জার্মানি–বাংলাদেশ সম্পর্ক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(জার্মানি-বাংলাদেশ সম্পর্ক থেকে পুনর্নির্দেশিত)
জার্মানি-বাংলাদেশ সম্পর্ক
মানচিত্র Germany এবং Bangladesh অবস্থান নির্দেশ করছে

জার্মানি

বাংলাদেশ

জার্মানি-বাংলাদেশ সম্পর্ক বলতে বাংলাদেশ এবং জার্মানির মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে বুঝানো হয়। জার্মানির দূতাবাস ঢাকায়,[১] এবং বাংলাদেশের দূতাবাস বার্লিনে অবস্থিত।[২]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৯৭১-এর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর, পূর্ব জার্মানি বিশ্বের তৃতীয়, এবং ইউরোপের প্রথম দেশ ছিল, যারা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশকে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেয়।[৩] কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর, দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত হয়।

সাবেক পূর্ব জার্মানি ১১ জানুয়ারি ১৯৭২ ইউরোপের প্রথম আর বিশ্বের তৃতীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। আর সাবেক পশ্চিম জার্মানি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় প্রায় তিন সপ্তাহ পর ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২। পূর্ব ও পশ্চিমের কিছু রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী, কিছু প্রবাসী বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের পক্ষে কাজ করেছিলেন। এঁদের মধ্য অন্যতম ছিলেন তৎকালীন পূর্বে অবস্থিত, হ্যালে-ভিটেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্য প্রত্নতত্ত্ব, রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ ও ভারতবিদ অধ্যাপক হেইঞ্জ অ্যাডলফ মোডে। যুদ্ধকালে তিনি হ্যালে-ভিটেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে das Haus am Padma বা ‘পদ্মা পাড়ের বাড়ি’ নামে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলেন। শান্তিনিকেতনের প্রাক্তন এই ছাত্র, নামকরণে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিলাইদহের বাড়ির কথা স্মৃতিচারণা করেছিলেন। পূর্ব জার্মানিতে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালিদের আরেক সুহৃদ ছিলেন ঝালকাঠির সুনীল দাশগুপ্ত ও তাঁর জার্মান স্ত্রী বারবারা দাশগুপ্ত। একাত্তরের জুন মাসে নিজের কর্মস্থল ইলেকট্রিক কোম্পানিতে জার্মান ও অন্যান্য বিদেশি অতিথিদের সহযোগিতায় নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে মুক্তিযুদ্ধ ও শরণার্থীশিবিরের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতেন। ১৯৭১ সালে পশ্চিম জার্মানিতে স্বল্পসংখ্যক বাংলাদেশির বাস ছিল। পশ্চিম জার্মানিপ্রবাসী বাঙালিরা সেই সময় মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে তহবিল গড়ে তুলেছিলেন। তাঁরা মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন এবং স্বাধীনতাযুদ্ধের সপক্ষে কাজ করতেন। সেই সময়গুলোতে এই সব কাজের পুরোধা ছিলেন মাইনটালে বসবাসরত অনীল দাশগুপ্ত। ১৯৭২ সালে পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানিতে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রদূত ছিলেন মুক্তাকিম চৌধুরী এবং হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী। আর বাংলাদেশে পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির রাষ্ট্রদূত ছিলেন লোথার ভেনজেল ও এডভিন ইউংফ্লাইস। ১৯৭২ সালে পূর্ব জার্মানির সহযোগিতাই মুনীর বাংলা টাইপ করার মেশিন, বাংলাদেশের পাসপোর্ট তৈরি হয়েছিল। সেই সময় বাংলাদেশ থেকে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল মেজর আমিন আহমদ চৌধুরীর নেতৃত্বে চিকিৎসার জন্য পূর্ব বার্লিনে এসেছিল। এ ছাড়া বাংলাদেশের মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্য বৃত্তি দিয়ে দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ করে দিয়েছিল।[৪]

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়া উচ্চতর বৃত্তি নিয়ে পশ্চিম জার্মানিতে পড়তে গিয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালে ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে পশ্চিম জার্মানিতে আসেন শেখ হাসিনা, শিশুপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, শিশুকন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা। ১৯৭৫ সালের ৩০ জুলাই শেখ হাসিনা ড. ওয়াজেদ মিয়ার হাত ধরে দুই শিশুসন্তান ও আঠারো বছরের ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বিমান বন্দরে এসে পৌঁছান। জার্মানির কার্লসরুয়ে শহরে তাদের থাকার ব্যবস্থা হয়। ১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট তারা কার্লসরুয়ে থেকে পশ্চিম জার্মানির বন শহরে চলে যান। সেখান থেকে সড়ক পথে যান বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে। এক রাতের জন্য নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম শহরেও তারা বেড়াতে যান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবার নিহত হওয়ার সময় ব্রাসেলসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, বিখ্যাত কবি সানাউল হকের বাসায় অবস্থান করেন শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, ওয়াজেদ মিয়া, জয় ও পুতুল। বঙ্গবন্ধু-হত্যার খবর জার্মানির বনে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী রাষ্ট্রদূত সানাউল হককে অবহিত করেন। তিনি টেলিফোনের মাধ্যমে ওয়াজেদ মিয়াকেও এ খবর পৌঁছে দেন এবং তিনি ওয়াজেদ মিয়াকে অনুরোধ করেন তৎক্ষণাৎ শেখ হাসিনাকে কিছু না জানাতে। ১৯৭৫ সালে ড. কামাল হোসেন বঙ্গবন্ধু সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সময় তিনি জার্মানিতেই অবস্থান করছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট জার্মানির স্টাইনবের্গ হোটেলে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর পরামর্শে অনিল দাশগুপ্তের আয়োজনে অনেক কষ্ট করে একটি সংবাদ সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ১৯৭৫ সালের ২৪ আগস্ট সতর্কতার সঙ্গে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে ভারতের দিলিস্নর উদ্দেশ্য শেখ হাসিনারা রওনা হন। ২৫ আগস্ট ভোরে তারা দিলিস্নর পালাম বিমানবন্দরে পৌঁছান। [৫]

সাংস্কৃতিক বিনিময়[সম্পাদনা]

বাঙ্গালী এবং জার্মানদের মধ্যে শতাব্দী পুরনো সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ইতিহাস রয়েছে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "German Embassy Dhaka - Home"। Dhaka.diplo.de। ২০১৩-০৪-৩০। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-০৭ 
  2. B&N Consulting। "Embassy of Bangladesh"। Bangladeshembassy.de। ২০১৮-০৯-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-০৭ 
  3. "E. Germany Recognizes Bangladesh"। Ocala, Florida, USA: Ocala Star-Banner, via Google News। Associated Press। জানুয়ারি ১১, ১৯৭২। 
  4. আহমেদ, সরাফ (২০২২-০৯-২৬)। "সম্পর্কের ৫০ বছর: মুক্তিযুদ্ধে, উন্নয়নে, সহযোগিতায় জার্মানি"Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১২-০৫ 
  5. "শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের বাংলাদেশ"jjdin (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১২-০৫ 

আরো পড়ুন[সম্পাদনা]