ফিলিস্তিন–বাংলাদেশ সম্পর্ক
ফিলিস্তিন |
বাংলাদেশ |
---|
ফিলিস্তিন ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ এবং আন্তরিক বলে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র সমর্থন করে এবং ইসরায়েলের "অবৈধভাবে ফিলিস্তিন দখলের" সমাপ্তি দাবি করে। তাছাড়া, বাংলাদেশ সরকার তরুণ ফিলিস্তিনিদের বাংলাদেশে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ প্রদান করে এবং উভয় দেশ সামরিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা করে।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]ফিলিস্তিন ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকেই লক্ষ্য করা যায়। প্রথমদিকে অধিকাংশ আরব রাষ্ট্র সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে দ্বিধাগ্রস্থ ছিল, কিন্তু এই সম্পর্ক উষ্ণ হতে থাকে যখন ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ফিলিস্তিনকে সমর্থন করে মেডিক্যাল টিম ও ত্রাণ সহায়তা পাঠিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সহায়তা করে।
১৯৭৪ সালে পাকিস্তানের লাহোরে ওআইসি'র দ্বিতীয় সম্মেলনের সময় ইয়াসির আরাফাত ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বৈঠকের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে প্রথম উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।[১] বাংলাদেশের ঢাকায় প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)-এর কার্যালয় স্থাপনের অনুমতি প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও পিএলও-এর মধ্যে সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়, এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও কুটনৈতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পিএলও কর্মকর্তরা ক্রমাগতভাবে আমন্ত্রিত হয়ে থাকেন।
১৯৮০ সালে বাংলাদেশ একটি স্মারক ডাকটিকিট উন্মোচন করে যেখানে একজন ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাকে দেখা যায়, যার পেছনে রয়েছে কাঁটাতারে ঘেরা আল-আকসা মসজিদ। সেখানে আরবি ও ইংরেজিতে ফিলিস্তিনি যোদ্ধার সাহসিকতার কথা বলা হয়েছে। ইয়াসির আরাফাত দুইবার বাংলাদেশ সফরে আসেন। প্রথমবার ১৯৮১ সালে এবং ১৯৮৭ সালে আরেকবার। প্রতিবারই তিনি বাংলাদেশী সংবাদমাধ্যম, রাজনিতিবীদ ও সাধারণ জনগণ থেকে ঊষ্ণ অভ্যর্থনা পান।
আন্তর্জাতিক সামরিক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ (আইএমইটি)-এর অধীনে ১৯৮০'র দশক থেকে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে পিএলও যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সামরিক সম্পর্ক উন্নয়ন লাভ করে।
বর্তমান সম্পর্ক
[সম্পাদনা]বর্তমান সময়ে ফিলিস্তিন ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। বাংলাদেশ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ক্রমাগত ও জোরালো সমর্থক এবং ইসরায়েলের দখলদারিত্বের বিরোধীতাকারী। বাংলাদেশ সরকার ইসরায়েলের সাথে সকল প্রকার বাণিজ্য (প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ) সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং ইসরায়েলের সাথে বাংলাদেশের কোন কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই।[২][৩] বাংলাদেশ ১৯৬৭ সালে নির্ধারিত সীমানা অনুযায়ী জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে সমর্থন করে।[৪]
বাংলাদেশ সরকার ফিলিস্তিনি ছাত্রদের বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দিয়ে থাকে এবং ফিলিস্তিনের সামরিক সদস্যদের বাংলাদেশের সামরিক ঘাটিগুলোতে প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে।[৫]
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের সাথে বাণিজ্য ও শক্তি বিষয়ক সমঝোতা স্মারক সই করে।[৬] ২০১৭ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাস ঢাকা সফরে আসেন।[৭][৮]
ঢাকায় ফিলিস্তিনি দূতাবাস বাংলাদেশে ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিত্ব করে।[৯] ঢাকায় দেশটির চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স হলেন ইউসুফ এস. রমাদান।[১০]
২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর থেকে চলমান ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ এবং []গাজা গণহত্যা]]য় বাংলাদেশ ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন দেখিয়েছে। রমজানে বাংলাদেশ গাজায় খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রীসহ ত্রাণ সহায়তা পাঠিয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বন্যার সময়ও ফিলিস্তিন বাংলাদেশে ত্রাণ সহায়তা পাঠিয়েছিলো।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Karim, M. M. Rezaul। "Currents and Crosscurrents"। archive.thedailystar.net। The Daily Star। ১২ জুন ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।
- ↑ Bustle, Sebastian। "Bangladesh: All about Israel-Hating"। Gatestone Institute। অজানা প্যারামিটার
|uiসংগ্রহের-তারিখ=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ "Relationship between Palestine & Bangladesh – Palestine Embassy"। palestineembassybd.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০২-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০২-০২।
- ↑ "Palestine President Abbas likely to arrive in Feb"। The Financial Express Online Version। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।
- ↑ "Bangladesh will expand cooperation with Palestine: FM"। bdnews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।
- ↑ "Bangladesh, Palestine ink MoU on trade, power generation"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।
- ↑ "Abbas flies in today"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।
- ↑ "Palestinian President Abbas in city"। Dhaka Tribune। ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুন ২০১৮।
- ↑ "President Abbas likely to arrive in Dhaka in Feb"। thedailystar.net। The Daily Star। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।
- ↑ "Ties with Israel would be 'political suicide' for BNP, says Palestine envoy"। bdnews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।