বিষয়বস্তুতে চলুন

আলজেরিয়া

স্থানাঙ্ক: ২৮° উত্তর ১° পূর্ব / ২৮° উত্তর ১° পূর্ব / 28; 1
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
গণপ্রজাতন্ত্রী আলজেরিয়া

الجمهورية الجزائرية الديمقراطية الشعبية (আরবি)
ⵟⴰⴳⴷⵓⴷⴰ ⵜⴰⵎⴻⴳⴷⴰⵢⵜ ⵜⴰⵖⴻⵔⴼⴰⵏⵜ ⵜⴰⵣⵣⴰⵢⵔⵉⵜ (আমাজিগ)
আলজেরিয়ার জাতীয় পতাকা
নীতিবাক্য: "By the people and for the people"[][]
"রাষ্ট্রবিপ্লব জনগণের দ্বারা এবং জনগণের জন্য"
জাতীয় সঙ্গীত: Kassaman
("The Pledge")
"কেসামান"
 আলজেরিয়া-এর অবস্থান (dark green)
 আলজেরিয়া-এর অবস্থান (dark green)
রাজধানী
ও বৃহত্তম নগরী বা বসতি
আলজিয়ার্স
সরকারি ভাষাআরবি (জাতীয় ভাষা)
স্বীকৃত আঞ্চলিক ভাষাতামাজাইত (জাতীয় ভাষা)
জাতীয়তাসূচক বিশেষণআলজেরিয়ান
সরকারঅর্ধ-রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্র
আবদুলমজিদ টেবুউন
আয়মান বিন আব্দুর রহমান
প্রতিষ্ঠান
• হাম্মাদিদ রাজবংশ
১০১৪ থেকে
১৫১৬ থেকে
• ফরাসি নীতি
১৮৩০ থেকে
• ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতা
৫ই জুলাই ১৯৬২
আয়তন
• মোট
২৩,৮১,৭৪১ কিমি (৯,১৯,৫৯৫ মা) (10th)
• পানি (%)
negligible
জনসংখ্যা
• ২০১৬ আনুমানিক
৪,০৪,০০,০০০[] (৩৩তম)
• ২০১৩ আদমশুমারি
৩,৭৯,০০,০০০[]
• ঘনত্ব
১৫.৯/কিমি (৪১.২/বর্গমাইল) (২০৮তম)
জিডিপি (পিপিপি)২০১৭ আনুমানিক
• মোট
$৬৩৪.৭৪৬ বিলিয়ন[]
• মাথাপিছু
$15,281[]
জিডিপি (মনোনীত)২০১৭ আনুমানিক
• মোট
$১৭৩.৯৪৭ বিলিয়ন[]
• মাথাপিছু
$4,187[]
জিনি (১৯৯৫)৩৫.৩.3[]
মাধ্যম
মানব উন্নয়ন সূচক (২০১৫)বৃদ্ধি ০.৭৩৬[]
উচ্চ · ৮৩তম
মুদ্রাআলজেরিয়ান দিনার (DZD)
সময় অঞ্চলইউটিসি+১
কলিং কোড২১৩
ইন্টারনেট টিএলডি.dz

আলজেরিয়া উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকায় ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। এর পূর্ণ সরকারি নাম আলজেরিয়া গণতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্র। দেশটির আয়তন প্রায় ২৩ লক্ষ ৮১ হাজার ৭৪১ বর্গকিলোমিটার । আয়তনের বিচারে আলজেরিয়া আফ্রিকা মহাদেশের বৃহত্তম ও বিশ্বের ১০ম বৃহত্তম রাষ্ট্র। আলজেরিয়ার জনসংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৩৬ লক্ষ; জনঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪৬ জন। আলজেরিয়ার আরবি নাম আলজাজাইর (অর্থাৎ দ্বীপসমূহ); নামটি রাজধানীর তীর সংলগ্ন দ্বীপগুলিকে নির্দেশ করছে। ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত আলজিয়ার্স দেশটির বৃহত্তম শহররাজধানী; এছাড়া ওরান, কন্সটান্টিনআন্নাবা কিছু গুরুত্বপূর্ণ নগরী। ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা ও ধর্মের কারণে আলজেরিয়াকে আরব বিশ্বের অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়। আলজেরিয়ার উত্তর-পূর্ব সীমান্তে তিউনিসিয়া, পূর্বে লিবিয়া। পশ্চিমে মরক্কোপশ্চিম সাহারা প্রজাতন্ত্র, এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে মালিমোরিতানিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্বে নাইজার অবস্থিত। আলজেরিয়ার নাগরিকদেরকে আলজেরীয় বলা হয়।

উত্তর আলজেরিয়ার ভূমধ্যসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলটির নাম তেল। এখানেই দেশের সিংহভাগ লোক বাস করে। আলজেরিয়ার তটরেখায় অনেক খাঁড়ি ও উপসাগর আছে। এখানে উর্বর সমভূমি ও অনুচ্চ পাহাড় আছে। নদীগুলি ক্ষুদ্র ও মৌসুমী ধরনের। উত্তর আলজেরিয়াতে গ্রীষ্মকালীন জলবায়ু উষ্ণ ও শুষ্ক এবং শীতকালগুলি মৃদু ও বৃষ্টিবহুল। উত্তরের তেল অঞ্চলটির ঠিক দক্ষিণে অ্যাটলাস পর্বতমালা উত্তর আলজেরিয়ার পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রসারিত হয়েছে; এর সর্বোচ্চ বিন্দু চেলিয়া পর্বত (২৩২৮ মিটার)। অ্যাটলাস পর্বতমালা দুইটি সমান্তরাল পর্বতমালা নিয়ে গঠিত, উত্তরের তেলীয় অ্যাটলাস এবং দক্ষিণের সাহারা অ্যাটলাস। অ্যাটলাস পর্বতমালার দক্ষিণে অবস্থিত মধ্য ও দক্ষিণ আলজেরিয়া মূলত সাহারা মরুভূমির উত্তরাংশ নিয়ে গঠিত। সাহারা মরুভূমি আলজেরিয়ার প্রায় নয়-দশমাংশ এলাকা গঠন করেছে। সাহারাতে কিছু মালভূমি এবং মধ্য আলজেরিয়াতে আর্গ নামের বিশাল সুউচ্চ অনেক বালিয়াড়ি (বালির পাহাড়) আছে। আলজেরিয়ার সর্বোচ্চ বিন্দু তাহাত পর্বত (২৯১৮ মিটার) এখানেই অবস্থিত। সাহারা মরুভূমির জলবায়ু ঋতু বা দিবসের অহ্ন অনুযায়ী অত্যন্ত শীতল বা অত্যন্ত উত্তপ্ত হতে পারে; এখানে বৃষ্টিপাত অত্যন্ত বিরল। আলজেরিয়ার উদ্ভিদগুলি পানি ছাড়াই বহুদিন বেঁচে থাকতে পারে। উত্তরের তেল অঞ্চলে চিরসবুজ গুল্ম ও অনুচ্চ বিভিন্ন বৃক্ষের দেখা মেলে। মরুভূমি অঞ্চলে গুচ্ছ গুচ্ছ ঘাস, গুল্ম, আকাসিয়া বৃক্ষ ও জুজুবে বৃক্ষের আবাস। আলজেরিয়ার স্থানীয় হায়েনা, খ্যাঁকশিয়াল, বানর, বাজপাখি ও সাপ আছে। আরও আছে অ্যান্টিলোপ হরিণ, বুনো খরগোশ, তীক্ষ্ণদন্তী প্রাণী ও বন্য শূকর। সাহারা কাঁকড়াবিছার উপস্থিতি খুবই সাধারণ।

আলজেরিয়ার সিংহভাগ (৭৫%) জনগণ নৃতাত্ত্বিকভাবে ও ভাষাগতভাবে আরব জাতির লোক; এছাড়া এখানে বার্বার (আমাজিগ) জাতির একটি বৃহৎ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী বাস করে, যারা জনসংখ্যার প্রায় ২৪%। এখানে আরবদের আগমনের পূর্বে বার্বার জাতির লোকেরাই বাস করত। বর্তমানে বার্বার জাতির লোকেরা দেশের উত্তর-পূর্বভাগের কাবিলিয়া অঞ্চলে ঘনীভূত। সংখ্যালঘু বার্বারেরা ইসলাম গ্রহণ করলেও নিজ ভাষা ও রীতিনীতি বিসর্জন দেয় নি। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বার্বারদেরকে অধিকতর জাতিগত অধিকার প্রদান করা হয়েছে। সাহারা অঞ্চলে মাত্র ৫ লক্ষ লোক বাস করে। এরা হয় খনিজ তেলখনির শ্রমিক, অথবা মেষপালক বা ছাগলপালক যাযাবর তুয়ারেগ জাতির লোক। আরবি ও বার্বার (তামাজিগত) দুইটি সরকারি ভাষা। তবে ঔপনিবেশিক কারণে প্রশাসন, ব্যবসা ও উচ্চশিক্ষার ভাষা হিসেবে ফরাসি ভাষা এখনও বহুল প্রচলিত। সরকারি ধর্ম ইসলাম, প্রায় সবাই (৯৯%) মুসলমান এবং সিংহভাগ মুসলমান সুন্নি মতাদর্শী। কুসকুস (গমের সুজিভিত্তিক পদ) ও ত্বজিন (মাটির পাত্রে অল্প পানিতে সিদ্ধ মসলা, বাদাম ও শুকনো ফল দেয়া মাছ, মাংস ও সবজির মিশ্রণ) দুইটি প্রধান স্থানীয় পদ। খেজুরের বীজ ভেজে গুঁড়ো করে কফি বানিয়ে খাওয়া হয়। আলজেরিয়া একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র যার একটি দ্বিকাক্ষিক আইনসভা আছে। রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থাতে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান, অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী সরকার প্রধান।

আলজেরিয়া একটি উন্নয়নশীল দেশ, যার অর্থনীতি মূলত সাহারা মরুভূমি থেকে উত্তোলিত খনিজ তেল (পেট্রোলিয়াম) ও প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন ও রপ্তানির উপরে নির্ভরশীল, এই দুইটি দ্রব্য দেশটির রপ্তানিকৃত পণ্যের ৯৭% গঠন করেছে। আলজেরিয়া মূলত ফ্রান্স ও ইতালিতে গ্যাস রপ্তানি করে। দেশটির মুদ্রার নাম আলজেরীয় দিনার, যা আবার ১০০ সঁতিমে বিভক্ত। স্বাধীনতা লাভের পর দেশটি অর্থনীতির সিংহভাগ রাষ্ট্রায়ত্তধীন করলেও ১৯৮০-র দশক থেকে কিছু কিছু খাতের আংশিক বেসরকারিকরণ ঘটেছে। বেশিরভাগ আলজেরীয় সরকারি চাকুরি, সামরিক বাহিনী বা কৃষিখাতে (শ্রমশক্তির এক-চতুর্থাংশ) নিয়োজিত। এখানে গম, আলু, টমেটো, যব, খেজুর, ডুমুর, পেঁয়াজ, কমলা, জলপাই ও আঙুরের চাষ হয়। আলজেরিয়া খেজুর ও কর্ক (কর্ক ওক বৃক্ষের ছাল) উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশগুলির একটি। গবাদি পশু হিসেবে মূলত ভেড়া ও ছাগল পালন করা হয়। তবে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে আলজেরিয়াকে তিন-চতুর্থাংশ খাদ্য আমদানি করতে হয়। শিল্পখাতে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, তামাকজাত দ্রব্য, সিমেন্ট, ইট, টালি, লোহা ও ইস্পাতের দ্রব্য উৎপাদন করা হয়।.২০১৯ সালে মাথাপিছু স্থূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) ছিল ৪২২৯ মার্কিন ডলার, যা বিশ্বে ১০৯তম। দেশটির মানব উন্নয়ন সূচক ০.৭৫৯ (অর্থাৎ উচ্চ), যা বিশ্বে ৮২তম।

প্রাচীন যুগ থেকেই এখানে বার্বার জাতির লোকেরা বাস করত; বার্বারেরাই সম্ভবত প্রথম উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকায় বসতি স্থাপন করেছিল। এরপর এখানে পালাক্রমে বিভিন্ন আক্রমণকারী জাতিদের আগমন ঘটে। খ্রিস্টপূর্ব ১ম সহস্রাব্দে আলজেরিয়া অঞ্চলে ফিনিসীয় বণিকেরা বসতি স্থাপন করেছিল। এরপর কার্থেজীয় জাতিরাও এখানে আক্রমণ করে। এর কয়েক শতাব্দী পরে রোমানরা অঞ্চলটি আক্রমণ করে এবং খ্রিস্টপূর্ব ৪০ অব্দ নাগাদ সমগ্র ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলীয় অঞ্চলটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। খ্রিস্টীয় ৫ম শতকে রোমের পতন ঘটলে ভ্যান্ডাল জাতির লোকেরা অঞ্চলটি আক্রমণ করে। পরে বাইজেন্টীয় (পূর্ব রোমান) সাম্রাজ্য অঞ্চলটি পুনরায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। খ্রিস্টীয় ৭ম শতকে এখানে মুসলমানদের আক্রমণ শুরু হয় এবং ৭১১ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ সমগ্র দক্ষিণ আফ্রিকা উমাইদ রাজবংশীয় খলিফাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। আরব মুসলমানেরা এখানে ইসলাম ধর্ম ও আরবি ভাষার প্রচলন করে। এরপর বেশ কয়েকটি বার্বার মুসলমান রাজবংশ অঞ্চলটি শাসন করে; এদের মধ্যে আলমোরাভিদ রাজবংশটি সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য। আলমোরাভিদরা ১০৫৪ থেকে ১১৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শাসন করেন এবং তাদের সাম্রাজ্য ইউরোপের স্পেন পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এরপরে আলমোহাদ রাজবংশটিও ১১৩০-১২৬৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শাসন করেন। ১৫১৮ সালে তুর্কি উসমানীয় সাম্রাজ্য উত্তর আলজেরিয়া দখলে নেয়। বার্বার উপকূলের জলদস্যুরা বহু শতাব্দী ধরে ভূমধ্যসাগরীয় বাণিজ্যের জন্য হুমকি ছিল। জলদস্যুদের আক্রমণে অতিষ্ঠ হয়ে তাদেরকে দমনের মিথ্যা কারণ দেখিয়ে ফরাসিরা ১৮৩০ সালে আলজেরিয়া আক্রমণ করে। ১৮৪৭ সালের মধ্যে ফ্রান্স অঞ্চলটির সিংহভাগ এলাকায় সামরিক শাসন জারি করে; আলজেরিয়া একটি ফরাসি উপনিবেশে পরিণত হয়। ১৯শ শতকের শেষে এসে ফরাসিরা আলজেরিয়াতে বেসামরিক শাসন চালু করে। এসময় প্রায় ১০ লক্ষ শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয় (মূলত ফরাসি, স্পেনীয় ও ইতালীয়) আলজেরিয়াতে অভিবাসন করে। কিন্তু বিংশ শতাব্দীত ১৯২০-এর দশক থেকে ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে আলজেরীয়দের বিদ্রোহ দানা বেঁধে ওঠে, তারা আরও বেশি অধিকার দাবী করতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত ১৯৫৪ সালে "ফ্রোঁ দ্য লিবেরাসিওঁ নাসিওনাল" (এফএলএন, "জাতীয় স্বাধীনতা ফ্রন্ট") নামের একটি দলের নেতৃত্বে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে আলজেরিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। ১৯৬১ সাল পর্যন্ত প্রায় ৮ বছর যুদ্ধ চলে। শেষ পর্যন্ত ১৯৬২ সালে একটি গণভোটের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জিত হয়। আট বছর ধরে সংঘটিত স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশটির অশেষ ক্ষতিসাধন হয়, প্রায় ১০ লক্ষ লোকের মৃত্যু হয় এবং যুদ্ধশেষে কয়েক হাজার বাদে প্রায় সব ইউরোপীয় আলজেরিয়া ছেড়ে চলে যায়। ফ্রোঁ দ্য লিবেরাসিওঁ নাসিওনাল নতুন সরকার গঠন করে। স্বাধীনতার সময়ে আলজেরিয়ার অর্থনীতি ছিল অনুন্নত ও কৃষিনির্ভর, তবে সরকার শীঘ্রই এটি আধুনিকীকরণের উদ্যোগ নেন। বর্তমানে আলজেরিয়া আফ্রিকার ধনী দেশগুলির একটি, এবং এর অন্যতম কারণ পেট্রোলিয়ামের রপ্তানি।

১৯৯১ সালে প্রথমবারের মতো আলজেরিয়াতে গণতান্ত্রিক নির্বাচন সম্পন্ন হয়। এদের মধ্যে ইসলামপন্থী দল 'ফ্রোঁ ইসলামিক দে সালভাসিওঁ' (এফইএস); তারা আলজেরিয়াতে একটি একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। যখন প্রতিভাত হয় যে এফইএস সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করবে, তখন তৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকার সামরিক বাহিনীর সাহায্য নিয়ে নির্বাচন বাতিল করে দেয় এবং দেশের শাসন করায়ত্ত করে। এর ফলে অবশম্ভাবী ভাবে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। দেশটিতে সামরিক বাহিনী ও ইসলামী দলের মধ্যে এক বিধ্বংসী গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। বহু হাজার আলজেরীয় নাগরিক গৃহযুদ্হাধে ও সামরিক বাহিনীর হামলায় মারা যায়। আলজেরীয় ঐ সরকার ইসলামী দল ফ্রোঁ ইসলামিক দে সালভাসিওঁ' (এফইএস); কে রাষ্ট্র পরিচালনা ও ইসলামী রাষ্ট্র গঠনে বাধা প্রদান করে। ও এই নিমিত্তেই নির্বাচন বাতিল করে। সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে তৎকালীন সরকার নির্বাচন বাতিল করে দেয়া আলজেরিয়ার ইতিহাসের ও রাজনীতির কালো অধ‍্যায় এবং ইসলামী দলসমূহের উপর ঐ সরকারের নির্যাতন অব‍্যাহত থাকে এবং এই অবস্থা এখনো বিদ‍্যমান। ১৯৯৯ সালে আরেকটি নির্বাচনে আলজেরীয়রা আবদেলাজিজ বুতেফিকাকে ১৯৬৫ সালের পরে প্রথমবারের মতো একজন বেসামরিক ব্যক্তি হিসেবে নির্বাচিত করে এবং বিভিন্ন ইসলামী দলসমূহের সাথে সরকার সংঘাত অব্যাহত রাখে। সরকার আলজেরিয়ায় ইসলামী বিধানানুযায়ী শাসন প্রতিষ্ঠায় ও পূর্ণ ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে বাধাগ্রস্থ করে। রাজনৈতিক গণ্ডগোলের কারণে বহুসংখ্যক দক্ষ বিদেশী শ্রমিক আলজেরিয়া ত্যাগ করেছে।

১৯৯১ সালে প্রথমবারের মতো আলজেরিয়াতে যে গণতান্ত্রিক নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছিলো তা তৎকালীন সরকার অবৈধ ভাবে ও সামরিক বাহিনীর সহায়তায় বাতিল না করলে ইসলামপন্থী দল 'ফ্রোঁ ইসলামিক দে সালভাসিওঁ' (এফইএস) সরকার গঠন করতো এবং আলজেরিয়া একটি ইসলামী বিধান সম্পন্ন দেশ তথা ইসলামী দলের শাসনাধীন দেশ হিসেবে গর্বিত হওয়ার সুযোগ পেতো। ত‍ৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকারের অবৈধ কাজের ফলশ্রূতিতে বহু হাজার আলজেরীয় নাগরিক মৃত‍্যু বরণ করে।

আলজেরিয়ার প্রায় সকল ব্যক্তি ইসলাম ধর্মাবলম্বী এবং প্রায় সকলেই সুন্নি মতাদর্শে বিশ্বাসী ।

সামরিক বাহিনী

[সম্পাদনা]

আলজেরিয়ার রাষ্ট্রপতি আলজেরিয়ার সামরিক বাহিনীসমূহের সর্বাধিনায়ক। ২০০৪ সালে আলজেরিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যসংখ্যা ছিল ১,৩৭,৫০০। এদের মধ্যে স্থল সামরিক বাহিনীতে আছেন প্রায় ১,২০,০০০ জন সেনা। আলজেরিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের নিয়েই সামরিক বাহিনী গঠন করা হয়। এই সামরিক বাহিনী উত্তর আফ্রিকার ২য় বৃহত্তম,যার আগে রয়ছে মিশর। আলজেরিয়ার বিমানবাহিনীর সদস্য সংখ্যা ১০ হাজার। এরা সোভিয়েত, চেক, মার্কিন ও ফরাসি-নির্মিত জেট বিমান ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করেন। নৌবাহিনীতে প্রায় ৭,৫০০ জন কর্মরত আছেন।

ভূগোল

[সম্পাদনা]
দক্ষিণ আলজেরিয়ার আহাগারের সাংস্কৃতিক পার্কে বালির টিলা

আলজেরিয়ার উত্তরে ভূমধ্যসাগর, পূর্বে তিউনিসিয়ালিবিয়া, দক্ষিণে নাইজার, মালি এবং মোরিতানিয়া, পশ্চিমে মরক্কোপশ্চিম সাহারা। এটি একটি বিশাল দেশ। এটি আফ্রিকার বৃহত্তম এবং বিশ্বের ১০ম বৃহত্তম রাষ্ট্র। দেশটিকে দুইটি সুস্পষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলে ভাগ করা যায়। উত্তরপ্রান্তে অবস্থিত অঞ্চলটি তেল নামে পরিচিত। এটি মূলত তেল অ্যাটলাস পর্বতমালাটি নিয়ে গঠিত, যা উপকূলীয় সমভূমিগুলিকে দক্ষিণের দ্বিতীয় অঞ্চলটি থেকে আলাদা করেছে। এখানকার জলবায়ু ভূমধ্যসাগর দ্বারা প্রভাবিত। দক্ষিণের দ্বিতীয় অঞ্চলটি প্রায় সম্পূর্ণই মরুভূমি আবৃত। এই অঞ্চলটি আলজেরিয়ার আয়তনের সিংহভাগ গঠন করেছে। এটি মূলত গোটা উত্তর আফ্রিকা জুড়ে বিস্তৃত সাহারা মরুভূমির পশ্চিম অংশ।

ভূমিরূপ

[সম্পাদনা]

আলজেরিয়ার ভূমিরূপের মূল গাঠনিক বৈশিষ্ট্যগুলি আফ্রিকান ও ইউরেশীয় ভূত্বকীয় পাতগুলির মধ্যে সংঘর্ষের ফলে ভূমধ্যসাগরীয় সীমারেখা বরাবর সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দেশটি দুইটি ভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলে বিভক্ত। উত্তরের তেল নামক অঞ্চলটিতে দেশের বেশির ভাগ নাগরিক বাস করেন। এখানে দুইটি ভৌগোলিকভাবে নবীন স্তুপপর্বতমালা রয়েছে: তেল অ্যাটলাস পর্বতমালা এবং সাহারান অ্যাটলাস পর্বতমালা। এগুলি সমান্তরালভাবে পূর্ব-পশ্চিমে চলে গেছে এবং উচ্চ মালভূমি দ্বারা এরা নিজেদের থেকে বিচ্ছিন্ন। দক্ষিণের সাহারা মরুভূমি অঞ্চলটি একটি কঠিন, প্রাচীন, আনুভূমিক ও সুষম শিলাস্তরের উপর অবস্থিত। বেশ কিছু মরূদ্যান ছাড়া এখানে তেমন কোন জনবসতি নেই। তবে এখানে প্রচুর লুক্কায়িত খনিজ সম্পদ আছে, যার মধ্যে পেট্রোলিয়ামপ্রাকৃতিক গ্যাস অন্যতম।

মৃত্তিকা

[সম্পাদনা]

ক্রমাগত বৃক্ষ ও উদ্ভিদ নিধন এবং ভূমিক্ষয়ের কারণে উর্বর বাদামী মাটিযুক্ত এলাকার আয়তন কমে গেছে। কেবল কিছু উচ্চভূমিতেই এরকম উর্বর মাটি দেখতে পাওয়া যায়; সেখানে এখনও চিরহরিৎ ওকে অরণ্যের দেখা মেলে। উত্তর তেল পর্বতমালার অপেক্ষাকৃত নিচু অঞ্চলগুলিতে মূলত ভূমধ্যসাগরীয় লাল মাটি পাওয়া যায়। দক্ষিণের দিকে অগ্রসর হবার সাথে সাথে আর্দ্রতা ও মাটির পরিপক্কতা ক্রমাগত কমতে থাকে। এই অঞ্চলে আবহাওয়ার কারণে রাসায়নিক উপায়ে শিলাভাঙ্গন ও জৈবিক বস্তুর সঞ্চয় খুবই কম। মরু অঞ্চলগুলিতে প্রায় সার্বক্ষণিক শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহজনিত ভূমিক্ষয়ের কারণে মাটি সৃষ্টির প্রক্রিয়া আরও ব্যহত হয়। ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সাহারা মরুভূমির উত্তরমুখী দখল ঠেকানোর জন্য একটি সবুজ প্রতিবন্ধক বলয় তৈরির একটি উচ্চাভিলাষী প্রকল্প শুরু হয়েছিল। প্রকল্পটিতে প্রায় ২০ কিমি প্রশস্ত এবং প্রায় ১৬০০ কিমি দীর্ঘ একটি ফিতাসদৃশ ভূমিকে বনে রূপান্তরিত করার কথা ছিল। প্রকল্পটি আংশিকভাবে সফল হয়। ১৯৮০-র দশকের মধ্যভাগে আরও প্রায় ৩৬০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা বনায়ন করার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।

জনসংখ্যা

[সম্পাদনা]

১৯৯০ সালে আরবি ভাষাকে সরকারিভাবে আলজেরিয়ার জাতীয় ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সিংহভাগ আলজেরীয় মানুষ প্রচলিত কথ্য আরবি ভাষার একাধিক উপভাষাগুলির কোনও একটিতে কথা বলেন। মরক্কো ও তিউনিসিয়ার যে অঞ্চলগুলি আলজেরিয়ার সীমানার কাছে অবস্থিত সেখানকার উপভাষাগুলির সাথে এই উপভাষাগুলির মোটামুটি মিল আছে। বিদ্যালয়গুলিতে আধুনিক আদর্শ বা প্রমিত আরবি ভাষা শেখানো হয়। আলজেরিয়ার ইমাজিগেন নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা আমাজিগ ভাষার বিভিন্ন ভৌগোলিক উপভাষাতে কথা বলে, তবে এদের বেশিরভাগই আরবি ভাষাতেও সমানভাবে কথা বলতে পারে।

স্বাধীনতার পর থেকেই আলজেরিয়ার সরকারের নীতি ছিল "আরবিকরণ", অর্থাৎ স্থানীয় আরবি ভাষাকে উৎসাহিত করা এবং ইসলামী সাংস্কৃতিক মূল্যবোধগুলি সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া। এর ফলশ্রুতিতে জাতীয় ভাষামাধ্যম হিসেবে আরবি ভাষা ফরাসি ভাষাকে প্রতিস্থাপিত করেছে। বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষাদানের মূল ভাষা হিসেবে এখন আরবি ব্যবহার করা হয়। কিছু আমাজিক জাতিদল এই নীতির জোর বিরোধিতা করেছে, কেননা তাদের আশঙ্কা হল এর ফলে দেশে সংখ্যাগুরু আরবিভাষী জনগণ তাদেরকে দমন করবে। ২০০২ সালে আমিজাগ ভাষাকে জাতীয় ভাষা এবং ২০১৬ সালে এটিকে সরকারি ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়।

আলজেরিয়ার সকল ব্যক্তি ইসলাম ধর্মাবলম্বী । সকলেই প্রায় সুন্নি মতাদর্শে বিশ্বাসী । শিয়া অনুসারী সংখ্যালঘু ।

সংস্কৃতি

[সম্পাদনা]

আলজেরিয়ার সংস্কৃতি অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূ্র্ণ। এখানের মানুষ আরবি,ফরাসি,বার্বার ভাষাসহ চতুর্থ ও পঞ্চম ভাষাতেও পারদর্শী হয়।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. আলজেরিয়ার সংবিধান ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৮ জুলাই ২০১২ তারিখে (১৯৯৬), Art. ১১ [ar]
  2. আলজেরিয়ার সংবিধান ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৫ জুলাই ২০১৩ তারিখে (১৯৯৬), Art. ১১ [en]
  3. "Démographie (ONS)"। ONS। ১৯ জানুয়ারি ২০১৬। ৬ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জানুয়ারি ২০১৪ 
  4. Algeria. International Monetary Fund
  5. Staff। "Distribution of Family Income – Gini Index"The World FactbookCentral Intelligence Agency। ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০০৯ 
  6. "2015 Human Development Report" (পিডিএফ)। United Nations Development Programme। ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫। পৃষ্ঠা 21–25। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]
সরকার
সাধারণ তথ্য