বাংলাদেশ-ভুটান সম্পর্ক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বাংলাদেশ–ভুটান সম্পর্ক
মানচিত্র Bangladesh এবং Bhutan অবস্থান নির্দেশ করছে

বাংলাদেশ

ভুটান

বাংলাদেশ এবং ভুটান আঞ্চলিক প্রতিবেশী। বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বীকৃতি স্বরূপ ভুটানের রাজ্যই প্রথম দেশ ছিল।[১] দুইদেশের মধ্যকার সম্পর্ক দৃঢ় এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে উভয় দেশ একটি কৌশলগত উন্নয়ন অংশীদারত্বের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যেমন জল শক্তি, শুল্কহীন বাণিজ্য এবং পরিবহন। তারা দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা এবং বিম্সটেকের সাধারণ সদস্য। বাংলাদেশ ও ভারতেরই কেবলমাত্র ভুটানে স্থায়ী দূতাবাস রয়েছে।[২]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর সকালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয়ের মুখোমুখি হওয়ার পর ভুটানের রাজা বাংলাদেশের সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির কাছে একটি টেলিগ্রাম পাঠিয়েছিলেন। নতুন দেশকে সারা বিশ্বে পরিচয় করানোর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ভুটানই প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। ভারত পরেরদিন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। নিচে টেলিগ্রামটি উল্লেখ করা হল।[৩]

আমার সরকার ও আমার পক্ষে, আমি আপনার মহাসচিব এবং বাংলাদেশ সরকারকে জানাতে চাই যে, বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। আমরা বিশ্বাস করি যে বাংলাদেশের জনগণের বৈদেশিক আধিপত্য থেকে এই স্বাধীনতা অর্জনের মহান ও বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম নিকট ভবিষ্যতে সাফল্য অর্জন করবে। আমার জনগণ এবং আমি আপনাদের মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা করি এবং আমরা আশা করি যে বর্তমান বিপদের হাত থেকে ঈশ্বর তাকে রক্ষা করবেন, যাতে করে তিনি আপনার দেশ ও জনগণকে জাতীয় পুনর্গঠন ও অগ্রগতির মহান কাজে নেতৃত্ব দিতে পারেন।

জিগমে দর্জি ওয়াংচুক
ভুটানের রাজা

৬ ডিসেম্বর ১৯৭১

১৯৭১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ভুটানের রাজা জিগমে দর্জি ওয়াংচুকও এ দিন সল্টলেকে শরণার্থীশিবির পরিদর্শন করেন। জিগমে ওয়াংচুক কোনো পূর্বঘোষণা ছাড়াই শরণার্থীশিবির পরিদর্শনে গেলে সরকারি মহলে কিছুটা বিস্ময় দেখা দেয়।[৪] ভুটানের তরুণরা ভারতের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে আহত এবং অসুস্থ বাঙালি শরণার্থীদের সেবা করেছিলেন।’

ভুটান ও ভারত দুই দেশই বাংলাদেশকে ৬ ডিসেম্বর স্বীকৃতি দিয়েছিল। তবে ভারতের কয়েক ঘণ্টা আগে ভুটান স্বীকৃতি দিয়ে তারবার্তা পাঠায়। [৫] প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভুটানই প্রথম দেশ, যারা স্বাধীন বাংলাদেশকে সর্বপ্রথম স্বীকৃতি প্রদান করে। তিনি বলেন, ‘সেদিন রেডিওতে আমরা যখন প্রথম শুনতে পারলাম যে ভুটান আমাদের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, সেটা আমাদের জন্য অনন্য দিন ছিল। হাসি-কান্নার মধ্য দিয়ে দিনটি আমাদের কেটেছিল। কাজেই আমরা সব সময় ভুটানের কথা স্মরণ করি।’ [৬]

বাণিজ্য[সম্পাদনা]

ভুটান ও বাংলাদেশ ১৯৮০ সালে বাণিজ্য উন্নয়নের পদক্ষেপ হিসেবে একটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করে, যেখানে একে অপরকে "সর্বাধিক সহায়তাপ্ত জাতি" হিসেবে উল্লেখ করা হয়।[৭] ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে বাংলাদেশ এর মোট আমদানি ভুটান ২৫ মিলিয়ন দাঁড়িয়ে ছিল, যখন ভুটান তার রপ্তানির ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। [৮] ২০০৯ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর থিম্ফু তে আনুষ্ঠানিক সফরের সময় এই চুক্তিটি নবায়ন করা হয়। ২০১৪ সালে, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে ঢাকায় সফরকালে, বাংলাদেশ ভুটান থেকে ৯০ টি পণ্যের ডিউটি ​​ফ্রি অ্যাক্সেস প্রদান করেন। ২০২০ সালের ৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার ভুটানের সাথে অগ্ৰাধিকার মূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) সাক্ষর করে, এই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের ১০০টি পণ্য ভুটানে এবং ভুটানের ৩৪টি পণ্য বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে।[৯]

শক্তি[সম্পাদনা]

উভয় দেশ যৌথভাবে হিমালয়ে জল শক্তি উন্নয়নের জন্য আলোচনা শুরু করেছে।

ভুটানে ৫০,০০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে, যা বাংলাদেশের শক্তির অভাবমুক্ত বাজারকে উল্লেখযোগ্যভাবে সরবরাহ করতে পারবে। ২০১৪ সালের দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট এ বিদ্যুৎ গ্রিড ইন্টিগ্রেশন, এ অঞ্চলের জ্বালানি বাণিজ্যের জন্য একটি পথ তৈরি করবে।

পরিবহন[সম্পাদনা]

ল্যান্ডলক ভুটান চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা এবং সৈয়দপুর বিমানবন্দর বন্দরের পণ্য পরিবহনের জন্য বাংলাদেশী সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করতে আগ্রহী। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে একটি সাব-আঞ্চলিক ট্রানজিট নেটওয়ার্ক সার্ক এর আওতায় সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে এবং এটি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এর অনুমোদনক্রমে হবে। এই চারটি দেশের মধ্যে কার্গো, যাত্রী এবং ব্যক্তিগত গাড়ির সহজ চলাচলের জন্য একটি চুক্তি ও স্বাক্ষরিত হয়েছে। [১০]

অন্যান্য চুক্তিসমূহ[সম্পাদনা]

১৯৮৮ সালে বাংলাদেশের ভয়াবহ বন্যার পরিণতিতে ভুটান ও বাংলাদেশ বন্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেছিল। ২০০৯ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর ভুটানকে সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ভুটানের সেনাবাহিনীকে বাংলাদেশ রেফারেন্স কমান্ড ও স্টাফ কলেজের একটি কোর্সে একটি বৃত্তি প্রদান করে। উভয় দেশ ১৯৮৬ সালে একটি বিমান পরিষেবা চুক্তি স্বাক্ষর করে,যার ফলে দুই দেশের মধ্যে সাতটি সাপ্তাহিক ফ্লাইট অনুমোদিত পায়। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ড্রুক এয়ারের জন্য একটি ফোকাস সিটি

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. http://bdnews24.com/bangladesh/2014/12/08/bhutan-first-nation-to-recognise-bangladesh-says-foreign-secretary
  2. Schiavenza, Matt। "After Cuba: The Only 3 Countries That Have No Relations With the U.S."/uk.news.yahoo.com (ইংরেজি ভাষায়)। The Atlantic। সংগ্রহের তারিখ ২ জুলাই ২০১৫ 
  3. http://bdnews24.com/bangladesh/2014/12/06/bhutan-pm-hands-over-message-of-recognition
  4. ডেস্ক, প্রথম আলো (২০২১-০৯-১১)। "বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে অবস্থান নিলেন অস্ট্রেলিয়ার বুদ্ধিজীবীরা"চিরন্তন ১৯৭১ | প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১২-০৫ 
  5. প্রতিবেদক, নিজস্ব (২০১৪-১২-০৯)। "ভুটানই বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেয়"Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১২-০৫ 
  6. "ভুটানের স্বীকৃতির দিনটি ছিল অনন্য : প্রধানমন্ত্রী"Bangla Tribune। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১২-০৫ 
  7. Narendra Kr. Singh (২০০৩)। Encyclopaedia of Bangladesh (ইংরেজি ভাষায়)। Anmol Publications Pvt. Ltd.। পৃষ্ঠা 151–56। আইএসবিএন 978-81-261-1390-3 
  8. "Entrepreneurship lacks keeps untapped Bangladesh-Bhutan trade prospects" (ইংরেজি ভাষায়)। Ittefaq - The Nation। ২৮ এপ্রিল ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১০ 
  9. "ভুটান-বাংলাদেশ অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি সই"m.bdnews24.com। ২০২১-০২-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০১-২৯ 
  10. "Home: Bangladesh, Bhutan, India, Nepal sign motor vehicles agreement"netindian.in (ইংরেজি ভাষায়)। NetIndian News Network। সংগ্রহের তারিখ ২ জুলাই ২০১৫