ক্রিকেট বিশ্বকাপের পুরস্কার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ক্রিকেট বিশ্বকাপের পুরস্কার (ইংরেজি: Cricket World Cup awards) আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় একজন কিংবা সময়ে সময়ে যৌথভাবে উল্লেখযোগ্য ক্রিকেটারকে তাঁর ব্যাটিং, বোলিং, অথবা উভয়ক্ষেত্রেই অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রদেয় পুরস্কারবিশেষ। সাধারণতঃ বিজয়ী দলের একজন খেলোয়াড়কে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়ে থাকে। তন্মধ্যে ম্যান অব দ্য ম্যাচ বা খেলার সেরা খেলোয়াড় প্রতিটি খেলায় এবং ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট বা প্রতিযোগিতার সেরা খেলোয়াড় চূড়ান্ত খেলা কিংবা সর্বশেষ খেলাশেষে প্রদান করা হয়। সচরাচর ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়কে ম্যাচ শেষে পুরস্কার হিসেবে চেক আকারে নগদ অর্থ এবং ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টধারীকে প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলা শেষে বিলাসবহুল দ্রব্যাদি প্রদান করা হয়।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

বিশ্বকাপ ক্রিকেটের অনেক পূর্ব থেকেই প্রতি খেলা শেষে দলের সকল খেলোয়াড়দেরকে হাত উঁচিয়ে তাদের দক্ষতা প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কৃত কিংবা মূল্যায়িত করা হতো। তখন সকল খেলোয়াড়ই ম্যান অব দ্য ম্যাচধারী হতেন। এ প্রক্রিয়া বিশ্বকাপ ক্রিকেটেও বহমান হয়। খেলা শেষে একজন খেলোয়াড়কে ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কার প্রদান করা হয় যা সাধারণতঃ বিজয়ী দলের পক্ষে ম্যাচ জয়ে তাঁর অসামান্য ক্রীড়াশৈলী উপস্থাপনার অর্থ বহন করে ও দলকে বিশ্বকাপের খেলায় জয়লাভ করাতে সমর্থ হয়েছেন।

১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় প্রথমবারের মতো ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট পুরস্কারের প্রবর্তন করা হয়।[১] এতে নিউজিল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দলের ব্যাটিং পুরোধা মার্টিন ক্রো ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট পুরস্কারের প্রথম প্রাপক হয়েছিলেন।[২]

পরিসংখ্যান[সম্পাদনা]

বিশ্বকাপ ক্রিকেট, ১৯৭৫[সম্পাদনা]

ম্যান অব দ্য ফাইনাল ম্যাচ ১৯৭৫ - ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্লাইভ লয়েড - ৮৫ বলে ১০২ রান [৩]

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্লাইভ লয়েডের অধিনায়কোচিত সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়াকে ১৭ রানে পরাভূত করে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করেছিল। ৮৫ বলে ১০২ রান করা তাঁর এ ইনিংসে সর্বমোট ১২টি চার ও ২টি ছক্কা ছিল। অসাধারণ এ ইনিংসের জন্যে তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার অর্জন করেন।[৩] অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের উল্লেখযোগ্য দিক ছিল শীর্ষস্থানীয় ব্যাটসম্যানদের রান আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যাওয়া। দ্রুত রান নিতে গিয়েই দলের সর্বমোট পাঁচজন ব্যাটসম্যান এভাবে আউট হন; তন্মধ্যে ভিভ রিচার্ডস একাই তিনজন খেলোয়াড়কে রান আউট করেছিলেন।

অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক ইয়ান চ্যাপেল টসে জয়ী হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানদেরকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানান। ৫০ রানের মধ্যেই ৩ উইকেট পতনের পর রোহন কানহাই এবং ক্লাইভ লয়েড ক্রীজে নামেন। ৪র্থ উইকেটে এ জুটি ১৪৯ রান করে দলকে খেলায় ফিরিয়ে আনে। লয়েড আউট হবার সময় দলের রান হয় ৪ উইকেটে ১৯৯। এরপর দলের সংগ্রহ এক পর্যায়ে দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ২০৯। তারপর নিচের সারির ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তায় দলটি সর্বমোট ২৯১ রান করে। এ রানের প্রত্যুত্তরে অস্ট্রেলিয়ার গ্রেগ চ্যাপেল ও ইয়ান চ্যাপেল ভ্রাতৃদ্বয় দলকে ২ উইকেটে ১১৫ রানে নিয়ে যান। কিন্তু ভিভ রিচার্ডসের সহায়তায় লয়েড কর্তৃক ইয়ান চ্যাপেলের রান আউট এবং ডগ ওয়াল্টার্সের উইকেট হারালে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং মেরুদণ্ড ভেঙ্গে পড়ে। এরফলে অস্ট্রেলিয়া ২৭৪ রানে অল-আউট হয়ে যায় ও ১৭ রানে পরাজিত হয়।[৪]

বিশ্বকাপ ক্রিকেট, ১৯৭৯[সম্পাদনা]

ম্যান অব দ্য ফাইনাল ম্যাচ ১৯৭৯ - ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভিভ রিচার্ডস - ১৩৮*

ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ১৯৭৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালে আবারো ওয়েস্ট ইন্ডিজ অংশগ্রহণ করে। প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড টসে জয়ী হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ব্যাটিংয়ের জন্যে আমন্ত্রণ জানায়। ৩ উইকেটে ৫৫ থেকে ৪ উইকেটে ৯৯ হবার পর ভিভ রিচার্ডস ও কলিস কিং জুটি ১৩৯ রান তুলে। এতে কিং ৮৬ রান করেছিলেন।[৫] রিচার্ডস একপ্রান্তে আগলে রাখেন ও রান করতে থাকেন। অন্যদিকে নিচের সারির ব্যাটসম্যানেরা সকলেই শূন্য রানে আউট হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত রিচার্ডস ১৩৮ রান করে অপরাজিত ছিলেন এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৮ উইকেটে ২৮৬-তে পৌঁছে দেন।

পরবর্তীতে রিচার্ডসের মিতব্যয়ী ০/৩৫ বোলিংয়ে ইংল্যান্ডের শুরুটা ধীরলয়ে ঘটে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের রানকে ধাবিত করে। কিন্তু ২ উইকেটে ১৮৩ থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে ১৯৪ রানে অল-আউট হয়ে যায় তারা। এতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ধারাবাহিকভাবে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ ক্রিকেটের চ্যাম্পিয়ন হয়।[৫]

বিশ্বকাপ ক্রিকেট, ১৯৮৩[সম্পাদনা]

ম্যান অব দ্য ফাইনাল ম্যাচ ১৯৮৩ - ভারত মহিন্দর অমরনাথ - ২৬ ও ৩/১২

চূড়ান্ত খেলায় টসে হেরে ভারত ব্যাটিংয়ে নামে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্বসেরা বোলিং আক্রমণের মুখে পড়ে ব্যাটিং করা দুঃসাধ্য হওয়ায় দলটি মাত্র ১৮৩ রানে অল-আউট হয়ে যায়। ভারতীয় ব্যাটিংয়ের অন্যতম স্তম্ভ সুনীল গাভাস্কার শুরুতেই আউট হয়ে যান। তখন দলের রান সংখ্যা ১ উইকেটে ২ রান। কৃষ্ণমাচারী শ্রীকান্ত ও মহিন্দর অমরনাথ কিছুটা অ্যান্ডি রবার্টস, ম্যালকম মার্শাল, জোয়েল গার্নার এবং মাইকেল হোল্ডিংয়ের বোলিং আক্রমণ আটকাতে পেরেছিলেন।[৬] শ্রীকান্ত আউট হন ২ উইকেটে ৫৯ রানের সময়। অমরনাথ দলকে ৩ উইকেটে ৯০-এ নিয়ে যান। মাত্র তিনজন ব্যাটসম্যান বিশের রান অতিক্রম করতে পেরেছিলেন। নিচের সারির ব্যাটসম্যানের অংশগ্রহণে ৫৮.৪ ওভার পর্যন্ত খেলতে পেরেছিল ভারত। ভারতীয় ইনিংসে শ্রীকান্ত, সন্দ্বীপ পাতিল এবং মদন লাল একটি করে ছক্কা হাকান।

পরবর্তীতে অনুকূল আবহাওয়া এবং পীচের সুবিধা নিয়ে সঠিকমানের বোলিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্বখ্যাত ব্যাটিং লাইন-আপ ভেঙ্গে পড়ে। গত দুইবারের বিশ্বকাপ জয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল মাত্র ১৪০ রানে অল-আউট হয়ে যায়। ফলে, ভারত ৪৩ রানে বিজয়ী হয় এবং ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অঘটন ঘটায়। অমরনাথ এবং মদন লাল - উভয়েই ৩টি করে উইকেট নেন। এছাড়াও, ভারতের অধিনায়ক কপিল দেব প্রায় ২০ গজ দূর থেকে দৌঁড়িয়ে এসে ভিভ রিচার্ডসের ক্যাচ লুফে নেয়া ছিল খেলার উল্লেখযোগ্য ঘটনা। মহিন্দর অমরনাথ সুনিয়ন্ত্রিত বোলিং করে ৭ ওভারে মাত্র ১২ রান দেন। তাঁর অল-রাউন্ড নৈপুণ্যে বিচারকদের বিবেচনায় তাঁকে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার প্রদান করা হয়।

বিশ্বকাপ ক্রিকেট, ১৯৮৭[সম্পাদনা]

ম্যান অব দ্য ফাইনাল ম্যাচ ১৯৮৭ - অস্ট্রেলিয়া ডেভিড বুন - ৭৫

১৯৮৭ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া টসে জয়ী হয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে নামে। উদ্বোধনী জুটিতে ডেভিড বুন ও জিওফ মার্শ চমৎকার ভিত্তি গড়েন। ডেভিড বুন দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৫ রান করেন ১২৫ বলের বিনিময়ে। জিওফ মার্শ এবং ডিন জোন্সের সাথে জুটি গড়ে দলকে একপর্যায়ে ১ উইকেটে ১৫০-এ নিয়ে যান।[৭] তিনি আউট হলে দলের রান দাড়ায় ৪ উইকেটে ১৬৮। দলের পক্ষে একমাত্র তিনিই পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস করতে সক্ষম হয়েছিলেন। বুন তাঁর অসাধারণ এ ইনিংসের জন্যে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার অর্জন করেন।[৮] অন্যান্য ব্যাটসম্যানরাও ভাল রান করেছেন। বিশেষ করে অধিনায়ক অ্যালান বর্ডারমাইক ভেলেটা দলকে ২৫৩ রানে নিয়ে যান।

এ রানের জবাব দিতে ইংল্যান্ডের ইনিংস ২৪৬ রানে থেমে যায়। ক্রেগ ম্যাকডারমট, স্টিভ ওয়াহ, সাইমন ও’ডনেল এবং বর্ডার উইকেটগুলো দখল করেন। ডেভিড বুনের অনবদ্য ৭৫ রান দলকে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা লাভে অসামান্য ভূমিকা রাখে।[৯][১০] এছাড়াও, ইংল্যান্ডের রানসংখ্যা ৫ উইকেটে ২১৮ থাকা অবস্থায় তিনি জন এম্বুরিকে রান আউট করেন।

বিশ্বকাপ ক্রিকেট, ১৯৯৬[সম্পাদনা]

ম্যান অব দ্য ফাইনাল ম্যাচ ১৯৯৬ - অস্ট্রেলিয়া অরবিন্দ ডি সিলভা - ১০৭* ও ৩/৪২[১]

১৯৯৬ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে শ্রীলঙ্কা-অস্ট্রেলিয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা টসে জয়ী হয়ে ফিল্ডিং নেন ও ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপ বিজয়ী ও তৃতীয়বারের মতো ফাইনালে অংশগ্রহণকারী অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান। ২য় উইকেট জুটিতে মার্ক টেলর-রিকি পন্টিং ১০১ রান তোলেন ও ২৭ ওভারে ১/১৩৭-এ নেয়ায় দলকে আধিপত্য বিস্তারে সহায়তা করেন।[১১] ডি সিলভা পন্টিং ও টেলরকে আউট করলে দলের রান ৪ উইকেটে ১৫৬ হয়। স্টুয়ার্ট ল এবং স্টিভ ওয়াহ দলের হাল ধরেন। দু’জনে আউট হলে দল ৬ উইকেটে ২০২ করে। ইয়ান হিলিমাইকেল বেভান ক্রিজে আসলে ডি সিলভা পুনরায় হিলিকে আউট করেন। অস্ট্রেলিয়া নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৪১ রান করে।

জবাবে কুয়াশা ও শিশিরাচ্ছান্ন মাঠে অস্ট্রেলিয়া আধিপত্য বজায় রাখতে শুরুতেই সচেষ্ট হয়। শ্রীলঙ্কা তাদের দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে ২৩ রানের মধ্যে হারায়।[১১] তারপর ডি সিলভা ক্রিজে আসেন ও তাঁর জীবনের সবচেয়ে আনন্দঘন খেলাটি বিচক্ষণতার সাথে খেলেন।[১২] অরবিন্দ ডি সিলভা ৪২ রানে ৩ উইকেট সংগ্রহের পাশাপাশি অপরাজিত ১০৭ রান করেন ১২৪ বল খেলে, যা বিশ্বকাপের ইতিহাসে তৃতীয় সেঞ্চুরীর ঘটনা। তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দেন অশঙ্কা গুরুসিনহা (৬৫) ও অধিনায়ক রানাতুঙ্গা (৪৭*)। ৪৭তম ওভারেই শ্রীলঙ্কা জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায়। ক্রিকেট বিশ্বকাপের ইতিহাসে স্বাগতিক কিংবা সহ-স্বাগতিক দেশের বিশ্বকাপ জয়ের প্রথম ঘটনার সূচনা করে শ্রীলঙ্কা। বোলিং ও ব্যাটিং - উভয় বিভাগেই অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী উপস্থাপনা করায় ডি সিলভা ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।[১১][১৩]

বিশ্বকাপ ক্রিকেট, ১৯৯৯[সম্পাদনা]

ম্যান অব দ্য ফাইনাল ম্যাচ ১৯৯৯ - অস্ট্রেলিয়া শেন ওয়ার্ন - ৪/৩৩

১৯৯৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলায় অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। পাকিস্তান টসে জয়ী হয়েে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানদ্বয় শুরুতেই বিদায় নিলে ২০ ওভারে পাকিস্তানের সংগ্রহ ৩/৬৮ দাঁড়ায়। অস্ট্রেলীয় লেগ স্পিন বোলার শেন ওয়ার্ন আক্রমণে আসেন ও সফলতা পান। ইজাজ আহমেদকে ২২ রানে ও মইন খানকে ৬ রানে ক্যাচের ফাঁদে ফেললে ২৭ ওভারে দলীয় সংগ্রহ ৫/৯১ হয়। পাকিস্তান ইনিংস গোছাতে অল-রা্‌উন্ডারদের ব্যবহার করলেও ওয়ার্ন এবং পল রেইফেল তাদের আগ্রাসনকে দূরে সরিয়ে দেন। ওয়ার্ন অধিনায়ক ওয়াসিম আকরাম ও বিপজ্জনক অল-রাউন্ডার শহীদ আফ্রিদির উইকেট পান। পাকিস্তান ১৩২ রানে গুটিয়ে যায়। ওয়ার্ন ৪/৩৩ লাভ করেন।

অস্ট্রেলিয়া দল স্বল্প রানের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে ২৯.৫ ওভার হাতে রেখেই ৮ উইকেটের বিশাল বিজয় পায়। তন্মধ্যে অ্যাডাম গিলক্রিস্ট সর্বোচ্চ ৫৪ রান তোলেন। শেন ওয়ার্ন খেলা জয়ে অসামান্য অবদান রাখায় ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

বিশ্বকাপ ক্রিকেট, ২০০৩[সম্পাদনা]

ম্যান অব দ্য ফাইনাল ম্যাচ ২০০৩ - অস্ট্রেলিয়া রিকি পন্টিং - ১৪০*

২০০৩ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের চূড়ান্ত খেলা ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। ভারত টসে জয়লাভ করে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায়। অস্ট্রেলীয় উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানদ্বয় ভারতীয় পেস বোলিংয়ের উপর বেশ চড়াও হয়ে খেলে। কেবলমাত্র হরভজন সিং উইকেট পান। ১৪তম ওভারে অ্যাডাম গিলক্রিস্ট হরভজনের হাতে আউট হন। রিকি পন্টিং ব্যাটিংয়ে আসেন। ২০তম ওভারে অস্ট্রেলীয় সংগ্রহ ১২৫/২ দাঁড়ায়। এরপর পন্টিংয়ের সাথে ড্যামিয়েন মার্টিন যোগ দেন। ঠিক ৩৫ ওভারে অস্ট্রেলিয়া ২০০ রানে পৌঁছে। ১৩৯ বলে এ জুটি শতরান সংগ্রহ করে। এ মাঠে অস্ট্রেলিয়া সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়ে। ৪১তম ওভারে অস্ট্রেলিয়া ২৫০ রান তোলে। ৫ ছক্কার সাহায্যে পন্টিং শতরানে পৌঁছেন। এরপর অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ের ধারা বদলে যায়। দলটি শেষ ৯ ওভারে ১২.২ গড়ে ১১০ রান তোলে। পন্টিং ১৪০* রানে ও মার্টিন ৮৮* রানে অপরাজিত থাকেন। তন্মধ্যে পন্টিং বিশ্বকাপের ফাইনালে ও মার্টিন ভারতের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করেন।

বিশাল রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই শচীন তেন্ডুলকরের (৪) উইকেট হারায়। একপর্যায়ে ভারতের সংগ্রহ ৫৯/৩ দাঁড়ায়। রাহুল দ্রাবিড়বীরেন্দ্র শেওয়াগ দলের রানকে ১৪৭/৩ তোলে। কিন্তু ৩৮তম ওভারেই ভারত ২৩৪ রান তোলে সবকটি উইকেট হারায়। অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক পন্টিং ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান।

বিশ্বকাপ ক্রিকেট, ২০০৭[সম্পাদনা]

ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট ২০০৭ - অস্ট্রেলিয়া গ্লেন ম্যাকগ্রা - ২৬ উইকেট

বিশ্বকাপ ক্রিকেট, ২০১১[সম্পাদনা]

ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট ২০১১ - ভারত যুবরাজ সিং - ৩৬২ রান ও ১৫ উইকেট

ফুসফসে গলফ আকৃতির টিউমার নিয়ে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন ও ভারতের বিশ্বকাপ বিজয়ে ভূমিকা রাখেন। ইংল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে অর্ধ-শতক করেন। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ উইকেটসহ অর্ধ-শতক করেন।ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বিজয়ে অনবদ্য ভূমিকা হিসেবে অর্ধ-শতক ও ২ উইকেট পান। এরফলে তার দল নক-আউট পর্বে পৌঁছে। কোয়ার্টার-ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অর্ধ-শতক ও ২ উইকেট নেন। সেমি-ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে তেমন রান না পেলেও আসাদ শফিক ও ইউনুস খানের উইকেট পান। ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২ উইকেট পান ও এমএস ধোনি’র সাথে জুটি গড়ে দলের ঐতিহাসিক বিজয়ে অংশীদার হন।

বিশ্বকাপ ক্রিকেট, ২০১৫[সম্পাদনা]

ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট ২০১৫ - অস্ট্রেলিয়া মিচেল স্টার্ক - ২২ উইকেট

অস্ট্রেলীয় ফাস্ট বোলার মিচেল স্টার্ক ইয়র্কার ও উইকেট লাভের কারণে বিশ্বকাপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। উদ্বোধনী খেলায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২ উইকেট সংগ্রহের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করেন। গ্রুপ পর্বে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৬ উইকেট নিয়ে নিজেকে মেলে ধরেন ও প্রতিপক্ষকে গুড়িয়ে দেন। তাসত্ত্বেও অত্যন্ত নাটকীয়ভাবে নিউজিল্যান্ড দল ১ উইকেটের ব্যবধানে জয়লাভ করতে সমর্থ হয়। আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে উইকেট লাভের পর স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে চার উইকেট লাভে নিজের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রেখেছিলেন তিনি। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান। নক-আউট পর্বের খেলায় পাকিস্তান এবং ভারতের বিপক্ষে ২টি করে উইকেট পান ও অস্ট্রেলিয়াকে চূড়ান্ত খেলায় নিয়ে যান। দলীয় সঙ্গী জেমস ফকনার, জোশ হজলউড, মিচেল জনসন তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন। মসিজিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চূড়ান্ত খেলায় অবতীর্ণ হয় তার দল। ঐ প্রতিযোগিতায় অস্ট্রেলিয়া সেরা দল হিসেবে খেলা শুরু করে। প্রথম ওভারেই নিউজিল্যান্ডীয় অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককুলামকে শূন্যরানে বিদায় করেন। এটি খেলার বড় ধরনের ঘটনা ছিল। এরপর অস্ট্রেলিয়া দল খেলায় ৭ উইকেটে জয় তুলে নেয় ও ৫ম বারের মতো বিশ্বকাপের শিরোপা নিজেদের করে নেয়। সমগ্র প্রতিযোগিতায় অসাধারণ বোলিংশৈলী প্রদর্শনের প্রেক্ষিতে মিচেল স্টার্ককে প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২২ উইকেট নিয়ে ট্রেন্ট বোল্টের সাথে যৌথভাবে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীতে পরিণত হন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Cricket World Cup Past Glimpses
  2. Issacs, Vic। "Benson & Hedges World Cup, 1991/92, Final"। CricInfo। সংগৃহীত 2007-04-29
  3. Cricket World Cup Past Glimpses
  4. Australia vs West Indies 1975 Cricket World Cup Final
  5. England v West Indies 1979 Cricket World Cup Final
  6. India v West Indies 1983 Cricket World Cup final
  7. Australia v England 1987 Cricket World Cup Final
  8. Wisden, 1988 edition: World Cup final Australia v England, match report cricinfo.com
  9. "Reliance World Cup – Final – Australia v England"। ESPNcricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০১২ 
  10. "WISDEN – 1987-88 World Cup – Final – AUSTRALIA v ENGLAND"। ESPNcricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০১২ 
  11. Sri Lanka v Australia 1996 Cricket World Cup Final
  12. Cricinfo Report 1996 Cricket World Cup final
  13. "FINAL: Australia v Sri Lanka at Lahore, 17 Mar 1996"Cricinfo। ২০০৭-০৮-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৮-০৫