাছ, মুরগি, ভেড়া, হাঁস বা যেকোনো স্টেক এবং মাংশ ও সবজির বিভিন্ন ধরনের স্ট্যু (যেমন শ্রিম্প ক্রেওল, বিফ বোরগিনিওঁ, গুলাশ বা চিকেন প্যাপরিকাশ ইত্যাদি) পরিবেশনে তাজা পার্সলে ব্যবহার করা হয়।[১২]
পার্সলের বীজে পাতার চেয়ে বেশি শক্তিশালী গন্ধ থাকায় এর বীজও রান্নায় ব্যবহৃত হয়।
মধ্য, পূর্ব ও দক্ষিণ ইউরোপ এবং পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন রান্নায় কুচানো তাজা পার্সলে পাতা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। দক্ষিণ ও মধ্য ইউরোপে বিভিন্ন ধরনের স্টক, স্যুপ ও সস পরিবেশনের জন্য পার্সলে ও অন্যান্য কিছু পাতা-গুল্ম একত্রে ব্যবহার করা হয়, একে বুকে গার্নি নামে অভিহিত করা হয়। চিকেন স্যুপ, অলিভিয়ের সালাদ প্রভৃতি তাজা সবজির সালাদ, ওপেন স্যান্ডউইচ বা প্যাটিজ-এর উপর তাজা পার্সলে পাতা কেটে সাজানো হয়।
ফ্রান্সে রসুন ও পার্সলে কুচি করে একত্রে পার্সিয়াদ নামের এক ধরনের মসলা তৈরি করা হয়।
পার্সলে ইতালীয় সালসা ভার্দের মূল উপকরণ। এতে পার্সলের সাথে কেপার, অ্যানচভি (কড়া গন্ধের মাছবিশেষ), রসুন ও কখনো কখনো সিরকায় ভেজানো পাউরুটি মেশানো হয়। ইতালীয় রীতিতে বোল্লিতো মিস্তো বা মাছের তরকারির সাথে এটি পরিবেশন করা হয়। গ্রেমোলাতা হলো পার্সলে, রসুন ও লেবুর খোসা দিয়ে বানানো একটি মিশ্রণ, যা ইতালীয় রীতির গরুর স্ট্যু ওসসোবুকো আল্লা মিলানিজ-এর সাথে খাওয়া হয়।
ইংল্যান্ডে পার্সলে সস হলো রু-জাতীয় সস, যা সাধারণত মাছ বা গ্যামনের সাথে পরিবেশন করা হয়। লন্ডনের ইস্ট এন্ডে একে “লিকার” বলে অবহিত করা হয় এবং পাই ও ম্যাশের সাথে পরিবেশন করা হয়।
মধ্য, পূর্ব ও দক্ষিণ ইউরোপীয় রন্ধনপ্রণালীতে রুট পার্সলে খুবই সাধারণ একটি উপকরণ। এসব অঞ্চলে এটি নাশতা হিসেবে বা বিভিন্ন স্যুপ, স্ট্যু বা ক্যাসেরোলে সবজি হিসেবে এবং ব্রথের উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ব্রাজিলে তাজা পার্সলে (salsa) ও পেঁয়াজ পাতা (cebolinha) কুঁচি করে “শেইরো-ভের্দে” (cheiro-verde; আক্ষরিকভাবে “সবুজ গন্ধ”) নামে একটি সিজনিং তৈরি করা হয়; যা অনেক ব্রাজিলীয় খাবার, যেমন: মাংস, মুরগি, মাছ, ভাত, শিম, স্ট্যু, স্যুপ, সবজি, সালাদ, মিশ্রণ, সস, স্টক প্রভৃতিতে সিজনিং হিসেবে ব্যবহার করা হয়। শেইরো-ভের্দের উপাদানগুলো সেখানকার খাবারের দোকানে বান্ডল আকারে বিক্রি করা হয়। ব্রাজিলের কিছু কিছু এলাকায় শেইরো-ভের্দের মিশ্রণে পার্সলের বদলে ধনেপাতাও (“সিলান্ত্রো” বা পর্তুগিজ ভাষায় “কোয়েন্ত্রো” [coentro] নামেও পরিচিত) ব্যবহার করা হয়।
মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন ধরনের সালাদের অন্যতম প্রধান উপাদান হলো পার্সলে। লেবাননের তাবুলাহ সালাদের নাম এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যায়। ফালাফেল তৈরিতে ছোলা বা কালিমটরের (Vicia faba) সাথে পার্সলে ব্যবহার করা হয়, যার ফলে ফালাফেলের ভেতরের সবুজাভ রঙ আসে। এছাড়াও এটি সবজি কোরমা নামের একটি ইরানি পদেরও প্রধান উপাদান।
পুষ্টি উপাদান
[সম্পাদনা]প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স)-এ পুষ্টিমান | |
---|---|
শক্তি | ১৫১ কিজু (৩৬ kcal) |
৬.৩৩ গ্রাম | |
চিনি | ০.৮৫ গ্রাম |
খাদ্য আঁশ | ৩.৩ গ্রাম |
০.৭৯ গ্রাম | |
২.৯৭ গ্রাম | |
ভিটামিন | পরিমাণ দৈপ%† |
ভিটামিন এ সমতুল্য | ৫৩% ৪২১ μg৪৭% ৫০৫৪ μg৫৫৬১ μg |
থায়ামিন (বি১) | ৭% ০.০৮৬ মিগ্রা |
রিবোফ্লাভিন (বি২) | ৮% ০.০৯ মিগ্রা |
নায়াসিন (বি৩) | ৯% ১.৩১৩ মিগ্রা |
প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি৫) | ৮% ০.৪ মিগ্রা |
ভিটামিন বি৬ | ৭% ০.০৯ মিগ্রা |
ফোলেট (বি৯) | ৩৮% ১৫২ μg |
ভিটামিন সি | ১৬০% ১৩৩ মিগ্রা |
ভিটামিন ই | ৫% ০.৭৫ মিগ্রা |
ভিটামিন কে | ১৫৬২% ১৬৪০ μg |
খনিজ | পরিমাণ দৈপ%† |
ক্যালসিয়াম | ১৪% ১৩৮ মিগ্রা |
লৌহ | ৪৮% ৬.২ মিগ্রা |
ম্যাগনেসিয়াম | ১৪% ৫০ মিগ্রা |
ম্যাঙ্গানিজ | ৮% ০.১৬ মিগ্রা |
ফসফরাস | ৮% ৫৮ মিগ্রা |
পটাশিয়াম | ১২% ৫৫৪ মিগ্রা |
সোডিয়াম | ৪% ৫৬ মিগ্রা |
জিংক | ১১% ১.০৭ মিগ্রা |
| |
†প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য মার্কিন সুপারিশ ব্যবহার করে শতাংশ অনুমান করা হয়েছে। উৎস: ইউএসডিএ ফুডডাটা সেন্ট্রাল |
পার্সলে বিভিন্ন ধরনের ফ্ল্যাভনয়েড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎস। বিশেষ করে পার্সলেতে লুটিওলিন, অ্যাপিজেনিন,[১৩] ফলেট, ভিটামিন কে, ভিটামিন সি ও ভিটামিন এ পাওয়া যায়। মাত্র আধা টেবিল চামচ (প্রায় এক গ্রাম) শুষ্ক পার্সলেতে প্রায় ৬.০ মাইক্রোগ্রাম লাইকোপিন ও প্রায় ১০.৭ মাইক্রোগ্রাম আলফা ক্যারোটিনের পাশাপাশি ৮২.৯ মাইক্রোগ্রাম লিউটিন+জিয়াকজ্যান্থিন ও প্রায় ৮০.৭ মাইক্রোগ্রাম বিটা ক্যারোটিন পাওয়া যায়।[১৪] শুষ্ক পার্সলেতে প্রায় ৪৫ মিলিগ্রাম/গ্রাম অ্যাপিজেনিন থাকতে পারে।[১৫] তাজা পার্সলেতে অ্যাপিজেনিনের পরিমাণ ২১৫.৫ মিলিগ্রাম/১০০ গ্রাম বলে গণ্য, যা এর সবচেয়ে নিকটবর্তী গ্রিন সেলেরির (১৯.১ মিলিগ্রাম/১০০ গ্রাম) চেয়ে অনেক গুণ বেশি।[১৬]
সতর্কতা
[সম্পাদনা]গর্ভবতী নারীদের জন্য অতিমাত্রায় পার্সলে ভক্ষণ পরিহার করা উচিত। স্বাভাবিক মাত্রায় পার্সলে গ্রহণ গর্ভবতী নারীদের জন্য নিরাপদ। কিন্তু বেশিমাত্রায় গ্রহণ করলে ইউটেরোটনিক প্রভাব দেখা দিতে পারে।[১৭]
চাষাবাদ
[সম্পাদনা]পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায় এমন আর্দ্র ও পানি-নিষ্কাশনের সুব্যবস্থাযুক্ত মাটিতে পার্সলে ভালো জন্মায়। ২২–৩০ °সে (৭২–৮৬ °ফা) তাপমাত্রায় পার্সলে ভালো হয়। সাধারণত বীজ থেকে পার্সলে জন্মায়।[১১] বীজের অঙ্কুরোদ্গম কিছুটা ধীর; প্রায় চার থেকে ছয় সপ্তাহ সময় লাগে।[১১] বীজের আবরণের ফিউরানোকুমারিনের জন্য এর অঙ্কুরোদ্গম কিছুটা কঠিন।[১৮] পাতার জন্য আবাদ করা হলে গাছগুলোর মধ্যে সাধারণত ১০ সেন্টিমিটার দূরত্ব রাখা হয়। অন্যদিকে মূলের জন্য আবাদ করা হলে প্রধান মূলের বৃদ্ধির জন্য দূরত্বটি বাড়িয়ে প্রায় ২০ সেন্টিমিটার রাখা হয়।[১১]
বিভিন্ন ধরনের বন্য জীব পার্সলের প্রতি আকৃষ্ট হয়। সোয়ালোটেল পরিবারের প্রজাপতিরা তাদের লার্ভার জন্য পার্সলেকে পোষক হিসেবে ব্যবহার করে। এদের শুঁয়োপোকা দশায় গায়ে কালো ও সবুজ রঙের দাগের পাশাপাশি হলুদ রঙের ফোঁটা থাকে। প্রজাপতি দশায় পরিণত হওয়ার আগে এরা দুই সপ্তাহ পর্যন্ত পার্সলে উদ্ভিদ খেয়ে বেঁচে থাকে। মৌমাছি ও অন্যান্য মধু-অন্বেষী পতঙ্গ এদের ফুলে বসে। ইউরোপীয় গোল্ডফিঞ্চ ইত্যাদি বিভিন্ন পাখি পার্সলের বীজ খেয়ে থাকে।
কাল্টিভার
[সম্পাদনা]আবাদের জন্য পার্সলের বিভিন্ন ধরনের কাল্টিভার গ্রুপ রয়েছে।[১৯] উদ্ভিদের বিশেষ গুণাবলির ওপর এটি নির্ভরশীল, যা আবার এর ব্যবহারের সাথে সম্পর্কিত। এদের কখনো কখনো উদ্ভিদতাত্ত্বিক ভ্যারাইটি বা প্রকরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[২০] কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি বিশেষ নির্বাচনমূলক আবাদ, যা এর আদি উৎস থেকে প্রাকৃতিকভাবে আগত নয়।[১০]
লিফ পার্সলে
[সম্পাদনা]লতা-গুল্ম হিসেবে ব্যবহৃত পার্সলের প্রধানত দুইটি গ্রুপ লক্ষণীয়; এদের একটি ফরাসি বা কার্লি লিফ (পি. ক্রিস্পাম ক্রিস্পাম গ্রুপ; সমনাম পি. ক্রিস্পাম ভার. ক্রিস্পাম) এবং অন্যটি ইতালীয় বা ফ্ল্যাট লিফ (পি. ক্রিস্পাম নিয়াপোলিটানাম গ্রুপ; সমনাম পি. ক্রিস্পাম ভার. নিয়াপোলিটানাম)। এদের মধ্যে নিয়াপোলিটানাম গ্রুপের পার্সলে পাতা এর বন্য আদিপুরুষের সাথে অধিক মিলসম্পন্ন। অনেক চাষি সমান-পাতার ফ্ল্যাট লিফ পার্সলে চাষ করে থাকেন। তাদের মতে, এই গ্রুপের পার্সলে প্রখর রোদ ও বৃষ্টির প্রতি অধিক সহনশীল হওয়ায় চাষ করা সহজ।[২১] এদের ঘ্রাণ তুলনামূলক তীব্র বলে মনে করা হলেও,[১১] এই দাবি নিয়ে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।[২১] অন্যদিকে খাবার পরিবেশনে কুকড়ানো পাতার কার্লি লিফ পার্সলে বেশি বেশি সুন্দর বলে অনেকে এটির চাষে প্রাধান্য দেন।[২১][২২] দক্ষিণ ইতালিতে জন্মানো তৃতীয় আরেক ধরনের পার্সলেতে সেলেরির অনুরূপ মোটা কাণ্ড তৈরি হয়।[২১]
রুট পার্সলে
[সম্পাদনা]আরেক ধরনের পার্সলে রয়েছে, যা মূলজ সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। একে হ্যামবার্গ রুট পার্সলে (পি. ক্রিস্পাম র্যাডিকোসাম গ্রুপ, সমনাম পি. ক্রিস্পাম ভার. টিউবারোসাম) বলা হয়। পাতার জন্য আবাদকৃত পার্সলের তুলনায় এর প্রধান মূল কিছুটা স্ফীত হয়। গ্রেট ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তেমন দেখা না গেলেও, মধ্য ও পূর্ব ইউরোপীয় রান্নায় এটি অতিসাধারণ। এই অঞ্চলের দেশগুলোতে স্যুপ বা স্ট্যু রান্নায় ব্যবহারের পাশাপাশি রুট পার্সলে গাজরের মতো কাঁচাও খাওয়া হয়।[২১]
অ্যাপিয়াসি গোত্রে রুট পার্সলের সবচেয়ে নিকটসম্পর্কিত প্রজাতি পার্সনিপ দেখতে প্রায় একইরকম হলেও, এদের স্বাদে যথেষ্ট পার্থক্য দেখা যায়।
চিত্রশালা
[সম্পাদনা]-
হিমে শুষ্ককৃত পার্সলে; জার্মান, স্প্যানিশ ও গ্রিক ভাষায় লেবেল দৃশ্যমান
-
সমতল পাতার পার্সলে
-
পার্সলের ফুল
-
অপরিণত বীজ
-
পার্সলের ফুল
-
পার্সলে ফুলের পরাগায়ন-সহায়ক
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Petroselinum crispum (Mill.) Fuss"। প্ল্যান্টস অব দ্য ওয়ার্ল্ড অনলাইন (ইংরেজি ভাষায়)। বোর্ড অব ট্রাস্টিজ অব দ্য রয়েল বোটানিক গার্ডেনস, কিউ। ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০২০।
- ↑ "Parsley - an overview"। সায়েন্সডিরেক্ট টপিক্স (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০।
- ↑ petroselinon, শার্লটন টি লুইস, চার্লস শর্ট, অ্যা ল্যাটিন ডিকশনারি, পার্সিয়াস ডিজিটাল লাইব্রেরি
- ↑ πετροσέλινον, Henry George Liddell, Robert Scott, A Greek-English Lexicon, on Perseus Digital Library
- ↑ πέτρα, Henry George Liddell, Robert Scott, A Greek-English Lexicon, on Perseus Digital Library
- ↑ σέλινον, Henry George Liddell, Robert Scott, A Greek-English Lexi
- ↑ The Euro+Med Plantbase Project: Petroselinum crispum ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১২-০৩-০৯ তারিখে
- ↑ ক খ Interactive Flora of NW Europe: Petroselinum crispum[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "Palaeolexicon" (ইংরেজি ভাষায়)। প্যালিয়োলেক্সিকন। ১৩ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুলাই ২০১৮।
- ↑ ক খ Blamey, M. & Grey-Wilson, C. (1989). Illustrated Flora of Britain and Northern Europe. আইএসবিএন ০-৩৪০-৪০১৭০-২
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Huxley, A., ed. (1992). New RHS Dictionary of Gardening 3: 532. Macmillan আইএসবিএন ০-৩৩৩-৪৭৪৯৪-৫.
- ↑ Meyer, J. (1998). Authentic Hungarian Heirloon Recipes Cookbook, ed. 2. Meyer & Assoc. আইএসবিএন ০-৯৬৬৫০৬২-০-০.
- ↑ মায়ার, এইচ.; বোলারিনওয়া, এ.; ওলফ্রাম, জি.; লিনসেইসেন, জি. (২০০৬)। "Bioavailability of apigenin from apiin-rich parsley in humans" (পিডিএফ)। অ্যানালস অব নিউট্রিশন অ্যান্ড মেটাবলিজম। ৫০ (৩): ১৬৭–১৭২। এসটুসিআইডি 8223136। ডিওআই:10.1159/000090736। পিএমআইডি 16407641।
- ↑ Nutritional Data, Parsley ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৩-০৮-১৯ তারিখে, accessed 2013.08.05
- ↑ শঙ্কর ই, গোয়েল এ, গুপ্ত কে, গুপ্ত এস (২০১৭)। "Plant flavone apigenin: An emerging anticancer agent"। কারেন্ট ফার্মাকোলজি রিপোর্টস (ইংরেজি ভাষায়)। ৩ (৬): ৪২৩–৪৪৬। ডিওআই:10.1007/s40495-017-0113-2। পিএমআইডি 29399439। পিএমসি 5791748 ।
- ↑ ডিলেজ, পিএইচডি, বার্বারা (নভেম্বর ২০১৫)। "Flavonoids" (ইংরজি ভাষায়)। লিনাস পলিং ইনস্টিটিউট, ওরেগন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়, করভালিস, ওরেগন। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০২১।
- ↑ "Parsley information"। ড্রাগস.কম (ইংরেজি ভাষায়)।
- ↑ Jett, J. W. That Devilish Parsley ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০০৭-০৬-২৬ তারিখে West Virginia University Extension Service. Last retrieved April 26, 2007.
- ↑ Multilingual Multiscript Plant Name Database: Sorting Petroselinum names
- ↑ "Petroselinum crispum"। জার্মপ্লাজম রিসোর্স ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক (জিআরআইএন)। কৃষি গবেষণা পরিসেবা (এআরএস), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ)। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৭।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Stobart, T. (1980). The Cook's Encyclopaedia. Macmillan আইএসবিএন ০-৩৩৩-৩৩০৩৬-৬.
- ↑ "How To Grow Parsley"। হার্ব গ্রোয়িং গাইড (ইংরেজি ভাষায়)। ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১।
- চিসাম, হিউ, সম্পাদক (১৯১১)। "Parsley"। ব্রিটিশ বিশ্বকোষ (১১তম সংস্করণ)। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- উইকিমিডিয়া কমন্সে Petroselinum crispum সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।
- উইকিপ্রজাতিতেPetroselinum crispum সম্পর্কিত তথ্য।