নিউ স্কিম মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা
বাংলাদেশে ইসলাম |
---|
নিউ স্কিম মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা বা রিফর্ম মাদ্রাসা স্কিম উপমহাদেশের আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার একটি সংস্কারমূলক ধারণা। এই শিক্ষা ব্যবস্থা ১৯১৪ সালে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক প্রবর্তন করা হয়, তবে এই শিক্ষা ধারনাটির প্রবর্তক বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ আবু নসর ওহিদ।[১][২] তিনি উপমহাদেসশের ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিকরন করতে এই প্রস্তাব করেছিলেন, যাতে মুসলিম শিক্ষার্থীরা ইংরেজি শিক্ষায় অগ্রগামী হতে পারে এবং সরকারি চাকরি পেতে পারে।[৩] শিক্ষাব্যবস্থার এই ধারণার কারণে বাংলাদেশ ও ভারতের বহু আলিয়া মাদ্রাসা সাধারণ স্কুলে পরিনত হয়েছিলো।[৪][৫]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]১৯০০ সালের পরে ইংরেজ সরকার মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা আধুনিকরনের জন্য বহু কমিশন গঠন করে। এমন একটি উদ্যোগের প্রেক্ষাপটে ১৯১৪ সালে শামসুল উলামা আবু নসর ওয়াহিদের নেতৃত্বে মোহমেডান এডুকেশন অ্যাডভাইজরি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিই নিউ স্কিম ও ওল্ড স্কিম ব্যবস্থার প্রস্তাব করে। এই প্রস্তাব ইংরেজ সরকারের পছন্দ হলে, তারা সেটা পরের বছর ১৯১৫ সালে বাস্তবায়ন করে। ১৯৫১ সালে ইস্ট বেঙ্গল এডুকেশন রিকনস্ট্রাকশন সিস্টেমের তথ্য অনুসারে ১৯৪৭-১৯৪৮ সাল পূর্ব বাংলায় নিউ স্কিম শিক্ষা ব্যবস্থার অধিনে জুনিয়র ও সিনিয়র মাদ্রাসা ছিলো প্রায় ১০৭৪টি। ১৯৬০ সালের পরে এসকল মাদ্রাসার বহু মাদ্রাসা স্কুলে পরিণত হয়েছিলো।[৬]
শিক্ষা ব্যবস্থা
[সম্পাদনা]মুসলিম শিক্ষার্থীদের ইংরেজি শিক্ষায় আগ্রহী করে তোলার জন্য এই জুনিয়র ও সিনিয়র নামে দু’ধরনের নিউ স্কিম মাদ্রাসা চালু হয়। এই শিক্ষা ব্যবস্থার ধারণা অনুযায়ী জুনিয়র মাদ্রাসায় পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত এবং সিনিয়র মাদ্রাসায় মাধ্যমিক শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হবে।[৭] এই স্কিমের আওতাধীন সিনিয়র মাদ্রাসার ইংরেজি শিক্ষা বাধ্যতামূলক থাকবে এবং এই এই মাদ্রাসাসমূহ ইংরেজ সরকার থেকে সরকারি সাহায্য লাভ করবে।[৮] যেসকল মাদ্রাসা সরকারের এই নতুন ধারণা গ্রহণ করবে এবং প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করবে, তাদেরকে নিউ স্কিম মাদ্রাসা বলা হবে। আর যেসকল মাদ্রাসা সরকারের এই প্রজেক্টে অংশগ্রহণ করবেনা, তাদেরকে ওল্ড স্কিম মাদ্রাসা বলা হবে। মুসলিম শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা তাদের প্রতিষ্ঠানকে নিউ স্কিম মাদ্রাসা বানাতে বেশি আগ্রহী ছিলো, কেননা এখানে সরকারি সাহায্য পাওয়া যাবে।[৯]
পরবর্তী প্রতিক্রিয়া
[সম্পাদনা]এই শিক্ষাব্যবস্থা চলার ফলে মাত্র ৪৫ বছরের মধ্যে নিউ স্কিম মাদ্রাসাগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করে। এসব প্রতিষ্ঠানে সাধারণ শিক্ষা গুরুত্ব পেতে শুরু করে, এসব মাদ্রাসা অভ্যন্তরে সাধারণ স্কুলের মত কার্যক্রম পরিচালনা হওয়া শুরু করেছিলো। এর ফলে ১৯৬০ সালের দিকে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক গঠিত ১৯৫৯ সালের শরীফ জাতীয় শিক্ষা কমিশন এই নিউ স্কিম মাদ্রাসাগুলোকে স্কুলে পরিণত করার পরামর্শ দেন। এর ফলে অনেক নিউ স্কিম মাদ্রাসাই স্কুলে পরিবর্তন হয়ে যায়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য
- ঢাকা মোহসীনিয়া মাদ্রাসা থেকে ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা এবং কবি নজরুল সরকারি কলেজ, ঢাকা
- রাজশাহী মাদ্রাসা থেকে রাজশাহী সরকারী মাদ্রাসা (বর্তমানে হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, রাজশাহী)
- চট্টগ্রাম মোহসিনীয়া মাদ্রাসা থেকে হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম এবং সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, চট্টগ্রাম
- মাদ্রাসা-ই-হাম্মাদিয়া, আরমানিটোলা থেকে হাম্মাদিয়া হাইস্কুল
- ঝিনাইদহ ওয়াজির আলী হাই মাদ্রাসা থেকে ঝিনাইদহ ওয়াজির আলী হাই স্কুল
- ভোলা আব্দুর রব হাই মাদ্রাসা থেকে ভোলা আব্দুর রব হাই স্কুল
সমালোচনা
[সম্পাদনা]এই শিক্ষাব্যবস্থার ফলে ধীরে ধীরে ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় শিক্ষা বদলে সাধারণ শিক্ষার আধিক্য দেখা দেয়, যার ফলে বহু মাদ্রাসা স্কুলে রুপান্তরিত করা হয়।[১০][১১] এইজন্য অনেক ইসলামি বুদ্ধিজীবী এই শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন।[১২][১৩] এ সম্পর্কে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সমালোচনা করেছেন,
“ | (এই নিউ স্কিমের কথা উল্লেখ করে) সাবেক প্রথায় বাংলাদেশে এখনও তিনটি শিক্ষাপ্রণালী প্রচলিত আছে এবং তা সরকারের অনুমোদিত নিউ স্কিম মাদ্রাসা, ওল্ড স্কিম মাদ্রাসা ও সাধারণ শিক্ষা। ইহা শিক্ষাক্ষেত্রে কেবল গণ্ডগোলই সৃষ্টি করিয়াছে এবং মুসলমান সমাজে অনৈক্য আনায়ন করিয়াছে। | ” |
— মুহম্মদ শহীদুল্লাহর শিক্ষাচিন্তা প্রবন্ধ, কালেরকণ্ঠ |
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড: একটি পর্যালোচনা (আলিয়া মাদ্রাসা সংস্কারের ধারা) - আশরাফ উদ্দিন খান
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "ইতিহাসে আজ"। Daily Nayadiganta (নয়া দিগন্ত)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-২১।
- ↑ Bandyopadhyay), অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Anirban (২০২১-০৬-০৯)। ভারতে ইসলাম ভারতীয় মুসলিম (দ্বিতীয় খণ্ড ) (Bharote Islam Bharotiyo Muslim, Part-2)। Arohi Prokashan।
- ↑ Ragib, Hammad (২০১৯-১০-১৭)। "কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড : একটি পর্যালোচনা (৪)"। Fateh24 (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-২১।
- ↑ "দায়বদ্ধ লেখক ও সজাগ বুদ্ধিজীবী"। SAMAKAL (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০৭-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-২১।
- ↑ At-tahreek, Monthly। "ইসলামী শিক্ষা"। মাসিক আত-তাহরীক (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-২৮।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব। "নিউস্কিম ষড়যন্ত্রের কবলে মাদরাসা শিক্ষা"। DailyInqilabOnline। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-২১।
- ↑ "বাংলাদেশে ইসলামী শিক্ষা – Professor Dr. Kamruzzaman" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-২১।
- ↑ ড. মো. কামরুজ্জামান। "বাংলাদেশে ইসলামী শিক্ষার অতীত ও বর্তমান | Al Itisam" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০৭-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-২১।
- ↑ "মাদ্রাসা - বাংলাপিডিয়া"। bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-২১।
- ↑ "জাতীয় শিক্ষানীতিতে ধর্মীয় ও মাদরাসা শিক্ষা : একটি শুভঙ্করের ফাঁক -মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী"। The Daily Sangram। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-২১।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব। "নিউস্কিম ষড়যন্ত্রের কবলে মাদরাসা শিক্ষা"। DailyInqilabOnline। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-২১।
- ↑ "ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর শিক্ষাচিন্তা গভীর দূরদৃষ্টির পরিচয় দেয় | কালের কণ্ঠ"। Kalerkantho। ২০০৯-১২-১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-২১।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব। "মাদ্রাসা শিক্ষার দ্বীনি ঐতিহ্য বিকশিত হোক"। DailyInqilabOnline। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-২১।